Ajker Patrika

ট্রাম্প–পুতিন বৈঠকে শেষ হাসি কে হাসবেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ১৬
২০১৮ সালে হেলসিঙ্কিতে ট্রাম্প ও পুতিন এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। ছবি: এএফপি
২০১৮ সালে হেলসিঙ্কিতে ট্রাম্প ও পুতিন এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়াসংলগ্ন অঙ্গরাজ্য আলাস্কায় অবস্থিত যৌথ ঘাঁটি এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসনে মুখোমুখি বসবেন ট্রাম্প-পুতিন। বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় ইউক্রেন যুদ্ধ ও সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি। দুই নেতাই একে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তবে এর ফলাফল নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে নানা জল্পনা–কল্পনা।

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছেন, এটি মূলত ‘বোঝা ও শোনা’র বৈঠক, শান্তিপ্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ। তবে ইউক্রেনকে এই আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমাদের ছাড়া কোনো শান্তি চুক্তি পুতিনের বিজয়ের সমান।’ বিশ্লেষকদের মতে, সরাসরি ভুক্তভোগী পক্ষকে বাদ দিয়ে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা দীর্ঘ মেয়াদে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

বৈঠকের আগে পশ্চিমা গণমাধ্যমে খবর এসেছে, রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্ক ও লুহান্সক অঞ্চলকে মস্কোর নিয়ন্ত্রণাধীন বলে স্বীকৃতি দেওয়ার বিনিময়ে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) সিনিয়র ফেলো মারিয়া স্নেগোভায়া বলছেন, পুতিনের কৌশল হলো সীমিত দাবি দিয়ে শুরু করা, পরে ধীরে ধীরে আরও ভূখণ্ডের দাবিতে চাপ বাড়ানো।

এদিকে স্কাই নিউজের মস্কো সংবাদদাতা আইভার বেনেট মন্তব্য করেছেন, পুতিন শুধু জয় চান না, তিনি তা প্রমাণও করতে চান। তাই তাঁর লক্ষ্য ভূখণ্ড ও তারচেয়ে বেশি কিছু। অর্থাৎ এই আলোচনা শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, বরং ইউরোপের মানচিত্রে নতুন সমীকরণ তৈরির প্রচেষ্টা হতে পারে।

ট্রাম্পের কূটনৈতিক ধারা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক ম্যাগাজিন ফরেন পলিসিকে বলেছেন, আলাস্কার শীর্ষ বৈঠকটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে পুতিন ট্রাম্পের রাশিয়াপন্থী প্রবণতাকে কাজে লাগাতে পারেন। এবিসি নিউজের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বৈঠকটি হতে পারে ‘পুতিনের পাতা ফাঁদ’, যা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থান দুর্বল করতে পারে।

অর্থনৈতিক দিক থেকেও বৈঠকের গুরুত্ব রয়েছে। ট্রাম্প পুতিনকে ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার প্ররোচনা হিসেবে বিরল খনিজের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব তৈরি করছেন বলেও জানা গেছে। আগামীকালের বৈঠকে ট্রাম্প কিছু অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে বসবেন। তবে এর আগে ট্রাম্প হুমকিও দিয়েছেন যে পুতিন রাজি না হলে ‘গুরুতর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই প্রস্তাবে আলাস্কার প্রাকৃতিক সম্পদ রাশিয়ার জন্য উন্মুক্ত করা এবং রাশিয়ার বিমানশিল্পের ওপর কিছু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এমনকি বর্তমানে রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনীয় অঞ্চলের বিরল খনিজ পুতিনের দেশের জন্য উন্মুক্ত করা।

আলাস্কার ভৌগোলিক অবস্থান ও জ্বালানিসম্পদের কারণে বৈঠকে তেল রপ্তানি ও নিষেধাজ্ঞা শিথিলতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। মার্কেটওয়াচের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এর ফলে বৈশ্বিক তেলের দামে ওঠানামা হতে পারে—যা যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানির দাম কমাতে পারে, কিন্তু ইউরোপের জন্য রাজনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর হবে।

এদিকে ইউরোপীয় নেতারা এরই মধ্যে ট্রাম্পকে সতর্ক করেছেন, ইউক্রেন ছাড়া কোনো ভূখণ্ডগত সমঝোতা গ্রহণযোগ্য নয়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ যৌথভাবে জানিয়েছেন, কিয়েভের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো আলোচনাই বৈধ হতে পারে না।

সিএসআইএসের বিশ্লেষক সেথ জি জোনসের মতে, স্থায়ী শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। ইতিহাস বলে, এ ধরনের যুদ্ধবিরতির মাত্র এক–তৃতীয়াংশ দীর্ঘ মেয়াদে টেকে। তবে হাডসন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো লুক কফি ট্রাম্প-পুতিন বৈঠককে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, ট্রাম্পের কাছে একটি বিরল সুযোগ রয়েছে, যা কেবল তাঁর ঐতিহাসিক স্থান নিশ্চিত করবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা জোরদার করবে।

এ বৈঠকের ফলাফল নিয়ে ট্রাম্পের বিশেষ দূত ও তাঁর বন্ধু স্টিভ উইটকফ এবং রুশ প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ ইউরি উশাকভও ইতিবাচক আশা প্রকাশ করেছেন। উইটকফ বলেছেন, ‘পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে একটি দুর্দান্ত বন্ধুত্ব আছে’ এবং তিনি মনে করেন, এটি এখনো অব্যাহত থাকবে, যা বিশ্বের জন্য একটি ভালো বিষয়। অর্থাৎ, তিনি মনে করছেন—আগামীকালের বৈঠক থেকে ভালো কিছু আসতে পারে।

এদিকে রুশ বিশ্লেষকেরা এখনই এই বৈঠককে পুতিনের জয় বলে মনে করছেন। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা ও বিশ্লেষকেরা শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন... রাশিয়া যদিও আলাস্কা বৈঠককে প্রতীকীভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করছে... রুশ বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ট্রাম্পই প্রথমে পিছিয়ে গেছেন।

রাশিয়ার প্রভাবশালী ব্লগার ইউরি পদোলিয়াক বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে, ভ্লাদিমির পুতিন কূটনীতিতে এক অনন্য মাস্টারক্লাস প্রদর্শন করেছেন... সাধারণভাবে বলতে গেলে, যে বৈঠকটি আলাস্কায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং তাতে জেলেনস্কি ও তাঁর ইউরোপীয় সমর্থকেরা নেই—এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক জয়।’

একই ধরনের মনোভাব পোষণ করেন পুতিনের ঘনিষ্ঠ কূটনীতিক ইউরি উশাকভ। তিনি বলেন, ‘আলাস্কা ও আর্কটিক অঞ্চলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থগুলো মিলিত হয় এবং এখানে বৃহৎ পরিসরের পারস্পরিক উপকারী প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়।’

সব মিলিয়ে, আলাস্কার এই বৈঠক আপাতদৃষ্টিতে শান্তি আলোচনার সুযোগ হলেও এটি ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও কৌশলগত লাভ–ক্ষতির জটিল সমীকরণ। ফল যা–ই হোক না কেন, বৈঠকটি ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ এবং আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্যের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।

তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, রয়টার্স, এবিসি, সিএসআইএস ও এপি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোরপূর্বক অপুর স্বীকারোক্তি নিয়েছেন বিএনপির ইশরাক, এনসিপির ব্যবস্থা করা সংবাদ সম্মেলনে দাবি স্ত্রীর

‘মিরপুরের উইকেটের পাশে পুঁইশাক বের হচ্ছে, এত বছর হয়নি কেন’

ভোররাতে হাঁসের মাংস খেতে ৩০০ ফুটে যান আসিফ মাহমুদ, না পেয়ে যান ওয়েস্টিনে

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ: ভাতা দ্বিগুণ হয়ে ১২০০, ঘণ্টায় সম্মানী ২৫০০ থেকে বেড়ে ৩৬০০ টাকা

আন্দোলনকারীদের মারধর, থমথমে শেবাচিম হাসপাতাল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত