Ajker Patrika

যেমন ছিল কিশোর নেইমার

শাহরিয়ার আহমেদ
Thumbnail image

দুই বছরের খোকা ফিডার মুখে বাড়ির আঙিনায় ফুটবল খেলছে! তার বাবার সঙ্গে। শিশুর মা দূর থেকে তাদের দেখছেন। মা জানেন, এটা নিছক ছেলেখেলা নয়। এর সঙ্গে শিশুর বাবার কত স্বপ্ন জড়িত! একজন ফুটবলার হয়ে বাবা নিজে যা করতে পারেননি, সন্তানকে দিয়ে তিনি সেই আশা পূরণ করতে চান। শুধু ব্রাজিলের নয়, ছেলেকে পৃথিবীখ্যাত ফুটবলার বানাতে তিনি বদ্ধপরিকর। যত বাধাই আসুক, সেই স্বপ্ন সন্তানের মধ্যে গেঁথে দিতে সমর্থ হয়েছেন বাবা। ছোট্ট শিশুটারও প্রতিভার সঙ্গে অধ্যবসায়ের কোনো কমতি ছিল না। সেই শিশুই আজ বিশ্বখ্যাত ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার নেইমার; নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র। বাবা আদর করে ডাকতেন জুনিন হো বা জোয়া।

বাবার নাম সিনিয়র নেইমার দা সিলভা। অভাব-অনটনের সংসারে পরিবার নিয়ে সাও পাওলোতে পাড়ি জমান সিনিয়র নেইমার।

ফুটবল দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়।

সেখানেই নেইমার জুনিয়রের জন্ম। ১৯৯২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি।

ব্রাজিলের বিখ্যাত সব ফুটবলারের শুরুটা যেভাবে, নেইমার জুনিয়রের শুরুও সেভাবেই। দরিদ্র পরিবারে জন্ম। সমুদ্রসৈকত, বস্তির ফুটপাত ও অলিগলিতে প্র্যাকটিস।

এভাবেই একদিন বিশ্বখ্যাতি অর্জন!

তবে বাবা নেইমার সিনিয়রের অবদান এ ক্ষেত্রে অপরিসীম। তিনি পুত্রকে যত্ন করে সুশৃঙ্খল নিয়মে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করলেন। ছেলের প্রতিভাকে ক্ষুরধার করতে তাঁর চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না।

মাত্র ১৭ বছর বয়সেই পেশাদার ফুটবলার হিসেবে খেলা শুরু নেইমারের। আর দুই বছরের মধ্যেই সাউথ আমেরিকান ফুটবলার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে নেয় এ বিস্ময় বালক।

এরপর আর তাকে আটকাতে পারেনি কেউ।

তবে এ পর্যায় পর্যন্ত আসতে নেইমারকে কম বাধাবিপত্তি অতিক্রম করতে হয়নি। সাধনা করতে হয়েছে প্রাণপণ। শুধু প্রতিভা দিয়ে কেউ কোনো ক্ষেত্রেই তেমন বিশেষ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে না। প্রতিভার সঙ্গে প্রয়োজন প্রচুর অধ্যবসায়ের।

সাধারণত ভালো খেলোয়াড়েরা মাঠে প্রতিপক্ষের আক্রমণের শিকার হয় বেশি। নেইমারের ক্ষেত্রেও তা-ই। বারবার ইনজুরিতে পড়তে হয়েছে তাকে। এবারের বিশ্বকাপেও প্রথম দিনের পর সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁকে দেখা যায়নি। ইনজুরির কারণে।

২০০৩ সালে কিশোর নেইমার বিখ্যাত ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসে ডাক পান। সান্তোসের হয়ে খেলার প্রথম মৌসুমে তেমন সফলতা দেখানোর সুযোগ হয়নি তার। প্রথম দিকে তাকে খেলানো হতো না। বসিয়ে রাখা হতো। তবে সে দমে যাওয়ার পাত্র নয়।

২০০৯ সালে ব্রাজিলিয়ান কাপে শেষের দিকে খেলার সুযোগ পেল সে। নিজেকে প্রমাণ করার এই সুযোগটুকু কাজে লাগাল কিশোর নেইমার, পালমেরিয়াসের বিপক্ষে জয়সূচক গোল করে। আর ওই বছরই শ্রেষ্ঠ যুবা খেলোয়াড় নির্বাচিত হলো সে।

পরের মৌসুমে ২০১০ সালে ব্রাজিলিয়ান কাপে অর্জন করে নিল বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার। এই লিগে নেইমার ১৯ খেলায় ১৪টা গোল করল। পরে অনূর্ধ্ব ১৭, অনূর্ধ্ব ২০ ও ব্রাজিল মূল দলের প্রতিনিধিত্ব পেল। ১০০তম গোল করে নেইমার তার ২০তম জন্মদিন উদ্‌যাপন করল!

এরপর থেকে তার সাফল্যের তালিকা আরও দীর্ঘ হতে শুরু করে। ২০১২ সালে নেইমার স্পেনীয় বার্সেলোনা ক্লাবে যোগ দেয়। ২০১৫ সালের ফিফা ব্যালন ডি’অরের জন্য তিনজনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিল নেইমার। যেখানে মেসি ও রোনালদোর পরের স্থানটি অর্জন করেন সে।

বর্তমানে নেইমার বিশ্বসেরা তিন ফুটবলারের একজন। ২৩ বছর বয়সে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যতগুলো গোল করেছে, একই সময়ে নেইমার করেছে তার দ্বিগুণ!

নেইমারের নিজস্ব ভঙ্গি, গতি, ত্বরণ, বল কাটানো ও উভয় পায়ের জাদুকরি দক্ষতা ফুটবল জগতে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। ব্রাজিলীয় কিংবদন্তি পেলে তাকে ‘এক অসাধারণ প্লেয়ার’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

নেইমার তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছে। ফুটবল তাকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি ছাড়াও বিপুল অর্থের মালিক বানিয়েছে। এ ছাড়া টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান পাওয়া প্রথম ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড় নেইমার।

নেইমারের প্রিয় রং সাদা। ‘গেম অব থ্রোনস’ ও ‘প্রিজন ব্রেক’ তার পছন্দের টিভি সিরিজ। অবসরে নেইমার নাচতে ভালোবাসে। এবারের বিশ্বকাপেও সারা পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীরা তার অনন্য ক্রীড়াশৈলী দেখার অপেক্ষায় আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত