Ajker Patrika

শেখ হাসিনাকে রক্ষায় ববি শিক্ষক-কর্মচারীদের ভার্চুয়াল সভার ভিডিও ভাইরাল, সমালোচনার ঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০০: ১৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

শেখ হাসিনার পতনের আগের দিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে তাঁকে রক্ষার নানা কৌশল গ্রহণ করেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। বিশেষ করে ৫ আগস্ট সকালে শেখ হাসিনার পক্ষে মানববন্ধনের সিদ্ধান্তও হয়। ওই সময় সাধারণ ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে যেসব শিক্ষক কথা বলেন, তাঁদের নাজেহাল করেন আওয়ামী লীগ সমর্থক কয়েকজন শিক্ষক। ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় এখন চরম সমালোচনায় পড়েছেন কতিপয় দলকানা শিক্ষক। রোববার (২০ এপ্রিল) ভিডিওর একটি কপি আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকের হাতে আসে।

প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এবং রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় শিক্ষক অংশ নেন।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন প্রক্টর ড. আব্দুল কাইয়ুম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহমুদ আবির, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন শফিউল আলম প্রমুখ।

ভিডিওতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামকে উপস্থাপনা বক্তৃতা দিতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেই আছি। তাঁর ওপর আস্থা রাখি।’

আজকে জরুরি ভিত্তিতে কেন জুম মিটিং আয়োজন করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের শিক্ষক সমিতির সম্মানিত সভাপতি পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।

সভায় শেখ হাসিনার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বারবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ানোর কথা বলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে আহ্বানও জানান। তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ঘোষিত এক দফার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এই আন্দোলনে যারা নেমেছে, তাদের ঘৃণা করি, এই আন্দোলন প্রত্যাখ্যান করি।’

ভার্চুয়াল সভায় তৎকালীন প্রক্টর ড. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এখন যে এক দফা দাবি নিয়েছে, গণতন্ত্রের মানসকন্যাকে হটানোর যে দাবি, এই দাবিকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে আছি।’

বক্তব্য দেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন দিল আফরোজ খানম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘দুদিন ধরে স্যার আমার গলা ধরে আসছে, কথা বের হচ্ছে না। আমার সোজা কথা স্যার, এ মুহূর্তে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। আমি এটাতে বিশ্বাসী।’

ভিডিওতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহমুদ আবির ছাত্রের পক্ষে যেসব শিক্ষক স্বাক্ষর করে বিবৃতি দিয়েছেন, তাঁদের ধমকাতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘আগস্ট মাসে আমরা বিভিন্ন কূটচাল দেখছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা কোথায় আক্রান্ত হয়েছে দেখান। শেষ সময় যারা উসকানি দিচ্ছে, তাদের পক্ষে আপনারা কী করে কথা বলেন। আমি সবাইকে শেখ হাসিনার পাশে থাকার আহ্বান করছি। মনে রাখবেন, আঁধার হয়তো কেটে যাবে একদিন। সবাইকে আবার মুখোমুখি হতে হবে।’

ওই সভায় জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সমর্থনে বিবৃতি দেওয়ায় তোপের মুখে পড়েছিলেন অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন। তিনি ওই ভিডিওতে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একটা জায়গায় আমরা সবার একমত ছিলাম যে, আমাদের শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই আহত হবে না, হয়রানি হবে না, গুলিবিদ্ধ হবে না—আমরা তাদের আগলে রাখব। আমরা এখনো সেই দাবিতেই থাকতে চাই।’

অথচ অধ্যাপক মুহসিনকে সম্প্রতি একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সদস্য থেকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বাদ দিয়েছেন বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. শুচিতা শরমিন। এ নিয়ে চরম সমালোচনা হচ্ছে ববিতে।

এদিকে ভাইরাল সেই ভিডিও নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষার্থী সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘স্বৈরাচার গেছে; কিন্তু তার চৌদ্দগুষ্টি এখনো ক্যাম্পাসে রয়ে গেছে।’ আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই ভিডিও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চরম লজ্জার বিষয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত