Ajker Patrika

চিকিৎসকের ‘বিশেষ বরাদ্দ’

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০১ জুন ২০২২, ০৮: ৫২
চিকিৎসকের ‘বিশেষ বরাদ্দ’

কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে চিকিৎসা নিতে চট্টগ্রামে আসেন সাবেকুন নাহার (৬০)। তাঁর শরীরে নানা সমস্যা। এ জন্য তিনি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক চিকিৎসককে দেখান। চিকিৎসক তাঁকে ৯টি পরীক্ষা দেন। এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিনি যোগাযোগ করে দেখেন, তার সবগুলো পরীক্ষা করাতে প্রায় ১০ হাজার টাকা লাগবে।

সাবেকুন নাহারের ছেলে রাকিবুল হাসান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি নিজের খরচ টিউশনি করে চালান। বাবা নেই। তাঁর মা আসার সময় ধার করে ৫ হাজার টাকা নিয়ে আসেন। এর মধ্যে গাড়িভাড়া ও চিকিৎসকের ১ হাজার টাকা ভিজিট দিয়ে আছে মাত্র ৩ হাজার। রাকিবুল হাসান পাশের এপিক হেলথ কেয়ার অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখেন, ৯টি রিপোর্ট করাতে লাগবে ৯ হাজার টাকা। আশপাশের প্রায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একই খরচ।

পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ছিল সিবিসি, পিবিএফ স্টাডি, এন্ডোসকপি, ইসিজি, ইকো, ইটিটি, এস-লিপিডি প্রোফাইল, এফবিএস, এস ক্রিটিনাইন এবং ইউএসজি। এ টেস্টগুলো একটি খাতায় লিখে রাকিবুল হাসানকে নিয়ে এ প্রতিবেদক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যোগাযোগ করেন। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের বলা হয়, রাকিবুল হাসানের পরিচিত এক বড় ভাই চিকিৎসক। তিনি এ টেস্টগুলো দিয়েছেন। তখন তাঁরা বলেন, ৯টি রিপোর্ট করাতে ৭ হাজার টাকা লাগবে। আর এপিক হেলথ কেয়ারে যোগাযোগ করা হলে ৬ হাজার টাকা রাখা যাবে বলে জানানো হয়।

চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন থেকে পরীক্ষা আর প্রেসক্রিপশন ছাড়া পরীক্ষা করাতে গেলে দামের এত তফাত কেন তার খোঁজ নিয়েছে আজকের পত্রিকা। জানা গেছে, একজন রোগীকে যখন চিকিৎসক পরীক্ষা দেন প্রতিটি পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের আলাদা কমিশন কেটে রাখে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। কমিশনের হার পরীক্ষা ভেদে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ। মাস শেষে প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওই চিকিৎসককে খামে করে কমিশনের টাকা পাঠায়।

পপুলার ও এপিক হেলথ কেয়ার সেন্টার কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, চিকিৎসকের কমিশন কেটে রাখা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। কমিশন কেটে না রাখলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে তিনি দাবি করেন, সরকার ঘোষিত ১৬টি পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনো কমিশন কেটে রাখা হয় না।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স আছে কি না দেখছি। এগুলো দেখা শেষ হলে গুণগত মান বা রোগীর অভিযোগগুলো নিয়ে কাজ করতে পারব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিশন কেটে রাখার কোনো নিয়ম নেই। রোগীরা অভিযোগ দিলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভুক্তভোগী রাকিবুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের মতো যারা গরিব ঘরের সন্তান, তাদের বাবা-মা চিকিৎসার অভাবেই মারা যান। চিকিৎসকের ভিজিট, সঙ্গে একগাদা রিপোর্টে ১০ হাজার টাকা ব্যয় করার সামর্থ্য কয়জনেরই বা আছে।’

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে অভিযান চালাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এখন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টিও দেখা যেতে পারে। প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালের সামনে সেবার খরচ নির্ধারণ করে থাকলে রোগীরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা নিতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভিকারুননিসার ছাত্রী মেয়েকে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবা, ডুবে প্রাণ গেল দুজনেরই

মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমায় খুন—কীভাবে এক নববধূ হয়ে উঠলেন হত্যাকারী

হাসিনার মতো মাফিয়াকে বিতাড়িত করেছি, এখন আমরাই বড় মাফিয়া: এনসিপি নেতা জুবাইরুল

লন্ডনে সাক্ষাতে ইউনূসকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তাব দিতে পারেন তারেক

ব্রায়ান জেফরি রেমন্ড: সিআইএ কর্মকর্তার মুখোশে যৌন শিকারী এক নিঃশব্দ দানব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত