Ajker Patrika

যুদ্ধবিরতির ৪ দিন প্রায় শেষ, এবার কী হবে গাজায়

যুদ্ধবিরতির ৪ দিন প্রায় শেষ, এবার কী হবে গাজায়

গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে গাজায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি। শেষ হবে সোমবার। এই বিরতির মধ্যে ৫০ জন ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দিতে যাচ্ছে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস। এই সময়ের মধ্যে ১৫০ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুকেও মুক্তি দিচ্ছে ইসরায়েল। বিরতির চার দিনে গাজার সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তাও পাঠানো হচ্ছে। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান ও স্থল হামলায় মানবেতর জীবন কাটছে এই উপত্যকায় বসবাস করা প্রায় ২৪ লাখ মানুষ। 

এই মুহূর্তে প্রশ্ন হচ্ছে—যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যাওয়ার পর গাজায় কী হবে? এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো—যুদ্ধ চলতেই থাকবে। 

এ বিষয়ে দ্য ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে—যুদ্ধবিরতির পর গাজায় আবারও যে যুদ্ধ শুরু হবে তা আগের চেয়ে আরও রক্তাক্ত হতে পারে। বিষয়টি অনুধাবন করা যেতে পারে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার দুই দিন আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দেওয়া একটি বক্তব্য থেকে। যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সে সময় নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘যুদ্ধ অব্যাহত আছে, আমরা সম্পূর্ণ বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’ 

বিরতির পর আবারও যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানিও। তাঁর ভাষ্যমতে, তিনি আশা করেছিলেন চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষের সমাধানে গুরুতর আলোচনার দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই আলোচনাকে আর এগিয়ে নিতে চায় না। দেশটির সেনাবাহিনীর আন্তর্জাতিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচট চলমান পরিস্থিতিকে যুদ্ধবিরতি বলতেও নারাজ। 

হেচট বলেন, ‘আমাদের পরিভাষায় এটি যুদ্ধবিরতি নয়। আমরা এটিকে অভিযানের বিরতি বলব।’ 

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেছেন, ‘বিরতি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের লক্ষ্যগুলোর দিকে পূর্ণ শক্তির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’ 

ইতিপূর্বে গাজায় নিজেদের লক্ষ্য সম্পর্কে বহুবারই জানান দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি গাজা থেকে হামাসকে নির্মূল না করে ছাড়বে না। এই কাজ করতে গিয়ে মাস পেরিয়ে বছর হলেও তারা থামবে না। 

ইসরায়েল সরকারের প্রাক্তন সদস্য ও অতীতের বিভিন্ন সংকটের মধ্যস্থতাকারী মতি ক্রিস্টাল দ্য ইনডিপেনডেন্টকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের মধ্যে শিগগির যুদ্ধ শেষ করার কোনো তাড়া নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা আর দীর্ঘ যুদ্ধকে ভয় পাই না।’ 

ইসরায়েল দাবি করে, হামাসের বেশির ভাগ অবকাঠামো গাজার উত্তর অংশে রয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই অংশটিতে বোমাবর্ষণ অব্যাহত রাখবে ইসরায়েল। উপরন্তু তারা দক্ষিণ অংশেও মনযোগ দেবে। কারণ তারা বিশ্বাস করে, হামাসের বড় নেতাদের অধিকাংশই উত্তর থেকে পালিয়ে গাজার দক্ষিণে অবস্থান নিয়েছে। বর্তমানে উত্তর অংশ থেকে পালিয়ে যাওয়া অসংখ্য সাধারণ ফিলিস্তিনিও দক্ষিণ অংশে অবস্থান করছে। সেখানে তাঁরা বিভিন্ন স্কুল ও তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে গত সপ্তাহেই ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে আকাশ থেকে লিফলেট ফেলেছে। এসব লিফলেটে হামলার পূর্বাভাস দিয়ে এলাকাটি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

কেউ কেউ ধারণা করছেন, বিরতির পর আরও বেশি শক্তি নিয়ে গাজায় হামলা পরিচালনা করবে ইসরায়েল। এ বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যের এক কূটনীতিক ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, ‘বোমা হামলা সম্ভবত অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হবে এবং হামাস নেতারা দক্ষিণে পালিয়ে গেছে—এমন বিশ্বাসের কারণে এবার দক্ষিণ অংশকেই বেশি টার্গেট করা হবে।’ 

পুনরায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার এসব আশঙ্কা বিভিন্ন মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্রধান ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, ‘গাজার দক্ষিণে সামরিক অভিযান বাড়ালে সেখানকার মানবিক পরিস্থিতিকে দ্রুত খারাপ করে দেবে। দক্ষিণে হামলা অবশ্যই এড়াতে হবে।’ 

আরেকটি বিষয় হলো—গাজার দক্ষিণে সম্ভাব্য হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটির বাইডেন প্রশাসন গাজায় সামরিক অভিযানের বিষয়ে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে আসলেও দক্ষিণ অংশে হামলা ও এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন বেশ কিছু কর্মকর্তা। 

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল জ্যান অ্যাগল্যান্ড বলেছেন, ‘ছয় সপ্তাহের লড়াই, রক্তপাত এবং ধ্বংসযজ্ঞের পর বিপুল চাহিদা পূরণের জন্য চার দিনের যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট সময় নয়।’ 

অ্যাগল্যান্ড বলেন, ‘শীত ঘনিয়ে আসছে এবং এই সংঘাত আবারও শুরু করা একটি বিপর্যয় হবে।’ 

চার দিনের যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট নয় দাবি করে মার্কিন কংগ্রেসের আইন প্রণেতা রাশিদা তালাইবও বলেছেন, ‘যখন এই স্বল্পমেয়াদি চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে, তখন নিরীহ বেসামরিক মানুষের ওপর বোমাবর্ষণ চলতেই থাকবে। আমাদের একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দরকার—যা জীবন বাঁচায়, সব জিম্মি ও নির্বিচারে আটককৃতদের বাড়িতে নিয়ে আসে এবং এই ভয়ংকর সহিংসতার অবসান ঘটাতে পারে।’ 

তবে এসব সতর্কবার্তা ইসরায়েলি বাহিনীকে বিরত রাখবে—এমন সম্ভাবনা খুব কম। গাজায় সামরিক অভিযানকে ‘সভ্যতার শত্রুদের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসাবে বর্ণনা করছে এই বাহিনী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত