Ajker Patrika

বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করতে রাজনৈতিক সংগঠন লাগে না, তিনি সর্বজনীন: বুয়েট শিক্ষার্থীরা

ঢাবি প্রতিনিধি
বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করতে রাজনৈতিক সংগঠন লাগে না, তিনি সর্বজনীন: বুয়েট শিক্ষার্থীরা

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেতনা ধারণ করতে রাজনৈতিক সংগঠন লাগে না, তিনি সর্বজনীন উল্লেখ করে একটি বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৷ 

ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের শোক সভা করতে দেওয়া হয়নি বলে একটি ‘অপপ্রচার’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখে করে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে আজ রোববার দুপুরে বুয়েট অডিটোরিয়ামের সামনে এ আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়৷ 

শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরবতার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ঘটনার সুষ্ঠু ব্যাখ্যা চেয়ে বুয়েট উপাচার্য বরাবর একটি দরখাস্ত পেশ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

তারা বলেন, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে। তাঁর চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা সমৃদ্ধিময় সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সদা প্রস্তুত।  

বিবৃতিতে বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়াম ভবনের সেমিনার রুমে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েট এর সাবেক নেতৃবৃন্দ’—এর ব্যানারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু গত ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ করা হয়। বুয়েটের প্রশাসনিক আইন অনুসারে, বুয়েটের বর্তমান ও সাবেক সকল শিক্ষার্থী, প্রশাসনিক এবং একাডেমিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ উক্ত নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে বাধ্য। 

তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের ব্যানার দেখে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে অবহিত করে এবং কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামের সামনে অবস্থান গ্রহণ করে। সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির পুনরুত্থানের আশঙ্কায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে উত্থাপন করা হয়। 

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, সেমিনার কক্ষে ছাত্রলীগের সাবেকদের অনুষ্ঠান যথারীতি সমাপ্ত হয় এবং শিক্ষার্থীরা সেখানে কোনোরূপ বাধা প্রদান করেনি। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করার অনুমতি প্রদান করায় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জবাবদিহিতা আদায় করাই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য। 

অতীতের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, বুয়েটের একাধিক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিরাজমান রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির বলি হয়েছে। যাদের সর্বশেষ সংযোজন ছিল আবরার ফাহাদ। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির কালো থাবা আমাদের নিরাপদ ক্যাম্পাস যেন পুনরায় ত্রাসের রাজত্বে পরিণত না করতে পারে, সেই আশঙ্কার জায়গা থেকে গতকাল আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমবেত হই। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তাদের কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে তারা বলেন, এসব অপপ্রচার শিক্ষার্থীদের ভীত, সন্ত্রস্ত এবং একই সঙ্গে ব্যথিত করছে। আজকে আমরা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করতে চাই, আমাদের গতকালকের কর্মসূচি কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে আয়োজিত শোক দিবসের অনুষ্ঠান বিরোধী ছিল না। বরং বিশ্ববিদ্যালয় কেন এ রকম অনুষ্ঠানের অনুমতি দিল আমরা সেটার জবাবদিহিতা চেয়েছি প্রশাসনের কাছে। 

তারা বলেন, আগামীকাল, ১৫ আগস্ট বিকেল পাঁচটায় বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ায় বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গতকাল উপাচার্য মহোদয় বরাবর লিখিত আবেদনপত্রে বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া-মাহফিল আয়োজনের অনুমতি প্রার্থনা করা হয়েছে। অত্র অনুষ্ঠানে বুয়েটের সকল প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, বুয়েটের সকল সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সাবেক শিক্ষার্থীবৃন্দ ছাড়াও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাদর আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তারা এই আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। 

আলোচনা সভা, শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া এবং প্রশাসনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউল মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা কঠিন সময়ে ছাত্রলীগ করেছি ৷ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে তাই রাজনীতি করিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে আমরা রাজনীতি করি। সে জায়গায় শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া ও মিলাদ মাহফিলও করতে পারব না? এ কেমন বাংলাদেশে আমরা আছি! বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।’ 

একই সঙ্গে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আলোচনা সভার শিডিউল নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

বুয়েট সূত্র জানায়, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা অডিটোরিয়াম ভাড়া নেওয়ার সময় রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করা হবে না বলে উল্লেখ করে। তারা সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে আলোচনা সভার কথা উল্লেখ করেছিল। 

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীরা একটি পুনর্মিলন অনুষ্ঠান করবেন বলে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়। কোন দলীয় পরিচয়ে অনুমতি নেওয়া হয়নি ৷ পরে যখন তারা ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দের ব্যানারে প্রোগ্রাম করে তখন বিষয়টি আলোচনায় আসে।’ 

মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি এবং যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সেসব বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরেছে। আশা করি এখন আর কোন অপপ্রচার থাকবে না। বিষয়টি তারা ক্লিয়ার করতে পেরেছে।’

উল্লেখ্য, গতকাল (শনিবার) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুয়েট অডিটোরিয়ামে ছাত্রলীগের ব্যানারে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করে বুয়েট ছাত্রলীগের একদল সাবেক নেতৃবৃন্দ। আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। সেই সূত্র ধরে ছাত্রলীগের এই কর্মসূচির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘আবরারের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, ছাত্রলীগের ঠিকানা, এ ক্যাম্পাসে হবে না; রাজনীতির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেঘালয়ে হানিমুনের সময় ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্বামীকে হত্যা, উত্তর প্রদেশে নববধূর আত্মসমর্পণ

ভিকারুননিসার ছাত্রী মেয়েকে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবা, ডুবে প্রাণ গেল দুজনেরই

মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমায় খুন—কীভাবে এক নববধূ হয়ে উঠলেন হত্যাকারী

হাসিনার মতো মাফিয়াকে বিতাড়িত করেছি, এখন আমরাই বড় মাফিয়া: এনসিপি নেতা জুবাইরুল

ব্রায়ান জেফরি রেমন্ড: সিআইএ কর্মকর্তার মুখোশে যৌন শিকারী এক নিঃশব্দ দানব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত