Ajker Patrika

দুর্গম পাহাড়ে চোখ রাঙাচ্ছে ম্যালেরিয়া

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৪, ১১: ২০
দুর্গম পাহাড়ে চোখ রাঙাচ্ছে ম্যালেরিয়া

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের থানচিতে মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের সংকটে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন থেকে দেড় মাসে ২৮৬ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সরা মনে করছেন। তাঁরা বলছেন, দুর্গম এলাকার মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত আসে না। যখন অবস্থা গুরুতর হয়, তখন আসে।

জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেড় মাসে ৬৪ জন ম্যালেরিয়া রোগীকে ভর্তি করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। তারা সবাই সুস্থ হয়েছে। একই সময়ে বেসরকারি (এনজিও) ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরা পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে ২২২ জন ম্যালেরিয়া রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তিনজনকে বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতালে এবং কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তারা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছে।

জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষাকালের শুরুতে জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ মাস বান্দরবানের থানচির দুর্গম এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। নানা প্রতিকূলতায় রোগীরা জরুরি চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পান না বলেও অভিযোগ রয়েছে। দুর্গম এলাকায় যাতায়াতের ব্যবস্থা সহজ না হওয়ায় এবং মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগবিচ্ছিন্ন প্রায় এই এলাকাগুলো।

চিকিৎসকদের মতে, বর্ষায় মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এদিকে থানচি উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মোট ৬৬টি গ্রামের মধ্যে ২৭টি ম্যালেরিয়া জোন ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

গতকাল রোববার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ও নারী দুটি ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগী মধ্যে ৯ জন ম্যালেরিয়া রোগী দেখা গেছে।

জ্যেষ্ঠ নার্স লালসাংপার বম বলেন, পাহাড়ে বেশির ভাগ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাধারণ ভাইরাস জ্বর ভেবে বাড়িতে থাকেন। অনেকে বাড়িতে (দেবতা ধরছে মনে করে) প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে দেবতাদের মোরগ, ছাগল, গরু খাওয়ান। কেউ কেউ বাজার থেকে জ্বরের ওষুধ কিনে সেবন করেন। এভাবে যখন অনেক দিন চলতে থাকে এবং রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়, তখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এতে তাঁদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। যদিও এ বছর কোনো রোগী চিকিৎসার অভাবে মারা যাননি। যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁরা সুস্থ হয়েছেন।

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্মস্থলে নেই। আবাসিক চিকিৎসক মেহনাজ ফাতেমা তুলি এবং আমি—দুজনে দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু চলতি মাসে তুলিও প্রশিক্ষণে চলে গেছেন। এখন একার পক্ষে ২৪ ঘণ্টা রোগীদের সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।’

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, ‘আমি বর্তমানে চট্টগ্রামে একটি প্রশিক্ষণে আছি। থানচিতে ফিরতে আরও এক সপ্তাহ লাগবে। গত জুন থেকে উপজেলার গ্রামে গ্রামে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আবাসিক চিকিৎসক মাত্র দুজন। তাঁর মধ্যে একজন প্রশিক্ষণে। চিকিৎসক-সংকটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়ে সমাধান পাচ্ছি না। চিকিৎসক-সংকটের কারণে কোনো ম্যালেরিয়া রোগীর মৃত্যু হলে আমরা দায়ী থাকব না।’

ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ আরও বলেন, ‘আমি রাসেলস ভাইপার সাপের ভ্যাকসিনের জন্য চাহিদাপত্র পাঠালেও ভ্যাকসিন পাইনি। আমাদের কর্মীরা পাহাড়ে হেঁটে চিকিৎসা দিতে গেলে সাপে ছোবল দিতে পারে। পাহাড়ে প্রচুর সাপ রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রয়োজন। এ ছাড়াও বান্দরবান জেলা হাসপাতালে আমাদের একজন চিকিৎসক প্রেষণে রয়েছেন। তাঁকে ফেরত পাঠানো প্রয়োজন।’

বান্দরবানের সিভিল সার্জন মো. মোহাবুবুর রহমান বলেন, ‘থানচি উপজেলার চিকিৎসক-সংকটের কথা জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত