Ajker Patrika

চিঠি চালাচালিতেই শেষ কার্যাদেশের মেয়াদ!

পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
Thumbnail image

কক্সবাজারের পেকুয়া বাজারের হকার্স মার্কেটের সরকারি খাস জমিতে চারতলা ফাউন্ডেশনের দ্বিতল একটি ভবন (মার্কেট) নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ কোটি ২০ লাখ ৭৩ হাজার ২৫০ টাকা। ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি টেন্ডারের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ আর করপোরেশন এর কার্যাদেশ পায়। একই বছরের ৯ মার্চ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী তাদের সঙ্গে চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এখনো ভবনের নির্মাণকাজ শুরুই করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। হকার ব্যবসায়ীরা নিজেদের দখলে থাকা জমি ছাড়ছে না। তাই তিনবার লিখিত আবেদন করেও জমি বুঝে না পাওয়ার নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি বলে দাবি করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পেকুয়া অফিস সূত্রে ও সংশ্লিষ্ট নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রকল্পের নির্মাণ স্থান নিজেদের কাছে হস্তান্তর করতে ২০২০ সালের ২০ জুলাই নির্বাহী প্রকৌশলী কক্সবাজার বরাবরে লিখিত আবেদন করে এ আর করপোরেশনের ম্যানেজিং পার্টনার আব্দুল রাজ্জাক। স্থান বুঝে পেয়ে নির্মাণকাজ শুরুর আগেই একই বছরের ২৬ আগস্ট হকার্স ব্যবসায়ীদের জন্য দোকান বরাদ্দ ও অস্থায়ী পুনর্বাসনের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন দেন পেকুয়া বাজার দোকান মালিক সমিতি। এদিকে নিজেদের অফিস বরাদ্দের দাবিতে ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন দেন পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। তবে ঠিকাদারের পত্র মোতাবেক ৪ অক্টোবর উপজেলা প্রকৌশলীকে কাজের স্থান (সাইট) হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী। যা আজ অবদি বাস্তবায়ন হয়নি। 

পরে গত ১২ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজের কার্যালয়ে পেকুয়া বাজারের ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে একটি সভা করেন। এতে নতুন ভবন নির্মাণ স্থানে অস্থায়ী শেড অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। ১৬ নভেম্বর নির্মাণ স্থানে খুঁটি দিয়ে লাল পতাকা টাঙান এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী। কিন্তু সরকারি জমি না ছেড়ে উল্টো হকার ব্যবসায়ীরা পুনর্বাসনে দাবিতে ২১ নভেম্বর মানববন্ধন করেন। ২৬ নভেম্বর পেকুয়া বাজার হকার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শফি হকার্স ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন ও দোকান বরাদ্দের দাবিতে উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে একটি লিখিত আবেদন দেন। এভাবে চিঠি চালাচালিতে কেটে যায় আরও সময়। কিন্তু কোনোভাবে জমির দখল ছাড়ে না হকার ব্যবসায়ীরা। এর  পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে হাইকোর্টের আইনজীবী প্রবীর হালদার এলজিইডির সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভূমি ও পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলীকে আইনি নোটিশ দেন। এতে সময়ক্ষেপণের কারণে তাদের আর্থিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করেন। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ফের উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে নির্মাণকাজের স্থান হস্তান্তরের জন্য লিখিত আবেদন দেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং পার্টনার মো. আব্দুল রাজ্জাক। জমি হস্তান্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২৬ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত আবেদন করেন তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম। পরে গত ৭ এপ্রিল একই আবেদন করেন বর্তমান উপজেলা প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) কমল কান্তি পাল। 

এত আবেদন, চিঠি চালাচালি। কিন্তু ফলাফল শূন্য। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ কার্যাদেশের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ আর করপোরেশনের দায়িত্বশীল এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শক্তিশালী একটি চক্র স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভবন নির্মাণের স্থানটি দখল করে রেখেছে। নির্মাণকাজের জন্য মালামাল, যন্ত্রপাতি কিনে ও জনবল বসিয়ে রেখে আমাদের কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমাদের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনকে জমি বুঝিয়ে দিতে একাধিকবার বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নির্মাণ স্থান বুঝে পেলে আমরা যেকোনো মুহূর্তে কাজ শুরু করতে পারতাম।

পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন বলেন, হকার মার্কেটের ঝুপড়ির স্থানে ভবনটি নির্মাণ হলে বাজারের অবকাঠামোগত উন্নতি হবে। এর সুফল হকার ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা পাবেন। কিন্তু হকার্স সমিতির কতিপয় নেতা পুনর্বাসনের দাবি তুলে ভবনটি হতে দিচ্ছে না বা নির্মাণকাজে আরম্ভে বিলম্ব ঘটাচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) কমল কান্তি পাল বলেন, করোনাকালীন সময়ে বিষয়টি নিয়ে যথাযথভাবে আগানো যায়নি। আমাদেরও একটু সমন্বয়ের ঘাটতি ছিল। যদিও ওই সময়টায় আমি পেকুয়ার দায়িত্বে ছিলাম না। ঠিকাদার আবেদন করলে ভবন নির্মাণকাজটির কার্যাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হবে। জমির দখলও দ্রুত তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, পেকুয়ায় আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি জানা ছিল না। তারপরও খোঁজখবর নিয়ে জটিলতা নিরসনে কাজ করব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত