Ajker Patrika

পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় দৌলতখানের খামারিরা 

মো. মিরাজ হোসাইন, দৌলতখান (ভোলা)
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২১, ১৪: ০২
পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় দৌলতখানের খামারিরা 

সামনে কোরবানির ঈদ। ঈদ সামনে রেখে সারা দেশের ন্যায় ভোলার দৌলতখানেও গরু পালন করে আসছেন অনেকে। সারা বছর নিজেরা কষ্টে থাকলেও ঈদে ভালো দামে বিক্রি করতে গরুর যথেষ্ট লালন-পালন করেন তাঁরা। এবার লকডাউনের কারণে কোরবানি আগের বছরের তুলনায় কম হবে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। তাই দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন খামারিরা। অনেকেই ধারদেনা করে গরু পালন করেছেন। করোনার কারণে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে সংকটে পড়েছেন। তাঁরা এবার পশু কোরবানির কথা ভাবতেই পারছেন না। মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত যাঁরা একাধিক পশু কোরবানি দিতেন, তাঁরা অনেকেই এবার এ সংখ্যা কমাবেন। অনেকে আবার করোনাজনিত কারণে পশুর হাটে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। সব মিলিয়ে এবার পশুর চাহিদা কম থাকবে। সংগত কারণেই এবার সারা দেশে পশুহাটের সংখ্যা কমেছে। আগ্রহী ইজারাদাররা হাটের ইজারামূল্যও কমিয়ে দিয়েছেন। 

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। লকডাউন পালনে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানুষ অর্থনৈতিক সংকটে দিন পার করছেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই কোরবানি দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে অনেকেই ধারণা করছেন, এবার খাসির বাজার গরুর চেয়ে অনেকটাই ভালো যেতে পারে।

দৌলতখানের গরু ব্যবসায়ী মো. জাকির জানান, গত বছর কোরবানির পশুর হাটগুলোয় প্রচুর পরিমাণ গরু অবিক্রীত ছিল। এবার আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছে, অনেকেই কোরবানি দিতে পারবেন না। কারণ অনেকে এখন চাকরিহীন, নিম্নবিত্তরাও কর্মহীন।

খামারি হাবিবুর রহমান ফয়সাল বলেন, এখন বাজার খুবই খারাপ। আমার নিজের পালন করা গরু আছে ২২টি। ৮ মণ করে মাংসের ওজন হবে, এমন গরু আছে ১০টি। প্রতিটি গরু এবার ২ লাখ টাকায় বিক্রির আশা ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপ প্রকট আকার ধারণ করায় সরকার যেহেতু লকডাউন দিয়েছে, সে কারণে আমার গরু কেনার মতো কোনো ক্রেতা পাব কি না, সেটা নিয়ে হতাশায় আছি।’

অন্য এক খামারি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এবার কপালে যে কী আছে তা বুঝতে পারতেছি না। ঈদ ঘনিয়ে আসছে, এখন পর্যন্ত বাড়িতে একজন ব্যাপারীও গরু দেখার জন্য আসে নাই, হাটেও গরুর দাম নাই। গরু বিক্রি করতে পারব কি না, সেই দুশ্চিন্তায় আছি। গরু তো আর বিনা খরচে লালন-পালন করা যায় না। আমার ৫টা গরু পালন করতে বহু খরচ হয়েছে। বিভিন্ন সমিতি থেকে দৈনিক কিস্তিতে লোন নিয়ে গরু পালন করতেছি। এবার যথাযথ মূল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে ভয়াবহ বিপদে পড়ে যাব।’

ভোলা জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মণ্ডল দৈনিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনার কারণে এবার বড় খামারিরা ৫০ শতাংশ পশু দেশের বড় বড় হাটে তুলতে পারবেন না। আর ছোট খামারিরা তো অর্থসংকটে পড়ে আগেই স্বল্প দামে পশু বিক্রি করে দিয়েছেন। অনেক ছোট খামারির কাছে গরুই নেই। ভারতীয় গরুও আসছে না। কাজেই এবার ক্রেতাও কম, গরুও কম। এতে বাজারে ভারসাম্য থাকতে পারে। কিন্তু হাটে গরুর সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে বাংলাদেশের খামারিরা বিপদে পড়বেন। কারণ, গত তিন মাসে খামারিদের খাবার কিনতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পশুর হাটের সংখ্যা কমে যেতে পারে। তবে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা চালু করেছি। ভোলা জেলায় ৮টি অনলাইনে পশুর হাট খুলেছি, সেখানে পশু বেচা-কেনা করা যাবে। ফেসবুক পেজে গিয়ে “অনলাইনে পশুর হাট ভোলা” নামে সার্চ করে অনলাইনে পশু বেচা-কেনা করা যাবে।’ আর কেউ যদি অবৈধভাবে গরু মোটাতাজাকরণ করে হাটে আনে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা। 

দৌলতখানের পৌর মেয়র জাকির হোসেন তালুকদার বলেন, ‘এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ায় আগে জনস্বার্থের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে হাটের সংখ্যা কমাতে হতে পারে, প্রয়োজন হলে আবার বাড়ানো হবে। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব আয় মূল বিষয় নয়, মুখ্য বিষয় হলো নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তাই আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত