Ajker Patrika

আবার গাছ কেটে জাবির ভবন নির্মাণের আয়োজন, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

জাবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২১: ১৬
জাবিতে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাবিতে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আবারও গাছ কেটে ভবন নির্মাণের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) কর্তৃপক্ষ। এবার গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পেছনে ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সামনের জঙ্গলটি। এতে অর্ধশতাধিক গাছ কাটা পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আজ রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, নির্ধারিত স্থানটির চারপাশে দড়ি টাঙিয়ে টিনের বেড়া দিয়ে আটকানো হচ্ছে। তবে প্রশাসন বলছে, টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি (টিএমসি) ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। জায়গাটিতে ভবন করা হলে পরিবেশের তুলনামূলক কম ক্ষতি হবে।

এর আগে পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের পাশের জলাশয় ভরাট করে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় শিক্ষার্থী ও পরিবেশবিদদের বাধার মুখে ওই স্থান থেকে সরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ছয়টি ১০ তলাবিশিষ্ট নতুন হল নির্মাণ করা শেষ।

এসব স্থাপনা করতে গিয়ে ১ হাজারের বেশি গাছ কাটা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা বাধা দিলেও প্রশাসন কর্ণপাত না করে ভবন নির্মাণ চালিয়ে যায়। তবে আওয়ামী সরকারের পতনের পর নতুন প্রশাসন এই প্রথমবারের মতো গাছ কেটে ভবনের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সূত্রে আরও জানা যায়, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়তলাবিশিষ্ট ১ লাখ ৩০ হাজার বর্গফুটের ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনটি নির্মাণ করতে অন্তত ৬০টি গাছ কাটা পড়বে। যার মধ্যে সেগুন, তালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে।

ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি শিয়াল, বেজি, বাগডাশ, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। অঞ্চলটি জুড়ে বন্য প্রাণীদের একটি রাস্তা তৈরি হয়েছে, যা দিয়ে বন্য প্রাণীরা খাবার সংগ্রহের জন্য খাদ্যস্থলের দিকে এগোতে পারে। এখানে ভবন নির্মাণ করা হলে এই বন্য প্রাণীদের আবাসস্থল ধ্বংস হবে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। এতে হুমকির মুখে পড়বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ–প্রকৃতি।

এদিকে আজ ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’–এর ব্যানারে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে একদল শিক্ষার্থী। এ সময় জাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, ‘স্বৈরাচারী হাসিনার উন্নয়ন দর্শনের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী প্রশাসনে। মাস্টারপ্ল্যানের টেন্ডার নিয়ে টালবাহানা, যত্রতত্র গাছ কাটার আয়োজন ও লেকগুলোকে মাঠ হতে দেওয়াসহ নানা কাজে প্রশাসনের চটুলতা দেখা যাচ্ছে।

জাবিতে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাবিতে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আমরা চাই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রশাসন যত্রতত্র শপিং লিস্ট উন্নয়ন না করে মাস্টারপ্ল্যানের ভিত্তিতে কাজ করুক, লেকগুলো খননের কাজ শুরু করুক। শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শনে থেকে গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী জাহাঙ্গীরনগরকেও একই রেখে দিতে চাওয়া মানে ছাত্র–জনতার সঙ্গে বেইমানি করা এবং প্রমাণ করে দেওয়া যে ক্ষমতার মসনদে আদতে সবাই এক।’

এ বিষয়ে টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যসচিব ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘টিএমসি কমিটি, বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে যে জায়গা ছিল, সেটা পরিবেশবিদদের আপত্তি ছিল, তাই নতুন করে এই স্থান টিএমসি ঠিক করে দিয়েছে। স্থানটিতে ভবন নির্মাণের স্বার্থে আগের থেকে কমসংখ্যক গাছ কাটা পড়বে।’

উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতির দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সেটার জন্য যথাযথ কমিটি টিএমসি রয়েছে। তারা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে জায়গাটি নির্ধারণ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত