Ajker Patrika

দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে মিল রেখে

 কুমিল্লা প্রতিনিধি 
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

মুদ্রাস্ফীতির তারতম্যের সঙ্গে মিলিয়ে বাদী দেনমোহর পাবেন মর্মে রায় দিয়েছেন কুমিল্লার পারিবারিক আদালত। ফলে দেশে এই প্রথম দেনমোহর নিয়ে এমন রায় বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আজ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বেলা ১টার দিকে কুমিল্লার পারিবারিক আদালতের বিচারক শেখ সাদী রহমান এই রায় ঘোষণা দেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট বদিউল আলম সুজন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আজাদ হোসেন বলেন, রায়ে উল্লেখ করা হয়, বাদী ও বিবাদীর বিয়ে হয়েছিল ২০২২ সালে। এখন ২০২৫ সাল। প্রতিবছর মুদ্রাস্ফীতির কারণে টাকার মানের তারতম্য ঘটে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে স্পষ্ট।

এমতাবস্থায়, দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৫১ ধারা প্রয়োগ করে মুদ্রাস্ফীতির তারতম্য অনুসারে বাদীর দেনমোহরের দুই লাখ টাকার প্রকৃত মূল্য ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলো এবং বাদী ওই টাকা পাওয়ার হকদার।

এ ছাড়া আরও উল্লেখ করা হয়, বাদীর প্রার্থিত মতে ছয় মাসের খোরপোশ ও ভরণপোষণ বাবদ ৪২ হাজার টাকা এবং তিন মাসের ইদ্দতকালীন বাবদ ২১ হাজার টাকা হকদার।

সিনিয়র সহকারী জজ ও পারিবারিক জজ আদালতের বিচারক শেখ সাদী রহমান রায়ে আরও উল্লেখ করেন, ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে নির্দিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে হবে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দেলোয়ার হোসেনের কন্যা সুমাইয়ার সঙ্গে একই উপজেলার বিল্লাল হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম খলিলের ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয়। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা উশুল দেখিয়ে ২ লাখ টাকা বাকি রাখা হয়। পরবর্তীকালে ইব্রাহিম খলিল সুমাইয়াকে তালাক দেন। দেনমোহর ও ভরণপোষণের প্রার্থনা করে সুমাইয়া কুমিল্লা পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলার শুনানি শেষে, আদালত বাদীর পক্ষকে ছয় মাসের খোরপোশ ও ভরণপোষণ বাবদ ৪২ হাজার টাকা এবং তিন মাসের ইদ্দতকালীন বাবদ ২১ হাজার টাকা প্রদান করতে বলে। পরবর্তীকালে মুদ্রাস্ফীতির তারতম্য অনুসারে বাদীর দেনমোহরের দুই লাখ টাকার প্রকৃত মূল্য ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।

সঙ্গে সঙ্গে ছয় মাসের খোরপোশ ভরণপোষণ বাবদ এবং তিন মাসের ইদ্দতকালীন বাবদ ৬৩ হাজার টাকা দিতে হবে। সব মিলিয়ে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কুমিল্লা জেলার আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনির হোসেন পাটোয়ারী বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে সচেতনতা তৈরি হবে যেন কেউ নারীদের পাওনা দেনমোহর নিয়ে কোনো ধরনের অবহেলা করতে না পারে। বরং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেনমোহর পরিশোধের সচেতনতা তৈরি হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১-এর সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট বদিউল আলম সুজন বলেন, অবহেলিত নারী সমাজের জন্য যুগান্তকারী রায় বলে মনে করছি। কারণ, আমাদের মুসলিম রীতিতে বিবাহ বিচ্ছেদের পর দেন মোহর নিয়ে নারীদের অনেক বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হতে হয়। কিন্তু বিজ্ঞ বিচারক বাস্তবতা উপলব্ধি করে যে রায় দিলেন তা অবশ্যই ব্যতিক্রম ও যুগান্তকারী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত