Ajker Patrika

এক সেতুতে দুই গ্রামের মেল বন্ধন

পটিয়া (চট্টগ্রাম), প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২১, ১৮: ১৭
এক সেতুতে দুই গ্রামের মেল বন্ধন

পটিয়ার শ্রীমতী খালের দু’পাড়ের মধ্যবর্তী এলাকার বসতিরা এত দিন পড়েছিলেন বেকায়দায়। দীর্ঘদিন বাঁশের সাঁকোই ছিল পারাপারে তাদের একমাত্র ভরসা। 

এলাকা সূত্রে জানা যায়, সরকারি অর্থায়নে সেতু নির্মাণে কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি। তাই স্থানীয়দের নিজস্ব অর্থায়ন এবং একটি শিল্প গ্রুপের সহায়তায় খালের ওপর নির্মিত হয়েছে ১১১ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫.৫ ফুট প্রস্থের একটি সেতু।

জানা যায়, উপজেলার ১৪ নম্বর ভাটিখাইন ইউনিয়নে ভাটিখাইন-করল গ্রামের মাঝখানে প্রবাহিত হয়েছে শ্রীমতি খাল। এই খালের একপাশে করল গ্রাম, অন্যপাশে ভাটিখাইন গ্রাম, পশ্চিমে ছনহরা ইউনিয়ন। করল গ্রামে রয়েছে দক্ষিণপাড়া করল-ভাটিখাইন জামে মসজিদ, দুই গ্রামের মানুষের পারিবারিক কবরস্থান ও ফকির নানার মাজার, এতিমখানা-হেফজখানা (প্রস্তাবিত), কৃষি জমি। আবার অন্যদিকে ভাটিখাইন গ্রামে রয়েছে প্রাইমারি স্কুল ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল এবং কৃষি জমি। 

ভাটিখাইন-করল গ্রামের মাঝখানে প্রবাহিত শ্রীমতি খালের ওপরের বাঁশের সাঁকো দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াত করছেন হাজারো মানুষ। পাশাপাশি করল গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা বাঁশের সাঁকো দিয়ে ভাটিখাইন গ্রামের প্রাইমারি ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে যাতায়াত করে। এ ছাড়া এক গ্রামের মানুষ আরেক গ্রামে ফসল উৎপাদন করতে যায় ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে। 

বর্তমানে বাঁশের সাঁকোটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রী, কৃষক-পথচারী এবং বয়স্ক মানুষের চলাচলের সময় নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। শ্রীমতি খালের ওপর ভাটিখাইন-করল দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন একটি সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি থাকলেও সরকারি পর্যায় থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই স্থানীয় উদ্যোগে সেতু নির্মাণে দুই গ্রামের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন হয়।

এই কমিটির পক্ষ থেকে স্টিল স্ট্রাকচারের সেতু নির্মাণের সম্ভাব্য খরচ নির্ধারণের লক্ষ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সেতুটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১১১ ফুট, প্রস্থ ৫.৫ ফুট এবং উচ্চতা ২৪ ফুট। 

এ বিষয়ে ভাটিখাইন করল জামে মসজিদ সেতু প্রকল্পের যুগ্ম সম্পাদক এএইচএম কাউছার বলেন, ‘গত ২০  বছর ধরে ভাটিখাইন-করল গ্রামের মানুষ শ্রীমতি খালের উপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ধরনা দিয়েছিলাম। সবাই শুধু আশ্বাস দিয়েছেন। কেউ এগিয়ে আসেনি স্থায়ী সেতু নির্মাণে।’ 

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতো দুই গ্রামের বাসিন্দারা। প্রতি বছর বর্ষায় আসলে পাহাড়ি ঢলে এ সাঁকো টেনে নিয়ে যেতো। আবার স্থানীয়রা বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করত। গত বছর দেশের স্বনামধন্য একটি শিল্প গ্রুপের চেয়ারম্যানের পিএস এর কাছে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের  বিষয়ে অবগত করেন ভাটিখাইন এলাকার বাসিন্দা ও সেতু প্রকল্পের সভাপতি মাস্টার ফারুক হোসেন। গ্রুপটির পিএস শ্রীমতি খালের ওপর বাঁশের সাঁকোটি পরিদর্শন করে স্টিলের অবকাঠামো সেতু নির্মাণের জন্য ১৫ লাখ টাকা অনুদান দেন। 

আবার সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ভাটিখাইন করল গ্রামের বাসিন্দারা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সহায়তা করেন। এতে সর্বমোট সেতু নির্মাণে ১৭  লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন এই সেতু নির্মিত হওয়ায় দুই গ্রামের মানুষ উচ্ছ্বসিত। তাঁদের দীর্ঘ দিনের কষ্ট লাঘব হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত