Ajker Patrika

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: আজও ছেলের কথায় কেঁদে ওঠেন কর্নেল দেলোয়ারের বৃদ্ধা মা

ফয়েজ আহমেদ, শাহরাস্তি (চাঁদপুর)
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ২১
পিলখানা হত্যাকাণ্ড: আজও ছেলের কথায় কেঁদে ওঠেন কর্নেল দেলোয়ারের বৃদ্ধা মা

১১২ বছরের জুলেখা বেগম ছেলে ও ছেলের স্ত্রী হারানোর দুঃসহ স্মৃতি ও বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। বার্ধক্যজনিত কারণে মনে রাখতে পারেন না তেমন কিছুই। পরিবারের অন্যদের সহায়তায় চলে নাওয়া-খাওয়া, এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে যাওয়া। স্বামী চলে গেছেন প্রায় দেড় যুগ আগে। এখনো দেলুর (কর্নেল দেলোয়ার) কথা মনে করে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। দুই বছর আগেও জানতে চাইতেন ছেলে ও ছেলের স্ত্রীর খুনিদের ফাঁসি হয়েছে কি না। এখন আর এসব মনে করতে পারেন না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন আর নির্বাক অশ্রু ফেলেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। 
 
জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে বিডিআরের কিছুসংখ্যক বিপথগামী জওয়ানের নৃশংসতায় যে কজন সেনা কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছিলেন, চাঁদপুরের শাহরাস্তির ঠাকুরবাজারস্থ নিজমেহার পাটোয়ারীবাড়ির লে. কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেন তাঁদের একজন। অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা বিডিআর সপ্তাহের দাওয়াতে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে সস্ত্রীক চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। বিডিআরের নিহত ডিজি শাকিল আহমদ ছিলেন তাঁর ব্যাচম্যাট ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। বিডিআর বিদ্রোহের সময় শাকিল আহমদের বাসাতেই স্ত্রী রশনী ফাতেমা আক্তার লাভলীসহ ছিলেন কর্নেল দেলোয়ার। 

লে. কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তির নিজমেহার গ্রামের পাটোয়ারীবাড়িতে গেলে দেখা যায়, তাঁর মা জুলেখা বেগম নির্বাক চেয়ে আছেন। ছেলে ও ছেলের স্ত্রীর কথা বলতেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি। বার্ধক্যজনিত কারণে ভুলে যাওয়ায় নির্বাক অশ্রুপাত ছাড়া আর তেমন কিছুই বলতে পারেননি। 

নিহতের বড় ভাই হাজি আমীর হোসেন পাটোয়ারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আজ ১৩ বছর হলো আমার ছোট ভাইকে দেখি না। খুনিরা তার স্ত্রীকেও মাফ করেনি। আমার মা এখনো দেলু দেলু বলে কাঁদেন।’

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে এক সঙ্গে লে. কর্নেল (অবঃ) দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রশনী ফাতেমাকে মেরে ফেলা হয়আমীর হোসেন পাটোয়ারী আরও বলেন, ‘আমার ছোট ভাইয়ের দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে শারমিন ফাইরুজ লেখাপড়া শেষ করে চট্টগ্রামে স্বামীর সঙ্গে রয়েছে। ছোট মেয়ে নাজিফা ইশমাম ইংল্যান্ডে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্ট্রনে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে।’ 

নিহতের বড় মেয়ে শারমিন ফাইরুজ মোবাইলে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সময় আমি লন্ডন কলেজ অব একাউন্টেন্সিতে সিএ অধ্যয়নরত ছিলাম। আমার ছোট বোন নাজিফা ইশমাম সে সময় চট্টগ্রাম প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। ১০ বছর আগের সেই দুর্বিষহ স্মৃতি আজও হৃদয়পটে ভেসে ওঠে। মানুষের মা কিংবা বাবা বিদায় নিলে একজন হয়তো পাশে থাকে, কিন্তু আমরা এমনই দুর্ভাগা যে দুজনকেই একসঙ্গে হারিয়েছি। আজ আমাদের সবই আছে, শুধু মাথার ওপরের সবচেয়ে বড় ছায়া দুটি হারিয়ে গেছে।’ 

হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে শারমিন ফাইরুজ বলেন, ‘আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আমার বিশ্বাস আমরা ন্যায়বিচার পাব।’ 

প্রসঙ্গত, শাহরাস্তি উপজেলার ঠাকুরবাজারস্থ নিজমেহার পাটোয়ারীবাড়ির মৃত আলতাফ হোসেন পাটোয়ারীর কনিষ্ঠ ছেলে লে. কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেন। এলাকাবাসীর কাছে তিনি একজন কৃতী সেনা কর্মকর্তা ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত ছিলেন। চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে চট্টগ্রামে সপরিবারে থাকতেন তিনি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত