Ajker Patrika

কুমিল্লায় ৮২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ

লক্ষ্মীপুর ও চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
Thumbnail image

স্মরণকালের মধ্যে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম। এই দুর্যোগের কারণে ২২ আগস্ট থেকে উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়। ধীরগতিতে বন্যার পানি কমতে শুরু করায় গত মঙ্গলবার থেকে সীমিত আকারে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হয়। তবে জলাবদ্ধতার কারণে ৮২টি প্রতিষ্ঠানে এখনো পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে।

বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭০টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭টি ও মাদ্রাসা ৫টি। এসব প্রতিষ্ঠানের ভবনের মেঝে, মাঠ ও রাস্তায় পানি রয়েছে বলে উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে। আর খোলা থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কম বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় ১৭০টি প্রাথমিক, ৫৪টি মাধ্যমিক, ৪৮টি মাদ্রাসা, একটি কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ১১টি কলেজসহ ২৮৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠে যায়। এ ছাড়া চারপাশে পানি উঠে যাওয়ার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বহুতল ভবনগুলোতে মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। এতে সব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে চারপাশে এখনো পানি থইথই অবস্থায় থাকায় সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অনেক অভিভাবক চিন্তা করছেন। আবার অনেক শিক্ষার্থীর বইপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। তারা পড়াশোনা করতে পারছে না।

আলকরা ইউনিয়নের বাকগ্রাম কাজী আহমেদ আলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘২১ আগস্ট থেকে বন্যার কারণে স্কুলের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি এখনো থইথই করছে। তাই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না। পানি নেমে গেলে পাঠদান আরম্ভ করা হবে।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ছাকিনা বেগম বলেন, এখনো ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের মেঝে, মাঠ ও রাস্তায় পানি রয়েছে। ওই বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ৬৭টি বিদ্যালয়ের কিছু বেঞ্চ, টয়লেট ও ফ্লোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পানি নেমে গেছে, সেখানে পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে চারপাশে পানি থাকার কারণে উপস্থিতি একদম কম।

সাপের উপদ্রব: লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও এখন দেখা দিয়েছে সাপের উপদ্রব। গত এক সপ্তাহে সাপের ছোবলে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক মানুষ। অনেকে ভ্যাকসিন না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। রাস্তাঘাট, বাড়িঘরসহ অনেক স্থানে এখনো হাঁটু পরিমাণ পানি রয়েছে। ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বন্যায় অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি বেড়েছে সাপের উপদ্রব।

সাপের ছোবলে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন অলিপুর গ্রামের রবিন হোসেন ও সাহাপুর এলাকার শিপন হোসেন। রবিন বলেন, ‘পানি দিয়ে হাঁটার সময় সাপে আক্রমণ করে। একপর্যায়ে কামড় দেয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি।

পুরো শরীর ঝিঁঝি করছে। দুর্বল লাগছে।’ একই কথা বলেন শিপন। তিনি বলেন, ‘সকালে পুকুরে গোসল করার সময় সাপ পায়ে কামড় দেয়। দুটি দাঁত লেগে রক্ত বের হয়। দ্রুত হাসপাতালে এসে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভর্তি হয়েছি।’

জেলা সিভিল সার্জন আহমদ কবির বলেন, ‘বন্যায় সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। বন্যার পানি কিংবা বাসাবাড়িতে সবাই সচেতন হয়ে চললে সাপের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। হাসপাতালে ভ্যাকসিনের কোনো সংকট নেই। সাপের ছোবলের সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে এলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত