Ajker Patrika

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ২৮ দফা প্রস্তাবে কী আছে, কে কী পাবে, কী হারাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারলেও ইউক্রেনে ব্যর্থ হচ্ছেন মূলত অঞ্চলটিতে তাঁর প্রভাব বলয়ের ব্যর্থতার কারণে। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারলেও ইউক্রেনে ব্যর্থ হচ্ছেন মূলত অঞ্চলটিতে তাঁর প্রভাব বলয়ের ব্যর্থতার কারণে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাব অনুসারে, কিয়েভকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিশাল একটি অংশ রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে, সেনাবাহিনীর আকার কমাতে হবে এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এই ২৮ দফা পরিকল্পনার একটি খসড়া পেয়েছে। পরে তা তা এক ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা, এক মার্কিন কর্মকর্তা এবং প্রস্তাবটির সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র যাচাই করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ‘দ্রুততর সময়সীমার’ মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছাতে চাপ দিচ্ছে। আর পরিকল্পনায় এমন সব প্রস্তাব রয়েছে, যা ইউক্রেন বহুবার প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে এবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পরিকল্পনাটিকে সরাসরি বাতিল করছেন না।

হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, পরিকল্পনাটি ইউক্রেনের জন্য ‘সহজ নয়।’ তবে তাঁর দাবি, যুদ্ধ থামাতেই হবে, আর তা না হলে ইউক্রেন আরও বেশি এলাকা হারাতে পারে।

ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এই খসড়া তৈরি করেছেন এবং এতে পররাষ্ট্রসচিব মার্কো রুবিও ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের মতামতও ছিল। উইটকফ পরিকল্পনাটি নিয়ে রাশিয়ার দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। দিমিত্রিয়েভ অ্যাক্সিওসকে বলেন, তিনি আশাবাদী, কারণ এ বার ‘রাশিয়ার অবস্থান সত্যিই গুরুত্ব পাচ্ছে।’ যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনো পরিকল্পনাটিকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেননি।

দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে বৈঠকের পর উইটকফ ও কুশনার ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রুস্তেম উমেরভের সঙ্গেও পরিকল্পনাটি নিয়ে আলোচনা করেন। মার্কিন সেনাবাহিনীর সচিব ড্যান ড্রিসকল গতকাল বৃহস্পতিবার পরিকল্পনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে জেলেনস্কির হাতে তুলে দেন। এর পর জেলেনস্কি জানান, তিনি ট্রাম্প ও তাঁর দলের সঙ্গে এটি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।

জেলেনস্কি বলেছেন, এই প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের ‘চিন্তার দৃষ্টিভঙ্গি’, চূড়ান্ত প্রস্তাব নয়। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে তাঁর অবস্থানের চূড়ান্ত রেখা স্পষ্ট করেছে এবং বলেছে পরিকল্পনাটিকে ‘বাস্তব অর্থবহ’ করতে নিজেদের প্রস্তাব দেবে। এক মার্কিন কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, পরিকল্পনাটিকে তারা ‘জীবন্ত নথি’ হিসেবে দেখছেন, আলোচনার ভিত্তিতে যা পরিবর্তিত হতে পারে। ওই কর্মকর্তার দাবি, আলোচনার সময় ইউক্রেন বেশ কিছু পয়েন্ট নিয়ে ইতিবাচক ছিল এবং তাতে তাদের কিছু অবস্থান যুক্ত করতেও পেরেছে।

ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে পরিকল্পনাটিকে সমর্থন দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর জন্য গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছি, ঠিক যেমন গাজা যুদ্ধ শেষ করেছি। আমরা মনে করি পরিকল্পনাটি সহজ নয়, কিন্তু ইউক্রেনের জন্য ভালো।’

ইউক্রেনে ভূখণ্ড ছাড়ার পাশাপাশি খসড়ায় বলা আছে, ইউক্রেনের ভূখণ্ডে আবার রুশ অনুপ্রবেশ হলে ‘সুনির্দিষ্ট সমন্বিত সামরিক প্রতিক্রিয়া’ দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র এতে কী ভূমিকা নেবে, তা স্পষ্ট নয়। পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও রয়েছে—জমে থাকা রুশ সম্পদের একটি অংশ দিয়ে ইউক্রেন পুনর্গঠনের তহবিল গঠন, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব (যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও খনন খাতে) এবং রাশিয়ার জি–৮–এ ফিরে আসা।

যুদ্ধ চলাকালে যে সব পক্ষ যা করেছে—সবাইকে সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হবে। অর্থাৎ রুশ কর্মকর্তাদের ও সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা চলবে না। ইউক্রেনকে চুক্তির ১০০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। জেলেনস্কি সেপ্টেম্বর মাসে অ্যাক্সিওসকে বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতি হলেই তিনি নির্বাচন চান।

নিচে ছাড়া বর্তমান ২৮ দফা পরিকল্পনাটি হুবহু তুলে ধরা হলো। অ্যাক্সিওস স্পষ্টতার জন্য কিছুস্থানে ইটালিকে ব্যাখ্যা যোগ করেছে।

১. ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা হবে।

২. রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউরোপের মধ্যে একটি সমন্বিত অনাক্রমণ চুক্তি সম্পন্ন হবে। গত ৩০ বছরের সব ধোঁয়াশা নিষ্পত্তি হবে।

৩. রাশিয়া প্রতিবেশী দেশগুলোতে আক্রমণ করবে না এবং ন্যাটো আর সম্প্রসারিত হবে না।

৪. রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সংলাপ হবে, যাতে সব নিরাপত্তা ইস্যু সমাধান, উত্তেজনা প্রশমনের পরিবেশ তৈরি এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা বাড়ানো যায়।

৫. ইউক্রেন নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাবে।

ব্যাখ্যা: এক মার্কিন কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তা হবে, যা এর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় তোলা হয়নি। তবে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা খসড়ায় নেই।

৬. ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬ লাখে সীমাবদ্ধ থাকবে।

  • ব্যাখ্যা: বর্তমানে ইউক্রেনের সেনাসংখ্যা ৮ লাখ থেকে সাড়ে ৮ লাখের মধ্যে, আর যুদ্ধের আগে ছিল প্রায় আড়াই লাখ।

৭. ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেবে না, এটি দেশটির সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ন্যাটোও নিজেদের বিধিতে যুক্ত করবে যে, ইউক্রেনকে ভবিষ্যতেও নেওয়া হবে না।

৮. ন্যাটো ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন করবে না।

  • ব্যাখ্যা: ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনে অল্পসংখ্যক সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব বিবেচনা করছিল। এই পরিকল্পনায় তা উপেক্ষা করা হয়েছে।

৯. ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান পোল্যান্ডে মোতায়েন করা হবে।

১০. যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টি—

  • যুক্তরাষ্ট্র এই গ্যারান্টির জন্য ক্ষতিপূরণ পাবে।
  • ইউক্রেন যদি রাশিয়ায় আক্রমণ করে, সে ক্ষেত্রে এই গ্যারান্টি বাতিল হবে।
  • রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আক্রমণ চালায়, তাহলে সমন্বিত ও কঠোর সামরিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সমস্ত বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হবে, নতুন দখলকৃত অঞ্চলকে দেওয়া স্বীকৃতি ও এই চুক্তির অধীনে পাওয়া সব সুবিধা প্রত্যাহার হবে।
  • ইউক্রেন কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া মস্কো বা সেন্ট পিটার্সবার্গে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলে নিরাপত্তা গ্যারান্টি অবৈধ বলে গণ্য হবে।

১১. ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ পাওয়ার যোগ্যতা—

  • ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্যপদের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে এবং বিষয়টি বিবেচনায় থাকা অবস্থায় ইউরোপীয় বাজারে স্বল্পমেয়াদি বিশেষ সুবিধা পাবে।

১২. ইউক্রেন পুনর্গঠনের শক্তিশালী বৈশ্বিক উদ্যোগ—

  • দ্রুত বর্ধনশীল খাতে (প্রযুক্তি, ডেটা সেন্টার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি) বিনিয়োগের জন্য একটি ইউক্রেন ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠন করা হবে।
  • যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সঙ্গে একযোগে দেশটির গ্যাস অবকাঠামো (পাইপলাইন, সংরক্ষণাগারসহ) পুনর্নির্মাণ, উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও পরিচালনায় সহযোগিতা করবে।
  • যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলো পুনর্বাসন করে শহর ও আবাসিক অঞ্চল পুনর্নির্মাণ ও আধুনিকায়নের কাজ করা হবে।
  • অবকাঠামোগত উন্নয়ন।
  • খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন।
  • বিশ্বব্যাংক এসব উদ্যোগের গতি বাড়াতে বিশেষ অর্থায়ন প্যাকেজ তৈরি করবে।

১৩. রাশিয়াকে পুনরায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যুক্ত করা—

  • নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে, প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদাভাবে আলোচনার মাধ্যমে তুলে নেওয়া হবে।
  • যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি, প্রাকৃতিক সম্পদ, অবকাঠামো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা সেন্টার, আর্কটিকে দুর্লভ খনিজ উত্তোলন প্রকল্প এবং অন্যান্য পারস্পরিক লাভজনক করপোরেট খাতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তিতে প্রবেশ করবে।
  • রাশিয়াকে জি-৮ এ ফিরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে।

১৪. জব্দ রুশ সম্পদ ব্যবহারের প্রস্তাব

  • বিভিন্ন দেশে জব্দ করা রুশ সম্পদের ১০০ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইউক্রেন পুনর্নির্মাণে বিনিয়োগ করা হবে।
  • যুক্তরাষ্ট্র এই উদ্যোগ থেকে ৫০ শতাংশ মুনাফা পাবে।
  • ইউরোপ আরও ১০০ বিলিয়ন ডলার যুক্ত করবে, যাতে ইউক্রেনের পুনর্গঠনের জন্য মোট বিনিয়োগ বাড়ানো যায়।
  • ইউরোপে জব্দ রুশ সম্পদ মুক্ত করা হবে।
  • বাকি রুশ সম্পদ যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার যৌথ বিনিয়োগ তহবিলে রাখা হবে, যা নির্দিষ্ট খাতে যৌথ প্রকল্প পরিচালনা করবে। এর লক্ষ্য হবে দুই পক্ষের স্বার্থ বাড়িয়ে ভবিষ্যতে সংঘাতে না ফেরার প্রণোদনা সৃষ্টি করা।

১৫. যৌথ নিরাপত্তা ওয়ার্কিং গ্রুপ

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া নিরাপত্তা বিষয়ক যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করবে, যারা এই চুক্তির প্রতিটি ধারার বাস্তবায়ন তদারকি করবে।

১৬. রাশিয়ার অনাক্রমণনীতি—

  • রাশিয়া আইন করে ইউরোপ ও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অনাক্রমণের নীতি নিশ্চিত করবে।

১৭. পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ—

  • নিউ স্টার্টসহ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও বিস্তার রোধবিষয়ক সব চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একমত হবে। (নোট: নিউ স্টার্ট, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার শেষ বড় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি, ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কথা।)

১৮. ইউক্রেনের অ-পারমাণবিক অবস্থান

  • ইউক্রেন পারমাণবিক অস্ত্র অ–প্রসারণ চুক্তি অনুযায়ী নিজেকে একটি অ-পারমাণবিক রাষ্ট্র হিসেবে বজায় রাখবে।

১৯. জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

  • আইএইএর তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রটি চালু করা হবে এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ রাশিয়া ও ইউক্রেন সমান হারে পাবে (৫০:৫০)।

২০. সংস্কৃতি ও সহনশীলতা বিষয়ক শিক্ষা

  • দুই দেশ ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি বোঝাপড়া, সহনশীলতা বাড়ানো এবং বর্ণবাদ ও কুসংস্কার দূরীকরণের লক্ষ্যে স্কুল ও সমাজে শিক্ষা কর্মসূচি চালু করবে।
  • ইউক্রেন ধর্মীয় সহনশীলতা ও ভাষাগত সংখ্যালঘু সুরক্ষায় ইইউর নিয়ম গ্রহণ করবে।
  • দুই দেশই বৈষম্যমূলক সব ব্যবস্থা বাতিল করবে এবং ইউক্রেনীয় ও রুশ গণমাধ্যম ও শিক্ষার পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করবে। (নোট—ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০২০ সালের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি পরিকল্পনায়ও এমন ধারণা ছিল।)
  • নাৎসি মতাদর্শ ও সংশ্লিষ্ট সব কর্মকাণ্ড অস্বীকার ও নিষিদ্ধ করা হবে।

২১. ভূখণ্ড—

  • ক্রিমিয়া, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চলকে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিকভাবে বাস্তবে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
  • খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চল নিয়ন্ত্রণরেখা ধরে স্থির করা হবে, যা কার্যত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হবে।
  • রাশিয়া পাঁচ অঞ্চলের বাইরে নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য সম্মত ভূখণ্ড ত্যাগ করবে।
  • ইউক্রেন দোনেৎস্কের যে অংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। এই এলাকা নিরস্ত্রীকৃত বাফার জোন হিসেবে গণ্য হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। তবে রুশ সেনা এই নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় প্রবেশ করবে না।

২২. বলপ্রয়োগ নিষিদ্ধকরণ

  • ভবিষ্যৎ ভূখণ্ড ব্যবস্থা নিয়ে সম্মত হওয়ার পর রাশিয়া ও ইউক্রেন কোনোভাবেই বলপ্রয়োগ করে এই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবে না। এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলে কোনো নিরাপত্তা গ্যারান্টি প্রযোজ্য হবে না।

২৩. দিনিপ্রো নদী ও কৃষ্ণ সাগর

  • রাশিয়া ইউক্রেনকে দিনিপ্রো নদী ব্যবহার করে বাণিজ্য পরিচালনায় বাধা দেবে না। কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য পরিবহনে অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে দুই পক্ষ চুক্তিতে পৌঁছাবে।

২৪. মানবিক কমিটি

  • অমীমাংসিত বিষয়ে একটি মানবিক কমিটি গঠন করা হবে।
  • সব বন্দী ও মৃতদেহ ‘সবার বিনিময়ে সবাই’ নীতিতে বিনিময় করা হবে।
  • সব বেসামরিক আটক ব্যক্তি ও জিম্মিদের, এমনকি শিশুদেরও, ফেরত পাঠানো হবে।
  • পরিবার পুনর্মিলন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
  • সংঘাতের শিকার মানুষের দুঃখ কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২৫. ইউক্রেনে নির্বাচন

  • ইউক্রেন ১০০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবে।

২৬. সাধারণ পূর্ণ ক্ষমা

  • যুদ্ধকালীন কর্মকাণ্ড নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ পূর্ণ ক্ষমা পাবে এবং ভবিষ্যতে কোনো দাবি বা অভিযোগ উত্থাপন না করার অঙ্গীকার করবে।

২৭. চুক্তির আইনগত বাধ্যবাধকতা

  • এই চুক্তি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে। এর বাস্তবায়ন তদারকি ও নিশ্চয়তা দেবে পিস কাউন্সিল, যার প্রধান থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প।
  • চুক্তিভঙ্গের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। (নোট: গাজা শান্তি পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও ট্রাম্প একই কাঠামো প্রস্তাব করেছিলেন।)

২৮. চূড়ান্ত ধাপ

  • সব পক্ষ এই স্মারক চুক্তিতে সম্মত হলে, উভয় পক্ষ নির্ধারিত স্থানে সরে যাওয়ার পরই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হবে।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ