Ajker Patrika

একাই ডিপোতে আটকা পড়া ২৫ জনের প্রাণ বাঁচান হানিফ

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ২১: ৪৭
একাই ডিপোতে আটকা পড়া ২৫ জনের প্রাণ বাঁচান হানিফ

গত শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর দোকান বন্ধ করতে মালামাল গুছিয়ে নিচ্ছিলেন ডিপোসংলগ্ন চা-দোকানি মোহাম্মদ হানিফ (৫০)। এ সময় ডিপোর উঁচু প্রাচীরের ভেতরে আটকা পড়া দগ্ধ শ্রমিকেরা বের হওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আর্তনাদ শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে একটি কাঠের মই সংগ্রহ করে দেয়ালের সঙ্গে লাগিয়ে একে একে ২৫ জন শ্রমিকের প্রাণ রক্ষা করেন হানিফ।

মোহাম্মদ হানিফের বাড়ি সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকায়। ডিপোর দক্ষিণ পাশের সীমানাপ্রাচীরের সঙ্গে লাগোয়া চা-দোকানটি তাঁর। 

আজ মঙ্গলবার মোহাম্মদ হানিফের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। এ সময় হানিফ তাঁকে জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ডিপোর পকেট গেট বন্ধ করে দিলে শ্রমিকেরা আটকা পড়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরণ ঘটলে আটকা পড়া শ্রমিকেরা আতঙ্কে সীমানাপ্রাচীর ডিঙিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কাঁটাতার ও উঁচু সীমানাপ্রাচীর ডিঙিয়ে বের হতে ব্যর্থ হন তাঁরা। এতে প্রাণভয়ে আর্তচিৎকারে শুরু করেন তাঁরা। বিপাকে পড়া শ্রমিকদের বের করে আনতে দোকানের পার্শ্ববর্তী বাড়ি থেকে কাঠের মই নিয়ে আসেন তিনি। দেয়ালের সঙ্গে মই লাগিয়ে সীমানাপ্রাচীর ডিঙিয়ে আটকা পড়া ২৫ জন শ্রমিককে বের করে নিয়ে আসেন তিনি। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় উদ্ধার করা ২৫ জনের মধ্যে আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠান। 

মোহাম্মদ হানিফ আরও জানান, সন্দ্বীপের মুছাপুর এলাকা থেকে প্রায় দুই বছর আগে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোর দক্ষিণ পাশের সীমানাপ্রাচীরসংলগ্ন কেশবপুর এলাকায় চায়ের দোকান দেন। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ডিপোর পার্শ্ববর্তী লালবাগ এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনার সময় তিনি দোকানে ছিলেন। 

দোকানি হানিফ জানান, উদ্ধার করা আহত শ্রমিকদের অধিকাংশের হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। তাঁদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন। বিস্ফোরণ-পরবর্তী সময়ে আটকা পড়ে আহত হওয়া শ্রমিকদের উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি নিজেও আঘাত পেয়েছেন। 

হানিফের ছেলে রিসাদ জানান, তাঁর বাবা দোকান ফেলে আহত ব্যক্তিদের বাঁচাতে মই নিয়ে ছুটে আসেন। জীবনবাজি রেখে আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করেন। আটকা পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করতে গিয়ে হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেটে গিয়ে তাঁর বাবাও আহত হয়েছেন। 

এ ঘটনা সম্পর্কে কেশবপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মামুনুর রশিদ ও মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, চা-দোকানি হানিফ খুবই সহজসরল। তিনি অনেক দিন ধরে বিএম কনটেইনার ডিপোর পাশে চায়ের দোকান করছেন। স্থানীয় কারও সঙ্গে তাঁর কখনো মনোমালিন্য কিংবা ঝগড়া হয়নি। বিস্ফোরণ-পরবর্তী সময়ে ডিপোতে আটকা পড়া আহত শ্রমিকদের বাঁচাতে তিনি জীবনবাজি রেখে কাজ করেছেন। তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁর সাহসিকতায় সেদিন মৃত্যুর হাত থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন ডিপোর ২৫ জন শ্রমিক। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত