Ajker Patrika

বেহাল স্বাস্থ্যসেবায় নেছারাবাদ উদাহরণ

নেছারাবাদ প্রতিনিধি (পিরোজপুর) 
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬: ৫৯
Thumbnail image

ঢাকার বাইরের স্বাস্থ্যব্যবস্থার কী বেহাল দশা, পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তার জুতসই উদাহরণ হতে পারে। কাগজে-কলমে থাকা ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা যায় ১৯ জন। সেই ১৯ জনকে দেখভাল করার মতো চিকিৎসক নেই সেখানে। এমনকি হাসপাতালটি যিনি পরিচালনা করবেন, নেই সেই ইউএইচএ। অথচ স্বাস্থ্যসেবার জন্য হাসপাতালটি এলাকার মানুষের ভরসার জায়গা হওয়ার কথা ছিল।

স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অন্য সরকারি কর্মকর্তারা যেমন বক্তব্য দেন, নেছারাবাদ হাসপাতাল নিয়েও একই বক্তব্য দিয়েছেন পিরোজপুর জেলা সিভিল সার্জন মো. মিজানুর রহমান। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, এসব সমস্যা নিয়ে অনেকবার ওপর মহলে লেখা হয়েছে।

কিন্তু সেই ওপর মহল আসলে কত ওপরে, তা তিনি বলতে পারেননি। গ্রামের মানুষ হয়তো কোনো দিনই জানতে পারবে না, তাদের সমস্যার সমাধান কবে হবে।

ধারণ ক্ষমতার তিনগুন রোগী থাকে হাসপাতালে। চিকিৎসক সংকটে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ধারণ ক্ষমতার তিনগুন রোগী থাকে হাসপাতালে। চিকিৎসক সংকটে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেছারাবাদের এই হাসপাতালের জন্ম ১৯৬৫ সালে। একটি ভবনে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ৩১ শয্যা নিয়ে। ২০০৭ সালে সেটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। কিন্তু সবই হয় পরিকল্পনা ছাড়া। ৩১ শয্যার ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কাজ চলতে থাকে ১৯ শয্যা নিয়ে। সে অবস্থা এখন অবধি চলছে।

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেল, শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। উপজেলার আরামকাঠি থেকে আসা রোগী রেবেকা আক্তার বলেন, তাঁর শিশুসন্তান দুই দিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এখানে এসে কোনো শয্যা পাননি। এখন সিঁড়ির পাশে মেঝেতে সন্তানের চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুর্গন্ধ এবং মশার উপদ্রবে সেখানে টেকা দায়।

এ হাসপাতালে চিকিৎসকের ২১টি পদ। এর মধ্যে ১৪টিতে চিকিৎসক নেই। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদে লোক নেই দুই মাস ধরে। চিকিৎসা কর্মকর্তার ১০টি পদের বিপরীতে ৬টি ফাঁকা। এ ছাড়া জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১০টি পদের ৮টিই শূন্য। জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে যে দুজন আছেন, তাঁদের মধ্য গাইনি কনসালট্যান্ট সপ্তাহে আসেন মাত্র এক দিন। নাক, কান ও গলার চিকিৎসক আসেন সপ্তাহে দুই দিন।

ধারণ ক্ষমতার তিনগুন রোগী থাকে হাসপাতালে। চিকিৎসক সংকটে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ধারণ ক্ষমতার তিনগুন রোগী থাকে হাসপাতালে। চিকিৎসক সংকটে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

হাসপাতালের ওয়ার্ড ইনচার্জ মিঠু রানী হালদার বলেন, গত মাসে (অক্টোবর) হাসপাতালে ১ হাজার ২৪১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ১৩৪ জন ভর্তি ছিল। যার মধ্য ১ হাজার ২৪৫ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছে। তিনি বলেন, এখানে শয্যা ও চিকিৎসকের সংকট চরমে। এ ছাড়া হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় ও ক্লিনার কম থাকায় হাসপাতাল কিছুটা অপরিষ্কার।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. শাহারুখ খান বলেন, এখানে রোগীর চাপ বেশি থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। একই কথা বলেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা (ইউএইচএ) পদে থাকা আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান মাসুদ খান। তিনি বলেন, ‘এখানে চিকিৎসক খুবই কম। এ ছাড়া কাগজে-কলমে হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও বর্তমানে ১৯ বেডে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। শয্যার চেয়ে হাসপাতালে তিন গুণ রোগী। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে সমস্যা তো হবেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত