Ajker Patrika

চাঁদপুরের হাইমচরে বছরে ৫০ কোটি টাকার পান বিক্রি

চাঁদপুর প্রতিনিধি
হাইমচর উপজেলার উত্তর আলগী ইউনিয়নের মহজমপুর গ্রামের চাষি মোহাম্মদ হারুনের পানের বরজ। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাইমচর উপজেলার উত্তর আলগী ইউনিয়নের মহজমপুর গ্রামের চাষি মোহাম্মদ হারুনের পানের বরজ। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের উপকূলীয় উপজেলা হাইমচরের অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পান। প্রতিবছর এখানকার পান বিক্রি হয় প্রায় ৫০ থেকে ৫২ কোটি টাকায়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই পান সরবরাহ করা হয় পাশের উপজেলা ও জেলার বাজারেও। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাইয়ে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পানচাষিরা সরকারের কাছ থেকে কখনো কোনো প্রণোদনা বা সহায়তা পাননি—এমনটাই বলছেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা।

ভৌগোলিকভাবে হাইমচরবাসী মেঘনা নদীর পূর্ব ও পশ্চিম দুই পাড়ে বিভক্ত। পূর্বপাড়ের লোকজন মূলত কৃষিকাজ এবং পশ্চিমের চরাঞ্চলের বাসিন্দারা মাছ ধরা ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলে মহানলী, চালতা কোঠা, নল ডোগ, সাচি জাতের পান চাষ করে পরিবার চালাচ্ছেন হাজারো মানুষ। অনেকেই বংশপরম্পরায় যুক্ত এই আবাদে।

উপজেলা ঘুরে এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীত মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি সময়জুড়ে প্রতিদিনই চলে পান সংগ্রহ ও বিক্রি। আগে পানের বাজার ছিল জেলা শহরের বাইরে, এখন হাইমচর উপজেলা সদরের কাছেই গড়ে উঠেছে পানের আড়ত, যেখানে প্রতিদিন চলে পাইকারি বেচাকেনা।

উত্তর আলগী ইউনিয়নের মহজমপুর গ্রামের চাষি ফারুকুল ইসলাম গাজী দেড় একর জমিতে পান চাষ করেন। প্রতিদিন তাঁর বরজে কাজ করেন তিন-চারজন শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাঝেমধ্যে বড় ধরনের ক্ষতি হয়। তবে যখন দাম ভালো থাকে, তখন ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে আসে। কিন্তু কোনো দুর্যোগে কখনো সরকারি সহায়তা পাইনি।’

বরজের একাধিক শ্রমিক জানান, অল্প বয়সেই তাঁরা পান চাষের কাজ শিখেছেন এবং এ কাজ দিয়েই চলে তাঁদের সংসার।

একই গ্রামের আরেক চাষি মোহাম্মদ হারুন বলেন, ‘আমাদের বাবারা এই বরজ রেখে গেছেন। এখন আমরাই আবাদ করছি। পানে রোগ দেখা দিলে উৎপাদন কমে যায়, শিকড় পচে নষ্ট হয়, আবার নতুন করে শিকড় লাগাতে হয়। কোনো প্রশিক্ষণ পাই না, আগেরদের দেখে কাজ শিখে নিচ্ছি।’

হাইমচরের পান ব্যাপারী মো. রাসেল দুই দশক ধরে এই ব্যবসায় যুক্ত। তিনি বলেন, ‘হাইমচরের বরজ থেকে পান কিনে স্থানীয় বাজারে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করি। বাবুরহাট, মহামায়া, চান্দ্রা বাজারসহ আশপাশের শতাধিক ব্যবসায়ী এ পেশায় যুক্ত।’

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার কামতা গ্রামের চেরাগ আলী ৩০ বছর ধরে পান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ‘প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার আমি বিভিন্ন বাজারে পান বিক্রি করি। হাইমচর থেকে প্রতিবার অর্ধলাখ টাকার পান কিনি। এই ব্যবসার ওপরই আমার সংসার চলে।’

হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার জানান, ‘চলতি বছর হাইমচরে ২৩৫ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। ছোট-বড় বরজের সংখ্যা ১ হাজার ৭২। প্রতিবছর প্রায় ৫০–৫২ কোটি টাকার পান বিক্রি হয়। দুর্যোগ বা রোগ দেখা দিলে কৃষকদের পাশে থাকি, পরামর্শ দিই। প্রণোদনার প্রয়োজন হলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত পান চাষে কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত