Ajker Patrika

মানবতার গান করে বলেই ‘চিহ্নিত শক্তি’ বাউলদের ওপর আক্রমণ চালায় 

ঢাবি প্রতিনিধি
মানবতার গান করে বলেই ‘চিহ্নিত শক্তি’ বাউলদের ওপর আক্রমণ চালায় 

বাউল সাধকরা মানবতার গান করে বলেই ‘চিহ্নিত শক্তি’ মৌলবাদী গোষ্ঠী বারবার হামলা করে বলে মন্তব্য করেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। 

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে নড়াইলের কালিয়াতে লালন সাধক হারেজ ফকিরের ওপর হামলার প্রতিবাদে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা হারেজ ফকিরের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। 

সমীর বাউলের গানের মাধ্যমে সমাবেশ শেষ করা হয়। 

সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি তপন মাহমুদের সভাপতিত্বে ও মন্দিরা শিল্পী গোষ্ঠীর সহসভাপতি খালিদ মিঠুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নারায়ণ চন্দ্র শীল, বিশ্বজিৎ রায়, রুবেল সাইদুল আলম, বাউল, লোকশিল্পী সংস্থার সংগঠক হীরক রাজা প্রমুখ। 

অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশের বয়সের সমান আমাদের প্রতিবাদের বয়স। বাংলাদেশ সৃষ্টির শুরু থেকে আমরা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করে আসছি। সামনেও আমাদের প্রতিবাদের মধ্য দিয়েই যেতে হবে। আমাদের আর কী আছে করার?’ 

অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাউল শিল্পীরা, বিজ্ঞানের শিক্ষকেরা হামলার শিকার হচ্ছেন। এর বিচার করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্র তার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করছে না। ভালোভাবে পালন করছে না বলেই হামলার আকার দিনে দিনে বড় হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী সেই হামলার নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা যদি সেই চিহ্নিত গোষ্ঠীর বিষদাঁত ভেঙে ফেলতে না পারি তাহলে আমাদের আজীবন অসহায় হয়ে পথে দাঁড়াতে হবে।’ 

গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র চেয়েছিলাম কিন্তু সেই রাষ্ট্র আমরা পাইনি। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর আস্ফালন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর সংবিধানকে গুম করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে গুম করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে গুম করা হয়েছে বলেই প্রগতির ধারণা হারিয়ে যাচ্ছে, ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সবার ‘ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপর নাই’ সেই মহান বাণী আমরা ভুলতে বসেছি।’ ’ 

অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ভেতরে-ভেতরে বিষবৃক্ষে পরিণত হচ্ছে জামায়াত ও মৌলবাদী শক্তি, যার প্রকৃষ্ট প্রমাণ নড়াইলের কালিয়ায় জামায়াতের রোকন এবং আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যানের বড় ভাই আলী মিয়ার নেতৃত্বে বাউল সাধক হারেজ ফকিরের ওপর হামলা ও তার সংগীতচর্চার যন্ত্রপাতি ভাঙার ঘটনা। তারা সরকারের আঁচলের তলে বসে একের পর এক দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে।’ 

গত ২৭ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে গাঁজা সেবন ও বিক্রির অভিযোগে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নে লালন সাধক হারেজ ফকিরকে মারধর ও গালি-গালাজ করা হয়। সেদিন সন্ধ্যার পর পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মণির অফিসে সালিস বসে। সালিস শেষ হওয়ার পর রাত ১১টার দিকে ১০-১৫ জনের একটি দল পুরুলিয়া বাজে-বাবরা গ্রামে হারেজ ফকিরের ‘শরিফা বাউল আশ্রমে’ ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন হারেজ ফকির। 

ফকিরের অভিযোগ, চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মণির বড়ভাই মো. আলী মিয়া শেখের নির্দেশে চাচাতো ভাই মিন্টু শেখের নেতৃত্বে ওই হামলা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত