Ajker Patrika

বরিশালে মামলা, চাঁদার অভিযোগ

অস্বস্তিতে বৈষম্যবিরোধী নেতারা

খান রফিক, বরিশাল 
আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, ০৪: ২১
অস্বস্তিতে বৈষম্যবিরোধী নেতারা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হামলার ঘটনায় করা মামলায় চাঁদাবাজি ও নিরীহ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পড়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশালের নেতারা। সংগঠনটির জেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব মো. মারজুক আবদুল্লাহ ১৪ মে কোতোয়ালি মডেল থানায় বিতর্কিত মামলাটি করেন। নামধারী ২৪৭ জনকে ওই মামলায় আসামি করা নিয়ে সমালোচনার জন্ম হয়েছে এই নগরে।

মামলায় মারজুক জুলাই অভ্যুত্থানে নগরের সিঅ্যান্ডবি রোডে হামলার অভিযোগে কৃষক, জেলে, বিএনপির কর্মী, সাংবাদিকসহ সমন্বয়কের আত্মীয়কেও আসামি করেছেন। এজাহারের আগে আসামি করার ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে মারজুকের বিরুদ্ধে। এতে ক্ষুব্ধ একদল ছাত্র বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা নেতাদেরকে ঘেরাও করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাদী মারজুককে শোকজ শেষে গত মঙ্গলবার রাতে তাঁর পদ স্থগিত করেছে। এর আগে সংগঠনটির জেলা নেতারা গত সোমবার বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মারজুকের প্রশ্নবিদ্ধ মামলার সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকার ঘোষণা দেন।

বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়ি গ্রামের মো. রানা পেশায় জেলে। কীর্তনখোলা নদীতে মাছ আহরণ করেন তিনি। গ্রামের খালপাড়ে ঝুপড়ি ঘরে পরিবার নিয়ে থাকেন। তাঁর সংসারের অবস্থা ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’। জুলাই আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর হামলার অভিযোগে হওয়া মামলায় রানা কয়েক দিন আগে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে। দীপ্ত টেলিভিশনের বরিশালের প্রতিনিধি মর্তুজা জুয়েলসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিককেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

এদিকে মারজুকের করা মামলায় চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছে গ্রেপ্তার হওয়া এক ব্যক্তির পরিবার। গতকাল বিকেলে বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা দাবি করে বলেন, ‘১০ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। পুলিশ অতিউৎসাহী হয়ে গতকাল থানায় ডেকে নিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।’

মিজানুর ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি। তাঁর বোন লিপি হাসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মিজানুরের কাছে বিভিন্ন সময়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল মারজুক।’

সদর উপজেলার লামছড়ি গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী জাকির হোসেন নীরব জানান, জেলে রানা গ্রামের হতদরিদ্রদের একজন। পুলিশ রাতে তাঁকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। মামলার আসামি হওয়ার বিষয়ে রানা কিছুই জানতেন না। তাঁকে আসামি করার কারণ সম্পর্কে জাকির জানান, জমিজমা নিয়ে রানার সঙ্গে গ্রামের আরেক পরিবারের বিরোধ রয়েছে। আওয়ামী লীগের পতনের পর মারজুক সমন্বয়ক পরিচয়ে জমি দখল করতে গেলে গ্রামের লোকজন প্রতিহত করেন। তখন রানাকে তুলে এনেছিলেন মারজুক। পরে বিষয়টি থানায় মীমাংসা হয়। এর জেরে রাজনৈতিক মামলায় রানাকে আসামি করা হয়েছে বলে ধারণা।

মামলায় ভুলত্রুটি হলে এবং নিরীহ কেউ আসামি হলে সংশোধন করা হবে। মামলার আসামি আমি একা ঠিক করিনি। সাক্ষীরাও আসামির তালিকা দিয়েছেন। মারজুক আব্দুল্লাহ, অভিযুক্ত বৈষম্যবিরোধী নেতা

জানতে চাইলে মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের যারা হামলা করেছিল, তারা নগরীরই বাসিন্দা। আমরা তাদের চিনি। মারজুকের মামলায় অসংখ্য নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। এমনকি পাশের জেলা ঝালকাঠি ও আশপাশের উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরাও মামলায় আসামি।’ নাহিদ ও জাকির দাবি বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছি। তখন মারজুককে দেখি নাই। পরে শুনি সে সমন্বয়ক, এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা।’

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার রাতে জুলাই আন্দোলনে হামলার ঘটনার নয় মাস পর মামলা করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মারজুক আব্দুল্লাহর পদ স্থগিত করা হয়। এর আগে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে মুখপাত্র সুমি হক জানান, মামলায় যেমন আওয়ামী লীগকে আসামি করা হয়েছে, তেমনি কৃষক, জেলে এবং তাঁদের এক সমন্বয়কের আত্মীয়ও আসামি হয়েছেন। তাঁরা এর দায় নেবেন না।

মামলাটি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও বাদী নিজে লোকজন নিয়ে আসামি ধরে আমাদের খবর দেন। কাউকে ধরে পুলিশে দিলে তাঁকে আটক না করলে যদি মেরে ফেলে, তখন এর দায় কে নেবে? মিজানুর রহমান, ওসি, কোতোয়ালি মডেল থানা

অভিযোগ প্রসঙ্গে মারজুক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘মামলা নিয়ে চাঁদাবাজি হয়নি। যাচাই-বাছাই করে অপরাধীদের আসামি করেছি। সংগঠনের লোকজন স্বার্থের জন্য আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে। মামলায় ভুলত্রুটি হলে এবং নিরীহ কেউ আসামি হলে সংশোধন করা হবে। মামলার আসামি আমি একা ঠিক করিনি। সাক্ষীরাও আসামির তালিকা দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘মামলাটি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও বাদী নিজে লোকজন নিয়ে আসামি ধরে আমাদের খবর দেন। মিজানুরের ঘটনাও একই রকম। মারজুকের পদ স্থগিত করা হলেও তিনি তো মামলার বাদী। কাউকে ধরে পুলিশে দিলে তাঁকে আটক না করলে যদি মেরে ফেলে, তখন এর দায় কে নেবে? মামলা করার পর এখন আমার কী-ই বা করার আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই অভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা দিল সেনাবাহিনী

নানা গুঞ্জনের মধ্যে ড. ইউনূসের সঙ্গে নাহিদের সাক্ষাৎ

অভ্যুত্থানের পরে সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিবর্গ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর অবস্থান

ভারতে জাহাজ নির্মাণের জন্য ২১ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করল বাংলাদেশ

যে কুমির ডেকে আনছেন, তা আপনাদেরকেই খাবে: কাদের ইঙ্গিত করলেন উপদেষ্টা আসিফ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত