Ajker Patrika

আড়াই মাস হলো বন্ধ হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার

ফেনী প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ০১
Thumbnail image

দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে বন্ধ পড়ে আছে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার। শহরের মাত্র চারটি বেসরকারি ক্লিনিকে সেবাটি চালু থাকলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে হতদরিদ্র মধ্য ও নিম্নবিত্ত রোগীরা। 

ফেনী জেলার ছয়টি উপজেলাসহ আশপাশের খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, নোয়াখালীর বসুরহাট, সেনবাগ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ চার জেলার মানুষের একমাত্র ভরসা ফেনী জেনারেল হাসপাতাল। তাই রোগীদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমে ৬ শয্যা চালু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে চাহিদা বাড়ায় ধীরে ধীরে ১০ শয্যায় উন্নীত করে তিন শিফটে প্রতিদিন ৩০ জন রোগীর নিয়মিত ডায়ালাইসিস হয়ে আসছিল। পাশাপাশি একজন কনসালটেন্টসহ দুজন মেডিকেল অফিসারের অধীনে ৯ জন নার্স শিফট অনুযায়ী কর্মরত ছিলেন। কিন্তু শুধু কেমিক্যাল রিএজেন্ট না থাকায় বর্তমানে সেবা দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানায় হাসপাতাল সূত্র। 

হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে সেন্টারটি চালাচ্ছিলাম। এতে অনেক গরিব, অসহায়, দুস্থ, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত রোগীরা এখানে স্বল্পমূল্যে সেবা পেতেন। বেসরকারিভাবে এর খরচ অনেক বেশি পড়ে। কিন্তু বরাদ্দের অভাবে বর্তমানে সেন্টারটি বন্ধ রয়েছে। 

সেবা নিতে আসা স্থানীয় ফখরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের রক্ত পরিশোধন সেবাটি বন্ধ হয়ে আছে দীর্ঘদিন। তাঁর বাবা কিডনির জটিল সমস্যায় রয়েছেন। এখন ওনাকে সপ্তাহে দুবার বাধ্যতামূলক রক্ত পরিশোধন করাতে হয়। সরকারি হাসপাতালে খরচ কম, তাই কবে খুলবে সেন্টারটি সেই খবর জানতে বারবার হাসপাতালে ছুটে আসেন তিনি। 

আশরাফ হোসেন নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, সরকারি হিসাবের তুলনায় ডায়ালাইসিস খরচ বেসরকারি হাসপাতালে পাঁচ-ছয় গুণ বেশি করতে হয়। এখন এত খরচ কীভাবে মেটাবেন সে নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায়। তাঁর দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেবা বন্ধ রাখার কারণে বেসরকারি ক্লিনিকগুলো সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানুষের প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, পাশাপাশি ভোগান্তি তো আছেই। 

স্থানীয় নুরুল আফসার বলেন, কিডনি রোগীরা সপ্তাহে ৫০০ টাকা করে দুই বার ১ হাজার টাকায় ফেনী জেনারেল হাসপাতালে সেবা পেতেন। কিন্তু এটি বন্ধ থাকায় বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস খরচ পড়ছে প্রতিবারে ৩ হাজার টাকা। এতে রোগীর স্বজনেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। অনেক রোগী আর্থিক সংকটের কারণে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে চলেছেন।   

এদিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগের প্রধান কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জয়দেব সাহা বলেন, কিডনি জটিলতাপূর্ণ রোগীর গড়ে সপ্তাহে দুবার রক্ত ডায়ালাইসিস করতে হয় বাধ্যতামূলক। এটি বাধাগ্রস্ত হলে অনেক বড় বিপদ। যেটি কখনো কাম্য না। আর কিডনি ও রক্ত পরিশোধন করা না গেলে হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করছেন। 

তবে দ্রুত সমস্যার সমাধানে চেষ্টা চলছে বলে জানান ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী। 

মিয়াজী বলেন, জেলাভিত্তিক জেনারেল হাসপাতালের ডায়ালাইসিস সেন্টারে কেমিক্যাল রিএজেন্ট বা জনবলও দেওয়ার কোনো খাত নেই। তবু তারা খাত তৈরি করে অন্য স্থানের জনবল এই সেন্টারে কাজে লাগাচ্ছেন, শুধু মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে। এখন রি-এজেন্ট আনার চেষ্টা চলছে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালিও চলছে। 

ভুক্তভোগী পরিবারদের প্রত্যাশা, ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে কর্তৃপক্ষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত