Ajker Patrika

কুবিতে নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং, খুলে গেল অসুস্থ ছাত্রের ক্যানুলা

কুবি প্রতিনিধি 
কুবিতে নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং, খুলে গেল অসুস্থ ছাত্রের ক্যানুলা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের (র‍্যাগিংয়ের) অভিযোগ উঠেছে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে গতকাল বুধবার বিভাগীয় প্রধানের কাছে অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নবীন শিক্ষার্থীরা গতকাল বিভাগে প্রথম দিনের মতো ক্লাস করতে গেলে পাঠদান শেষে আগের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ওই শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। এরপর ক্রমান্বয়ে পরিচয়পর্ব আর আচরণ শেখানোর নামে শুরু হয় র‍্যাগিং এবং গালাগালি। সেই সঙ্গে নবীনদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বেঞ্চের ওপর।

এ সময় ঠিকঠাকভাবে পরিচয় দিতে না পারলে ভুক্তভোগী ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় মারেন ২০২৩-২৪ বর্ষের এক শিক্ষার্থী। ‘আমরা তোদের বাপ লাগি’ বলে হুমকিও দেন। এ ছাড়া শার্টের হাতা ভাঁজ করা কেন বলে এক শিক্ষার্থীর হাতে হ্যাঁচকা টান দিলে তাঁর ডায়ালাইসিস করার জন্য হাতে থাকা ক্যানুলা খুলে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উনারা পরিচয় পর্বের নামে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে উনাদের ব্যাচের শয়ন নামের একজন আমাদের একজনের গায়ে হাত তুলেন। এটা দেখে আমরা ভয় পেয়ে যাই।’

এ বিষয়ে জানতে শয়ন দাসের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। পরে সরাসরি দেখা করতে গেলে তিনি কথা বলবেন না বলে এড়িয়ে যান।

অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস রিপ্রেজেনটেটিভ (সিআর) ইরফান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা শুধু জুনিয়রদের ক্রেস্ট দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে র‍্যাগিংয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুধু ডায়ালাইসিসের সমস্যা যে ছেলের সে রুমে ঢোকার সময় একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে, তখন বিষয়টি ঘটে গিয়েছে। এ ছাড়া অভিযোগগুলো মিথ্যা। এমন কিছু ঘটেনি, আমি পুরোটা সময় সেখানে ছিলাম।’

ওই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী রাকিব ইসলাম বলেন, ‘ওরিয়েন্টেশনের দিন কিছু ক্রেস্ট দেওয়া বাকি ছিল, আমরা সেগুলো দিতে গিয়েছিলাম। এ সময় আমাদের ব্যাচের একজন দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় জুনিয়রদের একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন আমাদের ব্যাচের ওয়াহিদ সেই ছাত্রের শার্টের হাতা ফোল্ড করা দেখে নামিয়ে দিতে বলে এবং নিজেই তা নামাতে যায়। এতে করে ওই ছাত্রের হাতে লাগানো ক্যানুলা খুলে যায়। আমি মাত্র পাঁচ-দশ মিনিটের মতো ক্লাসে ছিলাম। আমার জানা মতে সেখানে কোনো র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি।’

এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র পরামর্শক প্রভাষক আফজাল হোসাইন বলেন, ‘র‍্যাগিংয়ের ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী ও তাঁর বড় ভাই আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষে এসে ঘটনার বিস্তারিত জানান। সে সময় আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাসরুমে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি এবং সিআরদের (ক্লাস রিপ্রেজেনটেটিভ) দায়িত্ব দিই অভিযুক্তদের নাম জানানোর জন্য। যদিও তারা তাৎক্ষণিকভাবে নাম দেয়নি, তবুও আমরা নিজেরা অনুসন্ধান করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছি।’

ছাত্র পরামর্শক জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রশাসন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

কমিটিতে আছেন ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, প্রক্টর আবদুল হাকিম, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম ও সহকারী রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান।

এ বিষয়ে প্রক্টর আবদুল হাকিম জানান, কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। আপাতত অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বদলির আদেশ ছিঁড়ে বরখাস্ত হলেন এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা

বাংলাদেশের সোনালি মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া: গবেষণা

প্রেক্ষাপটবিহীন প্রতিবেদন কি সাংবাদিকতা হতে পারে?

দরপত্র ছাড়াই জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান, এরা কারা

বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন এনসিপি নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত