Ajker Patrika

পাহাড়ের অর্থনীতি বদলে দিচ্ছে মৌসুমি ঝাড়ু ফুল 

ওমর ফারুক সুমন (বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি) 
Thumbnail image

ঘরদোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে জুড়ি নেই পাহাড়ে জন্মানো ঝাড়ু ফুলের (উল ফুল)। গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর বন্দরের প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে এর কদর। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ের প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই ঝাড়ু ফুল স্থানীয় হাট-বাজারগুলোর চাহিদা মিটিয়ে বিক্রির জন্য নেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। আর এ ঝাড়ু ফুল বিক্রি করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে উঠছেন এ অঞ্চলের নারী-পুরুষেরা। 

হিসাব মতে রাঙামাটির দশ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝাড়ু ফুল উৎপাদন হয় বাঘাইছড়ি উপজেলায়। উপজেলার ছোট বড় সব পাহাড়ে ঝাড়ু ফুল উৎপাদিত হয়। লাভজনক হওয়ায় গত ৪ / ৫ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে পাহাড়ে জুমচাষ, বিভিন্ন ফলজ চাষের পাশাপাশি বৃহৎ পরিসরে চাষ হচ্ছে ঝাড়ু ফুল। আর খুব অল্প সময়ের মধ্যে পাহাড়ে ঝাড়ু ফুলের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বাঘাইছড়ি উপজেলা। 

বন বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ‘চাহিদা থাকায় উপজেলার সাজেক, মাচালং, বাঘাইহাট, দোসর, সারোয়াতলী এবং সদরে কালামুড়া পাহাড়, চারকিলো, নয়কিলো, রুপকারীসহ বিভিন্নস্থান থেকে উল ফুল সংগ্রহ করে পাহাড়ি-বাঙালি নিম্ন আয়ের নারী-পুরুষেরা। পাহাড়ের বন-জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা উল ফুলের আঁটি বানিয়ে ঝাড়ু হিসেবে প্রতিদিন স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে বিক্রি করে শ্রমজীবী মানুষেরা। সাপ্তাহিক হাটের দিন উপজেলার চারটি হাটে জীব পিকআপে করে আনা হয় এসব ঝাড়ু ফুল। ব্যবসায়ী সোলাইমান বলেন প্রতি হাটে ২ কোটি টাকার লেনদেন হয় এতে সরকার প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা রাজস্ব পায়।’ 

পাহাড়ি জুমিয়া পরিবারের নারীরাও জুমচাষের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পাহাড় থেকে ফুল ঝাড়ু তৈরি করে স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করে নিয়মিত। স্থানীয় পাহাড়ি নারীরা সংসারে বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে এটিকে বেছে নিয়েছে। 

ফুল থেকে ঝাড়ু তৈরি করে সেগুলো কিছুদিন রোদে রাখা হয়চারকিলো পাড়ার বাসিন্দা জীবন চাকমা বলেন আমরা পাহাড় থেকে উল ফুল কেটে আঁটি তৈরি করে উপজেলা মাঠে পার্শ্ববর্তী বাজারে বিক্রি করি। ফুলের ২০ থেকে ২৫টি শলাকা দিয়ে তৈরি করা হয় একেকটি ঝাড়ুর আঁটি। প্রতি আঁটি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি ঝাড়ুর আঁটি তৈরি করা সম্ভব হয়। সেগুলো বাজারে বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আয় হয়। 

এদিকে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালিদের কাছ থেকে পাইকারি দামে উল ফুল কিনে এনে রোদে শুকিয়ে ঝাড়ুর আঁটি বানিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে সরবরাহ করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। বাজারে প্রতি হাজার ঝাড়ু ফুলের শলাকা সাড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বেচা-কেনা হচ্ছে। প্রতিদিন একজন শ্রমজীবী মানুষ পাহাড় থেকে এক থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত উল ফুলের শলাকা কেটে সংগ্রহ করে করতে পারে। 

ঝাড়ু ফুল ব্যবসায়ী সোপ্পলাল চাকমা জানান, ৪ বছর ধরে পাহাড়ের নিম্ন আয়ের লোকজনদের কাছ থেকে পাইকারি দরে ঝাড়ু ফুলের আঁটি কিনে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম-ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। ২০১৮ সালে প্রথম ঝাড়ু ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার অধীনে দুই ‘শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক উল ফুল রোদে শুকানো এবং ঝাড়ুর আঁটি বানানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে পাহাড়ের মানুষের আর্থিক সংকট নিরসনে ঝাড়ু ফুল শিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে। 

ঝাড়ু ফুল ব্যবসায়ী সাজাহান মুন্সি বলেন ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে একটি কাঁচা ঝাড়ুর আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাকায় কিনে নেই। তারপর রোদে শুকিয়ে শ্রমিক দিয়ে নতুনভাবে ঝাড়ুর মোছা বানিয়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করি।’ 

ঝাড়ু তৈরির শ্রমিক হ্যাপি চাকমা, সালমা খাতুনসহ কয়েকজন বলেন, ‘পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা ঝাড়ু ফুলের আঁটি তৈরির কাজ করেন তারা। প্রতিদিন আঁটি বানিয়ে চার শত থেকে পাঁচশত টাকা পর্যন্ত পান তারা। এই টাকা দিয়ে তাদের সংসার মোটামুটি চলে। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে কাজে লাগে।’ 

উপজেলার কাঠ ব্যবসায়ী ও জ্যোত মালিক সমিতির সভাপতি মো. গিয়াসউদ্দিন মামুন বলেন, ‘পাহাড়ে এখন ঝাড়ু ফুল মৌসুম চলছে পাহাড়িরা সেগুন কাঠ বাগান ছেড়ে ঝাড়ু ফুল বাগানে উৎসাহী হচ্ছে সেগুন বাগানে সময় ও শ্রম দুটোই বেশি লাগে আর ঝাড়ু ফুল উৎপাদন সময় ও খরচ দুটোই কম তবে লাভ বেশি তাই সবাই এখন ঝাড়ু ফুল বাগানে ঝোঁকে পড়েছে।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ের চূড়ায় ঝাড়ু ফুল বাগান পরিদর্শন করে মনে হয়েছে এ চাষে তেমন খরচ নেই বললেই চলে তবে চাষিদের কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে উপজেলার কৃষি ও বন বিভাগের সমন্বয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হবে। যাতে করে চাষটাকে আরও এগিয়ে নেওয়া যায়।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত