Ajker Patrika

ট্রাম্পের কাছে চেয়ে প্রায় সবই পেলেন সৌদি যুবরাজ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সফররত সৌদি যুবরাজ। ছবি: সিএনএন
হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সফররত সৌদি যুবরাজ। ছবি: সিএনএন

মাত্র তিন বছর আগেই সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে কি না, পুনর্বিবেচনা করছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখনকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের দায়ে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে তিনি ‘পরিত্যাজ্য’ করে তুলবেন। এমনকি ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ সামরিক মিত্রদের অন্যতম হওয়ার পরও সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত ছিল।

কিন্তু এই সপ্তাহেই এক ভিন্ন দৃশ্য দেখা গেল। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যখন হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে এতটাই সুরক্ষা দিলেন যে, খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করায় এক সাংবাদিককে তিনি ভর্ৎসনা করলেন—‘আমাদের অতিথিকে বিব্রত করবেন না।’

নাটকীয় ওই মুহূর্ত ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণাগুলোই বলে দিচ্ছে, কীভাবে ওয়াশিংটনে বিন সালমানের ভাবমূর্তি দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়েছে এবং ট্রাম্প কতটা আগ্রহ দেখিয়েছেন সম্পর্ক গভীর করতে—এমন এক রাজ্যের সঙ্গে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং যাদের সঙ্গে ট্রাম্প পরিবারেরও ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে।

ইসরায়েল-সৌদি স্বাভাবিকীকরণ ছাড়াই বড় চুক্তি

বিন সালমানের সবচেয়ে বড় সাফল্য সম্ভবত এটাই যে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক না করেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় ধরনের প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই ধরনের চুক্তি করার ক্ষেত্রে সৌদি আরবের প্রতি শর্ত ছিল, দেশটিকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পূর্ণ স্বাভাবিকীকরণ করতে হবে। ট্রাম্প সেই শর্তটি বাদ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের সময় তিন স্তরের কাঠামো—যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি, সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণ এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বিষয়ে ইসরায়েলি প্রতিশ্রুতি—একসঙ্গে এগোনোর কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েল ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার ক্ষেত্রে অনড় থাকায় এবং সৌদি আরব অবস্থান নরম করতে রাজি না হওয়ায় আলোচনা থেমে গিয়েছিল।

ট্রাম্প এখন সেই তিনটি বিষয়ের যোগসূত্র বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। ফলে প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা সব ক্ষেত্রেই সৌদি আরব যা যা চেয়েছিল তার প্রায় সবই পেতে যাচ্ছে।

এই সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সৌদি আরবকে ন্যাটোর বাইরে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ (মেজর) মিত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির কাছে ইসরায়েলের ব্যবহৃত মডেলের মতো উন্নত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রক্রিয়া এগিয়েছে। এ ছাড়া নতুন কৌশলগত প্রতিরক্ষা সমঝোতাও সই হয়েছে।

তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতি পুনর্গঠনের সৌদি পরিকল্পনার প্রতি সম্মান জানিয়ে দেশটির কাছে উন্নত চিপ বিক্রি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহযোগিতা, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ চুক্তি এবং পারমাণবিক শক্তি নিয়ে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। আঞ্চলিক রাজনীতিতে বিন সালমানের লক্ষ্যের অংশ হিসেবে সুদান যুদ্ধ শেষ করতে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ট্রাম্প।

যা পায়নি সৌদি আরব

এত কিছুর পরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে সৌদি আরবকে ছাড় দেননি ট্রাম্প। প্রথমত, নিজস্ব ভূখণ্ডে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমোদন পায়নি সৌদি আরব। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক, দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতিও পায়নি।

মার্কিন কর্তৃপক্ষ বহুদিন ধরেই সৌদি আরবের পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণের বিষয়ে সতর্ক। কারণ এটি উচ্চমাত্রায় পরিশোধিত হলে অস্ত্র তৈরির ঝুঁকি থাকে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, নতুন চুক্তিতে এমন কোনো অনুমতি নেই।

আর প্রতিরক্ষা গ্যারান্টির ক্ষেত্রে, কাতার যেভাবে শক্তিশালী নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, সৌদি আরবও তেমন কিছু চেয়েছে। এমনকি ট্রাম্প–পরবর্তী সময়ও এটি বহাল থাকবে—এমন একটি চুক্তি। কিন্তু হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে এই বিষয়ে কোনো অঙ্গীকার নেই।

এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরব দেখিয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র যদি দৃঢ়ভাবে পাশে না দাঁড়ায়, তবে তারা বিকল্প নিরাপত্তা অংশীদার খুঁজতে প্রস্তুত। চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাড়তে থাকা সম্পর্ক তারই ইঙ্গিত।

তবুও বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় এখন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি কৌশলগত।

ওভাল অফিসে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণ বিষয়ে বিন সালমান ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন, যদিও তিনি এ ক্ষেত্রে ‘প্রতিশ্রুতি’ শব্দটি ব্যবহার করতে চাননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ