Ajker Patrika

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিপর্যয় কি প্রতিবেশী দেশে প্রভাব ফেলবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ৩৭
পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিপর্যয় কি প্রতিবেশী দেশে প্রভাব ফেলবে

দুর্নীতি ও আর্থিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট হওয়ার কথা ছিল গত রোববার। সার্বিক দিক বিবেচনায় এই ভোটে ইমরানের পরাজয় মোটামুটি নিশ্চিত ছিল, যেটি হলে ক্ষমতাচ্যুত হতেন তিনি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে খেলা পাল্টে দিয়ে অনাস্থা ভোট আটকে দিয়েছেন ইমরান খান। দেশটির জাতীয় পরিষদে খারিজ হয়ে গেছে অনাস্থা ভোটের আবেদন। এর পরপরই পাক প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। আর এর মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে আগাম নির্বাচনের পথ।

তবে এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে বিরোধী দলগুলো। আরও গভীর হয়েছে দেশটির রাজনৈতিক সংকট। ইমরান খানের পদক্ষেপে ইসলামাবাদে ব্যাপক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।

২২ কোটির বেশি জনসংখ্যার পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের পশ্চিম দিকে আফগানিস্তান, উত্তর-পূর্বে চীন এবং আর পূর্বে রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত। এমন ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ইসলামাবাদ কৌশলগতভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, অনাস্থা ভোট এড়িয়ে ইমরান খান আগাম নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হলেও শেষ পর্যন্ত গদি বাঁচাতে ব্যর্থ হতে পারেন তিনি।

আফগানিস্তান: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক আগের তুলনায় দুর্বল হয়েছে। তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফিরলেও, অর্থের অভাব এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার কারণে বহুমুখী সংকটের মুখে রয়েছে তারা। এই মুহূর্তে তর্কাতীতভাবে কাতারই তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি অংশীদার।

নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি থিংক-ট্যাঙ্ক সেন্টারের ইন্দো-প্যাসিফিক সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক লিসা কার্টিস রয়টার্সকে বলেন, ‘তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যম হিসেবে পাকিস্তানকে আর আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র) প্রয়োজন নেই। সেই ভূমিকা এখন কাতার পালন করছে।’

তালেবান উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা নেবে-এমনটাই চাওয়া পাকিস্তানের। কারণ ইসলামাবাদ শঙ্কা, এসব গোষ্ঠী পাকিস্তানে সহিংসতা ছড়াতে পারে, সাম্প্রতিক কিছু হামলায় তা স্পষ্টও হয়েছে।

চীন: ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধারাবাহিকভাবে চীনের ইতিবাচক ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে আসছেন ইমরান খান।

একই সময়ে, ৬০ বিলিয়ন ডলারের চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর (সিপিইসি) প্রতিবেশী দেশ দুটির সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে। তবে এ প্রকল্পটি চালু হয়েছিল পাকিস্তানের দুটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের অধীনে, যারা উভয়ই ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে চায়।

ভারত: ১৯৪৭ সালের পর থেকে তিনটি যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান, যার মধ্যে দুটিই কাশ্মীর ইস্যুতে। পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতির মতো স্পর্শকাতর এলাকার নীতিও নিয়ন্ত্রণ করে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী। ফলে ২০২১ সালের পর থেকে ভারতের সঙ্গে তাদের সীমান্ত উত্তেজনা বর্তমানে কম।

কিন্তু ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর হামলাসহ নানা ইস্যুতে ইমরান খান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চরম সমালোচনা করায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আনুষ্ঠানিক কোনো কূটনৈতিক আলোচনা হয়নি।

ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক করন থাপারের মতে, কাশ্মীরে সফল যুদ্ধবিরতির জন্য ইসলামাবাদে একটি নতুন বেসামরিক সরকার গঠনে চাপ দিতে পারে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত