Ajker Patrika

নদীগর্ভে বিলীন বাড়িঘর, ঝুঁকিতে আশ্রয় নেওয়া বিদ্যালয় ভবন

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৫৪
নদীগর্ভে বিলীন বাড়িঘর, ঝুঁকিতে আশ্রয় নেওয়া বিদ্যালয় ভবন

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় তীব্র ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বাড়িঘর। কোথাও থাকার ব্যবস্থা না হওয়ায় অনেকে বিদ্যালয় ভবনে বসবাস করতে শুরু করেন। কিন্তু চার মাস যেতে না যেতে সেই বিদ্যালয় ভবনটিও পড়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে। 

জানা যায়, নদীর ভাঙন ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ পর্যন্ত চলে এসেছে। এতে নতুন করে বসবাসের ব্যবস্থা না থাকায় দিশেহারা ৬টি পরিবার। 

২ নম্বর চানন্দী ইউনিয়নের দ্বিতলবিশিষ্ট হেমায়েতপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচতলার সিঁড়ির পাশের রুমে পরিবারের ৬ সদস্যকে নিয়ে বসবাস করেন কালামিয়া (৬৫)। নদীর ভাঙনের বিষয়ে ৬০ বছরের এই বৃদ্ধ বলেন, 'হেমায়েতপুর বাজারের আধা কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল তাঁর বাড়ি। গত বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে নদীভাঙনে বিলীন হয় তাঁর বাড়িঘর। বর্ষা শেষে অন্য কোথাও জমি কিনে বাড়ি করবেন এই আশায় সাময়িকভাবে বসবাসের জন্য ওঠেন এখানে। কিন্তু নদী চলে এসেছে বিদ্যালয় ভবনের একেবারে কাছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছেলে নৌকায় কাজ করেন। এখন হাতে তেমন টাকাও নেই।'

সরেজমিন দেখা যায়, কালামিয়া ছাড়াও বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার তিনটি রুমে বসবাস করে ৪টি পরিবার। নিচের দুটি রুমে বসবাস করে আরও দুটি পরিবার। সবাই শ্রেণিকক্ষের টেবিল জোড়া দিয়ে রাতে ঘুমান। রুমের এক কোণে টেবিলের ওপরে রাখা পাতিলসহ গৃহস্থালি বিভিন্ন জিনিসপত্র। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের জানালাগুলোও ভাঙা। শীতের বাতাস আটকানোর জন্য জানালায় দেওয়া হয়েছে ছেঁড়া কাপড়। বিদ্যালয়ের শৌচাগারটিও ব্যবহারের অনুপযোগী।

এর মধ্যে কীভাবে বসবাস করেন প্রশ্ন করলে জান্নাত ফেরদৌস (৪০) নামের এক গৃহিণী বলেন, 'রাতে শীতের তীব্র বাতাসে থাকা যায় না। জানালা ভাঙা থাকায় দুই পাশ থেকে বাতাস গায়ে লাগে। এক বছরের শিশুকে নিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত নির্ঘুম থাকি। বিদ্যালয়ের একেবারে পাশেই নদী। নদীর তীর ঘেঁষে চলা ট্রলারের আওয়াজে রাতে ঘুম হয় না। মনে হয় যেকোনো সময় ভবনটি নদীতে পড়ে যাবে।'

জান্নাত ফেরদৌস আরও বলেন, 'স্বামী নৌকার মাঝি। বেশির ভাগ সময় নদীতে থাকেন। প্রথমে মনে করেছিলাম বিদ্যালয়ের পাশে রাস্তায় কুঁড়েঘর তৈরি করে বসবাস করবেন। এখন ভাঙনের যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে আরও অনেক দূরে গিয়ে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে, কিনতে হবে জায়গা। কিন্তু অর্থের অভাবে তা-ও সম্ভব হচ্ছে না।' 

এ বিষয়ে হেমায়েতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিরীন আক্তার বলেন, 'নদী এখন বিদ্যালয়ের মাঠে চলে এসেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নদীভাঙনের কবলে পড়বে বিদ্যালয়টি। ভাঙনের কারণে ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের আশপাশের অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ভাঙনের গতি বেশি হওয়ায় তিন মাস আগে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়। এর পরপরই নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশে চানন্দী ইউনিয়নের প্রশাসনিক চেয়ারম্যান এসে বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। পরে স্থানীয়দের অনুরোধে নদীভাঙনের কিছু পরিবারকে এখানে থাকতে দেওয়া হয়েছে।'

এ বিষয়ে চানন্দী ইউনিয়নের প্রশাসনিক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, হেমায়েতপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো এই ইউনিয়নে আরও অনেক স্থাপনা এখন নদীভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। গত মাসে নদীভাঙনে বিলীন হয় জনতাবাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফরিদপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ভূমিহীন বাজারসহ আরও অনেক স্থাপনা নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।' 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত