Ajker Patrika

বাইডেন কি বুশনেলের ডাকে সাড়া দেবেন

ইভন রিডলি
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮: ৩২
বাইডেন কি বুশনেলের ডাকে সাড়া দেবেন

‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ বা ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’—এই শব্দবন্ধ সারা বিশ্বের রাজধানীতে প্রতিধ্বনিত হয়েছে, যেখানে লাখ লাখ ক্ষুব্ধ নাগরিক গাজায় ইসরায়েলের নির্মম সামরিক হামলার বিরুদ্ধে পথে নেমেছে। গত রোবিবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে মার্কিন বিমানবাহিনীর এক তরুণ সেনার শেষ চিৎকার ছিল এটাই। প্রতিটি ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ ধ্বনি আগেরটির চেয়ে আরও জোরালো এবং হাহাকারে ভরা ছিল। বুশনেলের এই আত্মঘাতী প্রতিবাদ চলছিল, যতক্ষণ না তাঁর আশপাশে থাকা মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র ও অস্ত্র নিয়ে ২৫ বছর বয়সী অ্যারন বুশনেলকে থামাতে এগিয়ে আসেন।

সোমবার ভোরের দিকে বুশনেল মারা যান। এই আত্মদানের মধ্য দিয়ে তিনি সম্ভবত এক চূড়ান্ত বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, সেই আত্মত্যাগের পূর্ণ বার্তা আমরা হয়তো কখনো জানতে পারব না। তবে এটুকু স্পষ্ট যে, তিনি ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। ‘আমি আর একটুও এই গণহত্যার (গাজার) সহযোগী হতে পারি না।’ বলেছিলেন মার্কিন বিমানবাহিনীর ওই তরুণ সদস্য। নিজের হাতে থাকা ভিডিও ক্যামেরায় তিনি এই আত্মাহুতিকে প্রতিবাদের চরমপন্থা হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি এ-ও বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের মানুষ তাদের ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে যে নির্যাতন সহ্য করছে, তার তুলনায় এটা মোটেও চরম কিছু নয়। আমাদের শাসকশ্রেণি যেটা নির্ধারণ করে দিয়েছে, তাকেই স্বাভাবিক মনে হবে।’

মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস বিভাগের সদস্যরা এই আগুন নিভিয়েছেন। গোয়েন্দা বাহিনীর মুখপাত্র জো রাউট ব্যাখ্যা করে বলছেন, তাদের সেনা পোশাকধারী বিভাগের কর্মকর্তারা এমন এক ব্যক্তির ব্যাপারে সচেতন হয়েছিলেন, যিনি ‘সম্ভবত জরুরি স্বাস্থ্য বা মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন’।

নিশ্চিতভাবেই বুশনেলের নাটকীয় আত্মত্যাগকে মানসিক সমস্যার ফলাফল হিসেবে বর্ণনা করা সহজ এবং একই সঙ্গে সুবিধাজনক। এক্স হ্যান্ডেলে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একটি পোস্টে বুশনেলের আত্মদানের ঘটনাকে নিষ্ঠুরভাবে উপহাস করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যারন বুশনেলের এই আত্মত্যাগ অনেক মানুষের মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার ভিডিও দেখে যারা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। ফিলিস্তিনিরা আশা করছে, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ তাদের দুঃখ দেখে ইসরায়েলিদের নির্মম হামলা বন্ধ করতে উৎসাহিত করবে। তবে, এখন পর্যন্ত হোয়াইট হাউসের ‘গণহত্যাকারী জো’ বাইডেন তেল আবিবকে ফোন করে যুদ্ধবিরতির দাবি জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সাংবাদিক মেহদি হাসানের মতে, বাইডেন চাইলে এখনই এই গণহত্যার অবসান ঘটাতে পারেন। হয়তো বুশনেল ভেবেছিলেন, তাঁর আত্মত্যাগ বাইডেনের মতকে পরিবর্তন করতে পারে। দুঃখজনক হলো, আমরা কখনোই তাঁর প্রকৃত উদ্দেশ্য জানতে পারব না। এই তরুণের জীবনের করুণ পরিণতি নিয়ে মোসাদ ঠাট্টা করলেও আমাদের সব সহানুভূতি তাঁর শোকাতুর পরিবারের জন্য।

নাটকীয় প্রতিবাদের জন্য নিজেকে মানব মশালে পরিণত করার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত ডিসেম্বর মাসে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা অঙ্গরাজ্যে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে ফিলিস্তিনের পতাকায় নিজেকে আবৃত করে এক ব্যক্তি গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়নি। তিনি এখনো সংকটজনক অবস্থায় রয়েছেন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে এক নিরাপত্তারক্ষীও আহত হন।

প্রতিবাদ হিসেবে আত্মাহুতির একটি ইতিহাস রয়েছে। আরব বিশ্ব সেই তিউনিসীয় তরুণ মোহাম্মদ বোয়াজিজির আত্মত্যাগের কথা এখনো স্মরণ করে, যাঁকে আরব বসন্তের সূচনাকারী হিসেবে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। হতাশ এই ফেরিওয়ালা সরকারি একটি দপ্তরের সামনে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। কারণ তিনি যে আয় করতেন, তা দিয়ে সংসার চালানো ছিল তাঁর পক্ষে অসাধ্য।

হয়তো সবচেয়ে মর্মস্পর্শী আত্মাহুতির উদাহরণ দক্ষিণ ভিয়েতনামে ১৯৬৩ সালের ১১ জুন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর সরকারি নিপীড়নের প্রতিবাদে সাইগনে কুয়াং ডাকের আত্মত্যাগ। জ্বলন্ত সেই ভিক্ষুর ছবি তুলে পুরস্কার পেয়েছিলেন ম্যালকম ব্রাউন। এই ছবি সম্পর্কে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বলেছিলেন, ‘ইতিহাসের কোনো সংবাদধর্মী ছবিই পৃথিবীতে এত নাড়া দেয়নি, যতটা দিয়েছে এই ছবি।’

আজ হোয়াইট হাউসের নির্দেশটি সহজ হওয়া উচিত: ‘নেতানিয়াহুকে এখনই ফোনে ধরুন।’

বাইডেন, অ্যারন বুশনেলের প্রতিবাদ ও আত্মত্যাগকে ব্যর্থ করে দেবেন না। একজন তরুণ মার্কিন সেনাসদস্য যখন মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে ‘মুক্ত ফিলিস্তিন’ বলে চিৎকার করছেন, তখন ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা, বুশনেলের প্রতিবাদকে যেন মানসিক ভারসাম্যহীনতার ফল বলে উড়িয়ে দেওয়া না হয়। বরং আমি চাই তাঁর আত্মত্যাগের যে উদ্দেশ্য, তা যেন পূরণ হয়। এ ঘটনা যেন কুয়াং ডাকের মতোই প্রভাব ফেলে। আশা করি এ ঘটনা আপনার হৃদয়কে নাড়া দেবে এবং আপনি সেই ফোনটি করবেন।

ইভন রিডলি, ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক

(মিডল ইস্ট মনিটরে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত