Ajker Patrika

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

পুলিশের গুলিতে আহত হাসান সরদারের খবর রাখছে না কেউ

 আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি 
পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হাসান সরদার। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হাসান সরদার। ছবি: আজকের পত্রিকা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত বরিশালের আগৈলঝাড়ার হাসান সরদারের খবর রাখছে না কেউ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ৫ আগস্ট পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করলেও বর্তমানে হচ্ছে না তাঁর উন্নত চিকিৎসা। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে থমকে রয়েছে।

আন্দোলনে আহত হওয়ার পর ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো শরীরে প্রায় ৪ শতাধিক গুলির স্প্রিন্টার নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ২১ বছররে এই যুবক। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় চার সদস্যের পরিবারের দিন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে।

জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের পতিহার গ্রামের মৃত মানিক সরদারের তিন সন্তানের মধ্যে বড় হাসান সরদার। বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরেন তিনি। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর আয়েই চলত চার সদস্যর পরিবার ও কলেজ পড়ুয়া ভাই ও বোনের লেখাপড়ার খরচ।

’২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ার পর প্রথমে ১৮ই জুলাই রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ডান পায়ে পুলিশের রাবার বুলেটে আহত হন তিনি। এরপর গ্রামে এসে চিকিৎসা নিয়ে আবারও যোগ দেন আন্দোলনে। সর্বশেষ ৫ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বাড্ডায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে পুলিশের চালানো ছররা গুলিতে ডান হাত ও বুকে গুরুতর আহত হলে অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে নেওয়া হয় রাজধানীর আফতাব নগর নাগরিক হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা না দিয়ে পাঠানো হয় মুগদা মেডিকেলে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাঠানো হয় পঙ্গু হাসপাতালে, কিন্তু সেখানে তাকে ভর্তি না নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।

এরপর ৬ আগস্ট কুর্মিটোলা হাসপাতালে গেলে তারা আবারও পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান। পরে ৭ আগস্ট ভর্তি নেয় পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতালে অপারেশনের জন্য দুবার অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলেও জখম গুরুতর হওয়ায় অপারেশন করেননি চিকিৎসকেরা। এভাবেই পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আড়াই মাস কাটে তাঁর।

হাসান সরদার জানান, দেশের স্বার্থে নিজের পরিবার ও জীবনের কথা চিন্তা না করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ডান হাতের সমস্ত রগ নষ্ট হয়ে যায় তাঁর। পঙ্গুত্ব বরণ করে এখনো শরীরে প্রায় ৪ শতাধিক গুলির স্প্রিন্টার নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। শুধু জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা পেলেও সেই টাকা শেষ হওয়ার পর এখন চিকিৎসা চলছে ধার-দেনা করে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় চার সদস্যর পরিবারের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। অর্থভাবে বন্ধ হওয়ার পথে ভাই ও বোনের লেখাপড়া।

হাসানের মা নূরনাহার বেগম ও কলেজ পড়ুয়া ছোট বোন সুমাইয়া আক্তার তাঁর উন্নত চিকিৎসা, আর্থিক সহায়তায় যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারের কাছে একটা চাকরির দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারিহা তানজিন জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সরকারিভাবে তৈরি করা আহতদের তালিকায় হাসান সরদার তালিকাভুক্ত একজন আহত ব্যক্তি। ইতিমধ্যে তাঁকে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ ধরনের যাঁরা গুরুতর আহত রয়েছেন, তাঁদের আগামী মাসে জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আবারও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এ ছাড়া তাঁদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত