Ajker Patrika

সন্ধ্যার তীরে দখলদারত্ব

শামীমুল ইসলাম, আগৈলঝাড়া 
সন্ধ্যার তীরে দখলদারত্ব

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট সন্ধ্যা নদীতে প্রভাবশালীদের দখলদারিত্ব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে সৌন্দর্য হারানোর পাশাপাশি হারিয়েছে নদীর নাব্যতা। নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় ৭ বছর ধরে ঢাকা-পয়সারহাট লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সন্ধ্যা নদীর পয়সারহাট বন্দর ও পয়সারহাট সেতুর দুই পাশেই প্রভাবশালী দখলদার নির্মাণ করেছেন পাকা স্থাপনাসহ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। নদী দখলমুক্ত করে নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট এলাকায় সন্ধ্যা নদীরে বরিশালের বড় বন্দর। নদীর তীর ঘেঁষে দুই পাড়ে প্রায় সহস্রাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে পয়সারহাট-ঢাকা চারটি বড় লঞ্চ চলাচল করে আসছিল। কিন্তু নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় গত সাত বছর ধরে ঢাকা-পয়সারহাট লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছে পয়সারহাট বন্দরের সহস্রাধিক ব্যবসায়ী।

প্রভাবশালীদের দখলের কারণে নদীটি স্বাভাবিক গতি পথ হারিয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদী ভরাট করে গড়ে তুলেছেন পাকা স্থাপনা, স-মিল, ইট-বালুর ব্যবসার মাঠ।

দখলদারদের মধ্যে রয়েছেন, উপজেলার গাউস বখতিয়ার, আব্দুর জব্বার তালুকদার, জেবারুল খান, আবুল শিকদার, কাওছার হোসেন, পূর্ব পয়সারহাট গ্রামের বাদশা বক্তিয়ার, মোনাসেফ হোসেন ও বিএম সালাউদ্দিন। এ ছাড়া বাগধা বাজারসহ নদীর বিভিন্ন স্থানে আরও ১০-১২ জন প্রভাবশালী নদী দখল করেছে বলে জানান এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এক সময়ের খরস্রোতা সন্ধ্যা নদী তাঁর গৌরব হারিয়েছে। নদীর দুই পাশে বাঁধ দিয়ে দখল করায় দিন দিন নদীটি ছোট হয়ে আসছে। সেতুর গোড়ায় পশ্চিম পাশে বিশাল চর জেগেছে। নদীটি সংকুচিত হয়ে প্রশস্ততা কমে গেছে। সন্ধ্যা নদীর পয়সারহাট সেতুর পূর্ব পাশে নদীর পাড় বালু দিয়ে ভরাট করে ভোগ দখল করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী জেবারুল খান। তাঁর দক্ষিণ পাশে নদীর জমি ভরাট করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন পয়সারহাট গ্রামের গাউস বখতিয়ার। তাঁর দক্ষিণ পাশে নদীর পাড় ভরাট করেছেন আবুল শিকদার। সেতুর উত্তর পাশে নদীর পাড়ে বাঁধ দিয়ে বালু ভরাট কাজ করেছেন দখলদার কাওছার হোসেন শিকদার। পুরান খেয়াঘাটের পূর্ব পাশে নদী দখল করে ঘর তুলে হোটেল ব্যবসা করছেন পয়সারহাট গ্রামের বিএম সালাউদ্দিন। সন্ধ্যা নদীর বাগধা বাজার এলাকায় নদীর মধ্যে পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন একাধিক প্রভাবশালী।

পয়সারহাট বন্দরের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন শিকদার ও মেহেদী হাসান জানান, নদী দখলের ফলে দিন দিন নদী সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এক সময় এখানে বড় বড় লঞ্চ চলত। গত সাত বছর ধরে এখানে লঞ্চ আসে না। উজিরপুরের বৈঠাঘাটা টার্মিনালে লঞ্চ ভিড়ে সেখান থেকে ট্রলারযোগে মালপত্র পয়সারহাট বন্দরে আনতে হয়।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গাউস বখতিয়ার বলেন, ‘আমি নদীর জায়গা দখল করিনি। আমার জমি ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ায় তা ভরাট করেছি।’ কাওছার হোসেন শিকদার, বাদশা বক্তিয়ার, জব্বার তালুকদার, মোনাসেফ হোসেন নদী দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জেবারুল খান দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ১ শতাংশ জমির রেকর্ডিয় মালিক। নদীর কিছু জমি ভরাট হয়ে থাকতে পারে। তবে নদী ভরাট করে দখল করিনি। যাদের কাছে জমি ইজারা দিয়েছি তারা নদী ভরাট করে থাকতে পারে।’

বাকাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিপুল দাস বলেন, ‘দখলদাররা কেউ কেউ জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করার চেষ্টা করেন। আমি উপজেলা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাকে রেকর্ড না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।’

ইউএনও আবুল হাশেম বলেন, ‘যে কোনো নদী পরিমাপ করে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নদী দখলদারদের তালিকা করা সঠিক হবে না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সমন্বয়ে সন্ধ্যা নদী পরিমাপ করে দখলদারদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে ও পর্যায় ক্রমে উচ্ছেদ করে নদী দখলমুক্ত করা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাবিতে জানাজা হলো না সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিকের, তীব্র সমালোচনার মুখে প্রশাসন

প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় সাবেক শিবির নেতা আটক

মধ্যরাতে মহাসড়কে ৩৭ লাখ টাকাসহ এলজিইডি প্রকৌশলী আটক

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে রাষ্ট্রদূতের ফেসবুকে পোস্ট, পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত

প্রত্যাহার হওয়া ওসির খোঁজে থানায় ভিড় পাওনাদারদের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত