Ajker Patrika

চট্টগ্রামের আনোয়ারা

অবহেলায় ম্লান পারকির সৌন্দর্য, কমছে পর্যটক

  • পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও পর্যটকদের তেমন পদচারণ নেই পারকি সৈকতে।
  • ঝাউগাছ উপড়ে পড়ে থাকায় হারিয়েছে চিরচেনা রূপ, লাল কাঁকড়ার বিচরণও কম।
মো. ইমরান হোসাইন, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) 
চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সৈকত। পর্যটন শুরু হলেও পর্যটকের সংখ্যা হাতে গোনা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সৈকত। পর্যটন শুরু হলেও পর্যটকের সংখ্যা হাতে গোনা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

একসময় ‘ঝাউবাগান’ নামে বেশ পরিচিত ছিল। ঝাউগাছের ঘন ছায়ায় বসে দেখা যেত জাহাজ চলাচল, লাল কাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ আর সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। এমন সৌন্দর্যের কারণে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সৈকতের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে।

বিশেষ করে চট্টগ্রাম শহর থেকে কম সময়ে ও কম খরচে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ থাকায় দ্রুত জনপ্রিয় হয় পর্যটনকেন্দ্রটি। কিন্তু অযত্নে পড়ে থাকা এবং ঝাউবনের অধিকাংশ গাছ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পারকির সেই সৌন্দর্য ম্লান হয়ে গেছে। পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও সৈকতে দর্শনার্থীদের তেমন পদচারণ নেই।

গত শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, সৈকতে বিভিন্ন স্থানে ঝাউগাছ উপড়ে পড়ে আছে। পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য সারি সারি ছাতা ও বেঞ্চ থাকলেও হাতে গোনা পর্যটক রয়েছেন। লাল কাঁকড়ারও বিচরণ আগের মতো দেখা যায়নি। বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যায় সৈকতের আশপাশে নামে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সৈকত এলাকায় পর্যটকদের যানবাহন রাখার ওপর টোল আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনাও ঘটছে। নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কোনো ট্যুরিস্ট পুলিশও দেখা যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত দুই বছর নানা অব্যবস্থাপনা, অযত্নের কারণে পারকির সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পর পর্যটকেরা এখানে অবস্থান করতে ভয় পান। ভালো আলোর ব্যবস্থাও নেই।

সৈকতের আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৈকতটিতে গত তিন বছরে তিন শতাধিক ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে। এখন আর আগের মতো দর্শনার্থী সৈকতে আসে না। বছর দুই আগেও সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র-শনিবার ছাড়াও অন্য দিনে অন্তত ৫ হাজার দর্শনার্থী পারকি ঘুরতে আসতেন। কিন্তু এসবের বিপরীতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো, পর্যটকদের নিরাপত্তা, আলোর ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন কমেছে পর্যটক। দুটি গণশৌচাগার থাকলেও তা দেখাশোনার অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে আছে।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকত ঘুরে পারকি দেখতে আসা পর্যটক মো. শাহেদুল আলম বলেন, ‘অব্যবস্থাপনার কারণে নানান হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।’

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারা উপকূলকে রক্ষার জন্য পারকি সৈকতের বালিয়াড়িতে ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে ১২ হেক্টর জায়গায় আর্কিটেকচারাল পদ্ধতিতে ঝাউগাছ লাগানো হয়। এরপর ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে ১৭ দশমিক ২ হেক্টর, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৫ হেক্টর এবং ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৫ হেক্টর জায়গায় ঝাউবাগান করা হয়। এই সবুজ বেষ্টনী পারকি সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি থেকেও রক্ষা করত। তবে প্রতিবছর দুর্যোগে সৈকতের ঝাউগাছ কমেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পারকি সৈকতসংলগ্ন এলাকায় ১৩ দশমিক ৩৩ একর জায়গায় ৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দে একটি উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

স্থানীয় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী কাজী জাফর আহমেদ বলেন, ‘সৈকতে বিদ্যুৎ-সংযোগ না থাকায় সন্ধ্যার পরপরই পর্যটকেরা আর সৈকতে থাকছেন না। সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয় আলোর ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।’

পারকি সৈকতের ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘পারকি সৈকতের মূল আকর্ষণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এটি এখন আর নেই। গত তিন বছর অযত্ন, অবহেলা ছাড়া পারকি কিছুই পায়নি। এ ছাড়া সৈকতের প্রবেশপথে টোল আদায় করা নিয়ে পর্যটকেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কেউ কেউ বিরক্ত হয়ে ফিরেও যাচ্ছেন।’

আনোয়ারার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘পারকি সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...