Ajker Patrika

বাঁকখালী নদীতে ভাসল ‘কল্প জাহাজ’, উৎসবে মানুষের উপচে পড়া ভিড়

কক্সবাজার প্রতিনিধি
Thumbnail image

পানিতে ভাসছে পঙ্খীরাজ, ড্রাগন, বিহার-মন্দির, বিশাল হাঁসসহ আরও কত কিছু! এগুলো মূলত বাঁশ, কাঠ, বেত ও রঙিন কাগজের কারুকাজে তৈরি কল্প জাহাজ। এ গুলো ভাসতে ভাসতে নদীর এপার থেকে ওপারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সঙ্গে নেচে গেয়ে জাহাজের ওপরে চলছে বৌদ্ধ কীর্তন। এভাবে প্রতিবছর চলে আসছে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী জাহাজ ভাসা উৎসব। 

আজ রোববার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বাঁকখালী নদীতে ছিল এ উৎসবের আয়োজন। উৎসবে শামিল হতে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা ধর্ম-বর্ণের হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরেরা নদীতে ভিড় করে। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক মহামিলন মেলা। এ বছর ভাসানো হয় আটটি কল্প জাহাজ। 

কক্সবাজার শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলা সদর পার হয়েই বাঁকখালী নদীর চেরাংঘাট। বিকেল ৪টায় এ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লোকে লোকারণ্য নদীর দুপাড়। গান-বাজনা, কীর্তন ও ফানুস ওড়া-উড়িতে মেতে উঠেছে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষেরা। ৫-৬টি কাঠের নৌকার ওপর বসানো হয়েছে একেকটি কল্প জাহাজ। রং-বেরঙয়ের কাগজ, বাঁশ-কাঠ ও বেতের অর্পূব কারুকাজে তৈরি প্রতিটি জাহাজই নজর কাড়ছে। এসব জাহাজের মাইকে বাজছে বুদ্ধ কীর্তন ‘বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘের নাম সবাই বলো রে বুদ্ধের মতো এমন দয়াল আর নাইরে’। 

উৎসবে কক্সবাজার ও আশপাশের বান্দরবান, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎসব দেখতে আসেন। 

রামু সরকারি কলেজের শিক্ষক মানসী বড়ুয়া বলেন, ‘শত বছর ধরে চলে আসা এই উৎসব আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার তাগিদ দেয়। এই উৎসব বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেও সবার অংশ গ্রহণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হয়।’ 

চট্টগ্রাম শহর থেকে উৎসব দেখতে আসা হেমা তঞ্চঙ্গা বলেন, ‘সত্যিই অসাধারণ এক উৎসব। এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না, এ উৎসব কতটা দৃষ্টি নন্দন ও প্রাণবন্ত।’ 

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, মহামতি বুদ্ধ রাজগৃহ থেকে বৈশালী যাওয়ার সময় নাগলোকের মহাঋদ্ধিমান (অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন) নাগেরা চিন্তা করলেন বুদ্ধপূজার এই দুর্লভ সুযোগ তাঁরা হাত ছাড়া করবেন না। সঙ্গে নাগলোকের পাঁচশত নাগরাজ বিমানের (জাহাজের) মতো পাঁচশত ঋদ্ধিময় ফণা বুদ্ধপ্রমূখ পাঁচশত ভিক্ষুসংঘের মাথার ওপর বিস্তার করল। 

এইভাবে নাগদের পূজা করতে দেখে দেবলোকের দেবতারা, ব্রহ্ম লোকের ব্রহ্মরা বুদ্ধকে পূজা করতে এসেছিলেন। সেই দিন মানুষ, দেবতা, ব্রহ্মা, নাগ সবাই শ্বেতছত্র ধারণ করে ধর্মীয় ধবজা উড্ডয়ন করে বুদ্ধকে পূজা করেছিলেন। বুদ্ধ সেই পূজা গ্রহণ করে পুনরায় রাজগৃহে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। 

জাহাজ ভাসা উৎসবের এক পাশে বিশাল মঞ্চ করে চলে ধর্মীয় সভা। উৎসব কমিটির সভাপতি অর্পন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তাপ্তি চাকমা, রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মোস্তফা প্রমুখ। 

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাংলার চিরায়িত ঐতিহ্য। এ জাহাজ ভাসা উৎসব তারই অনন্য উদাহরণ। এ ধরনের উৎসব বাঁচিয়ে রাখতে সবাইকে কাজ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত