Ajker Patrika

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীসহ ২ জনকে পিটিয়ে আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭: ০০
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীসহ ২ জনকে পিটিয়ে আহত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীসহ দুজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ছাত্রাবাসের ৪০১৮ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

আহত সিফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী এবং অপর আহত জি এম ফাহাত লোক প্রশাসন বিভাগের ছাত্র। 

আহত সিফাতের বন্ধু হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সৈয়দ রুম্মান ইসলাম বলেন, ‘আজ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হঠাৎ সিফাতের কক্ষে মুখোশধারী সাত-আটজনের একটি দুর্বৃত্তের দল অতর্কিত হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা সিফাতকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। হামলায় সিফাতের হাত ভেঙে গেছে এবং পায়ে কোপ লেগেছে। ওই কক্ষে থাকা আরও দুই ছাত্র লোক প্রশাসনের জি এম ফাহাত ও ফিন্যান্স বিভাগের জিহাতও আহত হয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা শেবাচিম হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি আছেন।’ 

সৈয়দ রুম্মান ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেব। তবে শুনেছি অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।’ 

অপর আহত জি এম ফাহাত বলেন, ‘আজ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হঠাৎ আমাদের ৪০১৮ নম্বর কক্ষে মুখোশধারী সাত-আটজনের একটি দুর্বৃত্তের দল অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা আমাদের প্রতিপক্ষ।’ 

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, সিফাতের শরীরে ফোলা জখম রয়েছে। অপর আহত ফাহাতের শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখমের চিহ্ন রয়েছে। 

শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট আবু জাফর বলেন, সিফাতের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। হামলাকারীদের এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। 
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ সকাল ৬টার দিকে শিক্ষার্থীরা আমাকে হামলার খবর জানান। পরে ছাত্রাবাসে গিয়ে শুনেছি, শেরে বাংলা হলে সাত-আটজন দুর্বৃত্ত হেলমেট পরে সিফাতের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ফাহাত নামে আরও একজন আহত হয়েছে। পরে সিফাতকে উদ্ধারের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আরও বলেন, ‘ঘটনার পর হাসপাতালে গিয়ে দেখি সিফাতের হাত ভেঙে গেছে, পায়েও কোপ লেগেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের নির্দেশে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরে ক্যাম্প পুলিশ হল পরিদর্শন করে সিসি ক্যামেরা জব্দ করেছে।’ 

এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার আলী আশরাফ ভূঞা সাংবাদিকদের বলেন, হামলাকারীদের পরিচয় সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আহতরা সুস্থ হলে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত জানা যাবে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। 

অপর দিকে হামলার ঘটনার পর আহত সিফাত তাঁর ফেসবুকে উল্লেখ করেন যে, ‘হয় নেতার মন দিয়া সরায়ে দেও, আর না হয় মাইরা ফালাও। এ ছাড়া অন্য কোনো কিছু কইরা লাভ নাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেটার ডেটা সেন্টার হওয়ার পর শুকিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়দের টিউবওয়েল

‘সুদে ১৭ লাখ নিয়ে ১৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি, তবুও বাড়ি দখল’

ফজর নামাজ পড়ে বাসার ছাদে যান আওয়ামী লীগ নেতা, সিঁড়ির পাশে রক্তাক্ত লাশ

ভারতীয় নারী ক্রিকেটারের খেলা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন মারুফা

১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি করল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাটোরের লালপুর: ট্রান্সফরমার চুরি, গচ্চা কৃষকের

  • ৬ মাসে উপজেলায় অন্তত ৩০টি, গত ১০ দিনে ৯টি ট্রান্সফরমার চুরি
  • চোর চক্রের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ বা প্রশাসনের যোগসাজশ থাকতে পারে: দাবি ভুক্তভোগীদের
ইমাম হাসান মুক্তি, লালপুর (নাটোর)
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের লালপুর উপজেলায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ফলে সেচ প্রকল্পে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমার নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ছয় মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে, যার বাজারমূল্য ২১ লাখ টাকার বেশি।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও লালপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি চোর চক্রের দৌরাত্ম্যে গত ১০ দিনেই উপজেলায় ৯টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে সেচব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

স্থানীয় কৃষকেরা জানিয়েছেন, ধারাবাহিকভাবে এসব চুরির ঘটনায় তাঁরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে কয়েক গুণ বেশি খরচ করে বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করছেন। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আগামী মৌসুমে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

উপজেলার কেশববাড়িয়া গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান (৫৫) বলেন, ‘চারপাশে ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে শুনে পাহারা বসিয়েছিলাম। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। গত ২৫ অক্টোবর রাতে আমার নলকূপের তিনটি ট্রান্সফরমারের সব যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে চোরেরা।’

এর আগে ২৪ অক্টোবর দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের গোলাম আযম, ১০ অক্টোবর ঢুষপাড়া গ্রাম থেকে লালপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক পলাশ, ৭ সেপ্টেম্বর রামানন্দপুর (গোবরপুর) গ্রাম থেকে লালপুর কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক মো. শফিউল্লাহ ও ছোট বিলশলিয়া গ্রামের বাকিব উদ্দিনের গভীর নলকূপ থেকে ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এ ছাড়া গত জুলাই ও আগস্ট মাসে আরও ৯টি ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে আড়বাব ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের নাজমুল হক বলেন, ‘আমার দুই দফায় মোট ৫টি ট্রান্সফরমার চুরি গেছে। প্রতিটি নতুন করে কিনতে বিএমডিএ অফিসে ৭০ হাজার টাকা ও নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ অফিসে পরীক্ষার জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে। নতুন ট্রান্সফরমার কিনে কেন আবার পরীক্ষার নামে হয়রানি করা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।’

রামানন্দপুর গ্রামের প্রাক্তন শিক্ষক মো. শফিউল্লাহ বলেন, ‘চুরি ঠেকাতে ট্রান্সফরমারের গায়ে দোয়া লিখেছিলাম, যাতে চোরেরা আল্লাহর ভয়ে চুরি না করে। এ ছাড়া খুঁটির ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে কাঁটাতারের বেষ্টনীও দিয়েছিলাম। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। ৭ সেপ্টেম্বর রাতে আমার নলকূপের দুটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা।’

গ্রাহকেরা অভিযোগ করে বলেন, পল্লী বিদ্যুতের নিজস্ব ট্রান্সফরমার সাধারণত চুরি হয় না। বেছে বেছে ব্যক্তিমালিকানাধীন ট্রান্সফরমারই চুরি হচ্ছে। এক্সপার্ট ছাড়া এ ধরনের চুরি সম্ভব নয়। চোর চক্রের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ বা প্রশাসনের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে তাঁদের সন্দেহ।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, লালপুর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে এসব চুরি করছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। গ্রাহকদের সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি।’

বিএমডিএ বড়াইগ্রাম জোনের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল বাশার বলেন, ‘আমরা সব সময় কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করি। বুয়েট থেকে টেস্ট করে ট্রান্সফরমার ক্রয় করা হয়। তবে পল্লী বিদ্যুতের নিয়ম অনুযায়ী আবারও পরীক্ষা করাতে হয়। নিয়ম অনুসারে ট্রান্সফরমার গ্রাহকদের নিজ দায়িত্বে সংরক্ষণ করতে হয়। চুরির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা সেচ কমিটির সদস্যসচিব ও বিএডিসি বড়াইগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘সেচ প্রকল্পে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। লালপুর উপজেলায় বিএডিসির আওতায় ৪টি গভীর নলকূপ রয়েছে, এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো ট্রান্সফরমার চুরি হয়নি। তবে বড়াইগ্রামে

অনেক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। কৃষকদের সতর্ক থাকতে আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি।’

লালপুর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় থানায় কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। চুরি যাওয়া মালপত্র উদ্ধার ও চোর চক্রকে গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেটার ডেটা সেন্টার হওয়ার পর শুকিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়দের টিউবওয়েল

‘সুদে ১৭ লাখ নিয়ে ১৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি, তবুও বাড়ি দখল’

ফজর নামাজ পড়ে বাসার ছাদে যান আওয়ামী লীগ নেতা, সিঁড়ির পাশে রক্তাক্ত লাশ

ভারতীয় নারী ক্রিকেটারের খেলা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন মারুফা

১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি করল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর: পদ্মার দুর্গম চরে সক্রিয় ডজনখানেক বাহিনী

  • চরে সক্রিয় কাকন, মণ্ডল, টুকু, সাইদ, লালচাঁদ, রাখি, কাইগি, রাজ্জাক ও বাহান্ন বাহিনী
  • জমি দখল, ফসল কেটে নেওয়া, চাঁদাবাজি, বালু উত্তোলন, মাদক ও অস্ত্র পাচারে জড়িত এসব বাহিনী
  • অনেকে বংশপরম্পরায় ধরেছেন বাহিনীর হাল। পুলিশের অভিযান শুরু। প্রথম দিনে গ্রেপ্তার নেই
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান। গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের পদ্মার চরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান। গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের পদ্মার চরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল এবং ভারত সীমান্তঘেঁষা অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি পদ্মার চরে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ এবং ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, শুধু কাকন কিংবা মণ্ডল বাহিনী নয়; টুকু, সাইদ, লালচাঁদ, রাখি, কাইগি, রাজ্জাক ও বাহান্ন বাহিনীও সক্রিয় এই চরাঞ্চলে।

রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব বাহিনী জমি দখল, ফসল কেটে নেওয়া, চাঁদাবাজি, বালু উত্তোলন, মাদক, অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব বাহিনী পদ্মার এমন দুর্গম চরে ‘সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রবেশ সীমিত। রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলার দুর্গম চরাঞ্চলজুড়ে তাদের বিস্তার।

সম্প্রতি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরে কাকন বাহিনী ও মণ্ডল গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের তিনজন নিহত হন। এরপর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় করা মামলায় ‘কাকন বাহিনীর’ প্রধান কাকনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এরপর গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা পুলিশের একাধিক ইউনিট শতাধিক সদস্য নিয়ে পদ্মার চরে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে প্রথম দিনের অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযান অব্যাহত থাকবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুরের পদ্মা চরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ডজনখানেক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তবে ২০ বছর আগে দুটি সন্ত্রাসী বাহিনীর উত্থান ঘটেছিল বিস্তৃত পদ্মার দুর্গম এই চরাঞ্চলে। তাদের ভাগ না দিয়ে কেউ চরের ফসল ঘরে তুলতে পারত না। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে তাদের হাতে ওই সময় ৪১ জন খুন হয় বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তখন চরের মাটিতে পা দিতে গা ছমছম করত। দুই বাহিনীর নাম ছিল ‘পান্না বাহিনী’ ও ‘লালচাঁদ বাহিনী’। পান্নার ওস্তাদ ছিলেন এই কাকন। সূত্র জানায়, এ বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ‘কাকন বাহিনী’র বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী, বাঘা, লালপুর ও দৌলতপুর থানায় মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। বাহিনীর প্রধান কাকন পাবনার ঈশ্বরদী কলেজ রোডের বাসিন্দা হলেও তাঁর পৈতৃক নিবাস কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামে।

১৯৯৪ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি চাকরি করলেও ২০০৫ সালে পান্না নিহত হওয়ার পর ২০০৭ সালে সৌদি আরব থেকে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় বালুমহাল দখল ও নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। এর পর থেকে তিনি নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেন। বর্তমানে তাঁর বাহিনীতে প্রায় ৪০ জন সদস্য রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নইম উদ্দিন সেন্টুকে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আলোচনায় আসে টুকু বাহিনী। বাহিনীর প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে টুকু ফিলিপনগর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর দলের সদস্য ২০ জনের বেশি। হত্যাকাণ্ডের পর টুকুসহ বেশ কয়েকজন সহযোগীর নামে মামলা হয়, যদিও আটকের পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মণ্ডলপাড়া এলাকায় রাজু আহমেদ (১৮) নামের এক যুবককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে সাইদ বাহিনী। বাহিনীর প্রধান আবু সাঈদ মণ্ডল (৩৫) মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর দক্ষিণ ভাঙ্গাপাড়া এলাকার ভাদু মণ্ডলের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় ৯টির বেশি মামলা রয়েছে।

২০০৯ সালে লালচাঁদ বাহিনীর প্রধান লালচাঁদ নিহত হওয়ার পর তাঁর ভাই সুখচাঁদ দায়িত্ব নেন। তাঁরা ফিলিপনগর এলাকার বাসিন্দা।

বাহিনীতে লালচাঁদের ছেলে রুবেলসহ একাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছেন। এ বাহিনীর বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে।

দৌলতপুর থানায় আলোচনায় থাকা আরেক বাহিনী ‘রাখি বাহিনী’র প্রধান রাকিবুল ইসলাম রাখি। তাঁর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। তাঁর বাড়ি ফিলিপনগর ইউনিয়নের দারোগার মোড়ে। এ ছাড়া রয়েছে কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনী।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে বিপুল অস্ত্র দেশে ঢোকার তথ্য রয়েছে। জানা গেছে, তিন চালানে মোট প্রায় ২ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এসেছে দেশে।

দুর্গম চরে অভিযান

গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ ১২০ জন সদস্য নিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে পুলিশ এই অভিযানে চরবাসী খুবই খুশি। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরবে বলে তাঁরা আশা করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

গতকাল শুক্রবার সকালে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফয়সাল মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই অভিযান রাতেও চলবে। অভিযান শেষ হবে না। এটা যে শুধু আসামি ধরা, তা নয়। মানুষকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় এই চরগুলোতে আর হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেটার ডেটা সেন্টার হওয়ার পর শুকিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়দের টিউবওয়েল

‘সুদে ১৭ লাখ নিয়ে ১৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি, তবুও বাড়ি দখল’

ফজর নামাজ পড়ে বাসার ছাদে যান আওয়ামী লীগ নেতা, সিঁড়ির পাশে রক্তাক্ত লাশ

ভারতীয় নারী ক্রিকেটারের খেলা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন মারুফা

১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি করল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জামালপুরে নদীতে ডুবে ভাই-বোনসহ ৩ শিশুর মৃত্যু, নিখোঁজ ২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জামালপুরের মাদারগঞ্জে নদীতে গোসলে নেমে ভাই-বোনসহ তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও দুই শিশু নিখোঁজ রয়েছে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সিধুলী ইউনিয়নের চর ভাটিয়ানি আমতলী এলাকার ঝিনাই নদীতে এ ঘটনা ঘটে।

জামালপুর ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার মো. রফিকুল ইসলাম ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানান, তিন শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি দুই শিশুকে উদ্ধারে অভিযান চলছে।

মারা যাওয়া শিশুরা হলো—মাদারগঞ্জ উপজেলার সিধুলী ইউনিয়নের চর ভাটিয়ানি আমতলী এলাকার দুদু মিয়ার মেয়ে পলি আক্তার (১২) ও ছেলে আবু সাঈদ (৮), সরিষাবাড়ি উপজেলার বাউসি এলাকার নুর ইসলামের মেয়ে সাইবা আক্তার (৯)। পলি আক্তার ও আবু সাঈদ স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া, এ ঘটনায় চর ভাটিয়ানি আমতলী এলাকার আজাদ মিয়ার মেয়ে কুলসুম আক্তার (৮) ও আরও এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ির সাইবা আক্তার ও তার ছোট ভাইসহ মাদারগঞ্জের চরভাটিয়ানী আমতলী এলাকায় নানির বাড়িতে বেড়াতে যায়। তারা দুইজন ও চর ভাটিয়ানি এলাকার কুলসুম আক্তার, পলি আক্তার, আবু সাইদ, ইয়াসিন ও আরও একজনসহ মোট ছয় শিশু ঝিনাই নদীতে গোসল করতে নামে। এক পর্যায়ে অন্যরা পানিতে ডুবে গেলে ইয়াসিন সাঁতার কেটে তীরে ওঠে। খবর পেয়ে জামালপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল পলি আক্তার, আবু সাঈদ ও সায়েবার মরদেহ উদ্ধার করে।

সিধুলি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আজাদ মিয়া বলেন, গোসল করতে নেমে তিন শিশু মারা গেছে। এদের মধ্যে দুই শিশু নানার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল।

মাদারগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, পাঁচজনের মধ্যে তিন শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ দুই শিশুকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এক শিশুর পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ অবস্থান করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেটার ডেটা সেন্টার হওয়ার পর শুকিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়দের টিউবওয়েল

‘সুদে ১৭ লাখ নিয়ে ১৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি, তবুও বাড়ি দখল’

ফজর নামাজ পড়ে বাসার ছাদে যান আওয়ামী লীগ নেতা, সিঁড়ির পাশে রক্তাক্ত লাশ

ভারতীয় নারী ক্রিকেটারের খেলা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন মারুফা

১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি করল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোটি টাকার জুতা আত্মসাৎ, মালিকের ভাইসহ গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
জুতা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জুতা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে ফরচুন শুজ লিমিটেডের প্রায় এক কোটি টাকার জুতা আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের আপন ছোট ভাইসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের ভাই রবিউল ইসলাম (৪০), কাভার্ড ভ্যানচালক রহমতপুর এলাকার জামাল হোসেন (২৮) এবং ঝিনাইদহ সদর উপজেলার শান্ত (২৫)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন।

ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, ফরচুন শুজ লিমিটেডের সিনিয়র হিসাব কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বাদী হয়ে গত ২৯ অক্টোবর কাউনিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার তিনজনসহ অজ্ঞাতনামা দুজনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তাঁরা প্রতারণার মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসে রপ্তানির জন্য পাঠানো ১০ হাজার ৮১২ জোড়া জুতা আত্মসাৎ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। জুতাগুলোর বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।

এজাহারে বলা হয়, গত ২৭ অক্টোবর রাতে বরিশাল বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত ফরচুন শুজ লিমিটেড থেকে রপ্তানির উদ্দেশ্যে দুটি কাভার্ড ভ্যানে করে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে জুতা পাঠানো হয়। রবিউল ইসলাম গাড়িগুলোর দায়িত্বে ছিলেন। তবে ২৮ অক্টোবর বন্দরে পৌঁছানোর কথা থাকলেও ট্রাক দুটি যায়নি। এর পর থেকে তাঁদের ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

ওসি ইসমাইল জানান, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক ছগীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় অভিযান চালায়। সেখানে জুতাবোঝাই কাভার্ড ভ্যান দুটি উদ্ধার এবং তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার সকালে তাঁদের বরিশালে আনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেটার ডেটা সেন্টার হওয়ার পর শুকিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়দের টিউবওয়েল

‘সুদে ১৭ লাখ নিয়ে ১৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি, তবুও বাড়ি দখল’

ফজর নামাজ পড়ে বাসার ছাদে যান আওয়ামী লীগ নেতা, সিঁড়ির পাশে রক্তাক্ত লাশ

ভারতীয় নারী ক্রিকেটারের খেলা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন মারুফা

১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি করল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত