Ajker Patrika

অশান্ত পাহাড়: ‘জুমের কাজ করতে না পারলে খাব কী’

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ২২: ০৫
অশান্ত পাহাড়: ‘জুমের কাজ করতে না পারলে খাব কী’

বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে বিচ্ছিন্নতাবাদী দুই সংগঠনের গোলাগুলিতে সম্প্রতি আটজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনার পর রোয়াংছড়ির গ্রামগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে সেনাবাহিনীর আশ্রয় কেন্দ্রে থাকছেন অনেকে। কাজে বের হতে পারছেন না তাঁরা। ভবিষ্যৎ খাদ্য সংকট নিয়ে আতঙ্কিত এই মানুষেরা। 

রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রিত খামতাং পাড়ার প্রধান কারবারি অংশৈহ্লা খিয়াং (৪৭) বলেন, ‘জুম ও ফলজ বাগানের কাজ করতে না পারলে পরিবার পরিজন নিয়ে খাব কী? নিজেদের জুমের খাদ্য উৎপাদন করতে না পারলে কয় দিন কয় বছর আমাদের খাওয়াবেন স্যার! আমরা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সন্ত্রাসীদের পার্বত্য অঞ্চল থেকে নির্মূল চাই। আমরা নিজের এলাকাতে ও বাড়িঘরের ফিরে যেতে চাই। সে ব্যবস্থা করুন।’ 

আজ রোববার সকালে বিনা মূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা বিতরণের সময় এসব কথা বলেন কারবারি অংশৈহ্লা। বান্দরবান সেনা জোনের আয়োজনে ক্যাম্প স্থাপন করে রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রিত পরিবারগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। 

সেখানে কারবারি অংশৈহ্লা খিয়াং বলেন, ‘আমরা আশ্রয় কেন্দ্রের চার দিন ধরে বিনা কাজকর্মে ঘরবাড়ি ছেড়ে থাকছি। আমাদের স্থায়ী ব্যবস্থা করেন।’ তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দিবাগত রাত্রে আমাদের পাড়ায় দুই গ্রুপের গোলাগুলির আওয়াজ শুনে পাড়াতে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। তাই আমরা সেনাবাহিনীর সহায়তা আশ্রয় পেয়েছি। জানি না কখন এলাকা শান্ত হবে। জুমে ধান লাগানোর সময় চলে এসেছে।’ 

বান্দরবান সেনা জোনের উপ অধিনায়ক মেজর এএসএম মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেনাবাহিনীর দেশ রক্ষা কাজ ছাড়াও মানবতার কল্যাণের কাজ করে যাচ্ছে। দুর্গত মানুষদের খাবার, চিকিৎসা ও কম্বল ইত্যাদি দিয়ে যাচ্ছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ সেবা চলমান থাকবে। জনশূন্য গ্রামগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সন্ত্রাসী যেই হোক কেউ ছাড় পাবে না।’ 

এদিকে আজ দুপুরে রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়ন ৬ নং ওয়ার্ড পাইক্ষ্যং পাড়া থেকে মোট ৪০ পরিবারের ১৬০ জন রোয়াংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান চহাইমং মারমা পরিদর্শন করে তাঁদের খাবার ও কম্বল দেন। 

 বিদ্যালয়ে আশ্রিত স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়রোয়াংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান চহাইমং মারমা আশ্রিতদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আপনারা শত কষ্ট হলেও এখানে নিরাপদে থাকেন। আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা জোরদার করেছেন। দু–একদিনের মধ্য পরিস্থিতি শান্ত হলে গ্রামে চলে যেতে পারবেন।’ 

চিকিৎসা সেবা প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন—সেবা ক্যাম্পের বান্দরবান সেনা জোনের ক্যাপ্টেন মো. আসাদুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান চহাইমং মারমা, রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চহ্লামং মারমাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। 

এ ছাড়া আজ সকালে রোয়াংছড়ি উপজেলা পর্যটন কেন্দ্রের দেবতাকুম পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে চাল, ডাল, মুরগি, পেঁয়াজ, তৈল, সবজি ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। 

রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, স্থানীয়দের সহযোগিতায় গোলাগুলিতে নিহত ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। বর্তমানে গোয়েন্দা নজরদারিসহ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শিগগিরই পরিস্থিতি শান্ত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত