Ajker Patrika

নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামুতে তিন ডাকাত দলের গোলাগুলি, আহত ৩

নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি  
উদ্ধার করা বুলেট ও হাইজ্জার মুরার কালভার্ট। ছবি: সংগৃহীত
উদ্ধার করা বুলেট ও হাইজ্জার মুরার কালভার্ট। ছবি: সংগৃহীত

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বান্দরবানের রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি ছোট গর্জন খালে তিনটি ডাকাত দলের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রামু উপজেলার দুর্গম গর্জনিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় দুই উপজেলার ১৪ গ্রামে রাতে পাহারা বসিয়েছেন এলাকার মানুষ। বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশ বাইশারীর তীরের মগের বিল গ্রাম থেকে রাইফেলের আটটি বুলেট উদ্ধার করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল রাত ৯টা থেকে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দে কেঁপে ওঠে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের উত্তর বড়বিলের চার গ্রাম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দক্ষিণ বাইশারীর অন্তত ১০ গ্রাম। এ ঘটনায় অনেকের ঘুম ভেঙে ভারী অস্ত্রের গুলির বিকট শব্দে। আবার অধিকাংশ মানুষ ঘুমাতে যাওয়ার আগে কাঁপছিলেন আতঙ্কে।

স্থানীয় বাসিন্দা ছাবের আহমদ বলেন, তখন তিনি রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের উত্তর বড়বিলের জারুরিয়া ঝিরি বিলে বোরো ধানের সেচ দিচ্ছিলেন। রাত তখন ৯টা, হঠাৎ ২০–২২ জন মুখোশধারী যুবক তাঁকে মারধর শুরু করেন। তাঁর হাত বেঁধে মারধর করে ডাকাত জুনায়েদ ওরফে জুনু ডাকাতের বাড়ি দেখিয়ে দিতে বলেন।

অপারগতা প্রকাশ করায় বন্দুকের বাট দিয়ে আঘাত করতে থাকেন যুবকেরা। পরে তাঁর কাছে থাকে দুটি মোবাইল ফোন ও ধান বিক্রির ৩ হাজার ৭০০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পূর্ব দিকে চলে যান।

আবদু শুক্কুর সওদাগর নামের এক বৃদ্ধা বলেন, রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে ২০–২২ জন মুখোশপরা অস্ত্রধারী তাঁর দোকানে এসে মোবাইল কেড়ে নেয়। সঙ্গে আরও দুজনের।

আবদু শুক্কুর বলেন, ডাকাত দল একপর্যায়ে আবদু শুক্কুরকে ধরে পাশের হাইজ্জা মুরার কালভার্টের পাশে নিয়ে প্রথমে এক রাউন্ড গুলি করে। এতে তিনি আহত হন। অপর আহত ব্যক্তিকে শাহিন বাহিনীর সদস্যরা কাঁধে করে নিয়ে যেতে দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তাঁর নাম তৎক্ষণাৎ জানা যায়নি।

লিয়াকত আলী, আবু ছৈয়দ, মুহাম্মদ জুনাইদ বলেন, আগত ২০–২২ জন যুবক সবাই ডাকাত শাহিন গ্রুপের সদস্য। তাঁরা রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের উত্তর বড়বিলের শুক্কুরের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গর্জন খালের পূর্ব পাড়ে জুনাইদ প্রকাশ জুনু ডাকাতের বাড়ির দিকে বন্দুক তাক করে প্রায় ৫০–৬০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় বাইশারীর মগের বিলের অন্তত অর্ধশত বাড়িঘর থেকে মানুষ অন্যত্র সরে যান।

উদ্ধার করা বুলেট। ছবি: সংগৃহীত
উদ্ধার করা বুলেট। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে কথা বলতে ডাকাত আখ্যা দেওয়া সেই শাহিনুর রহমান শাহিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র দাবি করেছে, আসলে এসব জুনু ডাকাত তথা জুনাইদ ডাকাতের কারিশমা। তাঁরা শতাধিক রাউন্ড গুলি করেছেন আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য। শাহিন ভাই এসেছেন মনে করে জুনু ডাকাত ও তাঁর সতীর্থ রুস্তম ও কামাল ডাকাতের লোকজনকে খবর দেন। পরে ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

সূত্র আরও জানায়, জুনু ডাকাত গং মিয়ানমারের সুপারি, গরুসহ নানা পণ্য লুট করে চাঁদা নেয়। আর বাড়িঘর, দোকানপাট ও বাজারে ডাকাতি করাই তাঁর মূল কাজ। দিনে লোকদেখানো নামাজ পড়ে জুনু ডাকাত ও তাঁর গডফাদারেরা।

অন্যদিকে নেজাম ডাকাতের একটি সূত্র জানায়, এসব তারা করেননি। গতকাল রাতের গোলাগুলি শাহিন ডাকাত ও জুনু ডাকাতের মধ্যে হয়েছে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে।

এ বিষয়ে বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলম কোম্পানি বলেন, ডাকাত মূলত কারা তিনি বলতে পারবেন না। তবে গতকাল রাতে অন্তত ৫০–৬০ রাউন্ড গুলির শব্দ তিনি শুনেছেন। এতে তাঁর এলাকার ৯–১০ গ্রামের মানুষ আতঙ্কে ছিলেন। তিনি নিজেও আতঙ্কে ছিলেন বলে জানান তিনি।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাশরুল হক বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে অনেক কিছু জেনেছেন। আটটি বুলেট উদ্ধার করেছেন। যা রামুর গর্জনিয়ার অংশ থেকে উদ্ধার করা হয়। এসব এসএমজির বুলেট বলে তাঁর ধারণা। পরে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে গোলাগুলির ঘটনাস্থল রামুর গর্জনিয়া এলাকা।

রামু থানার ওসি ইমন কান্তি চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থল উপজেলা সদর থেকে বেশ দূরে। তাঁকে কেউ ঘটনার কথা জানায়নি। গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজেস বড়ুয়া বলেন, গোলাগুলির ঘটনা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দক্ষিণ বাইশারী গ্রামে, রামুতে নয়।

বাইশারী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের আইসি আবু সায়েম বলেন, গোলাগুলির ঘটনা তাঁর এলাকায় নয়। রামু থানার অংশে। তবে গুলি ছোড়া হয় রামুর শুক্কুরের দোকান থেকে, তাঁর এলাকা বাইশারীর মগেল বিল গ্রামে। মাঝখানে গর্জন খাল দুই এলাকাকে আলাদা করেছে।

সচেতন মহল বলে, রামু না নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ঘটনাস্থল সেটি মুখ্য বিষয় নয়, মানুষ এখন আতঙ্কে। তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়াই এখন সময়ের দাবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত