Ajker Patrika

পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন পেশার আড়ালে ছদ্মবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২২, ১৬: ৪৬
পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন পেশার আড়ালে ছদ্মবেশ

জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে কুমিল্লার সাত তরুণের কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে নিরুদ্দেশ হওয়ার পেছনে জড়িত নব্য জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম সংগঠক ও সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিবসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তার হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিব নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া অথবা পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাআতুল আনসারের অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী। 

দেশের ১৯ জেলা থেকে ৫৫ জন দেড় মাস থেকে দুই বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে তাঁদের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে র‍্যাব। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের নির্দিষ্ট নাম পরিচয়সহ বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে, যারা সংগঠনের হয়ে পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় লুকিয়ে থেকে অস্ত্র পরিচালনাসহ সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। তবে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া তরুণেরা এই তালিকার বাইরে বলে জানিয়েছে র‍্যাব। 

র‍্যাব বলছে, নব্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন জেলার দুর্গম অঞ্চলে জঙ্গি কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে রং মিস্ত্রি, রাজ মিস্ত্রিসহ বিভিন্ন পেশার ছদ্মবেশ ধারণ করেছে। 

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে গত আগস্টে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া তরুণদের সংগঠনের দাওয়াতি ও অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ এবং বাড়ি ছেড়ে যাওয়া তিনজনসহ মোট পাঁচজনকে গতকাল রোববার রাতে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব। 

আজ সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা হতে ৭ তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় র‍্যাব নিখোঁজ ও ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। 

র‍্যাবের তদন্তে উঠে আসে, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই বাড়ি ছেড়েছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর ঘর ছাড়ার প্রস্তুতির সময়ে চারজন তরুণকে হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র‍্যাব। 

গত ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৭ তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামের এক তরুণ পরিবারের কাছে ফিরে আসে। পরবর্তীতে বাড়ি ফিরে আসা নিলয়ের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি, তত্ত্বাবধানকারী, আশ্রয় প্রদান কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত তিনজন ও নিরুদ্দেশ চার তরুণসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা সংগঠনটির সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়। 

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে কুমিল্লার শাহ মো. হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিব (৩২) ও নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), ঢাকার মোহাম্মদপুরের মো. হোসাইন (২২), ঢাকার সূত্রাপুরের রাকিব হাসনাত ওরফে নিলয় (২৮) এবং নোয়াখালীর সাইফুল ইসলাম ওরফে রনি ওরফে জায়দ চৌধুরীকে (১৯) গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানতে পারে, নিখোঁজ হওয়া তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের পটুয়াখালী এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। এ ছাড়াও আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে তাদের রাজমিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো। 

র‍্যাবের দেওয়া তথ্য মতে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এই তরুণেরা প্রায় দেড় মাস থেকে দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিরুদ্দেশ বা নিখোঁজ। 

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সংগঠনের গ্রেপ্তার সদস্যদের মাধ্যমে আমরা ৩৮ জনের তথ্য পেয়েছি, যাদের নাম ও ঠিকানা পাওয়া গেছে। নিখোঁজ সদস্যদের নাম ও ঠিকানায় কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে।’ 

কমান্ডার মঈন আরও জানান, তাদের অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে। সেখানে তারা বিভিন্ন সংগঠনের ছত্র ছায়ায় আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এবং সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত এই তথ্যসমূহ দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সম্মিলিত অভিযান চলমান রয়েছে। 

র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘উগ্রবাদের অর্থায়নকারী গ্রেপ্তার হাবিবুল্লাহ কুমিল্লায় কুবা মসজিদের নামাজ পড়াতেন। এ ছাড়াও তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০২০ সালে নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে ‘‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাআতুল আনসার) সংগঠনটিতে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী। তাঁর নেতৃত্বে কুমিল্লা অঞ্চলে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হতো। তিনি সংগঠনের জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করতেন ও উগ্রবাদী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করতেন। 

গ্রেপ্তার নেয়ামত উল্লাহ কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন বলে জানান কমান্ডার মঈন। তিনি বলেন, নেয়ামত উল্লাহ ২০১৯ সালে স্থানীয় একজন ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমে যুক্ত থাকার পাশাপাশি নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও জড়িত ছিলেন। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে আশ্রয় প্রদান করতেন। 

গ্রেপ্তার হোসাইন পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান এবং রং মিস্ত্রি। তিনি স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হন। দীর্ঘ এক বছর যাবৎ তিনি সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। 

গ্রেপ্তার রাকিব কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারি বয়ের কাজ করতেন। তিনি গ্রেপ্তার হোসেইনের মাধ্যমে সংগঠনে জড়িত হন। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি প্রায় দুই মাস পূর্বে নিরুদ্দেশ হন। 

গ্রেপ্তার সাইফুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তিনি গত আগস্ট মাসে নোয়াখালী হতে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিরুদ্দেশ হন। তিনি নোয়াখালীর এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদী এই সংগঠনে জড়ান। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত