Ajker Patrika

চট্টগ্রামে দুই খুন: পুলিশের কাছে গিয়ে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিলেন হতাহতরা

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে গুলিতে নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামে গুলিতে নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম নগরীতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রতিপক্ষের দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার গভীর রাতে একটি প্রাইভেট কারে হামলা চালালে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা বলছেন, তাঁরা সড়কে টহল দেওয়া পুলিশ সদস্যদের কাছে গিয়ে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিলেন। এর মধ্যেই পেছন থেকে মোটরসাইকেলে করে আসা দুর্বৃত্তদের গুলিতে দুজন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।

নিহত দুজন হলেন মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও বখতেয়ার উদ্দিন মানিক। তাঁদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। আবদুল্লাহ কক্সবাজারের এবং মানিক চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তাঁরা নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার শেরশাহ এলাকায় থাকতেন। আহত হন মো. রবিন ও হৃদয় নামের দুজন।

পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক রবিন জানান, আবদুল্লাহ ও মানিক তাঁর বন্ধু। ঘটনার সময় তাঁদের প্রাইভেট কারে মোট ছয়জন ছিলেন। চালক মানিকের পাশের আসনে বসেছিলেন সরোয়ার হোসেন বাবলা। আর পেছনের আসনে ছিলেন রবিন, আবদুল্লাহ, ইমন ও হৃদয়। সরোয়ার চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আহতদের তথ্যমতে, শনিবার রাত ৯টার দিকে শেরশাহ এলাকা থেকে আবদুল্লাহ, মানিক, রবিন ও ইমন ঈদের কেনাকাটা করার জন্য প্রাইভেট কার নিয়ে বের হন। ঘণ্টাখানেক পর সরোয়ার ফোন করে আবদুল্লাহকে বাকলিয়ায় শাহ আমানত সেতু এলাকায় যেতে বলেন। তাঁরা গাড়ি নিয়ে সেখানে যান। সেতুর পশ্চিমে বালুমহালের একটি একতলা পরিত্যক্ত ভবনের ছাদে আগে থেকে সরোয়ার ও হৃদয় বসা ছিলেন। তাঁরাও সেখানে পৌঁছে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন।

রবিন বলেন, ‘দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সরোয়ার ভাই মিটিং করছিলেন। আমরা কাছে ছিলাম। পরে ক্ষুধা লাগায় আমি আর ইমন সেতুর ও পাড়ে মইজ্জ্যারটেকে হোটেলে ভাত খেতে যাই। ভাত খেয়ে আসার আরও ঘণ্টাখানেক পর রাত আড়াইটার দিকে সরোয়ার ভাইসহ আমরা কার নিয়ে বেরিয়ে আসি। এরপর কার বহদ্দারহাটের দিকে যাচ্ছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পেছন থেকে অনুসরণ করা ৩-৪টি মোটরসাইকেল থেকে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়তে শুরু করে। তাদের মাথায় হেলমেট ছিল।’

রবিনের তথ্য অনুযায়ী, প্রাইভেট কারের পেছনে বসা আবদুল্লাহ ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হন। গুলির মুখে প্রাইভেট কারটি বাকলিয়া এক্সেস সড়কে ঢোকে। চন্দনপুরায় ওই সড়কের প্রবেশমুখে পৌঁছানোর পর পুলিশের একটি গাড়ি দেখতে পেয়ে ছয়জন প্রাইভেট কার থেকে নেমে যান এবং পুলিশের কাছে বাঁচানোর আকুতি জানান। পরে ছয়জন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পেছনে মোটরসাইকেলে আসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে আবদুল্লাহ ও মানিক ঘটনাস্থলে মারা যান। রবিন ও হৃদয় পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। সরোয়ার ও ইমন দৌড়ে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন। রবিন আহত অবস্থায় দৌড়াতে গিয়ে একটি রেস্তোরাঁর সামনে পড়ে যান। রেস্তোরাঁর লোকজন তাঁকে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে তিনি প্রাণ রক্ষা করেন।

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরের সামনে আহাজারি করা আবদুল্লাহর মা রাশেদা বেগম ও স্ত্রী পিয়ামণি জানান, সরোয়ারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় আবদুল্লাহ আরেক সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের রোষানলে পড়েছিলেন। ছোট সাজ্জাদ দুই মাসে আগে আবদুল্লাহকে পায়ে গুলি করেছিল। সাজ্জাদের পক্ষের লোকজন প্রাইভেট কারে মূলত সরোয়ার ও আবদুল্লাহকে টার্গেট করেছিল।

রাশেদা বেগম বলেন, ‘মাস দু-এক আগে সাজ্জাদ্যা রাউজানে আমার ছেলের পায়ে গুলি করেছিল। আমার ছেলে দুই মাস ঘর থেকে বের হতে পারেনি। ঈদের শপিং করার জন্য দুই মাস পর বের হয়েছিল। সাজ্জাদ্যার সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে খুন করেছে। আমি বিচার চাই।’

পিয়ামণি বলেন, ‘সাজ্জাদ গ্রুপের লোকজন আমার স্বামীকে খুন করেছে। আবদুল্লাহ কেন সরোয়ারের সাথে থাকে, তার সাথে কথা বলে, এ জন্য সাজ্জাদের খুব রাগ। আবদুল্লাহকে পায়ে গুলিও করেছিল। আমাদের ধারণা, সরোয়ারকে মারতে হামলা করেছিল সাজ্জাদের লোকজন। আবদুল্লাহও তাদের টার্গেট ছিল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল কবীর বলেন, ‘আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তদন্তের আগে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাইবান্ধায় ট্রলি-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই যাত্রী নিহত

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ-নাকাইহাট আঞ্চলিক সড়কে ট্রলি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে গোবিন্দগঞ্জ-নাকাইহাট সড়কের বাজুনিয়াপাড়ার ব্রিজের ওপর এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই ইউনিয়নের বড় বাজুনিয়াপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমানের স্ত্রী লিমা বেগম (৪০) ও জয়পুরহাট সদরের বাসিন্দা সবদের আলী (৫০)।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গতকাল বিকেলের দিকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাইহাট বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার উপজেলা শহরের দিকে যাচ্ছিল আর গোবিন্দগঞ্জের দিক থেকে নাকাইহাট বাজারের দিকে আসছিল শ্যালো মেশিন দ্বারা চালিত ট্রলি। গাড়ি দুটি নাকাইহাট-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের বাজুনিয়াপাড়া ব্রিজের কাছে পৌঁছালে হঠাৎ মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশায় থাকা দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান।

গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৩ হাজারের তার কেনা হলো ১৬ হাজারে

  • ২৫০ টাকার এলইডি বাল্ব ৩১৮ ও ৭০ টাকার লাইট হোল্ডার কেনা হয়েছে ২১০ টাকায়।
  • ফ্লাডলাইট, হোল্ডার ও সার্কিট ব্রেকারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক পণ্য কেনাকাটায় বাড়তি মূল্য পরিশোধ।
  • বাড়তি বিল পরিশোধ দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাজারে এক কয়েল (এক আরএম) তারের দাম ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভা এই তার কিনেছে ১৬ হাজার ২০০ টাকায়। শুধু তা-ই নয়, বৈদ্যুতিক বাল্ব, ফ্লাডলাইট, হোল্ডার ও সার্কিট ব্রেকারের মতো ইলেকট্রিক পণ্য কেনাকাটায় বাড়তি মূল্য পরিশোধ দেখানোর অভিযোগ উঠেছে পৌরসভার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় ১০ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আয়কর ধরা হয়। তাই দাম কিছুটা বেশি হয়। বাজারমূল্যের সঙ্গে বিলের পার্থক্য থাকা অস্বাভাবিক নয়।

জানা গেছে, গত জুলাই-আগস্টে মেসার্স রুমেল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটেশনে এসব মালামাল ক্রয় দেখানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা রাজশাহীর রাজপাড়া এলাকায়। তবে অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে দেখিয়ে মালামাল সরবরাহ করেছেন পৌরসভার দুই কর্মকর্তা। তাঁরা বাড়তি বিল পরিশোধ দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। গত জুলাইয়ে মালামাল সরবরাহ দেখিয়ে আগস্টে পৌরসভায় বিল দাখিল করা হয়।

বিলের কাগজে দেখা গেছে, ৫০০ পিছ ১৫ ওয়াটের এলইডি বাল্ব কেনা হয়েছে ৩১৮ টাকা দরে, এই বাল্ব বাজারে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় পাওয়া যায়। তিন কয়েল (১ আরএম) তার কেনা হয়েছে ৪৮ হাজার ৬০০ টাকায়। প্রতি কয়েল তারের দাম পড়ে ১৬ হাজার ২০০ টাকা। অথচ বাজারে এই তার ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যায়।

বিলে দেখা যায়, ১০০টি লাইট হোল্ডার কেনা হয়েছে প্রতিটি ২১০ টাকা দরে। স্থানীয় বাজারে এই হোল্ডার বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। ১০০ ওয়াটের ১৩টি ফ্লাডলাইট কেনা হয়েছে ৩ হাজার ৬৪০ টাকা দরে। বাজারে এর দাম ৩ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। অভিযোগ রয়েছে, সরবরাহ করা হয়েছে ৫০ ওয়াটের ফ্লাডলাইট, কিন্তু বিল দেখানো হয়েছে ১০০ ওয়াটের হিসেবে।

স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, এভাবে বছরের পর বছর পৌরসভায় কেনাকাটার নামে লুটপাট চলছে। এই ইলেকট্রিক পণ্য কেনাকাটা করেছেন দুই কর্মকর্তা। তাঁরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেখালেও বাস্তবে নিজেরাই মালামাল কিনে সরবরাহ করেছেন। এ কারণে দামও বেশি দেখিয়েছেন।

অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তার একজন পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম। জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, মালামাল সরবরাহ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। নিয়ম মেনেই দর দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পৌরসভার প্রশাসক ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ বলেন, কাজটি কোটেশনের মাধ্যমে হয়েছে, এটি দ্রুত ভিত্তিতে ক্রয়ের একটি সরকারি প্রক্রিয়া। বাড়তি মূল্য পরিশোধ করার সুযোগ নেই। এটি হয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভাসমান স্কুল: চলনবিল থেকে বিশ্বমঞ্চে

­­শাহীন রহমান, পাবনা
মোহাম্মদ রেজোয়ান
মোহাম্মদ রেজোয়ান

বাংলাদেশের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানের সৌরচালিত ভাসমান স্কুল উদ্যোগ ইউনেসকোর মর্যাদাপূর্ণ কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার ২০২৫ পেয়েছে। শিক্ষায় নতুন উদ্ভাবন ও জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসারে এটি বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান, যা চীনা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেওয়া হয়। গতকাল ‘সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা’ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে শত শত মনোনয়নের মধ্যে ইউনেসকো তিনটি উদ্যোগকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করেছে। সেগুলো হলো বাংলাদেশের সিধুলাই ভাসমান স্কুল, আয়ারল্যান্ডের লার্ন উইথ নালা ই-লার্নিং এবং মরক্কোর সেকেন্ড চান্স স্কুল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম। ২০তম পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানটি গত ২৭ সেপ্টেম্বর চীনের শানডং প্রদেশে কনফুসিয়াসের জন্মস্থান চুফু শহরে অনুষ্ঠিত হয়।

স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানের সৌরচালিত ভাসমান স্কুল। ছবি: সংগৃহীত
স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানের সৌরচালিত ভাসমান স্কুল। ছবি: সংগৃহীত

রেজোয়ান তাঁর প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার পক্ষে ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি চলনবিল এলাকায় বড় হয়েছেন, যেখানে প্রতিবছর বন্যায় স্কুল বন্ধ হয়ে যেত। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ২০০২ সালে তিনি উদ্ভাবন করেন এক অনন্য সমাধান। স্থানীয় নৌকাকে স্কুলে রূপান্তর, যা বিশ্বের সর্বপ্রথম ভাসমান স্কুল হিসেবে পরিচিত। আজও এসব সৌরচালিত নৌকা স্কুল, লাইব্রেরি ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে, যা বর্ষায় পানিবেষ্টিত গ্রামগুলোতেও বছরজুড়ে শিক্ষা চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে।

ইউনেসকো এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছে, ‘বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি উদ্ভাবনী উপায়ে সাক্ষরতা শিক্ষা পৌঁছে দেওয়াই এ ভাসমান স্কুলের সাফল্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সমন্বয়হীনতায় চালু হয়নি খুলনার শিশু হাসপাতাল

  • গণপূর্ত বলছে, কাজ শেষ এখন বুঝে নিতে পারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
  • স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এক পাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ না হওয়ায় এটি অরক্ষিত।
  • ভবন নির্মাণকাজ শেষে বছর পেরিয়েছে, কেনা হয়নি আসবাব। নিয়োগ হয়নি জনবল।
  • সেবা থেকে বঞ্চিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার শিশু।
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
খুলনায় বিভাগীয় শিশু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও সেটি চালু হয়নি। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুলনায় বিভাগীয় শিশু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও সেটি চালু হয়নি। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনায় বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রথম ধাপে হাসপাতাল ভবনের পঞ্চম তলা পর্যন্ত নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১১৪ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনে প্রথম ধাপের কাজও শেষ হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এক বছরের বেশি সময় পার হলেও হাসপাতালটি চালু করা যায়নি। এতে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার শিশুরা।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ভবন হস্তান্তরের জন্য তিন দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে সাড়া দেয়নি তারা। ফলে ভবন নির্মাণ হলেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, কাগজ-কলমে প্রকল্প শেষ দেখানো হলেও হাসপাতাল এলাকার এক পাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ করা হয়নি। এ কারণে হাসপাতাল ভবন ও স্থাপনা এলাকা অরক্ষিত থাকছে। আর হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর জন্য আসবাবপত্র ও জনবলের ব্যবস্থাও এখনো করা যায়নি।

খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার শিশুদের জন্য হাসপাতালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণপূর্ত বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের যদি কোনো সমন্বয়হীনতা থাকে, তাহলে তার সমাধান করে দ্রুত হাসপাতালটি চালু করা দরকার।

গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রসারের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। হাসপাতালটি নির্মাণে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) ময়ূরী আবাসিক এলাকার বিপরীতে সিটি বাইপাস সড়কের পাশে জমি চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন ৫২ কোটি ২ লাখ টাকায় ৪ দশমিক ৮০ একর জমি অধিগ্রহণ করে গণপূর্ত বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে।

গণপূর্ত বিভাগ ২০২০ সালে প্রথম পর্যায়ে হাসপাতালের বেসমেন্ট ও একতলা ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রে নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রৈতি এন্টারপ্রাইজ ২০২০ সালের ১৪ মে কার্যাদেশ পায়। ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ কাজের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংশোধিত প্রস্তাবে ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের অনুমোদন মেলে। এতে রান্নাঘর, সাবস্টেশন, পাম্পহাউস, সীমানাপ্রাচীর, রাস্তা, নালা ও গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ কাজের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুনে। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কোনো কাজই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। বারবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুনে কাগজ-কলমে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত দেখানো হয়। অন্যদিকে নতুন করে হাসপাতালটির ষষ্ঠ থেকে দশম তলার কাজ শুরু করার জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, ‘হাসপাতালটি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণে দেরি হয়েছে। এ কারণে দরপত্র আহ্বানও বিলম্বিত হয়। কাজ শুরুর পর জমির প্রবেশপথ নিয়ে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জটিলতা দেখা দেওয়ায় বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। প্রথম ধাপের পঞ্চম তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করে জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ভবন হস্তান্তরের জন্য তিন দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। ফলে ভবন নির্মাণ হলেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না।’

খুলনা সিভিল সার্জন মাহফুজা খাতুন চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কাগজ-কলমে প্রকল্প শেষ দেখানো হলেও হাসপাতাল এলাকার এক পাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ করা হয়নি। ফলে হাসপাতাল ভবন ও স্থাপনা এলাকা অরক্ষিতই থাকছে। হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর জন্য আসবাবপত্র ও জনবলের ব্যবস্থাও নেই। গণপূর্তসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সীমানাপ্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ প্রসঙ্গে গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, ‘প্রকল্পে পুরো বাউন্ডারি ওয়াল ও প্রধান ফটকের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তবে ভবনটি ছয়তলা থেকে দশতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণসহ বাকি রাস্তা, বাউন্ডারি ওয়াল, নালা, প্রধান ফটক, নার্স ও স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণে ৯৮ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত এসব কাজ শেষ করা হবে।’

এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মুজিবুর রহমান বলেন, সরকারি এ হাসপাতাল নির্মিত হলে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়বে। হাসপাতালকে আরও আধুনিক চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। তাহলে অন্য হাসপাতালগুলোরও চাপ কমবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত