Ajker Patrika

বাড়ছে শীতজনিত রোগী, বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা

চাঁদপুর ও মতলব দক্ষিণ প্রতিনিধি
Thumbnail image
হাসপাতালে আক্রান্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরে প্রচণ্ড শীতে নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চলতি মাসের ১৩ দিনে ৬৯৩ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

অন্যদিকে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। গত ১৫ দিনে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৫ হাজার রোগী। এর মধ্যে ৮০ ভাগই শিশু।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কিছু শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিনই গড়ে অর্ধশতাধিক শিশু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আবার অনেক শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে।

এ সময় কথা হয় সদর উপজেলার বাগাদি ইউনিয়নের গৃহবধূ সামিয়া আক্তারের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, তার শিশু সন্তানের বয়স ৪ মাস। ঠান্ডার কারণে শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমে বাড়িতে চিকিৎসা নিলেও বেড়ে যাওয়ার কারণে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে চিকিৎসা দেওয়ার পর এখন অনেকটা সুস্থ।

শিশু ওয়ার্ডের আরও কয়েকজন শিশুর অভিভাবক জানান, প্রথমে শিশুদের সর্দি, কাশি ও জ্বর আসে। কয়েক দিন যাওয়ার পর নিউমোনিয়া দেখা দেয়। বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও ভালো না হওয়ায় হাসপাতালে এনে ভর্তি করান। কেউ ১০ দিন আবার কেউ এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালে আক্রান্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালে আক্রান্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সদরের তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের বাসিন্দা রাজিয়া সুলতানা জানান, তার শিশুর গত কয়েক দিন সর্দি ও কাশি ছিল। একই সঙ্গে বুকের মধ্যে শব্দ হতো। নিউমোনিয়ার লক্ষণ মনে করে তিনি তার শিশু সন্তানকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করান।

জানতে চাইলে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক একেএম মাহবুবুর রহমান বলেন, শীতের কারণে হাসপাতালে নিউমোনিয়া, রোট ভাইরাস জনিত কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগী বেড়েছে। তবে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি নয়, আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। চিকিৎসা সেবা দিতে ওষুধেরও কোন ধরনের সমস্যা নেই। আমরা চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছি। তবে শিশুদের ঠান্ডা থেকে রক্ষায় অধিক যত্ন এবং শুষ্ক রাখারা পরামর্শ দেন তিনি।

হাসপাতালে আক্রান্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালে আক্রান্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ দিনে শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু ভর্তি হয়েছে ৪ হাজার ১২৫ জন। তার মধ্যে চাঁদপুর সদরের ২৬৬ জন, কচুয়ার ২৮৭, মতলব উত্তরের ১৪৫, মতলব দক্ষিণের ১১০, ফরিদগঞ্জের ১৪০, হাজীগঞ্জের ১৬৫, ব্রাহ্মণপাড়ার ৮৫, বুড়িচংয়ের ১৬৪, চান্দিনার ২৫৮, কুমিল্লা সদরের ১৫৬, কুমিল্লা সদর দক্ষিণের ১২৪, কুমিল্লার বরুড়ার ১৯৩, লক্ষ্মীপুর সদরের ১৩২ এবং ও রামগঞ্জের ৯৭ জন। বাকিরা এসেছে লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ওয়ার্ড ডায়রিয়া রোগীতে ভরপুর। হাসপাতালের বারান্দায়ও অনেক রোগী। রোগীদের অধিকাংশই শিশু। চিকিৎসকেরা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

হাসপাতালে আক্রান্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালে আক্রান্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ বিষয়ে হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা ডা. আল ফজল খান বলেন, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও শরীয়তপুরের প্রায় ৫৮টি উপজেলা থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন রোগীরা। বেশির ভাগ রোগীই কয়েক ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। প্রতিদিন আড়াই শ থেকে তিন শ রোগী ভর্তি হয়। তাদের স্যালাইনসহ বিভিন্ন ওষুধপত্র বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এখানে ৮০ ভাগ রোগীই শিশু। ভর্তির এ সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তিনগুণ বেশি।

ডা. আল ফজল খান রোগী ও অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, সবাই একসঙ্গে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে না গিয়ে নিকটের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন। ঠান্ডা, দূষিত পানি এবং দূষিত খাবার খাওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত