Ajker Patrika

স্থানীয় নৌযানে সহজ যোগাযোগ

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২১, ১২: ৫৮
Thumbnail image

রাঙামাটিতে তৈরি স্পিডবোটের ফাইবার গ্লাস বডি। দ্রুতগতির এই নৌযানগুলো স্থানীয় যোগাযোগব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। 

শহরের আসামবস্তি এলাকায় স্থানীয় দুই উদ্যোক্তা তৈরি করেছেন এই বোট। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে সুপার বোট ওয়ান ও রাজদ্বীপ মেরিন সার্ভিস। উদ্যোক্তারা বলেছেন, সব ধরনের যাত্রীর কথা মাথায় রেখে বানানো হচ্ছে এ বোটগুলো। কাপ্তাই হ্রদে এগুলো নামানো হলে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি বিশেষ সুবিধা পাবেন।

জেলা সদরসহ ১০ উপজেলার মধ্যে কাউখালী, রাজস্থালী ও কাপ্তাই ছাড়া বাকি উপজেলায় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌযান। একসময় বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকলের অনেক এলাকায় সকালে গিয়ে বিকেলে সদরে ফেরা সম্ভব ছিল না। সেখানে দিনের কাজ শেষে সূর্য ডোবার আগেই রাঙামাটিতে ফেরা সম্ভব হচ্ছে স্পিডবোটের কল্যাণে।

স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি ও রাজদ্বীপ মেরিন সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী জয়ন্ত চাকমা বলেন, ‘বিভিন্ন আইনকানুন দেখিয়ে নৌ কর্তৃপক্ষ এগুলো চলতে বাধা দিচ্ছে। নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ হলে আমরা নিবন্ধন করে জনসেবা করে যাব।’ 

আসামবস্তি সেতু এলাকায় সুপার বোট ওয়ান কারখানায় ইতিমধ্যে ২৪টি বোটের বডি তৈরি করা হয়েছে। বডিগুলোয় মেশিন বসানো হলে যাত্রী পরিবহনে হ্রদে নামানো হবে। এতে যাত্রী ধারণক্ষমতা আটজনের। ১ ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে এর ২ লিটার অকটেন প্রয়োজন হবে। নতুন ইঞ্জিনসহ বোটের দাম পড়বে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা।

সুপার বোট ওয়ানের উদ্যোক্তা দ্বীপাঞ্জন দেওয়ান (৩০) বলেন, সম্পূর্ণ ফাইবার গ্লাস দিয়ে তৈরি এগুলো পানিতে ডুববে না। দুর্ঘটনায় বোটটি ভেঙে গেলেও বডিগুলো ভেসে থাকবে। সেখানে ধরে যাত্রীরা জীবন রক্ষা করতে পারবেন। তা ছাড়া এটি ফুয়েল–সাশ্রয়ী এবং দ্রুতগতির। 

কারখানার প্রধান ফাইবার গ্লাস টেকনিশিয়ান দর্পণ চাকমা (২৮) বলেন, ‘রাঙামাটিতে পর্যটকবাহী ইঞ্জিনচালিত অধিকাংশ নৌকা কাঠের তৈরি। তিন–চার বছর পর নষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া পাহাড়ে এখন নৌকা তৈরির গাছ পাওয়া যায় না। পরে আরও সংকট হবে। তাই ফাইবার নৌকার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’

দর্পণ চাকমা জানান, তাঁদের কারখানায় মাসে আটটি ফাইবার বডি তৈরি করা যায়। এখানে কায়াক বডিও তৈরি হচ্ছে। এসব কায়াক রাঙামাটি ছাড়াও ঢাকা–চট্টগ্রামে নেওয়া হচ্ছে।

রাজদ্বীপ মেরিন সার্ভিস কারখানায় তৈরি হচ্ছে ফাইবার গ্লাসের রকেট বডি। এগুলো সুপার ওয়ান বোটের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে চলবে। এর নির্মাণশ্রমিক মো. আবুল (৪৫) বলেন, একটি বডি তৈরি করতে সময় লাগে ৭ থেকে ১০ দিন। দক্ষ শ্রমিক হলে সময় আরও কম লাগবে।

উদ্যোক্তা জয়ন্ত চাকমা জানান, ১০–২২ জন ধারণক্ষমতার স্পিডবোটের বডি তৈরি হয়। আকার অনুযায়ী একটি রকেট বডি ২ থেকে ৪ লাখ টাকায় অর্ডার নেওয়া হয়। এর ইঞ্জিনের দাম সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা। বাজারে এর চেয়েও বেশি দামের ইঞ্জিন আছে।

রাঙামাটি স্পিডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রিতম চাকমা বলেন, ‘সরকারি অফিসগুলোয় এখন প্রিয় বাহন স্পিডবোট। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোয় এগুলো এখন জনপ্রিয়। আগে কাঠের বোটে রাঙামাটি শহরে আনার পথে অনেক রোগীর মৃত্যু হতো। এখন দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া সহজ হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাঙামাটিতে নৌ যোগাযোগব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। রাঙামাটির কোনো এলাকা এখন আর দুর্গম নয়। পাহাড়ে সড়ক ও নৌ যোগাযোগের যে উন্নয়ন, তা সরকারের আন্তরিকতার কারণে সম্ভব হয়েছে।’ এর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যা যা সহযোগিতা দরকার, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

বাঘাইছড়ির মারিশ্যা এলাকার চাকরিজীবী চয়নিকা চাকমা (৩৭) বলেন, ‘একসময় রাঙামাটি শহরে এলে সেদিন বাঘাইছড়িতে ফেরা সম্ভব হতো না। এখন সব কাজ করে বাড়ি ফিরতে পারছি। আসা–যাওয়া দুই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ভাড়ার পরিমাণ আরেকটু কম হলে সুবিধা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত