Ajker Patrika

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমারা জিতবে কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০৫ জুন ২০২২, ১১: ০০
রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমারা জিতবে কি

গত শুক্রবার রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের ২০ শতাংশ বা এক-পঞ্চমাংশ ভূমি দখলে নিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পূর্ব দিকের আলোচিত দনবাস অঞ্চলের প্রায় ৯০ শতাংশ রুশদের দখলে চলে গেছে, দু-এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো দনবাস তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিপুল ক্ষতির বিনিময়ে হলেও যুদ্ধের এ পর্যায়ে রাশিয়া দৃশ্যত এগিয়ে রয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা মনে করে, এ যুদ্ধে রাশিয়াকে হারানো সম্ভব। তার চেয়ে বড় কথা, তারা মনে করে, এ যুদ্ধে রাশিয়াকে জিততে দেওয়া যাবে না।

যুক্তরাজ্যের ‘ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের’ গবেষক ম্যাক্সিমিলিয়ান হেস আল জাজিরায় এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার ওপর ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ শুরু করেছে। রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে শুকিয়ে মারাই ছিল এ যুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু যুদ্ধের ১০০ দিন পর দেখা যাচ্ছে, যতটা আশা করা হয়েছিল, রুশ অর্থনীতিকে ততটা ঘায়েল করা যায়নি। নিজের পায়ে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে রুশ অর্থনীতি। তার প্রধান কারণ, রাশিয়ার তেল-গ্যাস-কয়লা রপ্তানি এবং নিষেধাজ্ঞার কৌশলগত ত্রুটি।

নিষেধাজ্ঞায় নতুন চিন্তা
ম্যাক্সিমিলিয়ান হেস মনে করেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিততে হলে যে কয়টা কাজ করতে হবে, তার মধ্যে নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজগুলো ঢেলে সাজানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যাচ্ছে, ইতালি, হাঙ্গেরি, চেক রিপাবলিকসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কিছু দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞায় সম্মত হচ্ছে না। গত শুক্রবার ইইউ রুশ তেলের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাতে ওই সব দেশকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। গ্যাস নিয়ে তো কোনো কথাই হয়নি।

কারণ, জার্মানিসহ ইউরোপের কিছু দেশ রুশ তেল-গ্যাসের ওপর এতটাই নির্ভরশীল যে তা বন্ধ হলে সেখানে নিত্যপণ্যের দাম রাতারাতি বেড়ে যাবে। ফলে অনেক সরকার পরবর্তী নির্বাচনে হেরে যেতে পারে। তাই নিষেধাজ্ঞাগুলো এমন করে ঢেলে সাজাতে হবে, যাতে এক ঢিলে দুই পাখি মরে। অর্থাৎ রাশিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে আরোপকারী দেশের জনগণের সম্মতি থাকে।

পশ্চিমের বাইরে
বর্তমান বিশ্বে দেশগুলোর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। তাই রাশিয়ার বিরুদ্ধে শুধু পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা দিলে হবে না। এতে আফ্রিকা, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে যুক্ত করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা দেখা যায়নি। উল্টো দেখা যাচ্ছে, ইউরোপে রুশ তেল-গ্যাস আমদানিতে কড়াকড়ি বাড়ায় ভারত, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশাল মূল্যছাড়ে এসব পণ্য বিপুল পরিমাণে কিনছে। এতে করে চলতি বছর শুধু জ্বালানি তেল রপ্তানি করে রাশিয়া অতিরিক্ত ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বেশি আয় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিকল্প ঘোষণা
বিশ্বের উৎপাদনব্যবস্থা সচল রাখার জন্য তেল-গ্যাস-কয়লার কোনো বিকল্প নেই। আর রাশিয়া এ তিন পণ্যের অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী। তা ছাড়া বিশ্বের মোট খাদ্যশস্যের এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। বিশ্বকে এসবের বিকল্প দেখাতে পারতে হবে। স্বল্প মেয়াদে এসবের কতটা কী করা যাবে, তা বলা কঠিন। তবে ইউক্রেনে জিততে হলে পশ্চিমাদের এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারতে হবে বলে মনে করেন ম্যাক্সিমিলিয়ান হেস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত