Ajker Patrika

জাবিতে পদত্যাগকারী উপাচার্যকে নিয়ম ভেঙে ইমেরিটাস বানানোর চেষ্টা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জাবি প্রতিনিধি
Thumbnail image

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন করে পদত্যাগকারী উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীরকে ইমেরিটাস অধ্যাপক বানানোর অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের দায়ে অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনিকে দায়মুক্তি দেওয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষার্থীদের একাংশ। 

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে জমায়েত হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর ও কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনে এসে শেষ হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি সম্পন্ন হয়। 

আন্দোলনকারীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুসারে একাডেমিক কাউন্সিল থেকে ইমেরিটাস অধ্যাপক নিয়োগের নীতিমালা সুপারিশ করতে হয়। যা সিন্ডিকেট চূড়ান্ত করার এখতিয়ার রাখে। একই সঙ্গে কোনো শিক্ষককে ইমেরিটাস অধ্যাপক বানাতে হলে একাডেমিক কাউন্সিলে প্রস্তাব করতে হবে। কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক নিয়োগ দিবে সিন্ডিকেট। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চুপিসারে পদত্যাগকারী উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীরকে ইমেরিটাস বানাতে নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। ইতিমধ্যে একাডেমিক কাউন্সিলকে অবগত না করেই সিন্ডিকেটে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর প্রথম স্ট্যাটিউটের ৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা সংক্রান্ত সকল পদের বিপরীতে একাডেমিক কাউন্সিল সিন্ডিকেটে সুপারিশ করবে।’ 

বিক্ষোভ মিছিলের সময় শিক্ষার্থীরা ‘খুনীদের আশ্রয়দাতা ইমেরিটাস হতে পারে না’, ‘খুনীদের আশ্রয়দাতা, দুর্নীতিবাজ ও নিপীড়কদের ক্যাম্পাসে ঠায় নাই’, ‘যৌন নিপীড়ক জনির দায়মুক্তির অপচেষ্টা চলবে না’, ‘জনি আর এনামুল একই বৃন্তে দুটি ফুল’ স্লোগান ধরেন। 

বিক্ষোভ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী, মামলাকারী, পিএসসিতে নিয়োগ বোর্ডে থাকাকালীন অনিয়মে অভিযুক্ত অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির এমিরেটাস অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা হবে। এরকম বিতর্কিত ব্যক্তিদের আমরা পুনর্বার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পদে আসীন দেখতে চাই না। এমনকি তাঁর সময় জুবায়ের হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। জুবায়ের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছাত্রলীগের খুনিদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন অধ্যাপক শরীফ। পাশাপাশি নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠে অধ্যাপক শরীফের বিরুদ্ধে। এসময় তিনি ছাত্র ও শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তবে বর্তমান প্রশাসন শরীফ এনামুল কবিরকে ইমেরিটাস অধ্যাপক পদে বসানোর নজির তৈরি করতে যাচ্ছে, প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডে ধিক্কার জানাচ্ছি।’ 

অমর্ত্য রায় আরও বলেন, ‘একই সিন্ডিকেটে ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের দায়ে অভিযুক্ত পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনিকে নৈতিক স্খলনের শাস্তি থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রশাসনকে বলতে চাই, নিপীড়ক শিক্ষকের বিচার করেন। ধামাচাপা করার চেষ্টা করবেন না।’ 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস জানায়, আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত নিয়মিত সিন্ডিকেট সভার আলোচ্যসূচিতে ইমেরিটাস অধ্যাপক নীতিমালা এবং ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের দায়ে অভিযুক্ত মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়। তবে সিন্ডিকেটে কি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। 

প্রসঙ্গত, অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির ২০০৯ সাল থেকে প্রায় তিন বছরের বেশি সময় ১৬তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, ছাত্রলীগের ‘একটি অঞ্চলভিত্তিক’ অংশকে মদদ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাঁধা দেওয়াসহ নানা অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর ‘মদদপুষ্ট’ হিসাবে পরিচিত ছাত্রলীগ নেতাদের হামলায় সংগঠনটির অন্য অংশের কর্মী ও ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ নিহত হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠে। এরপর ২০১২ সালের ১৭ মে উপাচার্যের পদ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত