Ajker Patrika

৪৪ ইঞ্চির ও ৩৩ ইঞ্চির সেই বর-কনে: ‘সন্তানের জন্য দুধ কেনার টাকা নেই’

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি 
পিরোজপুরের বামন দম্পতি ৪৪ ইঞ্চির আল আমিন (২৫) এবং ৩৩ ইঞ্চির শাম্মী আক্তার সদ্য বাবা-মা হয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিরোজপুরের বামন দম্পতি ৪৪ ইঞ্চির আল আমিন (২৫) এবং ৩৩ ইঞ্চির শাম্মী আক্তার সদ্য বাবা-মা হয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পিরোজপুরের আলোচিত বামন দম্পতি ৪৪ ইঞ্চির আল আমিন (২৫) এবং ৩৩ ইঞ্চির শাম্মী আক্তার (২৩)। নতুন বাবা-মা হয়েছেন তাঁরা। ১২ মে তাঁদের কোলজুড়ে এসে ফুটফুটে এক শিশু। নবজাতক ঘরে এলেও তাঁদের নেই কোনো আনন্দ। চোখেমুখে কেবল হতাশা। আল আমিনের শ্বশুর-শাশুড়ি ধারদেনা করে নাতির মুখ দেখলেও মেয়ে শাম্মী আক্তারের শরীর ভালো নয়। এমনকি নবজাতকের জন্য ঘরে নেই দুধ কেনার একটি টাকাও।

২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার স্বরূপকাঠি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর শর্ষিনা গ্রামের মো. আল আমিনের সঙ্গে একই উপজেলার সোহাগদল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শাম্মী আক্তারের বিয়ে হয়। ৪৪ ইঞ্চির বর আল আমিন আর ৩৩ ইঞ্চি কনে শাম্মী আক্তারের বিয়ের খবর ঘটা করে এসেছিল প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিকস মিডিয়াপাড়ায়। তাঁদের বিয়ের খবর ধুমধামে গণমাধ্যমে প্রচার হলেও এখন তাঁরা কেমন আছেন, সে খবর কেউ রাখে না।

গতকাল সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের সামনে আক্ষেপ করে শাম্মী আক্তার বলেন, ‘অনেক কষ্টে মা হয়েছি ঠিকই, সন্তানের দুধ কেনার টাকা নেই! ক্যামেরার সামনে ইন্টারভিউ দিয়ে কী হবে? এখন আর ভাইরাল হওয়ার ইচ্ছে নেই। বিয়ের সময় অনেক সাংবাদিক দেখেছিলাম। এখন আর কেউ আসে না। মরে গিয়েও বেঁচে আছি! আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।’ এই দম্পতি শরীরের আকৃতি যেমন অনেক ছোট, তেমনি তাঁদের কণ্ঠস্বরও অনেক চাপা। বামন আল আমিনের কথা তেমন বোঝা না গেলেও তাঁর স্ত্রী বামন শাম্মীর কথা অনেকটা বোঝা যায়। আল আমিন ও শাম্মী আক্তার বামন প্রকৃতির লোক হওয়ায় তেমন কোনো ভারী কাজ করতে পারেন না। কেউ তাঁদের কোনো কাজে নিতেও চান না। অভাব আর দরিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন তাঁরা। ১২ মে রাজধানীর একটি হাসপাতালে এই তাঁদের একটি সন্তানের জন্ম হয়। গতকাল তাঁরা সন্তান নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। আত্মীয়স্বজন ও দরিদ্র বাবা-মায়ের সহযোগিতায় এ যাত্রায় বেঁচে গেলেও সমাজের ধনাঢ্য এবং জনপ্রতিনিধিদের প্রতি কিছুটা আক্ষেপ প্রকাশ করেন তাঁরা।

শাম্মী আক্তারের মা শিরিন বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে শাম্মী উচ্চতায় ছোট হওয়ায় বিয়ে দিয়েছিলাম বামন আল আমিনের সঙ্গে। আল আমিন কোনো কাজ করতে পারে না। আমরাও অসহায় ও দরিদ্র। ওদের তেমন দেখাশোনা পারি না। কয়েক দিন আগে ওদের ঘরে একটি ফুটফুটে সন্তান হয়েছে। হাসপাতালে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ধারদেনা করে কোনো রকম মা ও সন্তানকে বাঁচিয়ে এনেছি। কীভাবে যে এই ধারের টাকা পরিশোধ করব, বুঝতে পারছি না। সাংবাদিকেরা এসে কেবল ছবিই করে। ঘরের খবর কেউ রাখে না।’

আল আমিন বলেন, ‘বিয়ে হয়েছে আমাদের প্রায় চার বছর হয়ে গেল। আল্লাহ মুখ তুলে চেয়েছে বলে আজ আমি সন্তানের বাবা হয়েছি। সবাই আমাকে দেখে উপহাস করে। কেউ কাজে নেয় না। সরকার যদি আমাকে একটু সহযোগিতা করত অথবা ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হতো না।’

ইউপি সদস্য দেব কুমার সমাদ্দার বলেন, ‘আল আমিন ও শাম্মীর বিয়েতে হাজার হাজার লোক বিনে দাওয়াতে এসেছিলেন। দেশ-বিদেশের অনেকে আমাকে ফোন করে তাদের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু তাদের ঘরে নতুন অতিথি (সন্তান) এলেও তাদের মনে শান্তি নেই। শুনেছি অনেক ধারদেনা করে হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেয়েছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ দম্পতির সম্পর্কে আমার সঙ্গে কেউ আলাপ করেনি। তাদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। বিষয়টি দুঃখজনক। তারা যদি সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের যোগ্য হয়, অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত