Ajker Patrika

বিদ্যালয়ের দরজায় পদ্মা, অনিশ্চিত ১৬০ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image

শুষ্ক মৌসুমেও শরীয়তপুরের জাজিরায় আগ্রাসন চালাচ্ছে পদ্মা। এতে পদ্মা সেতুর পূর্ব পাশে পাইনপাড়া এলাকার নদী তীরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। গত কয়েক সপ্তাহের অব্যাহত ভাঙনে পদ্মা এখন কড়া নাড়ছে গ্ৰামের একমাত্র পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরজায়। এখন বিদ্যালয়ের ভবনটি পদ্মার তীর থেকে মাত্র ৩০ ফুট দূরত্বে রয়েছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয় ঘেঁষা নৌপথে দ্রুত গতির স্পিডবোট ও লঞ্চের ঢেউয়ের কারণে নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে গ্রামটি। এ ছাড়া নৌপথ সচল রাখতে চলমান ড্রেজিংয়ের কারণে তলদেশের মাটি সরে গিয়ে ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব না হলে যে কোন মুহূর্তে বিদ্যালয় ভবনটি বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যালয়টি বিলীন হলে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে ১৬০ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। 

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, পদ্মার মাঝে থাকা পাইনপাড়া গ্রামের এই বিদ্যালয়ে ১৬০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এ বছর বর্ষার শেষেও বিদ্যালয় ভবন থেকে অন্তত ৫০ মিটার দূরে ছিল পদ্মা। নদীতে পানি কমতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হতে থাকে ভাঙন। গেল কয়েক সপ্তাহের ভাঙনে পদ্মা এখন বিদ্যালয়ের ৩০ ফুট দূরত্বে চলে এসেছে। 

শিমুলিয়া মাঝিরঘাট নৌরুট সচল রাখতে বিদ্যালয়ের আশপাশে একাধিক ড্রেজারে বালু অপসারণ করা হচ্ছে। এর প্রভাবে নদী ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেড়েছে। ভাঙনের কবলে বিদ্যালয় বিলীনের আশঙ্কায় জরুরি ভিত্তিতে স্থাপনা ও আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয় ধসে গেলে পার্শ্ববর্তী বাজারের কাছেই অস্থায়ী বিদ্যালয় নির্মাণের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি। 

গতকাল রোববার সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস শেষে ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা বিদ্যালয় ভবনেই চলছে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান। নদীর তীর ঘেঁষা বালুর রাস্তায় পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। 

এক শিক্ষার্থীর বাবা আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে নদী বিদ্যালয়ের কাছে চলে এসেছে। করোনার কারণে মেয়ে লেখাপড়ায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এখন স্কুল খুললেও বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। মেয়ে যতক্ষণ বিদ্যালয়ে থাকে আমরা আতঙ্কে থাকি। বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে গেলে আমাদের গ্রামের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, ‘অল্প সময়ের ব্যবধানে পদ্মা নদী বিদ্যালয়ের আঙিনায় চলে এসেছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জরুরি মুহূর্তে স্থাপনাসহ আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে গেলে পার্শ্ববর্তী স্থানে অস্থায়ীভাবে পাঠদান চালিয়ে নেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

জাজিরা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নদী ভাঙনের কারণে বিদ্যালয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টি সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আগেই বিদ্যালয়টি নিলামে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য পাশেই অস্থায়ী ভাবে পাঠদানের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত