Ajker Patrika

রাতের আড্ডার পর অসুস্থ হয়ে ৫ জনের মৃত্যু: ময়নাতদন্তে পেটে মিলল অ্যালকোহল

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২২: ৪৮
রাতের আড্ডার পর অসুস্থ হয়ে ৫ জনের মৃত্যু: ময়নাতদন্তে পেটে মিলল অ্যালকোহল

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদকসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এতে তাঁদের পেটে অ্যালকোহলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এ ছাড়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি দল গঠন করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় মৃত্যুর কারণ জানতে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি দল গঠন করেন কিশোরগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। কমিটিতে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাকছুদুল হককে সভাপতি ও ডা. সাখাওয়াত হোসেন এবং ডা. রুম্মনকে সদস্য করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ডা. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় রাতের আড্ডার পর অসুস্থ হয়ে মারা যান পাঁচজন। গতকাল সোমবার ভোরে বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন (৫৭), জহির রায়হান জজ মিয়া (৫৮) এবং হোমিও চিকিৎসক গোবিন্দ বিশ্বাসের (৪৫) মৃত্যু হয়। একই দিন দুপুরের দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনের চা বিক্রেতা লিটনও (৪২) মারা যান। এর আগে রোববার রাতে মারা যান শাজাহান মিয়া (৫২) নামে আরেকজন। শাজাহান মিয়া পেশায় অটোরিকশাচালক বলে জানা গেছে। একই ঘটনায় কুলিয়ারচর পৌরসভার প্যানেল মেয়র হাবিবুর রহমান ঢাকার একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোবিন্দ বিশ্বাসের চেম্বারের পেছনে প্রায়ই আড্ডা দিতেন তাঁরা। আড্ডায় মদ্যপান করতেন। গত শনিবার রাতেও আড্ডায় বসেছিলেন। আড্ডা থেকে বাড়ি ফিরে অসুস্থ বোধ করলেও পরিবারকে জানাননি তাঁরা। পরের দিন বেশি অসুস্থ হলে রোববার রাতে গিয়াস, জহির ও গোবিন্দ বিশ্বাসকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গিয়াস উদ্দিন ও গোবিন্দ বিশ্বাস। একই দিন দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চা বিক্রেতা লিটন। এর আগে রোববার একই আড্ডায় থাকা অটোরিকশাচালক শাজাহান মিয়া (৫২) মারা যান। 

কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ময়নাতদন্ত করার সময় তাঁদের প্রত্যেকের পাকস্থলীতে প্রচুর অ্যালকোহলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, মদ্যপানে বিষক্রিয়ায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। জহির রায়হান জজ মিয়া, গিয়াস উদ্দিন ও লিটন মিয়ার পাকস্থলীতে অ্যালকোহলের গন্ধ পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি। 

কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘মৃত্যুর পেছনের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

কিশোরগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পত্রিকার মাধ্যমে মদ্যপানে মৃত্যুর বিষয়ে অবগত হলে আমরা কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে খোঁজখবর নিচ্ছি। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তবে ফরেনসিক রিপোর্ট আসার পরে ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া ঘটনা সত্য হলে অ্যালকোহল কোথা থেকে কিনছে? কীভাবে এখানে আসল? এসব খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি।’ 

কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো পরিবারের পক্ষ থেকেই অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয় আসে। অভিযোগ পেলে আমরা তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেব। এরই মধ্যে জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন স্বপ্রণোদিত হয়ে মাঠে কাজ করছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত