Ajker Patrika

ফেনীতে ধীরগতিতে কমছে বন্যার পানি, দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন

ফেনী প্রতিনিধি
মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে পানিতে ধসে পড়েছে একটি বসতবাড়ি, উপড়ে পড়েছে গাছপালা। ফেনীর পরশুরাম উপজেলার অলকা গ্রামে আজ শুক্রবার বিকেলে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে পানিতে ধসে পড়েছে একটি বসতবাড়ি, উপড়ে পড়েছে গাছপালা। ফেনীর পরশুরাম উপজেলার অলকা গ্রামে আজ শুক্রবার বিকেলে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফেনীতে ধীরগতিতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার কিছু এলাকায় পানি নামতে শুরু করলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন ঘরে ফিরতে শুরু করেন। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। পানির তোড়ে বসতঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও খামার ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক মাছের ঘের ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে নদীতে।

পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নের অলকা গ্রামের বাসিন্দা মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে ধারদেনা করে একটা ঘর তুলেছিলাম ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ করে। এক দিনও থাকা হয়নি। মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ঘরটা চোখের সামনে ভেসে গেল। এখন প্রতিবেশীর ঘরে উঠেছি।’

ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা আলী আশরাফ বলেন, ‘নদীর পাড়ে থাকি বলে কষ্ট সহ্য করি। কিন্তু প্রতিবছর যদি ঘরবাড়ি ভেঙে যায়, তবে আমরা বাঁচব কীভাবে?’

দৌলতপুর এলাকার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় এক সপ্তাহ পর আজ সূর্যের দেখা মিলেছে। এখনো বাড়ির উঠানে হাঁটুসমান পানি। আশা করছি, পানি দ্রুত নেমে যাবে।’ পরশুরামের পশ্চিম অলকার বাসিন্দা মহসিন বলেন, ‘বাড়ি থেকে পানি নেমেছে, কিন্তু ঘরটায় থাকা যাচ্ছে না। বাঁধ ঠিকভাবে সংস্কার না করায় প্রতিবছর এমন দুর্ভোগ হচ্ছে।’

ফেনী সদর উপজেলার ইজ্জতপুর এলাকার রাশেদা আক্তার বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। প্রশাসন থেকে কিছু খাবার পেয়েছি।’

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বাঁধ ভেঙে গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) থেকে পানি ঢুকতে শুরু করে। এ পর্যন্ত ফেনীতে ১০৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রের ৮২টিতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। মৎস্য ও কৃষি দপ্তরের প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি মাছের ঘের ও পুকুর এবং ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি পুরোপুরি নামলে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ চিত্র পাওয়া যাবে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, পরশুরাম ও ফুলগাজীতে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরে কিছুটা বাড়ছে। বাঁধের ভাঙনের স্থান দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে। পানি কমার পর মেরামত কাজ শুরু হবে।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ জরুরি সামগ্রীর পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় চলছে। কিছু এলাকায় মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান জানান, টানা চার দিন ভারী বৃষ্টির পর আজ আকাশ পরিষ্কার হয়েছে। বেলা ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজানের পানিতে বন্যার বছর না পেরোতেই ফের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনী। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২১টি স্থান ভেঙে পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার বহু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারা দেশে আরও ১০ দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা

‘আজ বুঝলাম, সময়ের কাছে মানুষ কত অসহায়’—মৃত্যুর আগে স্ট্যাটাস স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার

পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার

রামদা হাতে ভাইরাল সেই সাবেক যুবদল নেতাকে গুলি ও পায়ের রগ কেটে হত্যা

জগন্নাথপুরে এসএসসিতে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া রাইদা হতে চায় চিকিৎসক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত