Ajker Patrika

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে ট্রলারসহ ৮০ জেলে–নাবিক অপহরণ, উৎকণ্ঠায় পরিবার

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১: ৫৮
Thumbnail image
জেলেদের পিট মোড়া করে বসিয়ে রাখার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে দুটি মাছ ধরার ট্রলারসহ ৮০ নাবিক–জেলেকে অপহরণ করেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড। পরে ট্রলার দুটি ভারতের ওডিশার জগৎ সিংহপুর জেলার পারাদ্বীপ উপকূলে নোঙর করা হয় এবং জেলে–নাবিকদের নৌ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এই ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন, সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর ও স্টেক হোল্ডারদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুটি ট্রলারের ৮০ জন নাবিক ও জেলেদেরে উদ্ধারে কূটনৈতিকভাবে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।’

এর আগে গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে খুলনার মোংলা বন্দরের হিরণ পয়েন্টে ফেয়ারওয়ে বয়াসংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁদের অপহরণ করা হয়।

সূত্রে জানা যায়, দুটি ট্রলার সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের যথাযথ অনুমতি নিয়েই সাগরে মাছ আহরণ করতে যায় এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জলসীমায় তারা মাছ ধরার কাজ করছিল। এ সময় ভারতীয় কোস্টগার্ড অবৈধভাবে প্রবেশ করে দুটি ট্রলারসহ ৮০ জন নাবিক ও জেলেকে ধরে নিয়ে যায়।

এদিকে ভারতীয় কোস্টগার্ডের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি পোস্টে জেলেদের পিট মোড়া করে বসিয়ে রাখার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ট্রলারে থাকা ৮০ নাবিক–জেলেকে নিয়ে পরিবারগুলোতে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রাম সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, মাছ ধরার ট্রলার এফভি মেঘনা-৫ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জলসীমার ২১ ডিগ্রি ১৩৫ থেকে ৮৯ ডিগ্রি ১৩.৫ পজিশনে ছিল। এফভি লায়লা-২ ট্রলারটিও একই পজিশনে ছিল।

জানতে চাইলে অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘সোমবার খুলনার মোংলা বন্দরের হিরণ পয়েন্টের অদূরে ফেয়ারওয়ে বয়াসংলগ্ন এলাকা থেকে জাহাজটি দুটিকে ভারতীয় কোস্টগার্ড অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ খবর আসার পর থেকেই নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের উচ্চ মহল থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

ট্রলারের মালিকেরা জানান, অপহরণ করা একটি জাহাজ এফভি মেঘনা-৫ ও অন্যটি এফভি লায়লা-২। ট্রলার দুটিতে নাবিক ও জেলে মিলে ছিলেন ৮০ জন।

এর মধ্যে এফভি মেঘনা-৫ জাহাজে ৩৭ জন নাবিক ও জেলে ছিলেন। অপহরণকালে জাহাজটিতে ১০০ টন মাছ ছিল। এফভি লায়লা-২ জাহাজে ৪৩ জন নাবিক ও জেলে ছিল। অপহরণকালে এফভি লায়লা-২ জাহাজটিতে ৪ হাজর ব্লক (৮০০০ কেজি) বা ৮ টন মাছ ছিল।

এফভি মেঘনা-৫ জাহাজের মালিকানাধীন বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রো লিমিটেড ম্যানেজার (অপারেশন) আনসারুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এফভি মেঘনা-৫ জাহাজে ৩৭ জন নাবিক ও জেলে রয়েছে। জাহাজে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত খাবার রয়েছে।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, ‘অপহরণের শিকার হওয়া ট্রলার দুটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাগরসীমায় ছিল। এ ক্ষেত্রে ভারতীয়দের দাবি সঠিক নয়। ভারতীয়রা তাদের জলসীমায় ট্রলার দুটি মাছ ধরছিল বলে দাবি করে। ভারতীয় কোস্টগার্ড যে স্পটে অনুপ্রবেশের কথা বলছে সেখানকার গভীরতা ২০০ থেকে ৩০০ মিটার। এ গভীরতায় মাছ ধরার উপযোগী ট্রলার বাংলাদেশেই নেই।’

জেলে মিরাজের অপেক্ষায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী

পরিবারে চরম আর্থিক টানাপড়েন। মা মেহেরুন নেসা অসুস্থ। স্ত্রী রেশমা আট মাসের সন্তানসম্ভবা। ট্রলারে উঠার কয়েকদিন আগে স্ত্রীকে চিকিৎসা করিয়েছেন স্ত্রীর কানের দুল বিক্রি করে। ট্রলারে উঠেছেন ২৪ নভেম্বর ভোর ৬টায় কাক ডাকা ভোরে। এই নাবিকের নাম মো. মিরাজ। ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে জিম্মি এফভি মেঘনা-৫–তে স্টাফ হিসেবে কাজ করেন।

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে ট্রলারসহ ৮০ জেলে–নাবিক অপহরণ। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে ট্রলারসহ ৮০ জেলে–নাবিক অপহরণ। ছবি: সংগৃহীত

কর্ণফুলী থানা এলাকার ইছানগরে মিরাজরা ভাড়া বাসায় থাকেন। সন্তান সম্ভাবা হওয়ায় রেশমা বাপের বাড়িতে উঠেছেন। তাদের বাড়ি নোয়াখালীর রামগতিতে। মিরাজরা চার ভাই দুই বোন। সন্তান দুনিয়াতে আসার আগে আর্থিক স্বচ্ছলতা নিয়ে ট্রলার থেকে ফিরবেন মিরাজ—এ বিশ্বাস নিয়ে অপেক্ষায় রেশমা। কিন্তু এর মধ্যে ঘটে গেল অপ্রত্যাশিত ঘটনা।

মিরাজ ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটক হওয়ার তথ্য রেশমাকে মোবাইলে জানিয়েছেন তার (মিরাজ) বড় ভাই মো. বেলাল। কিন্তু রেশমা সেই কথা বিশ্বাস করছেন না বলে জানান বেলাল।

এ বিষয়ে মো. বেলাল বলেন, ‘আমার মা অসুস্থ। ছোট ভাই মিরাজের স্ত্রীও সন্তান সম্ভবা। এ সময় মিরাজের খুব প্রয়োজন ছিল। আমি ভাইকে ফেরত চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত