Ajker Patrika

হাতিয়ায় কৃষি কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই বাড়তি দামে সার কিনতে হলো কৃষককে

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
হাতিয়ায় কৃষি কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই বাড়তি দামে সার কিনতে হলো কৃষককে

৫০ কেজির এক বস্তা ইউরিয়া সারের সরকার-নির্ধারিত দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা। অথচ নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় তা বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার টাকায়। অভিযোগ উঠেছে, এই বাড়তি দাম নেওয়া হয়েছে হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ সবুজের উপস্থিতিতে। তবে তাঁর দাবি, দেড় হাজার নয়, মনিটরিং কমিটির নির্ধারিত দাম ১ হাজার ৪৭০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।

হাতিয়ার তমরুদ্দি বাজারে গত বুধবার বিকেলে এক কৃষকের ধারণ করা ভিডিওতে সার ডিলারের দোকানে কৃষি কর্মকর্তা বাছেদকে সারের জন্য টাকা নিয়ে কৃষকদের টোকেন দিতে দেখা যায়। এ সময় সার ডিলার মোসলেউদ্দিন নিজাম যাঁদের কাছে ভাংতি নেই তাঁদের খুচরা রেখে যেতে বলছিলেন। ভিডিওটি আজকের পত্রিকার কাছেও এসেছে।

বাড়তি দাম নেওয়ার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন তমরুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও কৃষক এমরান হোসেন। তিনি বলেন, ‘সেদিন আমি ৩ হাজার টাকায় দুই বস্তা সার কিনেছি। টাকা নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাই আমাকে টোকেন দিয়েছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা বাছেদ বলেন, ‘লোকজন সারের জন্য গ্যাঞ্জাম করছিল। আমি পরিস্থিতি দেখে সেখানে যাই।’ বাড়তি দামে সার বিক্রির ভিডিওর বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, এক বস্তা সার ১ হাজার ৫০০ টাকায় নয়, বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৪৭০ টাকায়। হাতিয়া দ্বীপে সার আনতে বাড়তি পরিবহন খরচ হওয়ায় উপজেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটি এই দাম নির্ধারণ করেছে।

তবে হাতিয়া উপজেলার সার বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাড়তি দামে সার বিক্রির কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। বেশি দামে বিক্রির ঘটনা সত্য হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

জানা গেছে, আমন মৌসুমে হাতিয়ায় প্রায় ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এ জন্য অন্তত ১ হাজার ২০০ টন সারের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় বরাদ্দ করেছে ৫০০ টন। উপজেলায় ১০ জন সার ডিলার রয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে সাব-ডিলার রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সারসংকটকে পুঁজি করে ডিলাররা বেশি দামে সার বিক্রির আশায় সাব-ডিলারদের সার দেন না। সার বিক্রির বাড়তি টাকা ভাগাভাগি হচ্ছে।

হাতিয়া উপজেলা ভূমিহীন কৃষক সমিতির সভাপতি মাইনউদ্দিন লেলিন বলেন, হাতিয়ার অধিকাংশ বাজারে সার নেই। যাদের কাছে সার আছে, তারা ৫০ কেজির বস্তা সুযোগ বুঝে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করছে। খুচরা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়।

ইউরিয়া সারের কেজিপ্রতি দাম ডিলার পর্যায়ে ২৫ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ২৭ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বলেন, এমন হওয়ার সুযোগ নেই। ঘটনাটি যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকার-নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রির সুযোগ নেই। কৃষকেরা যাতে ন্যায্য দামে সার পান, সেই ব্যবস্থা করা হবে। বাড়তি দামে সার বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত