Ajker Patrika

ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না রোহিঙ্গাদের

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বলিবাজার থেকে পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন রোহিঙ্গা আজিম উল্লাহ (৪৮)। প্রায় পৌনে আট বছর কক্সবাজারের উখিয়ার হাকিমপাড়া আশ্রয়শিবিরে পাহাড়ের ঢালুতে ত্রিপলের ছাউনি ও বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি ঘরে পরিবার নিয়ে থাকছেন তিনি। এর মধ্যে পরিবারে জন্ম নেয় আরও দুই সন্তান। এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন তিন বছর আগে। আরও দুই মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে। এখন সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি জীবন কাটছে আজিমের। কখন নিজ দেশে ফিরতে পারবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না তিনি।

আজিম রাখাইনের সচ্ছল কৃষক। দেশে তাঁর ৬০ শতক জমিতে বাড়ি ছিল এবং ২ একর ধান ও সবজিখেত ছিল। প্রাণ বাঁচাতে সহায়-সম্পত্তি ফেলে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। আজিম বলেন, ‘এখন এখানেও শান্তি নেই। একে তো ক্যাম্পে খুনখারাবি ও নানা অপরাধ বেড়েছে। তার ওপর কমেছে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা। এ অবস্থায় আশ্রয়শিবিরেও বসবাসের পরিবেশ নেই।’

আজিম উল্লাহর মতো রোহিঙ্গাদের বড় অংশ স্বদেশে ফিরতে না পেরে হতাশ। আজ শুক্রবার বিশ্ব শরণার্থী দিবস। এ দিবসকে ঘিরে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরগুলোতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন সংস্থা নানা কর্মসূচি পালন করলেও দু-তিন বছর ধরে তেমন কর্মসূচি পালন করা হয় না।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের ৪ নম্বর ক্যাম্পে শরণার্থী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, খেলাধুলাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

এ সময় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি), অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৪ মার্চ উখিয়ায় লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের সমাবেশে আগামী বছরের ঈদ স্বদেশে গিয়ে করার ঘোষণা দেন। রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, বিভিন্ন সময়ে প্রত্যাবাসনের ঘোষণা এলেও তা আলোর মুখ দেখছে না। সম্প্রতি মিয়ানমারের জান্তা সরকার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনে সম্মতি দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক রাখাইনে চলমান সংঘাত পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। ফলে রাখাইনে ফেরা নিয়ে রোহিঙ্গাদের দুশ্চিন্তা কাটছেই না।

দেড় বছর ধরে রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। আরাকান আর্মি এর মধ্যে রাখাইনের ৮৫ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। মংডু টাউনশিপ দখলে নিতে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালায়। এ কারণে ফের রোহিঙ্গারা নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। আরআরআরসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ মে পর্যন্ত নতুন করে আসা রোহিঙ্গার মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজারের মতো রোহিঙ্গার নিবন্ধন শেষ হয়েছে। নিবন্ধনের অপেক্ষায় আছে আরও অন্তত ৪০-৪২ হাজার রোহিঙ্গা।

স্বদেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে হতাশ রোহিঙ্গা নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের। তিনি বলেন, আরাকান আর্মি রাখাইনে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। সেখানে থাকা তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা চরম নিরাপত্তায়হীনতায় দিন পার করছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম থেমে নেই। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে নানাভাবে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। দেড় বছর ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। এর মধ্যে বিদ্রোহীরা রাখাইনের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা কম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্রে আছেন রুশ বিশেষজ্ঞরা, ইসরায়েলকে রাশিয়ার হুঁশিয়ারি

এবার ৫ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

ইরানকে ঘিরে ফেলছে একের পর এক মার্কিন রণতরি ও যুদ্ধবিমান

এনসিপি নেতা তুষারের বিরুদ্ধে এবার যৌন হয়রানির অভিযোগ তুললেন নীলা ইস্রাফিল

ডিসির কক্ষে সাংবাদিককে মারতে তেড়ে আসেন বিএনপি নেতা শফিকুল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত