আরিফ আবেদ আদিত্য

লন্ডন থেকে অদূরেই ক্যান্টাবরি শহরে আমার ইউনিভার্সিটি অবস্থিত। এখানে আসার আগে ক্যান্টাবরি শহরটিকে কেবল চিনতাম চসারের ‘ক্যান্টাবরি টেলস’-এর মাধ্যমে। পরে জেনেছি, পাশ্চাত্য রেনেসাঁর অন্যতম রূপকার নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লোর (১৫৬৪-১৫৯৩) জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই শহরেই। লন্ডনের অতি কাছে (ট্রেনে ৪৫ মিনিট, বাসে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের পথ) সমুদ্রসৈকত-সমৃদ্ধ কেন্ট কাউন্টির কেন্দ্রস্থল এই ক্যান্টাবরি শহর। বিগত কয়েক শ বছর ধরে লন্ডনের লেখক-সাহিত্যিক-দার্শনিকদের আনাগোনা ছিল এই শহরের আনাচে-কানাচে। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত হওয়ায় চমৎকার আবহাওয়া, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সমুদ্রসৈকত এর প্রধান আকর্ষণ। কেন্টকে বলা হয় ‘গার্ডেন অব ইংল্যান্ড’। কেন্ট কাউন্টিতে ৫০টির মতো সমুদ্রসৈকত আছে। ক্যান্টাবরির চারপাশ ঘিরে সমুদ্রসৈকত অবস্থিত—যেমন: ফোকস্টোন, ডোভার, ডিল, ব্রডস্টেয়ার, মারগেট, রামসগেট, সেনউইচ, হার্ন বে ইত্যাদি। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার থেকে শুরু করে টি এস ইলিয়ট এখানকার সমুদ্রসৈকতে অবকাশ যাপনে আসতেন। ইংরেজি সাহিত্যের অনেক চরিত্র এখানকার শহরে বেড়ে উঠেছে। ভিক্টোরীয় যুগে অন্যতম লেখক চার্লস ডিকেন্সের (১৮১২-১৮৭০) অনেক চরিত্র ও ঘটনাবলির ছায়া এসব স্থানে পাওয়া যায়।
আমার ডর্মেটরির কাছাকাছি ক্যান্টাবরির বিখ্যাত নদী গ্রেট স্ট বয়ে গেছে। এই নদীর পাড়ে বসেই ইংরেজ কবি থমাস হার্ডি (১৮৪০-১৯২৮) প্রিয়তমা জীবনসঙ্গিনীর বিয়োগব্যথায় লিখেছিলেন: ‘Overlooking the River Stour’ (১৯১৬)। শহরের ভেতর দিয়েই এই নদী প্রবাহিত হয়েছে; যদিও কালের বিবর্তনে শহরের অভ্যন্তরের নদীর অংশ সরু খালের আকার নিয়েছে, তথাপি জলের প্রবহমানতা বিদ্যমান আছে। এই শহরে আগত ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ এখানকার ‘পান্টিং’—লগি দিয়ে নৌকা চালিয়ে পর্যটকদের এই শহর দেখানো; অনেকটা ভেনিসের নৌবিহারের মতো।
একদিন সকালে গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে হাঁটতে বেরোলাম। তখন হঠাৎ চোখে পড়ে রাস্তার ওপর তামার অক্ষরে খোদাই করে লেখা ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’। পাশে সাইনবোর্ডে ছোট্ট পরিচয় লেখা ‘ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ’। আকস্মিক কিছু আবিষ্কারের মতো হঠাৎ এই ফলকচিহ্ন দেখে আমার যারপরনাই অবাক হওয়ার পালা। কারণ, পরে এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ আমাকে হাঁটতে নিয়ে যায় ইংল্যান্ডের প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসের পথে।
ক্যান্টাবরি শহরের গল্প বা ইতিহাস লিখে আসলে শেষ হওয়ার নয়। এর পরতে পরতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইংল্যান্ড নামক রাষ্ট্রের গড়ে ওঠার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। তিনটি ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, যা ‘বিগ থ্রি’ নামে পরিচিত এই শহরে অবস্থিত--ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল (মাদার চার্চ অব ইংল্যান্ড), সেন্ট অগাস্টিন এবে (অ্যাংলো-সাক্সনদের সময়ের কবরস্থান) ও সেন্ট মার্টিন চার্চ (ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীনতম চার্চ)। গ্রেট ব্রিটেনে খ্রিষ্টধর্মের প্রচার শুরু হয় এই শহর থেকে। রোমান মিশনারিরা ২৭০-২৮০ সালে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে গ্রেট স্ট নদীর পাশে এই ক্যান্টাবরি শহরের পত্তন করে। রোমানরা ইংল্যান্ডে নিজেদের শাসন কায়েম করে খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকের দিকে। ভারতীয় উপমহাদেশকে ইংল্যান্ড প্রায় ২০০ বছর শাসন করেছিল, অথচ এই ইংল্যান্ডও একসময় রোমানদের কলোনি ছিল। রোমানরা চলে যাওয়ার পর অ্যাংলো-সাক্সনদের হাত ধরে আজকের ইংল্যান্ড গড়ে ওঠে।
যাই হোক, গল্পে ফেরা যাক। প্রায় সব ধর্মাবলম্বীর জীবিতকালে অন্তিম ইচ্ছা থাকে তাদের ধর্মীয় পবিত্র স্থান বা তীর্থসমূহ পরিদর্শনের। মধ্য ও প্রাক-আধুনিক যুগে ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে নান-পাদরি-যাজক ও খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীদের গন্তব্যের অন্যতম শেষ পথ ছিল রোম! কারণ, ভ্যাটিকান রোম ছিল খ্রিষ্টানদের মূল উপাসনালয় এবং প্রধান ধর্মগুরু পোপের আবাসস্থল। এখান থেকেই খ্রিষ্টধর্মের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হতো। এ ছাড়া যিশুর জন্মভূমি জেরুজালেম ছিল তাদের পরিভ্রমণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। ইউরোপে খ্রিষ্টানদের ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই ভাগে বিভাজনের আগ পর্যন্ত ইউরোপে এই ধারা অব্যাহত ছিল। তারা পরিভ্রমণের সময় যাত্রাপথের বিবরণ, ভৌগোলিক অবস্থান এবং যাত্রাপথ নির্দেশ লিখে রাখত। পাশাপাশি মানচিত্র আকারে এঁকে রাখত পরবর্তী তীর্থভ্রমণকারীদের জন্য। তাঁদের এই লিখিত ভৌগোলিক বিবরণ ও অঙ্কিত মানচিত্রই আধুনিক ‘কার্টোগ্রাফি’ বা মানচিত্রবিদ্যার প্রাথমিক মৌল নিদর্শন। ব্রিটিশ লাইব্রেরি ও চার্চে অনেক প্রাচীন মানচিত্র আজও রক্ষিত আছে, যা প্রায় নির্ভুল ছিল। ইউরোপের ‘একলেসিয়েস্টিক্যাল ইতিহাস’ তাই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার এবং চার্চ বা গির্জার ক্রমবিকাশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
প্রাক-আধুনিক যুগ পর্যন্ত ইউরোপ ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে যেখানেই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার লাভ হয়েছিল, সেই সব জায়গা থেকে তীর্থযাত্রীদের চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল রোম। এ জন্য মধ্যযুগে একটা কথা খুব প্রচলন ছিল, ‘সকল পথের গন্তব্য হলো রোম’। অর্থাৎ, ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বের সব পথের মিলনস্থল হলো রোম। এখনো ক্যাথলিক অংশ রোমে (ভ্যাটিকান সিটি) যাওয়াকে জীবনের পরম আরাধ্য মনে করে। যদিও প্রোটেস্ট্যান্ট অনুসারীরা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ পরিদর্শনে আগ্রহী। ইংরেজি সাহিত্যের জনক জিওফ্রে চসারের (১৩৪০-১৪০০) বিখ্যাত ‘দ্য ক্যান্টাবরি টেলস’ (১৩৯২) গ্রন্থে পরিভ্রাজকদের ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ দর্শনের উদ্দেশ্যে যাত্রারত মানুষের গল্পই বলা হয়েছে। যাই হোক, একটা সময় রোমের প্রভাব ছিল অপরিমেয়। রোমের প্রভাব ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে পরে আর তেমন থাকেনি। ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট বৃহৎ দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। রোমের পোপের সঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। রাজা নির্বাচন ও রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে ধর্মগুরুদের হস্তক্ষেপ এর অন্যতম কারণ ছিল। অবশেষে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি (১৪৯১-১৫৪৭) রোমের পোপের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে ইংল্যান্ডে অ্যাংলিকান চার্চ বা চার্চ অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে খ্রিষ্টধর্মের সংস্কারপন্থী অংশের (প্রোটেস্ট্যান্ট) ধর্মচর্চার পথ মসৃণ হয়। ক্রিস্টোফার মার্লোর ‘ম্যাসাকার অব প্যারিস’ (১৫৯৩) নাটকে ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই অনুসারীদের নির্মম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা আছে।
পোপের কাছ থেকে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নেন। এত দিন পোপ ছিল একমাত্র ‘ডিভাইন রাইট’প্রাপ্ত। রাজা অষ্টম হেনরি নিজেকে একই সঙ্গে চার্চ ও রাষ্ট্রের প্রধান ‘ডিভাইন রাইট’ প্রাপ্ত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা ছিল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে যুগান্তকারী। কারণ, হাজার বছর ধরে চলা পাপাসি বা পোপ বা ধর্মগুরুদের একচ্ছত্র ক্ষমতা এতে খর্ব হয়। রাজা অষ্টম হেনরি ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠা করেন নতুন চার্চ—প্রধান ধর্মগুরুর নামকরণ হয় ‘আর্চবিশপ’। ইংল্যান্ডের ইতিহাস বদলে দেওয়া মাদার অব অল অ্যাংলিকান চার্চের অবস্থান ক্যান্টাবরি শহরে, যা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ নামে পরিচিত। মজার বিষয় হলো, রাজা অষ্টম হেনরির এ ঘটনার সূত্রপাত তাঁর বিয়ের বৈধতা নিয়ে। তার যুগান্তরকারী সিদ্ধান্তে রাতারাতি ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠা হাজার হাজার ক্যাথলিক চার্চ বন্ধ হয়ে যায়। পরে এর প্রভাব (ধর্মীয় সংস্কার) ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। প্রোটেস্টান্টদের পালে হাওয়া লাগে।
রাজা অষ্টম হেনরির সমসাময়িক কালেই (তাঁর জন্মের কিছু আগে ও পরে) খ্রিষ্টধর্মের কিছু মৌল ধারণা নিয়ে ধর্মীয় তাত্ত্বিকদের মধ্যে দার্শনিক আলাপ ও চর্চা শুরু হয়। ষোড়শ শতকে জার্মান অধিবাসী থিওলজিস্ট মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬), সুইস থিওলজিয়ান হলড্রিক জিংলি (১৪৮৪-১৫৩১), জন ক্যালভিন (১৫০৯-১৫৬৪) প্রমুখ রোমান ক্যাথলিক চার্চের ধর্মীয় কিছু বিষয়ে ভিন্নমত দেন; যা পরে প্রোটেস্টান্ট ধারার জন্ম দেয়।
ডাচ ক্যাথলিক থিওলজিস্ট ও দার্শনিক ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাস (১৪৬৬-১৫৩৬) ও মার্টিন লুথার ছিলেন বন্ধু। তাঁরা ওল্ড টেস্টামেন্টের কিছু বিষয় নিয়ে গভীর ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা করতেন। কিন্তু একসময় তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়। মার্টিন লুথারের ধর্মীয় সংস্কারের চিন্তাধারাই পরে ‘প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন’ নামে পরিচিত হয়। অন্যদিকে ইরাসমাস ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষায় ক্রিস্টিয়ান ধর্মের অনেক বিষয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে রিফর্মেশন-কাউন্টার দিতে চেষ্টা করেন। তিনি ক্যাথলিক ধারা বজায় রাখতে আমৃত্যু ব্যাপৃত ছিলেন। রেনেসাঁর সূচনাপর্বে তাঁর অন্যতম অবদান ছিল মানুষের ‘ফ্রিডম অব উইল’ বা ইচ্ছার স্বাধীনতার কথা বলা। এই সময়ে আরেকজন চিন্তাবিদ-দার্শনিক ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন; তিনি হলেন থমাস মোর (১৪৭৪-১৫৩৫)। ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র ও পলিটিক্যাল সিস্টেমের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় তিনি রচনা করেছিলেন যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ইউটোপিয়া’ (১৫১৬)। উল্লিখিত এঁরা সবাই ছিলেন ইংল্যান্ডের রেনেসাঁর প্রথম দিকের ব্যক্তিত্ব। মধ্যযুগে ইউরোপে ধর্মতাত্ত্বিক বিতর্কের ভেতর দিয়েই মানবিক মূল্যবোধ ও মানবিকতার উন্মেষের সূচনা হয়, যা মূলত রেনেসাঁর বীজমন্ত্র। পরে অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিক এই অভিযাত্রায় শামিল হন। সময়ের পরিক্রমায় এর মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড প্রবেশ করে প্রাক-আধুনিক যুগে, সেখান থেকে আধুনিক যুগে।
এবার বিষয়বস্তুতে ফিরে আস যাক। কথা হচ্ছিল ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ নির্মাণের ইতিহাস বিষয়ে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইংল্যান্ডের ক্যান্টাবরি শহর গড়ে ওঠে মূলত রোমানদের হাত ধরে। এখানে রোমান মিশনারিরা প্রতিষ্ঠা করে ইংল্যান্ডের তথা ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীন চার্চ ‘সেন্ট মার্টিন চার্চ’ (৫৯৭ সালের পূর্বে)। ধারণা করা যায়, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপের নামকরণ করা হয় ক্যান্টাবরিতে অবস্থিত চার্চের এই ‘সেন্ট মার্টিনের’ নামে। তারা এখানে বেনেডিকটাইন মোনাস্ট্রি স্থাপন করেছিল, যা ৫৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৫৩৮ সাল (রিফর্মেশনকাল) পর্যন্ত ক্রিয়াশীল ছিল। এ ছাড়া তারা ক্যান্টাবরি শহরকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ২৭০-২৯০ সময়কালে ‘সিটি ওয়াল’ নির্মাণ করেছিল, যা এখনো বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে আছে। ষষ্ঠ শতকে রোমানরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে কেন্টের আশপাশের শহর-বন্দরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ছিল মূলত নৌপথে—স্ট নদীর পথ ধরে। তখনকার রোমান শাসকেরা যোগাযোগের জন্য একটি সড়কপথেরও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
এ জন্য তারা গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে লন্ডনের সঙ্গে ক্যান্টাবরি শহরের সড়কপথে যোগাযোগের জন্য চুন-সুরকি দিয়ে রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট নির্মাণ করে। আধুনিক যুগের বিশাল রাজপথের সঙ্গে এটিকে তুলনা করলে ভুল হবে। এই রাজপথ দিয়ে মূলত দুটি গরুর গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলার মতো প্রশস্ত। প্রায় ২ হাজার বছরের পুরোনো সেই রাজপথ এখনো টিকে আছে, যদিও বর্তমানে এটি পিচঢালাই করে ঢেকে রাখা হয়েছে। ইংল্যান্ডে এর আগে কোনো রাজপথের ধারণাই ছিল না। মজার তথ্য হলো, এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ বা রাজপথের একদিকের অভিমুখ যেমন ছিল লন্ডনের দিকে, অপরটি ছিল পরিভ্রাজক-তীর্থযাত্রীদের শেষ গন্তব্য পথ রোমের দিকে।
প্রাচীন এই পথের একদিকে এগোলে রোম, অপরদিকে হাঁটলে লন্ডন—বিস্ময়কর এক অনুভূতি জাগ্রত হয়। মনে হচ্ছিল, হাজার বছরের পুরোনো সেই মহাসড়কে দাঁড়িয়ে মুহূর্তে ইতিহাসের অলিগলিতে হারিয়ে যেতে বসেছি।
(চলবে)
আরও পড়ুন:

লন্ডন থেকে অদূরেই ক্যান্টাবরি শহরে আমার ইউনিভার্সিটি অবস্থিত। এখানে আসার আগে ক্যান্টাবরি শহরটিকে কেবল চিনতাম চসারের ‘ক্যান্টাবরি টেলস’-এর মাধ্যমে। পরে জেনেছি, পাশ্চাত্য রেনেসাঁর অন্যতম রূপকার নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লোর (১৫৬৪-১৫৯৩) জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই শহরেই। লন্ডনের অতি কাছে (ট্রেনে ৪৫ মিনিট, বাসে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের পথ) সমুদ্রসৈকত-সমৃদ্ধ কেন্ট কাউন্টির কেন্দ্রস্থল এই ক্যান্টাবরি শহর। বিগত কয়েক শ বছর ধরে লন্ডনের লেখক-সাহিত্যিক-দার্শনিকদের আনাগোনা ছিল এই শহরের আনাচে-কানাচে। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত হওয়ায় চমৎকার আবহাওয়া, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সমুদ্রসৈকত এর প্রধান আকর্ষণ। কেন্টকে বলা হয় ‘গার্ডেন অব ইংল্যান্ড’। কেন্ট কাউন্টিতে ৫০টির মতো সমুদ্রসৈকত আছে। ক্যান্টাবরির চারপাশ ঘিরে সমুদ্রসৈকত অবস্থিত—যেমন: ফোকস্টোন, ডোভার, ডিল, ব্রডস্টেয়ার, মারগেট, রামসগেট, সেনউইচ, হার্ন বে ইত্যাদি। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার থেকে শুরু করে টি এস ইলিয়ট এখানকার সমুদ্রসৈকতে অবকাশ যাপনে আসতেন। ইংরেজি সাহিত্যের অনেক চরিত্র এখানকার শহরে বেড়ে উঠেছে। ভিক্টোরীয় যুগে অন্যতম লেখক চার্লস ডিকেন্সের (১৮১২-১৮৭০) অনেক চরিত্র ও ঘটনাবলির ছায়া এসব স্থানে পাওয়া যায়।
আমার ডর্মেটরির কাছাকাছি ক্যান্টাবরির বিখ্যাত নদী গ্রেট স্ট বয়ে গেছে। এই নদীর পাড়ে বসেই ইংরেজ কবি থমাস হার্ডি (১৮৪০-১৯২৮) প্রিয়তমা জীবনসঙ্গিনীর বিয়োগব্যথায় লিখেছিলেন: ‘Overlooking the River Stour’ (১৯১৬)। শহরের ভেতর দিয়েই এই নদী প্রবাহিত হয়েছে; যদিও কালের বিবর্তনে শহরের অভ্যন্তরের নদীর অংশ সরু খালের আকার নিয়েছে, তথাপি জলের প্রবহমানতা বিদ্যমান আছে। এই শহরে আগত ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ এখানকার ‘পান্টিং’—লগি দিয়ে নৌকা চালিয়ে পর্যটকদের এই শহর দেখানো; অনেকটা ভেনিসের নৌবিহারের মতো।
একদিন সকালে গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে হাঁটতে বেরোলাম। তখন হঠাৎ চোখে পড়ে রাস্তার ওপর তামার অক্ষরে খোদাই করে লেখা ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’। পাশে সাইনবোর্ডে ছোট্ট পরিচয় লেখা ‘ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ’। আকস্মিক কিছু আবিষ্কারের মতো হঠাৎ এই ফলকচিহ্ন দেখে আমার যারপরনাই অবাক হওয়ার পালা। কারণ, পরে এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ আমাকে হাঁটতে নিয়ে যায় ইংল্যান্ডের প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসের পথে।
ক্যান্টাবরি শহরের গল্প বা ইতিহাস লিখে আসলে শেষ হওয়ার নয়। এর পরতে পরতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইংল্যান্ড নামক রাষ্ট্রের গড়ে ওঠার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। তিনটি ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, যা ‘বিগ থ্রি’ নামে পরিচিত এই শহরে অবস্থিত--ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল (মাদার চার্চ অব ইংল্যান্ড), সেন্ট অগাস্টিন এবে (অ্যাংলো-সাক্সনদের সময়ের কবরস্থান) ও সেন্ট মার্টিন চার্চ (ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীনতম চার্চ)। গ্রেট ব্রিটেনে খ্রিষ্টধর্মের প্রচার শুরু হয় এই শহর থেকে। রোমান মিশনারিরা ২৭০-২৮০ সালে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে গ্রেট স্ট নদীর পাশে এই ক্যান্টাবরি শহরের পত্তন করে। রোমানরা ইংল্যান্ডে নিজেদের শাসন কায়েম করে খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকের দিকে। ভারতীয় উপমহাদেশকে ইংল্যান্ড প্রায় ২০০ বছর শাসন করেছিল, অথচ এই ইংল্যান্ডও একসময় রোমানদের কলোনি ছিল। রোমানরা চলে যাওয়ার পর অ্যাংলো-সাক্সনদের হাত ধরে আজকের ইংল্যান্ড গড়ে ওঠে।
যাই হোক, গল্পে ফেরা যাক। প্রায় সব ধর্মাবলম্বীর জীবিতকালে অন্তিম ইচ্ছা থাকে তাদের ধর্মীয় পবিত্র স্থান বা তীর্থসমূহ পরিদর্শনের। মধ্য ও প্রাক-আধুনিক যুগে ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে নান-পাদরি-যাজক ও খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীদের গন্তব্যের অন্যতম শেষ পথ ছিল রোম! কারণ, ভ্যাটিকান রোম ছিল খ্রিষ্টানদের মূল উপাসনালয় এবং প্রধান ধর্মগুরু পোপের আবাসস্থল। এখান থেকেই খ্রিষ্টধর্মের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হতো। এ ছাড়া যিশুর জন্মভূমি জেরুজালেম ছিল তাদের পরিভ্রমণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। ইউরোপে খ্রিষ্টানদের ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই ভাগে বিভাজনের আগ পর্যন্ত ইউরোপে এই ধারা অব্যাহত ছিল। তারা পরিভ্রমণের সময় যাত্রাপথের বিবরণ, ভৌগোলিক অবস্থান এবং যাত্রাপথ নির্দেশ লিখে রাখত। পাশাপাশি মানচিত্র আকারে এঁকে রাখত পরবর্তী তীর্থভ্রমণকারীদের জন্য। তাঁদের এই লিখিত ভৌগোলিক বিবরণ ও অঙ্কিত মানচিত্রই আধুনিক ‘কার্টোগ্রাফি’ বা মানচিত্রবিদ্যার প্রাথমিক মৌল নিদর্শন। ব্রিটিশ লাইব্রেরি ও চার্চে অনেক প্রাচীন মানচিত্র আজও রক্ষিত আছে, যা প্রায় নির্ভুল ছিল। ইউরোপের ‘একলেসিয়েস্টিক্যাল ইতিহাস’ তাই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার এবং চার্চ বা গির্জার ক্রমবিকাশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
প্রাক-আধুনিক যুগ পর্যন্ত ইউরোপ ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে যেখানেই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার লাভ হয়েছিল, সেই সব জায়গা থেকে তীর্থযাত্রীদের চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল রোম। এ জন্য মধ্যযুগে একটা কথা খুব প্রচলন ছিল, ‘সকল পথের গন্তব্য হলো রোম’। অর্থাৎ, ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বের সব পথের মিলনস্থল হলো রোম। এখনো ক্যাথলিক অংশ রোমে (ভ্যাটিকান সিটি) যাওয়াকে জীবনের পরম আরাধ্য মনে করে। যদিও প্রোটেস্ট্যান্ট অনুসারীরা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ পরিদর্শনে আগ্রহী। ইংরেজি সাহিত্যের জনক জিওফ্রে চসারের (১৩৪০-১৪০০) বিখ্যাত ‘দ্য ক্যান্টাবরি টেলস’ (১৩৯২) গ্রন্থে পরিভ্রাজকদের ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ দর্শনের উদ্দেশ্যে যাত্রারত মানুষের গল্পই বলা হয়েছে। যাই হোক, একটা সময় রোমের প্রভাব ছিল অপরিমেয়। রোমের প্রভাব ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে পরে আর তেমন থাকেনি। ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট বৃহৎ দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। রোমের পোপের সঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। রাজা নির্বাচন ও রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে ধর্মগুরুদের হস্তক্ষেপ এর অন্যতম কারণ ছিল। অবশেষে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি (১৪৯১-১৫৪৭) রোমের পোপের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে ইংল্যান্ডে অ্যাংলিকান চার্চ বা চার্চ অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে খ্রিষ্টধর্মের সংস্কারপন্থী অংশের (প্রোটেস্ট্যান্ট) ধর্মচর্চার পথ মসৃণ হয়। ক্রিস্টোফার মার্লোর ‘ম্যাসাকার অব প্যারিস’ (১৫৯৩) নাটকে ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই অনুসারীদের নির্মম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা আছে।
পোপের কাছ থেকে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নেন। এত দিন পোপ ছিল একমাত্র ‘ডিভাইন রাইট’প্রাপ্ত। রাজা অষ্টম হেনরি নিজেকে একই সঙ্গে চার্চ ও রাষ্ট্রের প্রধান ‘ডিভাইন রাইট’ প্রাপ্ত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা ছিল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে যুগান্তকারী। কারণ, হাজার বছর ধরে চলা পাপাসি বা পোপ বা ধর্মগুরুদের একচ্ছত্র ক্ষমতা এতে খর্ব হয়। রাজা অষ্টম হেনরি ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠা করেন নতুন চার্চ—প্রধান ধর্মগুরুর নামকরণ হয় ‘আর্চবিশপ’। ইংল্যান্ডের ইতিহাস বদলে দেওয়া মাদার অব অল অ্যাংলিকান চার্চের অবস্থান ক্যান্টাবরি শহরে, যা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ নামে পরিচিত। মজার বিষয় হলো, রাজা অষ্টম হেনরির এ ঘটনার সূত্রপাত তাঁর বিয়ের বৈধতা নিয়ে। তার যুগান্তরকারী সিদ্ধান্তে রাতারাতি ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠা হাজার হাজার ক্যাথলিক চার্চ বন্ধ হয়ে যায়। পরে এর প্রভাব (ধর্মীয় সংস্কার) ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। প্রোটেস্টান্টদের পালে হাওয়া লাগে।
রাজা অষ্টম হেনরির সমসাময়িক কালেই (তাঁর জন্মের কিছু আগে ও পরে) খ্রিষ্টধর্মের কিছু মৌল ধারণা নিয়ে ধর্মীয় তাত্ত্বিকদের মধ্যে দার্শনিক আলাপ ও চর্চা শুরু হয়। ষোড়শ শতকে জার্মান অধিবাসী থিওলজিস্ট মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬), সুইস থিওলজিয়ান হলড্রিক জিংলি (১৪৮৪-১৫৩১), জন ক্যালভিন (১৫০৯-১৫৬৪) প্রমুখ রোমান ক্যাথলিক চার্চের ধর্মীয় কিছু বিষয়ে ভিন্নমত দেন; যা পরে প্রোটেস্টান্ট ধারার জন্ম দেয়।
ডাচ ক্যাথলিক থিওলজিস্ট ও দার্শনিক ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাস (১৪৬৬-১৫৩৬) ও মার্টিন লুথার ছিলেন বন্ধু। তাঁরা ওল্ড টেস্টামেন্টের কিছু বিষয় নিয়ে গভীর ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা করতেন। কিন্তু একসময় তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়। মার্টিন লুথারের ধর্মীয় সংস্কারের চিন্তাধারাই পরে ‘প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন’ নামে পরিচিত হয়। অন্যদিকে ইরাসমাস ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষায় ক্রিস্টিয়ান ধর্মের অনেক বিষয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে রিফর্মেশন-কাউন্টার দিতে চেষ্টা করেন। তিনি ক্যাথলিক ধারা বজায় রাখতে আমৃত্যু ব্যাপৃত ছিলেন। রেনেসাঁর সূচনাপর্বে তাঁর অন্যতম অবদান ছিল মানুষের ‘ফ্রিডম অব উইল’ বা ইচ্ছার স্বাধীনতার কথা বলা। এই সময়ে আরেকজন চিন্তাবিদ-দার্শনিক ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন; তিনি হলেন থমাস মোর (১৪৭৪-১৫৩৫)। ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র ও পলিটিক্যাল সিস্টেমের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় তিনি রচনা করেছিলেন যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ইউটোপিয়া’ (১৫১৬)। উল্লিখিত এঁরা সবাই ছিলেন ইংল্যান্ডের রেনেসাঁর প্রথম দিকের ব্যক্তিত্ব। মধ্যযুগে ইউরোপে ধর্মতাত্ত্বিক বিতর্কের ভেতর দিয়েই মানবিক মূল্যবোধ ও মানবিকতার উন্মেষের সূচনা হয়, যা মূলত রেনেসাঁর বীজমন্ত্র। পরে অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিক এই অভিযাত্রায় শামিল হন। সময়ের পরিক্রমায় এর মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড প্রবেশ করে প্রাক-আধুনিক যুগে, সেখান থেকে আধুনিক যুগে।
এবার বিষয়বস্তুতে ফিরে আস যাক। কথা হচ্ছিল ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ নির্মাণের ইতিহাস বিষয়ে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইংল্যান্ডের ক্যান্টাবরি শহর গড়ে ওঠে মূলত রোমানদের হাত ধরে। এখানে রোমান মিশনারিরা প্রতিষ্ঠা করে ইংল্যান্ডের তথা ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীন চার্চ ‘সেন্ট মার্টিন চার্চ’ (৫৯৭ সালের পূর্বে)। ধারণা করা যায়, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপের নামকরণ করা হয় ক্যান্টাবরিতে অবস্থিত চার্চের এই ‘সেন্ট মার্টিনের’ নামে। তারা এখানে বেনেডিকটাইন মোনাস্ট্রি স্থাপন করেছিল, যা ৫৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৫৩৮ সাল (রিফর্মেশনকাল) পর্যন্ত ক্রিয়াশীল ছিল। এ ছাড়া তারা ক্যান্টাবরি শহরকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ২৭০-২৯০ সময়কালে ‘সিটি ওয়াল’ নির্মাণ করেছিল, যা এখনো বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে আছে। ষষ্ঠ শতকে রোমানরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে কেন্টের আশপাশের শহর-বন্দরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ছিল মূলত নৌপথে—স্ট নদীর পথ ধরে। তখনকার রোমান শাসকেরা যোগাযোগের জন্য একটি সড়কপথেরও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
এ জন্য তারা গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে লন্ডনের সঙ্গে ক্যান্টাবরি শহরের সড়কপথে যোগাযোগের জন্য চুন-সুরকি দিয়ে রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট নির্মাণ করে। আধুনিক যুগের বিশাল রাজপথের সঙ্গে এটিকে তুলনা করলে ভুল হবে। এই রাজপথ দিয়ে মূলত দুটি গরুর গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলার মতো প্রশস্ত। প্রায় ২ হাজার বছরের পুরোনো সেই রাজপথ এখনো টিকে আছে, যদিও বর্তমানে এটি পিচঢালাই করে ঢেকে রাখা হয়েছে। ইংল্যান্ডে এর আগে কোনো রাজপথের ধারণাই ছিল না। মজার তথ্য হলো, এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ বা রাজপথের একদিকের অভিমুখ যেমন ছিল লন্ডনের দিকে, অপরটি ছিল পরিভ্রাজক-তীর্থযাত্রীদের শেষ গন্তব্য পথ রোমের দিকে।
প্রাচীন এই পথের একদিকে এগোলে রোম, অপরদিকে হাঁটলে লন্ডন—বিস্ময়কর এক অনুভূতি জাগ্রত হয়। মনে হচ্ছিল, হাজার বছরের পুরোনো সেই মহাসড়কে দাঁড়িয়ে মুহূর্তে ইতিহাসের অলিগলিতে হারিয়ে যেতে বসেছি।
(চলবে)
আরও পড়ুন:
আরিফ আবেদ আদিত্য

লন্ডন থেকে অদূরেই ক্যান্টাবরি শহরে আমার ইউনিভার্সিটি অবস্থিত। এখানে আসার আগে ক্যান্টাবরি শহরটিকে কেবল চিনতাম চসারের ‘ক্যান্টাবরি টেলস’-এর মাধ্যমে। পরে জেনেছি, পাশ্চাত্য রেনেসাঁর অন্যতম রূপকার নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লোর (১৫৬৪-১৫৯৩) জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই শহরেই। লন্ডনের অতি কাছে (ট্রেনে ৪৫ মিনিট, বাসে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের পথ) সমুদ্রসৈকত-সমৃদ্ধ কেন্ট কাউন্টির কেন্দ্রস্থল এই ক্যান্টাবরি শহর। বিগত কয়েক শ বছর ধরে লন্ডনের লেখক-সাহিত্যিক-দার্শনিকদের আনাগোনা ছিল এই শহরের আনাচে-কানাচে। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত হওয়ায় চমৎকার আবহাওয়া, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সমুদ্রসৈকত এর প্রধান আকর্ষণ। কেন্টকে বলা হয় ‘গার্ডেন অব ইংল্যান্ড’। কেন্ট কাউন্টিতে ৫০টির মতো সমুদ্রসৈকত আছে। ক্যান্টাবরির চারপাশ ঘিরে সমুদ্রসৈকত অবস্থিত—যেমন: ফোকস্টোন, ডোভার, ডিল, ব্রডস্টেয়ার, মারগেট, রামসগেট, সেনউইচ, হার্ন বে ইত্যাদি। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার থেকে শুরু করে টি এস ইলিয়ট এখানকার সমুদ্রসৈকতে অবকাশ যাপনে আসতেন। ইংরেজি সাহিত্যের অনেক চরিত্র এখানকার শহরে বেড়ে উঠেছে। ভিক্টোরীয় যুগে অন্যতম লেখক চার্লস ডিকেন্সের (১৮১২-১৮৭০) অনেক চরিত্র ও ঘটনাবলির ছায়া এসব স্থানে পাওয়া যায়।
আমার ডর্মেটরির কাছাকাছি ক্যান্টাবরির বিখ্যাত নদী গ্রেট স্ট বয়ে গেছে। এই নদীর পাড়ে বসেই ইংরেজ কবি থমাস হার্ডি (১৮৪০-১৯২৮) প্রিয়তমা জীবনসঙ্গিনীর বিয়োগব্যথায় লিখেছিলেন: ‘Overlooking the River Stour’ (১৯১৬)। শহরের ভেতর দিয়েই এই নদী প্রবাহিত হয়েছে; যদিও কালের বিবর্তনে শহরের অভ্যন্তরের নদীর অংশ সরু খালের আকার নিয়েছে, তথাপি জলের প্রবহমানতা বিদ্যমান আছে। এই শহরে আগত ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ এখানকার ‘পান্টিং’—লগি দিয়ে নৌকা চালিয়ে পর্যটকদের এই শহর দেখানো; অনেকটা ভেনিসের নৌবিহারের মতো।
একদিন সকালে গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে হাঁটতে বেরোলাম। তখন হঠাৎ চোখে পড়ে রাস্তার ওপর তামার অক্ষরে খোদাই করে লেখা ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’। পাশে সাইনবোর্ডে ছোট্ট পরিচয় লেখা ‘ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ’। আকস্মিক কিছু আবিষ্কারের মতো হঠাৎ এই ফলকচিহ্ন দেখে আমার যারপরনাই অবাক হওয়ার পালা। কারণ, পরে এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ আমাকে হাঁটতে নিয়ে যায় ইংল্যান্ডের প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসের পথে।
ক্যান্টাবরি শহরের গল্প বা ইতিহাস লিখে আসলে শেষ হওয়ার নয়। এর পরতে পরতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইংল্যান্ড নামক রাষ্ট্রের গড়ে ওঠার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। তিনটি ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, যা ‘বিগ থ্রি’ নামে পরিচিত এই শহরে অবস্থিত--ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল (মাদার চার্চ অব ইংল্যান্ড), সেন্ট অগাস্টিন এবে (অ্যাংলো-সাক্সনদের সময়ের কবরস্থান) ও সেন্ট মার্টিন চার্চ (ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীনতম চার্চ)। গ্রেট ব্রিটেনে খ্রিষ্টধর্মের প্রচার শুরু হয় এই শহর থেকে। রোমান মিশনারিরা ২৭০-২৮০ সালে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে গ্রেট স্ট নদীর পাশে এই ক্যান্টাবরি শহরের পত্তন করে। রোমানরা ইংল্যান্ডে নিজেদের শাসন কায়েম করে খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকের দিকে। ভারতীয় উপমহাদেশকে ইংল্যান্ড প্রায় ২০০ বছর শাসন করেছিল, অথচ এই ইংল্যান্ডও একসময় রোমানদের কলোনি ছিল। রোমানরা চলে যাওয়ার পর অ্যাংলো-সাক্সনদের হাত ধরে আজকের ইংল্যান্ড গড়ে ওঠে।
যাই হোক, গল্পে ফেরা যাক। প্রায় সব ধর্মাবলম্বীর জীবিতকালে অন্তিম ইচ্ছা থাকে তাদের ধর্মীয় পবিত্র স্থান বা তীর্থসমূহ পরিদর্শনের। মধ্য ও প্রাক-আধুনিক যুগে ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে নান-পাদরি-যাজক ও খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীদের গন্তব্যের অন্যতম শেষ পথ ছিল রোম! কারণ, ভ্যাটিকান রোম ছিল খ্রিষ্টানদের মূল উপাসনালয় এবং প্রধান ধর্মগুরু পোপের আবাসস্থল। এখান থেকেই খ্রিষ্টধর্মের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হতো। এ ছাড়া যিশুর জন্মভূমি জেরুজালেম ছিল তাদের পরিভ্রমণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। ইউরোপে খ্রিষ্টানদের ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই ভাগে বিভাজনের আগ পর্যন্ত ইউরোপে এই ধারা অব্যাহত ছিল। তারা পরিভ্রমণের সময় যাত্রাপথের বিবরণ, ভৌগোলিক অবস্থান এবং যাত্রাপথ নির্দেশ লিখে রাখত। পাশাপাশি মানচিত্র আকারে এঁকে রাখত পরবর্তী তীর্থভ্রমণকারীদের জন্য। তাঁদের এই লিখিত ভৌগোলিক বিবরণ ও অঙ্কিত মানচিত্রই আধুনিক ‘কার্টোগ্রাফি’ বা মানচিত্রবিদ্যার প্রাথমিক মৌল নিদর্শন। ব্রিটিশ লাইব্রেরি ও চার্চে অনেক প্রাচীন মানচিত্র আজও রক্ষিত আছে, যা প্রায় নির্ভুল ছিল। ইউরোপের ‘একলেসিয়েস্টিক্যাল ইতিহাস’ তাই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার এবং চার্চ বা গির্জার ক্রমবিকাশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
প্রাক-আধুনিক যুগ পর্যন্ত ইউরোপ ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে যেখানেই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার লাভ হয়েছিল, সেই সব জায়গা থেকে তীর্থযাত্রীদের চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল রোম। এ জন্য মধ্যযুগে একটা কথা খুব প্রচলন ছিল, ‘সকল পথের গন্তব্য হলো রোম’। অর্থাৎ, ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বের সব পথের মিলনস্থল হলো রোম। এখনো ক্যাথলিক অংশ রোমে (ভ্যাটিকান সিটি) যাওয়াকে জীবনের পরম আরাধ্য মনে করে। যদিও প্রোটেস্ট্যান্ট অনুসারীরা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ পরিদর্শনে আগ্রহী। ইংরেজি সাহিত্যের জনক জিওফ্রে চসারের (১৩৪০-১৪০০) বিখ্যাত ‘দ্য ক্যান্টাবরি টেলস’ (১৩৯২) গ্রন্থে পরিভ্রাজকদের ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ দর্শনের উদ্দেশ্যে যাত্রারত মানুষের গল্পই বলা হয়েছে। যাই হোক, একটা সময় রোমের প্রভাব ছিল অপরিমেয়। রোমের প্রভাব ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে পরে আর তেমন থাকেনি। ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট বৃহৎ দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। রোমের পোপের সঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। রাজা নির্বাচন ও রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে ধর্মগুরুদের হস্তক্ষেপ এর অন্যতম কারণ ছিল। অবশেষে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি (১৪৯১-১৫৪৭) রোমের পোপের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে ইংল্যান্ডে অ্যাংলিকান চার্চ বা চার্চ অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে খ্রিষ্টধর্মের সংস্কারপন্থী অংশের (প্রোটেস্ট্যান্ট) ধর্মচর্চার পথ মসৃণ হয়। ক্রিস্টোফার মার্লোর ‘ম্যাসাকার অব প্যারিস’ (১৫৯৩) নাটকে ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই অনুসারীদের নির্মম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা আছে।
পোপের কাছ থেকে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নেন। এত দিন পোপ ছিল একমাত্র ‘ডিভাইন রাইট’প্রাপ্ত। রাজা অষ্টম হেনরি নিজেকে একই সঙ্গে চার্চ ও রাষ্ট্রের প্রধান ‘ডিভাইন রাইট’ প্রাপ্ত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা ছিল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে যুগান্তকারী। কারণ, হাজার বছর ধরে চলা পাপাসি বা পোপ বা ধর্মগুরুদের একচ্ছত্র ক্ষমতা এতে খর্ব হয়। রাজা অষ্টম হেনরি ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠা করেন নতুন চার্চ—প্রধান ধর্মগুরুর নামকরণ হয় ‘আর্চবিশপ’। ইংল্যান্ডের ইতিহাস বদলে দেওয়া মাদার অব অল অ্যাংলিকান চার্চের অবস্থান ক্যান্টাবরি শহরে, যা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ নামে পরিচিত। মজার বিষয় হলো, রাজা অষ্টম হেনরির এ ঘটনার সূত্রপাত তাঁর বিয়ের বৈধতা নিয়ে। তার যুগান্তরকারী সিদ্ধান্তে রাতারাতি ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠা হাজার হাজার ক্যাথলিক চার্চ বন্ধ হয়ে যায়। পরে এর প্রভাব (ধর্মীয় সংস্কার) ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। প্রোটেস্টান্টদের পালে হাওয়া লাগে।
রাজা অষ্টম হেনরির সমসাময়িক কালেই (তাঁর জন্মের কিছু আগে ও পরে) খ্রিষ্টধর্মের কিছু মৌল ধারণা নিয়ে ধর্মীয় তাত্ত্বিকদের মধ্যে দার্শনিক আলাপ ও চর্চা শুরু হয়। ষোড়শ শতকে জার্মান অধিবাসী থিওলজিস্ট মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬), সুইস থিওলজিয়ান হলড্রিক জিংলি (১৪৮৪-১৫৩১), জন ক্যালভিন (১৫০৯-১৫৬৪) প্রমুখ রোমান ক্যাথলিক চার্চের ধর্মীয় কিছু বিষয়ে ভিন্নমত দেন; যা পরে প্রোটেস্টান্ট ধারার জন্ম দেয়।
ডাচ ক্যাথলিক থিওলজিস্ট ও দার্শনিক ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাস (১৪৬৬-১৫৩৬) ও মার্টিন লুথার ছিলেন বন্ধু। তাঁরা ওল্ড টেস্টামেন্টের কিছু বিষয় নিয়ে গভীর ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা করতেন। কিন্তু একসময় তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়। মার্টিন লুথারের ধর্মীয় সংস্কারের চিন্তাধারাই পরে ‘প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন’ নামে পরিচিত হয়। অন্যদিকে ইরাসমাস ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষায় ক্রিস্টিয়ান ধর্মের অনেক বিষয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে রিফর্মেশন-কাউন্টার দিতে চেষ্টা করেন। তিনি ক্যাথলিক ধারা বজায় রাখতে আমৃত্যু ব্যাপৃত ছিলেন। রেনেসাঁর সূচনাপর্বে তাঁর অন্যতম অবদান ছিল মানুষের ‘ফ্রিডম অব উইল’ বা ইচ্ছার স্বাধীনতার কথা বলা। এই সময়ে আরেকজন চিন্তাবিদ-দার্শনিক ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন; তিনি হলেন থমাস মোর (১৪৭৪-১৫৩৫)। ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র ও পলিটিক্যাল সিস্টেমের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় তিনি রচনা করেছিলেন যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ইউটোপিয়া’ (১৫১৬)। উল্লিখিত এঁরা সবাই ছিলেন ইংল্যান্ডের রেনেসাঁর প্রথম দিকের ব্যক্তিত্ব। মধ্যযুগে ইউরোপে ধর্মতাত্ত্বিক বিতর্কের ভেতর দিয়েই মানবিক মূল্যবোধ ও মানবিকতার উন্মেষের সূচনা হয়, যা মূলত রেনেসাঁর বীজমন্ত্র। পরে অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিক এই অভিযাত্রায় শামিল হন। সময়ের পরিক্রমায় এর মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড প্রবেশ করে প্রাক-আধুনিক যুগে, সেখান থেকে আধুনিক যুগে।
এবার বিষয়বস্তুতে ফিরে আস যাক। কথা হচ্ছিল ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ নির্মাণের ইতিহাস বিষয়ে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইংল্যান্ডের ক্যান্টাবরি শহর গড়ে ওঠে মূলত রোমানদের হাত ধরে। এখানে রোমান মিশনারিরা প্রতিষ্ঠা করে ইংল্যান্ডের তথা ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীন চার্চ ‘সেন্ট মার্টিন চার্চ’ (৫৯৭ সালের পূর্বে)। ধারণা করা যায়, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপের নামকরণ করা হয় ক্যান্টাবরিতে অবস্থিত চার্চের এই ‘সেন্ট মার্টিনের’ নামে। তারা এখানে বেনেডিকটাইন মোনাস্ট্রি স্থাপন করেছিল, যা ৫৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৫৩৮ সাল (রিফর্মেশনকাল) পর্যন্ত ক্রিয়াশীল ছিল। এ ছাড়া তারা ক্যান্টাবরি শহরকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ২৭০-২৯০ সময়কালে ‘সিটি ওয়াল’ নির্মাণ করেছিল, যা এখনো বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে আছে। ষষ্ঠ শতকে রোমানরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে কেন্টের আশপাশের শহর-বন্দরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ছিল মূলত নৌপথে—স্ট নদীর পথ ধরে। তখনকার রোমান শাসকেরা যোগাযোগের জন্য একটি সড়কপথেরও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
এ জন্য তারা গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে লন্ডনের সঙ্গে ক্যান্টাবরি শহরের সড়কপথে যোগাযোগের জন্য চুন-সুরকি দিয়ে রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট নির্মাণ করে। আধুনিক যুগের বিশাল রাজপথের সঙ্গে এটিকে তুলনা করলে ভুল হবে। এই রাজপথ দিয়ে মূলত দুটি গরুর গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলার মতো প্রশস্ত। প্রায় ২ হাজার বছরের পুরোনো সেই রাজপথ এখনো টিকে আছে, যদিও বর্তমানে এটি পিচঢালাই করে ঢেকে রাখা হয়েছে। ইংল্যান্ডে এর আগে কোনো রাজপথের ধারণাই ছিল না। মজার তথ্য হলো, এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ বা রাজপথের একদিকের অভিমুখ যেমন ছিল লন্ডনের দিকে, অপরটি ছিল পরিভ্রাজক-তীর্থযাত্রীদের শেষ গন্তব্য পথ রোমের দিকে।
প্রাচীন এই পথের একদিকে এগোলে রোম, অপরদিকে হাঁটলে লন্ডন—বিস্ময়কর এক অনুভূতি জাগ্রত হয়। মনে হচ্ছিল, হাজার বছরের পুরোনো সেই মহাসড়কে দাঁড়িয়ে মুহূর্তে ইতিহাসের অলিগলিতে হারিয়ে যেতে বসেছি।
(চলবে)
আরও পড়ুন:

লন্ডন থেকে অদূরেই ক্যান্টাবরি শহরে আমার ইউনিভার্সিটি অবস্থিত। এখানে আসার আগে ক্যান্টাবরি শহরটিকে কেবল চিনতাম চসারের ‘ক্যান্টাবরি টেলস’-এর মাধ্যমে। পরে জেনেছি, পাশ্চাত্য রেনেসাঁর অন্যতম রূপকার নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লোর (১৫৬৪-১৫৯৩) জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই শহরেই। লন্ডনের অতি কাছে (ট্রেনে ৪৫ মিনিট, বাসে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের পথ) সমুদ্রসৈকত-সমৃদ্ধ কেন্ট কাউন্টির কেন্দ্রস্থল এই ক্যান্টাবরি শহর। বিগত কয়েক শ বছর ধরে লন্ডনের লেখক-সাহিত্যিক-দার্শনিকদের আনাগোনা ছিল এই শহরের আনাচে-কানাচে। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত হওয়ায় চমৎকার আবহাওয়া, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সমুদ্রসৈকত এর প্রধান আকর্ষণ। কেন্টকে বলা হয় ‘গার্ডেন অব ইংল্যান্ড’। কেন্ট কাউন্টিতে ৫০টির মতো সমুদ্রসৈকত আছে। ক্যান্টাবরির চারপাশ ঘিরে সমুদ্রসৈকত অবস্থিত—যেমন: ফোকস্টোন, ডোভার, ডিল, ব্রডস্টেয়ার, মারগেট, রামসগেট, সেনউইচ, হার্ন বে ইত্যাদি। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার থেকে শুরু করে টি এস ইলিয়ট এখানকার সমুদ্রসৈকতে অবকাশ যাপনে আসতেন। ইংরেজি সাহিত্যের অনেক চরিত্র এখানকার শহরে বেড়ে উঠেছে। ভিক্টোরীয় যুগে অন্যতম লেখক চার্লস ডিকেন্সের (১৮১২-১৮৭০) অনেক চরিত্র ও ঘটনাবলির ছায়া এসব স্থানে পাওয়া যায়।
আমার ডর্মেটরির কাছাকাছি ক্যান্টাবরির বিখ্যাত নদী গ্রেট স্ট বয়ে গেছে। এই নদীর পাড়ে বসেই ইংরেজ কবি থমাস হার্ডি (১৮৪০-১৯২৮) প্রিয়তমা জীবনসঙ্গিনীর বিয়োগব্যথায় লিখেছিলেন: ‘Overlooking the River Stour’ (১৯১৬)। শহরের ভেতর দিয়েই এই নদী প্রবাহিত হয়েছে; যদিও কালের বিবর্তনে শহরের অভ্যন্তরের নদীর অংশ সরু খালের আকার নিয়েছে, তথাপি জলের প্রবহমানতা বিদ্যমান আছে। এই শহরে আগত ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ এখানকার ‘পান্টিং’—লগি দিয়ে নৌকা চালিয়ে পর্যটকদের এই শহর দেখানো; অনেকটা ভেনিসের নৌবিহারের মতো।
একদিন সকালে গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে হাঁটতে বেরোলাম। তখন হঠাৎ চোখে পড়ে রাস্তার ওপর তামার অক্ষরে খোদাই করে লেখা ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’। পাশে সাইনবোর্ডে ছোট্ট পরিচয় লেখা ‘ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ’। আকস্মিক কিছু আবিষ্কারের মতো হঠাৎ এই ফলকচিহ্ন দেখে আমার যারপরনাই অবাক হওয়ার পালা। কারণ, পরে এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ আমাকে হাঁটতে নিয়ে যায় ইংল্যান্ডের প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসের পথে।
ক্যান্টাবরি শহরের গল্প বা ইতিহাস লিখে আসলে শেষ হওয়ার নয়। এর পরতে পরতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইংল্যান্ড নামক রাষ্ট্রের গড়ে ওঠার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। তিনটি ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, যা ‘বিগ থ্রি’ নামে পরিচিত এই শহরে অবস্থিত--ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল (মাদার চার্চ অব ইংল্যান্ড), সেন্ট অগাস্টিন এবে (অ্যাংলো-সাক্সনদের সময়ের কবরস্থান) ও সেন্ট মার্টিন চার্চ (ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীনতম চার্চ)। গ্রেট ব্রিটেনে খ্রিষ্টধর্মের প্রচার শুরু হয় এই শহর থেকে। রোমান মিশনারিরা ২৭০-২৮০ সালে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে গ্রেট স্ট নদীর পাশে এই ক্যান্টাবরি শহরের পত্তন করে। রোমানরা ইংল্যান্ডে নিজেদের শাসন কায়েম করে খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকের দিকে। ভারতীয় উপমহাদেশকে ইংল্যান্ড প্রায় ২০০ বছর শাসন করেছিল, অথচ এই ইংল্যান্ডও একসময় রোমানদের কলোনি ছিল। রোমানরা চলে যাওয়ার পর অ্যাংলো-সাক্সনদের হাত ধরে আজকের ইংল্যান্ড গড়ে ওঠে।
যাই হোক, গল্পে ফেরা যাক। প্রায় সব ধর্মাবলম্বীর জীবিতকালে অন্তিম ইচ্ছা থাকে তাদের ধর্মীয় পবিত্র স্থান বা তীর্থসমূহ পরিদর্শনের। মধ্য ও প্রাক-আধুনিক যুগে ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে নান-পাদরি-যাজক ও খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীদের গন্তব্যের অন্যতম শেষ পথ ছিল রোম! কারণ, ভ্যাটিকান রোম ছিল খ্রিষ্টানদের মূল উপাসনালয় এবং প্রধান ধর্মগুরু পোপের আবাসস্থল। এখান থেকেই খ্রিষ্টধর্মের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হতো। এ ছাড়া যিশুর জন্মভূমি জেরুজালেম ছিল তাদের পরিভ্রমণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। ইউরোপে খ্রিষ্টানদের ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই ভাগে বিভাজনের আগ পর্যন্ত ইউরোপে এই ধারা অব্যাহত ছিল। তারা পরিভ্রমণের সময় যাত্রাপথের বিবরণ, ভৌগোলিক অবস্থান এবং যাত্রাপথ নির্দেশ লিখে রাখত। পাশাপাশি মানচিত্র আকারে এঁকে রাখত পরবর্তী তীর্থভ্রমণকারীদের জন্য। তাঁদের এই লিখিত ভৌগোলিক বিবরণ ও অঙ্কিত মানচিত্রই আধুনিক ‘কার্টোগ্রাফি’ বা মানচিত্রবিদ্যার প্রাথমিক মৌল নিদর্শন। ব্রিটিশ লাইব্রেরি ও চার্চে অনেক প্রাচীন মানচিত্র আজও রক্ষিত আছে, যা প্রায় নির্ভুল ছিল। ইউরোপের ‘একলেসিয়েস্টিক্যাল ইতিহাস’ তাই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার এবং চার্চ বা গির্জার ক্রমবিকাশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
প্রাক-আধুনিক যুগ পর্যন্ত ইউরোপ ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে যেখানেই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার লাভ হয়েছিল, সেই সব জায়গা থেকে তীর্থযাত্রীদের চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল রোম। এ জন্য মধ্যযুগে একটা কথা খুব প্রচলন ছিল, ‘সকল পথের গন্তব্য হলো রোম’। অর্থাৎ, ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বের সব পথের মিলনস্থল হলো রোম। এখনো ক্যাথলিক অংশ রোমে (ভ্যাটিকান সিটি) যাওয়াকে জীবনের পরম আরাধ্য মনে করে। যদিও প্রোটেস্ট্যান্ট অনুসারীরা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ পরিদর্শনে আগ্রহী। ইংরেজি সাহিত্যের জনক জিওফ্রে চসারের (১৩৪০-১৪০০) বিখ্যাত ‘দ্য ক্যান্টাবরি টেলস’ (১৩৯২) গ্রন্থে পরিভ্রাজকদের ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ দর্শনের উদ্দেশ্যে যাত্রারত মানুষের গল্পই বলা হয়েছে। যাই হোক, একটা সময় রোমের প্রভাব ছিল অপরিমেয়। রোমের প্রভাব ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে পরে আর তেমন থাকেনি। ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট বৃহৎ দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। রোমের পোপের সঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। রাজা নির্বাচন ও রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে ধর্মগুরুদের হস্তক্ষেপ এর অন্যতম কারণ ছিল। অবশেষে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি (১৪৯১-১৫৪৭) রোমের পোপের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে ইংল্যান্ডে অ্যাংলিকান চার্চ বা চার্চ অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে খ্রিষ্টধর্মের সংস্কারপন্থী অংশের (প্রোটেস্ট্যান্ট) ধর্মচর্চার পথ মসৃণ হয়। ক্রিস্টোফার মার্লোর ‘ম্যাসাকার অব প্যারিস’ (১৫৯৩) নাটকে ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই অনুসারীদের নির্মম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা আছে।
পোপের কাছ থেকে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নেন। এত দিন পোপ ছিল একমাত্র ‘ডিভাইন রাইট’প্রাপ্ত। রাজা অষ্টম হেনরি নিজেকে একই সঙ্গে চার্চ ও রাষ্ট্রের প্রধান ‘ডিভাইন রাইট’ প্রাপ্ত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা ছিল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে যুগান্তকারী। কারণ, হাজার বছর ধরে চলা পাপাসি বা পোপ বা ধর্মগুরুদের একচ্ছত্র ক্ষমতা এতে খর্ব হয়। রাজা অষ্টম হেনরি ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠা করেন নতুন চার্চ—প্রধান ধর্মগুরুর নামকরণ হয় ‘আর্চবিশপ’। ইংল্যান্ডের ইতিহাস বদলে দেওয়া মাদার অব অল অ্যাংলিকান চার্চের অবস্থান ক্যান্টাবরি শহরে, যা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ নামে পরিচিত। মজার বিষয় হলো, রাজা অষ্টম হেনরির এ ঘটনার সূত্রপাত তাঁর বিয়ের বৈধতা নিয়ে। তার যুগান্তরকারী সিদ্ধান্তে রাতারাতি ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠা হাজার হাজার ক্যাথলিক চার্চ বন্ধ হয়ে যায়। পরে এর প্রভাব (ধর্মীয় সংস্কার) ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। প্রোটেস্টান্টদের পালে হাওয়া লাগে।
রাজা অষ্টম হেনরির সমসাময়িক কালেই (তাঁর জন্মের কিছু আগে ও পরে) খ্রিষ্টধর্মের কিছু মৌল ধারণা নিয়ে ধর্মীয় তাত্ত্বিকদের মধ্যে দার্শনিক আলাপ ও চর্চা শুরু হয়। ষোড়শ শতকে জার্মান অধিবাসী থিওলজিস্ট মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬), সুইস থিওলজিয়ান হলড্রিক জিংলি (১৪৮৪-১৫৩১), জন ক্যালভিন (১৫০৯-১৫৬৪) প্রমুখ রোমান ক্যাথলিক চার্চের ধর্মীয় কিছু বিষয়ে ভিন্নমত দেন; যা পরে প্রোটেস্টান্ট ধারার জন্ম দেয়।
ডাচ ক্যাথলিক থিওলজিস্ট ও দার্শনিক ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাস (১৪৬৬-১৫৩৬) ও মার্টিন লুথার ছিলেন বন্ধু। তাঁরা ওল্ড টেস্টামেন্টের কিছু বিষয় নিয়ে গভীর ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা করতেন। কিন্তু একসময় তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়। মার্টিন লুথারের ধর্মীয় সংস্কারের চিন্তাধারাই পরে ‘প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন’ নামে পরিচিত হয়। অন্যদিকে ইরাসমাস ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষায় ক্রিস্টিয়ান ধর্মের অনেক বিষয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে রিফর্মেশন-কাউন্টার দিতে চেষ্টা করেন। তিনি ক্যাথলিক ধারা বজায় রাখতে আমৃত্যু ব্যাপৃত ছিলেন। রেনেসাঁর সূচনাপর্বে তাঁর অন্যতম অবদান ছিল মানুষের ‘ফ্রিডম অব উইল’ বা ইচ্ছার স্বাধীনতার কথা বলা। এই সময়ে আরেকজন চিন্তাবিদ-দার্শনিক ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন; তিনি হলেন থমাস মোর (১৪৭৪-১৫৩৫)। ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র ও পলিটিক্যাল সিস্টেমের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় তিনি রচনা করেছিলেন যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ইউটোপিয়া’ (১৫১৬)। উল্লিখিত এঁরা সবাই ছিলেন ইংল্যান্ডের রেনেসাঁর প্রথম দিকের ব্যক্তিত্ব। মধ্যযুগে ইউরোপে ধর্মতাত্ত্বিক বিতর্কের ভেতর দিয়েই মানবিক মূল্যবোধ ও মানবিকতার উন্মেষের সূচনা হয়, যা মূলত রেনেসাঁর বীজমন্ত্র। পরে অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিক এই অভিযাত্রায় শামিল হন। সময়ের পরিক্রমায় এর মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড প্রবেশ করে প্রাক-আধুনিক যুগে, সেখান থেকে আধুনিক যুগে।
এবার বিষয়বস্তুতে ফিরে আস যাক। কথা হচ্ছিল ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ নির্মাণের ইতিহাস বিষয়ে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইংল্যান্ডের ক্যান্টাবরি শহর গড়ে ওঠে মূলত রোমানদের হাত ধরে। এখানে রোমান মিশনারিরা প্রতিষ্ঠা করে ইংল্যান্ডের তথা ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীন চার্চ ‘সেন্ট মার্টিন চার্চ’ (৫৯৭ সালের পূর্বে)। ধারণা করা যায়, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপের নামকরণ করা হয় ক্যান্টাবরিতে অবস্থিত চার্চের এই ‘সেন্ট মার্টিনের’ নামে। তারা এখানে বেনেডিকটাইন মোনাস্ট্রি স্থাপন করেছিল, যা ৫৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৫৩৮ সাল (রিফর্মেশনকাল) পর্যন্ত ক্রিয়াশীল ছিল। এ ছাড়া তারা ক্যান্টাবরি শহরকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ২৭০-২৯০ সময়কালে ‘সিটি ওয়াল’ নির্মাণ করেছিল, যা এখনো বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে আছে। ষষ্ঠ শতকে রোমানরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে কেন্টের আশপাশের শহর-বন্দরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ছিল মূলত নৌপথে—স্ট নদীর পথ ধরে। তখনকার রোমান শাসকেরা যোগাযোগের জন্য একটি সড়কপথেরও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
এ জন্য তারা গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে লন্ডনের সঙ্গে ক্যান্টাবরি শহরের সড়কপথে যোগাযোগের জন্য চুন-সুরকি দিয়ে রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট নির্মাণ করে। আধুনিক যুগের বিশাল রাজপথের সঙ্গে এটিকে তুলনা করলে ভুল হবে। এই রাজপথ দিয়ে মূলত দুটি গরুর গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলার মতো প্রশস্ত। প্রায় ২ হাজার বছরের পুরোনো সেই রাজপথ এখনো টিকে আছে, যদিও বর্তমানে এটি পিচঢালাই করে ঢেকে রাখা হয়েছে। ইংল্যান্ডে এর আগে কোনো রাজপথের ধারণাই ছিল না। মজার তথ্য হলো, এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ বা রাজপথের একদিকের অভিমুখ যেমন ছিল লন্ডনের দিকে, অপরটি ছিল পরিভ্রাজক-তীর্থযাত্রীদের শেষ গন্তব্য পথ রোমের দিকে।
প্রাচীন এই পথের একদিকে এগোলে রোম, অপরদিকে হাঁটলে লন্ডন—বিস্ময়কর এক অনুভূতি জাগ্রত হয়। মনে হচ্ছিল, হাজার বছরের পুরোনো সেই মহাসড়কে দাঁড়িয়ে মুহূর্তে ইতিহাসের অলিগলিতে হারিয়ে যেতে বসেছি।
(চলবে)
আরও পড়ুন:

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৫ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১০ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

লন্ডন থেকে অদূরেই ক্যান্টাবরি শহরে আমার ইউনিভার্সিটি অবস্থিত। এখানে আসার আগে ক্যান্টাবরি শহরটিকে কেবল চিনতাম চসারের ‘ক্যান্টাবরি টেলস’-এর মাধ্যমে। পরে জেনেছি, পাশ্চাত্য রেনেসাঁর অন্যতম রূপকার নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লোর
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১০ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৬ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

লন্ডন থেকে অদূরেই ক্যান্টাবরি শহরে আমার ইউনিভার্সিটি অবস্থিত। এখানে আসার আগে ক্যান্টাবরি শহরটিকে কেবল চিনতাম চসারের ‘ক্যান্টাবরি টেলস’-এর মাধ্যমে। পরে জেনেছি, পাশ্চাত্য রেনেসাঁর অন্যতম রূপকার নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লোর
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৫ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

লন্ডন থেকে অদূরেই ক্যান্টাবরি শহরে আমার ইউনিভার্সিটি অবস্থিত। এখানে আসার আগে ক্যান্টাবরি শহরটিকে কেবল চিনতাম চসারের ‘ক্যান্টাবরি টেলস’-এর মাধ্যমে। পরে জেনেছি, পাশ্চাত্য রেনেসাঁর অন্যতম রূপকার নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লোর
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৫ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১০ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

লন্ডন থেকে অদূরেই ক্যান্টাবরি শহরে আমার ইউনিভার্সিটি অবস্থিত। এখানে আসার আগে ক্যান্টাবরি শহরটিকে কেবল চিনতাম চসারের ‘ক্যান্টাবরি টেলস’-এর মাধ্যমে। পরে জেনেছি, পাশ্চাত্য রেনেসাঁর অন্যতম রূপকার নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লোর
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৫ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১০ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে