আজকের পত্রিকা ডেস্ক

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতার–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকেও ম্লান করে দেবে। তাঁর চাহিদার তালিকায় আছে এআই চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–চালিত ড্রোন, আর সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন।
আজ রোববার ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন এমবিএস। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার মধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চাপ তিনি হজম করে গেছেন। এমনকি ইসরায়েল–ইরান যুদ্ধেও নিজ দেশকে রক্ষা করে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর বিপরীতে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যিনি সৌদি আরবকে নিজ পক্ষপুটে আনতে আলোচনা টেবিলে নিজ দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ—পারমাণবিক ও এআই প্রযুক্তির বিষয়টি উত্থাপনে প্রস্তুত।
একসময় মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা হোয়াইট হাউসে যেতেন এমন সব চুক্তি নিয়ে, যেগুলো মূলত বোয়িং আর লকহিড মার্টিনকে ব্যস্ত রাখত। ইরানের শাহ অস্ত্র ব্যবস্থার বিশ্বকোষসম জ্ঞানের জন্য এমন সফরে কুখ্যাত ছিলেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, মোহাম্মদ বিন সালমানের জটিল ‘শপিং লিস্ট’ এক পরিণত ও দূরদর্শী রাষ্ট্রের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ফুটিয়ে তোলে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক থিংক ট্যাংক এডেলম্যান পাবলিক অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্সের মধ্যপ্রাচ্য প্রধান আইয়্যাম কামেল বলেন, ‘এমবিএস কেবল একটি খাতে সহযোগিতা চান না, তিনি দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি আরব সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে চান। সেটা প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের দ্বিমুখী প্রবাহের মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরব এখনো বহুমেরুবিশ্বের অংশ হতে চায়, কিন্তু তারা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ নিতেও প্রস্তুত।’
বিশেষজ্ঞরা যে দিকটিতে নজর রাখা উচিত বলে মনে করছেন তা হলো—যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ছাতার নিচে জায়গা পেতে সৌদি আরবের আগ্রহ। কাতারে হামাসের মধ্যস্থতাকারীদের ওপর ইসরায়েলের হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে।
পাকিস্তানের হাতে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে বলে ধারণা করা হয়। দুই দেশের বিবরণে বলা হয়, চুক্তিতে সামরিক সব ধরনের বিকল্পই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে সৌদির পারমাণবিক আলোচনার বিষয়বস্তু গোপনে রাখা হয়েছে। তবে সাবেক এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, সৌদি আরবকে মার্কিন সামরিক সুরক্ষার আওতায় আনার ধারণা কার্যকর হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এতে সৌদিরা পাকিস্তানের পারমাণবিক ছাতার বাইরে আসবে এবং নিজেদের কাতারের চেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করবে।’
সৌদি আরব মূলত নিরাপত্তা শঙ্কার জায়গা থেকেই মার্কিন পারমাণবিক শক্তি ছায়াতলে আশ্রয় নিতে চাইছে। ২০১৯ সালে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর স্থাপনায় ইরানের হামলার পর থেকে সৌদি আরব ভয় পেতে শুরু করে। সর্বশেষ, কাতারে ইসরায়েলি হামলা সেই ভয়কে আরও বাড়িয়েছে।
কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর দোহারের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে কাতারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় এবং উপসাগরীয় এই দেশে যে কোনো হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘শান্তি ও নিরাপত্তার’ প্রতি হুমকি হিসেবে ধরা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
ওয়াশিংটন বা উপসাগরীয় অঞ্চলের খুব কম কর্মকর্তাই এই প্রতিশ্রুতিকে গুরুত্ব দেন। কারণ, আনুষ্ঠানিক চুক্তি প্রতিশ্রুতির তুলনায় নির্বাহী আদেশ যেকোনো সময় বাতিল করা যায় এবং নতুন মার্কিন প্রশাসন এই ধরনের নির্বাহী আদেশ মানবে—এমন নিশ্চয়তাও নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি আরব আরও শক্তিশালী কিছু চায়।
সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসাআদ আল আইবান এ সপ্তাহের শুরুতেই ওয়াশিংটনে গিয়ে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা অঙ্গীকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনে যুবরাজের পা পড়ার আগেই তাঁর সফরের একটি বড় সাফল্য হলো—দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ইসরায়েল ইস্যুকে আলাদা করে ফেলা।
ট্রাম্প মে মাসে সৌদি সফরে যাওয়ার আগেই রিয়াদ আগাম আলোচ্যসূচি ঠিক করে নিয়েছিল, যাতে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রসঙ্গ আলোচনায় না আসে। এখন গাজায় নাজুক যুদ্ধবিরতি চলছে। ট্রাম্প দাবি করছেন, বছরের শেষের মধ্যে রিয়াদ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। কিন্তু পশ্চিমা ও আরব কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, সৌদি আরব আগের মতোই এ আলোচনায় ফিরতে অনিচ্ছুক। সৌদি আরব যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দিকে বাস্তব অগ্রগতি দেখতে চায়। কিন্তু একটি এমন শর্ত, যা মানতে ইসরায়েল দৃশ্যত প্রস্তুত নয়।
সৌদি আরব কি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে
সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, তা মূলত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সম্ভাব্য পুরস্কার হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। এখন সেই স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া শীতল হয়ে গেলেও, আলোচনা থেমে নেই। চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রী ক্রিস রাইট সৌদি আরবে আসেন পারমাণবিক প্রযুক্তি নিয়ে সহযোগিতার বিষয়ে কথা বলতে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আব্রাহাম অ্যাকর্ডের চুক্তিগুলোকে নিজের পররাষ্ট্র নীতির বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি ব্যবসায়িক চুক্তিতেও আগ্রহী। ওয়েস্টিংহাউস ও বেকটেলের মতো মার্কিন কোম্পানিগুলো পারমাণবিক চুল্লি ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি নির্মাণে যে ভূমিকা রাখে, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তিতে তাদের মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা এই আলোচনাকে আরও এগিয়ে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ‘১২৩ চুক্তি’ করে। সেখানে তারা অঙ্গীকার করে যে, তারা নিজস্বভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে না, বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির অনুমতি দেয়। কিন্তু সৌদি যুবরাজ এমন চুক্তি চাইছেন, যেখানে নিজেদের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার থাকবে। তাদের দাবি, দেশে বিপুল ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে।
বছরের শুরুতে সৌদি জ্বালানি মন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন সালমান বলেন, ‘আমরা এটি সমৃদ্ধ করব, বিক্রি করব এবং আমরা ইয়েলোকেক তৈরি করব।’ ইয়েলোকেক হলো খনি থেকে উত্তোলনের পর সমৃদ্ধকরণের আগের পর্যায়।
এক সৌদি বিশ্লেষক বলেন, ‘সমৃদ্ধ না করা সৌদিদের জন্য বড় ছাড় হবে। এটি অর্থনৈতিক ইস্যুও। কারণ, ইউরেনিয়াম রপ্তানি করার চেয়ে নিজেরাই সমৃদ্ধ করলে তারা বেশি লাভ করবে। পাশাপাশি এটি জাতীয় মর্যাদার ব্যাপার। প্রশ্ন হলো, যদি সৌদিরা সমৃদ্ধ না করে, তাহলে বিনিময়ে ট্রাম্প থেকে তারা কী পাবে?’
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বার্নার্ড হায়কেল আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিনিময়ে সৌদি আরব ‘পারমাণবিক অস্ত্র সুরক্ষা’ চাইতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘আমি মনে করি আপাতত তারা সমৃদ্ধকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে সরে আসতে পারে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সুরক্ষা চাইবে। এতে সৌদি ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েনও থাকতে পারে।’
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং স্কলার গ্রেগরি গস বলেন, ‘ইতিহাসে আমরা নানা জায়গায় পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছি। কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরবে এমন মোতায়েন সম্ভব।’ তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন যেকোনো জায়গায় যেতে পারে, ট্রাম্প চাইলে ভারত মহাসাগরে এসব সাবমেরিন টহল দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতে পারেন।
সৌদি আরব কি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাবে
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানান, সফরে সৌদি আরবের যুবরাজ ১৮টি বিমানে করে ১ হাজার কর্মকর্তা নিয়ে ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালের পর এমবিএসের প্রথম হোয়াইট হাউস সফর এটি। সেই সফরের সাত মাস পর ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়। এতে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনা করে এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনও তীব্র নিন্দা জানান।
বাইডেন প্রশাসনের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন-রিয়াদ সম্পর্ক ঠান্ডা থাকলেও ২০২২ সালে তা আবার উষ্ণ হয়। মূলত রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পর যুক্তরাষ্ট্রের সৌদি জ্বালানি প্রয়োজন হওয়ায়। এই সময়ে সৌদি যুবরাজ আরও শক্তিশালী অবস্থানে উঠে আসেন। তিনি ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমঝোতা করেন এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করেন। অনেক আগেই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠেছেন। এবারকার সফর মূলত ট্রাম্পের গালফ সফরের সময় যে বিশাল প্যাকেজ চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছিল তা চূড়ান্ত করা।
দুই পক্ষ তখন ১৪২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বিক্রির ঘোষণা দেয়। এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানও সেই সম্ভাব্য চুক্তির অংশ ছিল। গত সপ্তাহে রয়টার্স জানায়, এই প্যাকেজে সৌদি আরবের জন্য ৪৮টি পর্যন্ত এফ-৩৫ থাকতে পারে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ বিক্রির বিষয়ে উদ্বেগ আছে। ইসরায়েল বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র দেশ যারা এফ-৩৫ চালায় এবং তাদের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের বিনিময়ে আমিরাতকে এফ-৩৫ বিক্রির পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু চীনের প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার নিয়ে উদ্বেগের কারণে বাইডেন প্রশাসন তা আটকে দেয়। সেই একই উদ্বেগ সৌদি আরব নিয়েও রয়েছে বলে বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা জানান।
অ্যারোডাইনামিক অ্যাডভাইজরির মহাকাশ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড আবুলালাফিয়া বলেন, চুক্তি হলেও ডেলিভারি পেতে তিন থেকে চার বছর লাগবে, কারণ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ আগেই অর্ডার করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের সামরিক প্রাধান্য নিশ্চিত করতে অতীতেও সৌদিদের দেওয়া অস্ত্র ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে সৌদি আরবকে যে এফ-১৫ এস স্ট্রাইক ইগল বিক্রি করা হয়েছিল, সেখানে রাডার ও ইলেকট্রনিক প্রতিরক্ষায় কিছুটা দুর্বল সংস্করণ দেওয়া হয়। এফ-৩৫ সম্পর্কে আবুলালাফিয়া বলেন, ‘এই বিমানগুলোতে দূর থেকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।’ অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে যে কোনো সময় এগুলো বন্ধ করে দিতে পারে।
ইসরায়েল নিজস্ব সংস্করণ এফ-৩৫ আই অ্যাডায়ারে অনেক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তাদের তৈরি অতিরিক্ত জ্বালানি বহনক্ষমতা বিমানটির স্টেলথ ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রেখে দীর্ঘ দূরত্বে উড্ডয়ন সম্ভব করেছে। এই পরিবর্তিত এফ-৩৫ ব্যবহার করেই ইরানে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে হামলা চালানো সম্ভব হয়েছে।
সৌদি নিরাপত্তা বিশ্লেষক আল–গান্নাম বলেন, এ ধরনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ‘স্থানীয়করণ’ই সৌদির প্রধান লক্ষ্য। তাঁর ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সহায়তা ছাড়া’ সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় অস্ত্র নির্মাতা সৌদি অ্যারাবিয়ান মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিজ আন্তর্জাতিক মানের কোনো কোম্পানিতে পরিণত হতে পারবে না।
ড্রোন থেকে ডেটা সেন্টার: সৌদি আরবের এআই উচ্চাভিলাষ
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব শত শত এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন বিক্রির বিষয়েও আলোচনা চালাচ্ছে। তবে প্রতিরক্ষা খাতের অভ্যন্তরীণ সূত্র ও কর্মকর্তাদের মতে, সৌদি আরব এখন ক্রমশ বাছাই করে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিচ্ছে। তাই এই সফরের সময় নজর রাখার জায়গা হচ্ছে তুলনামূলক ছোট প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি।
সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের স্টার্টআপ শিল্ড এআই-এর সঙ্গে আলোচনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির এআই-সমর্থিত ভি-ব্যাট ড্রোন ইতিমধ্যেই ইউক্রেনে ব্যবহৃত হচ্ছে। কোম্পানিটি আরও একটি ‘ভার্টিকাল টেকঅফ’ ড্রোন নিয়ে কাজ করছে, যা আকাশ থেকে আকাশে ও আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র বহন করতে পারে।
আলাপ সম্পর্কে অবহিত এক ব্যক্তি বলেন, ‘রিয়াদ তাদের (শিল্ড এআই) বড় আগ্রহের এলাকা। সৌদিরা মাঝারি আকারের ড্রোন চাচ্ছে। তারা এমন কোলাবরেটিভ কমব্যাট এয়ারক্রাফট চায়, যা যুদ্ধবিমানের সঙ্গে পাশাপাশি উড়তে পারে; আর তারা এমন ড্রোনও খুঁজছে যা সামুদ্রিক নজরদারিতে কার্যকর।’
প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো সৌদি আরবও মার্কিন এআই চিপের দিকে নজর দিচ্ছে। মে মাসে এনভিডিয়া ঘোষণা করেছে যে, তারা সৌদি আরবের এক ট্রিলিয়ন ডলারের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের মালিকানাধীন এআই প্রতিষ্ঠান ‘হিউমেইন’-কে তাদের উন্নত ব্ল্যাকওয়েল চিপের হাজারো ইউনিট বিক্রি করবে।
সৌদি আরব নিজেকে এআই হাব হিসেবে তুলে ধরছে, কম দামের বিদ্যুৎ দিয়ে ডেটা সেন্টার চালানোর সুবিধা তুলে ধরে। হিউমেইন রিয়াদ থেকে দাম্মাম পর্যন্ত ডেটা সেন্টার নির্মাণ করছে; ২০৩৪ সালের মধ্যে এসব সেন্টারের মোট সক্ষমতা হবে ৬.৬ গিগাওয়াট। সৌদির আরেক এআই কোম্পানি ডেটাভল্ট লোহিত সাগর উপকূলে ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ডেটা সেন্টার তৈরি করছে।
যদিও মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সৌদি সফরে নানা এআই চুক্তি ঘোষণা করা হয় ছিলো বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে, কিন্তু সেই চিপের সরবরাহ আটকে আছে, প্রকাশ্যে কোনো অগ্রগতির খবরও নেই। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সৌদি আরবে এসব মার্কিন এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে চীন হয়তো প্রবেশাধিকার পেতে পারে। যুবরাজ ওয়াশিংটনে গিয়ে এসব চুক্তির অগ্রগতি বাড়াতেই চাপ তৈরি করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতার–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকেও ম্লান করে দেবে। তাঁর চাহিদার তালিকায় আছে এআই চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–চালিত ড্রোন, আর সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন।
আজ রোববার ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন এমবিএস। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার মধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চাপ তিনি হজম করে গেছেন। এমনকি ইসরায়েল–ইরান যুদ্ধেও নিজ দেশকে রক্ষা করে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর বিপরীতে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যিনি সৌদি আরবকে নিজ পক্ষপুটে আনতে আলোচনা টেবিলে নিজ দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ—পারমাণবিক ও এআই প্রযুক্তির বিষয়টি উত্থাপনে প্রস্তুত।
একসময় মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা হোয়াইট হাউসে যেতেন এমন সব চুক্তি নিয়ে, যেগুলো মূলত বোয়িং আর লকহিড মার্টিনকে ব্যস্ত রাখত। ইরানের শাহ অস্ত্র ব্যবস্থার বিশ্বকোষসম জ্ঞানের জন্য এমন সফরে কুখ্যাত ছিলেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, মোহাম্মদ বিন সালমানের জটিল ‘শপিং লিস্ট’ এক পরিণত ও দূরদর্শী রাষ্ট্রের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ফুটিয়ে তোলে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক থিংক ট্যাংক এডেলম্যান পাবলিক অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্সের মধ্যপ্রাচ্য প্রধান আইয়্যাম কামেল বলেন, ‘এমবিএস কেবল একটি খাতে সহযোগিতা চান না, তিনি দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি আরব সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে চান। সেটা প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের দ্বিমুখী প্রবাহের মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরব এখনো বহুমেরুবিশ্বের অংশ হতে চায়, কিন্তু তারা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ নিতেও প্রস্তুত।’
বিশেষজ্ঞরা যে দিকটিতে নজর রাখা উচিত বলে মনে করছেন তা হলো—যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ছাতার নিচে জায়গা পেতে সৌদি আরবের আগ্রহ। কাতারে হামাসের মধ্যস্থতাকারীদের ওপর ইসরায়েলের হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে।
পাকিস্তানের হাতে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে বলে ধারণা করা হয়। দুই দেশের বিবরণে বলা হয়, চুক্তিতে সামরিক সব ধরনের বিকল্পই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে সৌদির পারমাণবিক আলোচনার বিষয়বস্তু গোপনে রাখা হয়েছে। তবে সাবেক এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, সৌদি আরবকে মার্কিন সামরিক সুরক্ষার আওতায় আনার ধারণা কার্যকর হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এতে সৌদিরা পাকিস্তানের পারমাণবিক ছাতার বাইরে আসবে এবং নিজেদের কাতারের চেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করবে।’
সৌদি আরব মূলত নিরাপত্তা শঙ্কার জায়গা থেকেই মার্কিন পারমাণবিক শক্তি ছায়াতলে আশ্রয় নিতে চাইছে। ২০১৯ সালে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর স্থাপনায় ইরানের হামলার পর থেকে সৌদি আরব ভয় পেতে শুরু করে। সর্বশেষ, কাতারে ইসরায়েলি হামলা সেই ভয়কে আরও বাড়িয়েছে।
কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর দোহারের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে কাতারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় এবং উপসাগরীয় এই দেশে যে কোনো হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘শান্তি ও নিরাপত্তার’ প্রতি হুমকি হিসেবে ধরা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
ওয়াশিংটন বা উপসাগরীয় অঞ্চলের খুব কম কর্মকর্তাই এই প্রতিশ্রুতিকে গুরুত্ব দেন। কারণ, আনুষ্ঠানিক চুক্তি প্রতিশ্রুতির তুলনায় নির্বাহী আদেশ যেকোনো সময় বাতিল করা যায় এবং নতুন মার্কিন প্রশাসন এই ধরনের নির্বাহী আদেশ মানবে—এমন নিশ্চয়তাও নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি আরব আরও শক্তিশালী কিছু চায়।
সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসাআদ আল আইবান এ সপ্তাহের শুরুতেই ওয়াশিংটনে গিয়ে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা অঙ্গীকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনে যুবরাজের পা পড়ার আগেই তাঁর সফরের একটি বড় সাফল্য হলো—দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ইসরায়েল ইস্যুকে আলাদা করে ফেলা।
ট্রাম্প মে মাসে সৌদি সফরে যাওয়ার আগেই রিয়াদ আগাম আলোচ্যসূচি ঠিক করে নিয়েছিল, যাতে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রসঙ্গ আলোচনায় না আসে। এখন গাজায় নাজুক যুদ্ধবিরতি চলছে। ট্রাম্প দাবি করছেন, বছরের শেষের মধ্যে রিয়াদ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। কিন্তু পশ্চিমা ও আরব কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, সৌদি আরব আগের মতোই এ আলোচনায় ফিরতে অনিচ্ছুক। সৌদি আরব যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দিকে বাস্তব অগ্রগতি দেখতে চায়। কিন্তু একটি এমন শর্ত, যা মানতে ইসরায়েল দৃশ্যত প্রস্তুত নয়।
সৌদি আরব কি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে
সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, তা মূলত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সম্ভাব্য পুরস্কার হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। এখন সেই স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া শীতল হয়ে গেলেও, আলোচনা থেমে নেই। চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রী ক্রিস রাইট সৌদি আরবে আসেন পারমাণবিক প্রযুক্তি নিয়ে সহযোগিতার বিষয়ে কথা বলতে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আব্রাহাম অ্যাকর্ডের চুক্তিগুলোকে নিজের পররাষ্ট্র নীতির বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি ব্যবসায়িক চুক্তিতেও আগ্রহী। ওয়েস্টিংহাউস ও বেকটেলের মতো মার্কিন কোম্পানিগুলো পারমাণবিক চুল্লি ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি নির্মাণে যে ভূমিকা রাখে, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তিতে তাদের মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা এই আলোচনাকে আরও এগিয়ে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ‘১২৩ চুক্তি’ করে। সেখানে তারা অঙ্গীকার করে যে, তারা নিজস্বভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে না, বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির অনুমতি দেয়। কিন্তু সৌদি যুবরাজ এমন চুক্তি চাইছেন, যেখানে নিজেদের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার থাকবে। তাদের দাবি, দেশে বিপুল ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে।
বছরের শুরুতে সৌদি জ্বালানি মন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন সালমান বলেন, ‘আমরা এটি সমৃদ্ধ করব, বিক্রি করব এবং আমরা ইয়েলোকেক তৈরি করব।’ ইয়েলোকেক হলো খনি থেকে উত্তোলনের পর সমৃদ্ধকরণের আগের পর্যায়।
এক সৌদি বিশ্লেষক বলেন, ‘সমৃদ্ধ না করা সৌদিদের জন্য বড় ছাড় হবে। এটি অর্থনৈতিক ইস্যুও। কারণ, ইউরেনিয়াম রপ্তানি করার চেয়ে নিজেরাই সমৃদ্ধ করলে তারা বেশি লাভ করবে। পাশাপাশি এটি জাতীয় মর্যাদার ব্যাপার। প্রশ্ন হলো, যদি সৌদিরা সমৃদ্ধ না করে, তাহলে বিনিময়ে ট্রাম্প থেকে তারা কী পাবে?’
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বার্নার্ড হায়কেল আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিনিময়ে সৌদি আরব ‘পারমাণবিক অস্ত্র সুরক্ষা’ চাইতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘আমি মনে করি আপাতত তারা সমৃদ্ধকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে সরে আসতে পারে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সুরক্ষা চাইবে। এতে সৌদি ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েনও থাকতে পারে।’
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং স্কলার গ্রেগরি গস বলেন, ‘ইতিহাসে আমরা নানা জায়গায় পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছি। কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরবে এমন মোতায়েন সম্ভব।’ তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন যেকোনো জায়গায় যেতে পারে, ট্রাম্প চাইলে ভারত মহাসাগরে এসব সাবমেরিন টহল দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতে পারেন।
সৌদি আরব কি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাবে
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানান, সফরে সৌদি আরবের যুবরাজ ১৮টি বিমানে করে ১ হাজার কর্মকর্তা নিয়ে ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালের পর এমবিএসের প্রথম হোয়াইট হাউস সফর এটি। সেই সফরের সাত মাস পর ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়। এতে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনা করে এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনও তীব্র নিন্দা জানান।
বাইডেন প্রশাসনের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন-রিয়াদ সম্পর্ক ঠান্ডা থাকলেও ২০২২ সালে তা আবার উষ্ণ হয়। মূলত রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পর যুক্তরাষ্ট্রের সৌদি জ্বালানি প্রয়োজন হওয়ায়। এই সময়ে সৌদি যুবরাজ আরও শক্তিশালী অবস্থানে উঠে আসেন। তিনি ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমঝোতা করেন এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করেন। অনেক আগেই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠেছেন। এবারকার সফর মূলত ট্রাম্পের গালফ সফরের সময় যে বিশাল প্যাকেজ চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছিল তা চূড়ান্ত করা।
দুই পক্ষ তখন ১৪২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বিক্রির ঘোষণা দেয়। এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানও সেই সম্ভাব্য চুক্তির অংশ ছিল। গত সপ্তাহে রয়টার্স জানায়, এই প্যাকেজে সৌদি আরবের জন্য ৪৮টি পর্যন্ত এফ-৩৫ থাকতে পারে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ বিক্রির বিষয়ে উদ্বেগ আছে। ইসরায়েল বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র দেশ যারা এফ-৩৫ চালায় এবং তাদের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের বিনিময়ে আমিরাতকে এফ-৩৫ বিক্রির পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু চীনের প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার নিয়ে উদ্বেগের কারণে বাইডেন প্রশাসন তা আটকে দেয়। সেই একই উদ্বেগ সৌদি আরব নিয়েও রয়েছে বলে বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা জানান।
অ্যারোডাইনামিক অ্যাডভাইজরির মহাকাশ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড আবুলালাফিয়া বলেন, চুক্তি হলেও ডেলিভারি পেতে তিন থেকে চার বছর লাগবে, কারণ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ আগেই অর্ডার করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের সামরিক প্রাধান্য নিশ্চিত করতে অতীতেও সৌদিদের দেওয়া অস্ত্র ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে সৌদি আরবকে যে এফ-১৫ এস স্ট্রাইক ইগল বিক্রি করা হয়েছিল, সেখানে রাডার ও ইলেকট্রনিক প্রতিরক্ষায় কিছুটা দুর্বল সংস্করণ দেওয়া হয়। এফ-৩৫ সম্পর্কে আবুলালাফিয়া বলেন, ‘এই বিমানগুলোতে দূর থেকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।’ অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে যে কোনো সময় এগুলো বন্ধ করে দিতে পারে।
ইসরায়েল নিজস্ব সংস্করণ এফ-৩৫ আই অ্যাডায়ারে অনেক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তাদের তৈরি অতিরিক্ত জ্বালানি বহনক্ষমতা বিমানটির স্টেলথ ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রেখে দীর্ঘ দূরত্বে উড্ডয়ন সম্ভব করেছে। এই পরিবর্তিত এফ-৩৫ ব্যবহার করেই ইরানে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে হামলা চালানো সম্ভব হয়েছে।
সৌদি নিরাপত্তা বিশ্লেষক আল–গান্নাম বলেন, এ ধরনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ‘স্থানীয়করণ’ই সৌদির প্রধান লক্ষ্য। তাঁর ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সহায়তা ছাড়া’ সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় অস্ত্র নির্মাতা সৌদি অ্যারাবিয়ান মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিজ আন্তর্জাতিক মানের কোনো কোম্পানিতে পরিণত হতে পারবে না।
ড্রোন থেকে ডেটা সেন্টার: সৌদি আরবের এআই উচ্চাভিলাষ
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব শত শত এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন বিক্রির বিষয়েও আলোচনা চালাচ্ছে। তবে প্রতিরক্ষা খাতের অভ্যন্তরীণ সূত্র ও কর্মকর্তাদের মতে, সৌদি আরব এখন ক্রমশ বাছাই করে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিচ্ছে। তাই এই সফরের সময় নজর রাখার জায়গা হচ্ছে তুলনামূলক ছোট প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি।
সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের স্টার্টআপ শিল্ড এআই-এর সঙ্গে আলোচনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির এআই-সমর্থিত ভি-ব্যাট ড্রোন ইতিমধ্যেই ইউক্রেনে ব্যবহৃত হচ্ছে। কোম্পানিটি আরও একটি ‘ভার্টিকাল টেকঅফ’ ড্রোন নিয়ে কাজ করছে, যা আকাশ থেকে আকাশে ও আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র বহন করতে পারে।
আলাপ সম্পর্কে অবহিত এক ব্যক্তি বলেন, ‘রিয়াদ তাদের (শিল্ড এআই) বড় আগ্রহের এলাকা। সৌদিরা মাঝারি আকারের ড্রোন চাচ্ছে। তারা এমন কোলাবরেটিভ কমব্যাট এয়ারক্রাফট চায়, যা যুদ্ধবিমানের সঙ্গে পাশাপাশি উড়তে পারে; আর তারা এমন ড্রোনও খুঁজছে যা সামুদ্রিক নজরদারিতে কার্যকর।’
প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো সৌদি আরবও মার্কিন এআই চিপের দিকে নজর দিচ্ছে। মে মাসে এনভিডিয়া ঘোষণা করেছে যে, তারা সৌদি আরবের এক ট্রিলিয়ন ডলারের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের মালিকানাধীন এআই প্রতিষ্ঠান ‘হিউমেইন’-কে তাদের উন্নত ব্ল্যাকওয়েল চিপের হাজারো ইউনিট বিক্রি করবে।
সৌদি আরব নিজেকে এআই হাব হিসেবে তুলে ধরছে, কম দামের বিদ্যুৎ দিয়ে ডেটা সেন্টার চালানোর সুবিধা তুলে ধরে। হিউমেইন রিয়াদ থেকে দাম্মাম পর্যন্ত ডেটা সেন্টার নির্মাণ করছে; ২০৩৪ সালের মধ্যে এসব সেন্টারের মোট সক্ষমতা হবে ৬.৬ গিগাওয়াট। সৌদির আরেক এআই কোম্পানি ডেটাভল্ট লোহিত সাগর উপকূলে ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ডেটা সেন্টার তৈরি করছে।
যদিও মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সৌদি সফরে নানা এআই চুক্তি ঘোষণা করা হয় ছিলো বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে, কিন্তু সেই চিপের সরবরাহ আটকে আছে, প্রকাশ্যে কোনো অগ্রগতির খবরও নেই। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সৌদি আরবে এসব মার্কিন এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে চীন হয়তো প্রবেশাধিকার পেতে পারে। যুবরাজ ওয়াশিংটনে গিয়ে এসব চুক্তির অগ্রগতি বাড়াতেই চাপ তৈরি করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে মোদি নিজে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিরোধী পক্ষের নীরবতার খুবই দৃষ্টিকটু।
৪ ঘণ্টা আগে
পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সামরিক বহর ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এই রণতরী বহর যে কোনো মুহূর্তে ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে
১ দিন আগে
পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীর প্রস্তাব গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। এরপর, গতকাল বুধবার তা নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদেও পাস হয়। এখন শুধু উচ্চকক্ষে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে তা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘নতুন স্বাভাবিক’ (নিউ নরমাল) প্রতিষ্ঠার দাবির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চলতি বছর স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাচীর থেকে মোদি বলেছিলেন, দেশ এখন সন্ত্রাসবাদকে আর সহ্য করবে না, অথচ এর মাত্র ছয় মাস পর সোমবার (১০ নভেম্বর) ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছেই এক গাড়ি বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে প্রাথমিক অনিশ্চয়তা থাকলেও ঘটনাটি পরে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের কার্যকলাপ বলে নিশ্চিত করেছে সরকার।
যদিও সরকার এই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করতে দুই দিন সময় নিয়েছেন। কিন্তু এরপরও প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য সরাসরি দায়ী করতে গিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নজিরবিহীনভাবে সতর্ক এবং নীরব ভূমিকা পালন করছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর সরকারের কঠোর নীতির প্রমাণ হিসেবে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর উল্লেখ করে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে তাঁর সরকার আর পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করবে না। কিন্তু লাল কেল্লার অদূরে বিস্ফোরণটি সেই কঠোর দাবির বিপরীতে সরকারের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণটি ঘটে, যখন বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ও শেষ দফার ভোট গ্রহণের এক দিন আগে রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল উত্তপ্ত। ঘটনার দিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিস্ফোরণস্থল ও লোক নায়ক জয় প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতাল পরিদর্শন করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভুটানের সাবেক রাজার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে হিমালয়ের ওই দেশটিতে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ‘অসংবেদনশীলতা’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তোলে বিরোধী পক্ষ। বুধবার দিল্লি ফিরে তিনি দ্রুত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
বিস্ফোরণের প্রকৃতি এবং উৎস নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় প্রথমদিকে বহু রাজনীতিবিদ নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক ও সমবেদনা জানানোর মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন পোস্ট দেন।
বিস্ফোরণের সঙ্গে একটি ‘সন্ত্রাসী মডিউলের’ যোগসূত্রের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরও কোনো শীর্ষ বিরোধী নেতা বিস্ফোরণস্থল বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেননি। এই নীরবতা রাজনৈতিক মহলে সমালোচিত হচ্ছে। শুধু আম আদমি পার্টি (এএপি) এবং কংগ্রেসের দিল্লি ইউনিটের স্থানীয় প্রতিনিধিরা আহত ব্যক্তিদের দেখতে হাসপাতালে যান। তবে এই স্থানীয় নেতারাও সন্ত্রাসবাদ বা জাতীয় নিরাপত্তার বৃহত্তর ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলে, কেবল বিস্ফোরণের পরবর্তী পরিস্থিতি ও সরকারি ব্যবস্থাপনার ভুলত্রুটি নিয়ে কথা বলেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা সংসদ সদস্য পার্থ ভৌমিক ঘটনার আদালত-পর্যবেক্ষিত তদন্ত দাবি করেন। অন্যদিকে এএপির মুখপাত্র সঞ্জয় সিং এবং কংগ্রেসের সুপ্রিয়া শ্রীনাতে প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারের প্রতি তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সঞ্জয় সিং এক্সে লেখেন, ‘দেশ যন্ত্রণায় ভুগছে আর মোদি প্লেনে...এমন অসংবেদনশীল প্রধানমন্ত্রীকে জাতি আর কত দিন দিন সহ্য করবে?’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিল্লির বিস্ফোরণে বিরোধী দলগুলোর এই ‘নিঃশব্দ প্রতিক্রিয়া’ এক কৌশলগত দুর্বলতার প্রতিফলন। তারা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যেতে দ্বিধা বোধ করছেন। কারণ, এ ক্ষেত্রে বিজেপিকে মোকাবিলা করার জন্য তাদের কাছে স্পষ্ট কোনো কৌশল নেই।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মোদির জীবনীকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় যুক্তি দিয়েছেন, মোদিকে বিদ্রূপ করার জন্য ‘যুদ্ধবাজ’ সাজার চেষ্টা করা সঠিক কৌশল নয়। তাঁর মতে, বিরোধী দলকে মোদির ‘বড়াই ও মিথ্যা সাহসের অন্তঃসারশূন্যতা’ এবং নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।
ভারতের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা যশোবর্ধন ঝা আজাদ বলেন, বিরোধী দলগুলোর উচিত মোদি সরকারের কাছে ‘নির্দিষ্ট ও তীক্ষ্ণ’ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে দায়বদ্ধতা স্থির করা। তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসী মডিউলটি ‘প্রধান ও বিপজ্জনক’ ছিল। এ নিয়ে প্রশ্ন না করলে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা স্মরণ করিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে মোদি নিজে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিরোধী পক্ষের নীরবতার খুবই দৃষ্টিকটু।

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘নতুন স্বাভাবিক’ (নিউ নরমাল) প্রতিষ্ঠার দাবির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চলতি বছর স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাচীর থেকে মোদি বলেছিলেন, দেশ এখন সন্ত্রাসবাদকে আর সহ্য করবে না, অথচ এর মাত্র ছয় মাস পর সোমবার (১০ নভেম্বর) ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছেই এক গাড়ি বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে প্রাথমিক অনিশ্চয়তা থাকলেও ঘটনাটি পরে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের কার্যকলাপ বলে নিশ্চিত করেছে সরকার।
যদিও সরকার এই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করতে দুই দিন সময় নিয়েছেন। কিন্তু এরপরও প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য সরাসরি দায়ী করতে গিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নজিরবিহীনভাবে সতর্ক এবং নীরব ভূমিকা পালন করছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর সরকারের কঠোর নীতির প্রমাণ হিসেবে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর উল্লেখ করে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে তাঁর সরকার আর পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করবে না। কিন্তু লাল কেল্লার অদূরে বিস্ফোরণটি সেই কঠোর দাবির বিপরীতে সরকারের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণটি ঘটে, যখন বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ও শেষ দফার ভোট গ্রহণের এক দিন আগে রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল উত্তপ্ত। ঘটনার দিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিস্ফোরণস্থল ও লোক নায়ক জয় প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতাল পরিদর্শন করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভুটানের সাবেক রাজার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে হিমালয়ের ওই দেশটিতে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ‘অসংবেদনশীলতা’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তোলে বিরোধী পক্ষ। বুধবার দিল্লি ফিরে তিনি দ্রুত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
বিস্ফোরণের প্রকৃতি এবং উৎস নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় প্রথমদিকে বহু রাজনীতিবিদ নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক ও সমবেদনা জানানোর মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন পোস্ট দেন।
বিস্ফোরণের সঙ্গে একটি ‘সন্ত্রাসী মডিউলের’ যোগসূত্রের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরও কোনো শীর্ষ বিরোধী নেতা বিস্ফোরণস্থল বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেননি। এই নীরবতা রাজনৈতিক মহলে সমালোচিত হচ্ছে। শুধু আম আদমি পার্টি (এএপি) এবং কংগ্রেসের দিল্লি ইউনিটের স্থানীয় প্রতিনিধিরা আহত ব্যক্তিদের দেখতে হাসপাতালে যান। তবে এই স্থানীয় নেতারাও সন্ত্রাসবাদ বা জাতীয় নিরাপত্তার বৃহত্তর ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলে, কেবল বিস্ফোরণের পরবর্তী পরিস্থিতি ও সরকারি ব্যবস্থাপনার ভুলত্রুটি নিয়ে কথা বলেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা সংসদ সদস্য পার্থ ভৌমিক ঘটনার আদালত-পর্যবেক্ষিত তদন্ত দাবি করেন। অন্যদিকে এএপির মুখপাত্র সঞ্জয় সিং এবং কংগ্রেসের সুপ্রিয়া শ্রীনাতে প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারের প্রতি তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সঞ্জয় সিং এক্সে লেখেন, ‘দেশ যন্ত্রণায় ভুগছে আর মোদি প্লেনে...এমন অসংবেদনশীল প্রধানমন্ত্রীকে জাতি আর কত দিন দিন সহ্য করবে?’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিল্লির বিস্ফোরণে বিরোধী দলগুলোর এই ‘নিঃশব্দ প্রতিক্রিয়া’ এক কৌশলগত দুর্বলতার প্রতিফলন। তারা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যেতে দ্বিধা বোধ করছেন। কারণ, এ ক্ষেত্রে বিজেপিকে মোকাবিলা করার জন্য তাদের কাছে স্পষ্ট কোনো কৌশল নেই।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মোদির জীবনীকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় যুক্তি দিয়েছেন, মোদিকে বিদ্রূপ করার জন্য ‘যুদ্ধবাজ’ সাজার চেষ্টা করা সঠিক কৌশল নয়। তাঁর মতে, বিরোধী দলকে মোদির ‘বড়াই ও মিথ্যা সাহসের অন্তঃসারশূন্যতা’ এবং নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।
ভারতের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা যশোবর্ধন ঝা আজাদ বলেন, বিরোধী দলগুলোর উচিত মোদি সরকারের কাছে ‘নির্দিষ্ট ও তীক্ষ্ণ’ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে দায়বদ্ধতা স্থির করা। তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসী মডিউলটি ‘প্রধান ও বিপজ্জনক’ ছিল। এ নিয়ে প্রশ্ন না করলে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা স্মরণ করিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে মোদি নিজে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিরোধী পক্ষের নীরবতার খুবই দৃষ্টিকটু।

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতার–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকেও ম্লান করে দেবে। তাঁর চাহিদার তালিকায় আছে এআই চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–চালিত ড্রোন, আর সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন।
৪ ঘণ্টা আগে
পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সামরিক বহর ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এই রণতরী বহর যে কোনো মুহূর্তে ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে
১ দিন আগে
পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীর প্রস্তাব গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। এরপর, গতকাল বুধবার তা নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদেও পাস হয়। এখন শুধু উচ্চকক্ষে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে তা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইপসোস পরিচালিত এই জরিপে ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০ হাজার মানুষের মতামত নেওয়া হয়।
জরিপে দেখা গেছে, ৯ দেশের মধ্যে শুধু সুইডেনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট (প্রায় ৬৫ শতাংশ)। নেদারল্যান্ডসে মতামত বিভক্ত; ৩৬ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩৭ শতাংশ অসন্তুষ্ট। পোল্যান্ডে ৪০ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩১ শতাংশ অসন্তুষ্ট।
বাকি দেশগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ। ছয় দেশে গড় সন্তুষ্টির হার ২৪ শতাংশের কম। ক্রোয়েশিয়ায় ১৮ শতাংশ, ফ্রান্সে ১৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ২৬ শতাংশ, স্পেনে ২৭ শতাংশ এবং ইতালিতে ২৯ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, গত পাঁচ বছরে তাঁদের দেশে গণতন্ত্রের মান আরও খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্স (৮১ শতাংশ) ও নেদারল্যান্ডসে (৭৬ শতাংশ); যেখানে চলতি বছর সরকার পতনের ঘটনা ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ শতাংশ এবং স্পেন ও যুক্তরাজ্যে ৫৮ শতাংশ মানুষ একই মত প্রকাশ করেন। একমাত্র ব্যতিক্রম পোল্যান্ড; সেখানে ৪২ শতাংশ মনে করেন গণতন্ত্রের মান কিছুটা ভালো হয়েছে, ৩০ শতাংশ বলেছেন খারাপ হয়েছে।
সুইডেন বাদে বাকি সব দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা লক্ষ্য করা গেছে। ফ্রান্সে ৮৬ শতাংশ, স্পেনে ৮০ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডে ৭৫ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৭৪ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ায় ৭৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯ শতাংশ এবং ইতালিতে ৬৪ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যতের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন।
গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে; ভুয়া তথ্য (ডিসইনফরমেশন), রাজনৈতিক জবাবদিহির অভাব, চরমপন্থা ও দুর্নীতি।
ফ্রান্স (৫৬ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (৬৪ শতাংশ), সুইডেন (৬৭ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (৭৫ শতাংশ) ও পোল্যান্ডে (৭৬ শতাংশ) সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছে ভুয়া তথ্যকে। অন্যদিকে, দুর্নীতিকে সর্বোচ্চ হুমকি হিসেবে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৬৩ শতাংশ, স্পেনের ৭৩ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ার ৮০ শতাংশ ও ইতালির ৪৭ শতাংশ মানুষ। তবে ইতালিতে অর্থনৈতিক বৈষম্যকেও সমান বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়েছে।
গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা যেসব সমাধানের কথা বলেছেন, তা হলো—কঠোর দুর্নীতিবিরোধী আইন ও এর বাস্তবায়ন, সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর আরও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক শিক্ষা উন্নয়ন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা।
জরিপে দেখা গেছে, গণতন্ত্রের প্রতি মোটের ওপর জোরালো সমর্থন রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, এটি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও রক্ষাযোগ্য। তবে ক্রোয়েশিয়ায় অনেকে মনে করেন, কোনো দেশে গণতন্ত্র বজায় রাখা উচিত কি না—তা সেই দেশের মানুষের জীবনের মানের ওপর নির্ভর করে।
এদিকে, বেশির ভাগ দেশে বেড়েছে মৌলিক বা ‘র্যাডিক্যাল’ পরিবর্তনের দাবি। অনেকে মনে করেন বর্তমান ব্যবস্থাটি ধনীদের স্বার্থে, এটি সবার জন্য সমানভাবে কাজ করে না। স্পেনে ৫২ শতাংশ, ইতালিতে ৫৫ শতাংশ, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে ৬০ শতাংশ, ফ্রান্সে ৬৬ শতাংশ এবং ক্রোয়েশিয়ায় ৬৯ শতাংশ মানুষ র্যাডিক্যাল পরিবর্তনের দাবি করেন।
তবে পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রবল হলেও, প্রায় সব দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমঝোতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেন।

পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইপসোস পরিচালিত এই জরিপে ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০ হাজার মানুষের মতামত নেওয়া হয়।
জরিপে দেখা গেছে, ৯ দেশের মধ্যে শুধু সুইডেনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট (প্রায় ৬৫ শতাংশ)। নেদারল্যান্ডসে মতামত বিভক্ত; ৩৬ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩৭ শতাংশ অসন্তুষ্ট। পোল্যান্ডে ৪০ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩১ শতাংশ অসন্তুষ্ট।
বাকি দেশগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ। ছয় দেশে গড় সন্তুষ্টির হার ২৪ শতাংশের কম। ক্রোয়েশিয়ায় ১৮ শতাংশ, ফ্রান্সে ১৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ২৬ শতাংশ, স্পেনে ২৭ শতাংশ এবং ইতালিতে ২৯ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, গত পাঁচ বছরে তাঁদের দেশে গণতন্ত্রের মান আরও খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্স (৮১ শতাংশ) ও নেদারল্যান্ডসে (৭৬ শতাংশ); যেখানে চলতি বছর সরকার পতনের ঘটনা ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ শতাংশ এবং স্পেন ও যুক্তরাজ্যে ৫৮ শতাংশ মানুষ একই মত প্রকাশ করেন। একমাত্র ব্যতিক্রম পোল্যান্ড; সেখানে ৪২ শতাংশ মনে করেন গণতন্ত্রের মান কিছুটা ভালো হয়েছে, ৩০ শতাংশ বলেছেন খারাপ হয়েছে।
সুইডেন বাদে বাকি সব দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা লক্ষ্য করা গেছে। ফ্রান্সে ৮৬ শতাংশ, স্পেনে ৮০ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডে ৭৫ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৭৪ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ায় ৭৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯ শতাংশ এবং ইতালিতে ৬৪ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যতের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন।
গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে; ভুয়া তথ্য (ডিসইনফরমেশন), রাজনৈতিক জবাবদিহির অভাব, চরমপন্থা ও দুর্নীতি।
ফ্রান্স (৫৬ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (৬৪ শতাংশ), সুইডেন (৬৭ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (৭৫ শতাংশ) ও পোল্যান্ডে (৭৬ শতাংশ) সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছে ভুয়া তথ্যকে। অন্যদিকে, দুর্নীতিকে সর্বোচ্চ হুমকি হিসেবে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৬৩ শতাংশ, স্পেনের ৭৩ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ার ৮০ শতাংশ ও ইতালির ৪৭ শতাংশ মানুষ। তবে ইতালিতে অর্থনৈতিক বৈষম্যকেও সমান বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়েছে।
গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা যেসব সমাধানের কথা বলেছেন, তা হলো—কঠোর দুর্নীতিবিরোধী আইন ও এর বাস্তবায়ন, সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর আরও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক শিক্ষা উন্নয়ন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা।
জরিপে দেখা গেছে, গণতন্ত্রের প্রতি মোটের ওপর জোরালো সমর্থন রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, এটি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও রক্ষাযোগ্য। তবে ক্রোয়েশিয়ায় অনেকে মনে করেন, কোনো দেশে গণতন্ত্র বজায় রাখা উচিত কি না—তা সেই দেশের মানুষের জীবনের মানের ওপর নির্ভর করে।
এদিকে, বেশির ভাগ দেশে বেড়েছে মৌলিক বা ‘র্যাডিক্যাল’ পরিবর্তনের দাবি। অনেকে মনে করেন বর্তমান ব্যবস্থাটি ধনীদের স্বার্থে, এটি সবার জন্য সমানভাবে কাজ করে না। স্পেনে ৫২ শতাংশ, ইতালিতে ৫৫ শতাংশ, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে ৬০ শতাংশ, ফ্রান্সে ৬৬ শতাংশ এবং ক্রোয়েশিয়ায় ৬৯ শতাংশ মানুষ র্যাডিক্যাল পরিবর্তনের দাবি করেন।
তবে পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রবল হলেও, প্রায় সব দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমঝোতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেন।

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতার–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকেও ম্লান করে দেবে। তাঁর চাহিদার তালিকায় আছে এআই চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–চালিত ড্রোন, আর সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন।
৪ ঘণ্টা আগে
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে মোদি নিজে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিরোধী পক্ষের নীরবতার খুবই দৃষ্টিকটু।
৪ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সামরিক বহর ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এই রণতরী বহর যে কোনো মুহূর্তে ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে
১ দিন আগে
পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীর প্রস্তাব গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। এরপর, গতকাল বুধবার তা নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদেও পাস হয়। এখন শুধু উচ্চকক্ষে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে তা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সামরিক বহর ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এই রণতরী বহর যে কোনো মুহূর্তে ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলায় সক্রিয় মাদক কার্টেলগুলোকে ‘ধ্বংস’ করার লক্ষ্য স্পষ্ট জানালেও, প্রশ্ন উঠেছে সামরিক আঘাত কি কেবল মাদক দমন অভিযানে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি তা সরাসরি নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে উৎখাত করার পূর্ণাঙ্গ সামরিক উদ্যোগে রূপ নেবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা সীমিত করতে কংগ্রেসের ‘ওয়ার পাওয়ারস রেজোলিউশন’ প্রয়োগের প্রচেষ্টা গত বৃহস্পতিবার নিম্নকক্ষে ব্যর্থ হওয়ায়, ট্রাম্পের হাতে এখন সব ধরনের সামরিক পদক্ষেপের পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা কম।
সামরিক বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, পূর্ণাঙ্গ স্থল আক্রমণের সম্ভাবনা কম। তবে মার্কিন নৌ ও বিমান শক্তি দেশটির অভ্যন্তরীণ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে মাদুরোর সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই কৌশলগত অবস্থান মাদুরো সরকারের ওপর চূড়ান্ত চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিকোলাস মাদুরোর শাসনাধীন ভেনেজুয়েলার জনগণ দীর্ঘকাল ধরে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে চান ভেনেজুয়েলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ। এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মারিয়া করিনা মাচাদো মাদুরো শাসনের বিরুদ্ধে পরিবর্তন আনার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অবশ্য সর্বশেষ নির্বাচনের পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে মাচাদো ট্রাম্প প্রশাসনের সামরিক উদ্যোগকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। মাদুরো-বিরোধীরা আশা করছেন, মার্কিন বিমান ও নৌবাহিনী, সম্ভবত কিছু গোপন স্থল বাহিনীর সহায়তায়, অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের সঙ্গে মিলে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। তখন মাচাদোর নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠানের দুয়ার খুলে যাবে।
ভেনেজুয়েলা সংকটের কেন্দ্রে রয়েছে বিশ্বের জ্বালানি মানচিত্র পাল্টে দেওয়ার মতো তেলসম্পদ। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন (ইআইএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার প্রমাণিত তেলের মজুত ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল, যা বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ। দেশটির মজুত সৌদি আরবের (২৬৭ বিলিয়ন ব্যারেল) এবং ইরানের (২০৮ বিলিয়ন ব্যারেল)-এর থেকেও বেশি।
কিন্তু সমাজতান্ত্রিক শাসনের অধীনে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ-এর সময়ে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি কিছু অদক্ষতার কারণে দেশটির একসময়কার বিশ্বের অন্যতম লাভজনক তেল শিল্প প্রায় ধ্বংসের মুখে। বর্তমানে ভেনেজুয়েলা তেল উৎপাদন প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে এবং রপ্তানি করে বছরে মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। অথচ সৌদি আরব বছরে প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ডলার এবং রাশিয়া ১২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল রপ্তানি করে থাকে। এই বিপুল সম্পদ যদি সমাজতান্ত্রিক সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এক নতুন ঢেউ আনবে।
যদি মাদুরোর শাসনের পতন হয় এবং মার্কিন সরকারের পূর্ণ সমর্থন থাকে (নিশ্চিতভাবে তা থাকবে), তবে তেল শিল্প দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং একই সঙ্গে ধসের মুখেও পড়তে পারে। ২০ বছর আগেও ভেনেজুয়েলা দৈনিক ৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদুরোর পতন হলে খুব দ্রুতই দেশটি সেই স্তরে ফিরে যেতে পারে।
এই বিপুল পরিমাণ তেল যদি বাজারে আসে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি ভেনেজুয়েলাকে ওপেক-এর বাইরে রাখতে চান (অতি অবশ্যই রাখবেন), তাহলে তেলের দাম মারাত্মকভাবে কমবে। বিশ্লেষকদের ধারণা, ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ৫০ ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে, এমনকি ৩০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই মূল্যপতন বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় যে তিনটি পরিণতি নিয়ে আসবে সেগুলো হলো:
সংকটে পড়বে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া: তেলের দাম কমলে রাশিয়ার তেল বিক্রি থেকে রাজস্ব মারাত্মকভাবে কমে যাবে। ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলারে বিক্রি হলে, রাশিয়া তাদের ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করতে পারবে না। বিশ্ববাজারে ভেনেজুয়েলার সস্তা তেল সহজলভ্য হলে, নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা রাশিয়ার তেল কেনার আগ্রহ আরও কমে যাবে।
সৌদি আরবের ওপর চরম আর্থিক চাপ: কম তেলের দামের কারণে সৌদি আরবও বিশাল আর্থিক চাপের মুখে পড়বে। এখনই দেশটির বাজেট ঘাটতি বাড়ছে; তেলের রাজস্ব কমে গেলে এই সংকট আরও গভীর হবে এবং যুবরাজ তাঁর স্বপ্নের প্রকল্পে ব্যয় কমাতে বাধ্য হবে।
বিশ্ব অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি: তেল রপ্তানিকারকদের ক্ষতি হলেও, বিশ্বের বাকি অর্থনীতির জন্য ক্রমহ্রাসমান তেলের দাম অত্যন্ত সহায়ক। এর ফলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে, মানুষের হাতে অন্যান্য জিনিসের জন্য বেশি অর্থ থাকবে এবং তা বিশ্ব অর্থনীতিকে সামগ্রিকভাবে উদ্দীপিত করবে।
তবে এই সামরিক পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায়, বা হোয়াইট হাউস হস্তক্ষেপের ঝুঁকি নেবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত। কিন্তু যদি এই অভিযান সফল হয়, তবে এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে নাটকীয় রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সামরিক বহর ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এই রণতরী বহর যে কোনো মুহূর্তে ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলায় সক্রিয় মাদক কার্টেলগুলোকে ‘ধ্বংস’ করার লক্ষ্য স্পষ্ট জানালেও, প্রশ্ন উঠেছে সামরিক আঘাত কি কেবল মাদক দমন অভিযানে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি তা সরাসরি নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে উৎখাত করার পূর্ণাঙ্গ সামরিক উদ্যোগে রূপ নেবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা সীমিত করতে কংগ্রেসের ‘ওয়ার পাওয়ারস রেজোলিউশন’ প্রয়োগের প্রচেষ্টা গত বৃহস্পতিবার নিম্নকক্ষে ব্যর্থ হওয়ায়, ট্রাম্পের হাতে এখন সব ধরনের সামরিক পদক্ষেপের পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা কম।
সামরিক বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, পূর্ণাঙ্গ স্থল আক্রমণের সম্ভাবনা কম। তবে মার্কিন নৌ ও বিমান শক্তি দেশটির অভ্যন্তরীণ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে মাদুরোর সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই কৌশলগত অবস্থান মাদুরো সরকারের ওপর চূড়ান্ত চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিকোলাস মাদুরোর শাসনাধীন ভেনেজুয়েলার জনগণ দীর্ঘকাল ধরে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে চান ভেনেজুয়েলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ। এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মারিয়া করিনা মাচাদো মাদুরো শাসনের বিরুদ্ধে পরিবর্তন আনার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অবশ্য সর্বশেষ নির্বাচনের পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে মাচাদো ট্রাম্প প্রশাসনের সামরিক উদ্যোগকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। মাদুরো-বিরোধীরা আশা করছেন, মার্কিন বিমান ও নৌবাহিনী, সম্ভবত কিছু গোপন স্থল বাহিনীর সহায়তায়, অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের সঙ্গে মিলে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। তখন মাচাদোর নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠানের দুয়ার খুলে যাবে।
ভেনেজুয়েলা সংকটের কেন্দ্রে রয়েছে বিশ্বের জ্বালানি মানচিত্র পাল্টে দেওয়ার মতো তেলসম্পদ। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন (ইআইএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার প্রমাণিত তেলের মজুত ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল, যা বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ। দেশটির মজুত সৌদি আরবের (২৬৭ বিলিয়ন ব্যারেল) এবং ইরানের (২০৮ বিলিয়ন ব্যারেল)-এর থেকেও বেশি।
কিন্তু সমাজতান্ত্রিক শাসনের অধীনে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ-এর সময়ে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি কিছু অদক্ষতার কারণে দেশটির একসময়কার বিশ্বের অন্যতম লাভজনক তেল শিল্প প্রায় ধ্বংসের মুখে। বর্তমানে ভেনেজুয়েলা তেল উৎপাদন প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে এবং রপ্তানি করে বছরে মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। অথচ সৌদি আরব বছরে প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ডলার এবং রাশিয়া ১২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল রপ্তানি করে থাকে। এই বিপুল সম্পদ যদি সমাজতান্ত্রিক সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এক নতুন ঢেউ আনবে।
যদি মাদুরোর শাসনের পতন হয় এবং মার্কিন সরকারের পূর্ণ সমর্থন থাকে (নিশ্চিতভাবে তা থাকবে), তবে তেল শিল্প দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং একই সঙ্গে ধসের মুখেও পড়তে পারে। ২০ বছর আগেও ভেনেজুয়েলা দৈনিক ৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদুরোর পতন হলে খুব দ্রুতই দেশটি সেই স্তরে ফিরে যেতে পারে।
এই বিপুল পরিমাণ তেল যদি বাজারে আসে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি ভেনেজুয়েলাকে ওপেক-এর বাইরে রাখতে চান (অতি অবশ্যই রাখবেন), তাহলে তেলের দাম মারাত্মকভাবে কমবে। বিশ্লেষকদের ধারণা, ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ৫০ ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে, এমনকি ৩০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই মূল্যপতন বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় যে তিনটি পরিণতি নিয়ে আসবে সেগুলো হলো:
সংকটে পড়বে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া: তেলের দাম কমলে রাশিয়ার তেল বিক্রি থেকে রাজস্ব মারাত্মকভাবে কমে যাবে। ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলারে বিক্রি হলে, রাশিয়া তাদের ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করতে পারবে না। বিশ্ববাজারে ভেনেজুয়েলার সস্তা তেল সহজলভ্য হলে, নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা রাশিয়ার তেল কেনার আগ্রহ আরও কমে যাবে।
সৌদি আরবের ওপর চরম আর্থিক চাপ: কম তেলের দামের কারণে সৌদি আরবও বিশাল আর্থিক চাপের মুখে পড়বে। এখনই দেশটির বাজেট ঘাটতি বাড়ছে; তেলের রাজস্ব কমে গেলে এই সংকট আরও গভীর হবে এবং যুবরাজ তাঁর স্বপ্নের প্রকল্পে ব্যয় কমাতে বাধ্য হবে।
বিশ্ব অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি: তেল রপ্তানিকারকদের ক্ষতি হলেও, বিশ্বের বাকি অর্থনীতির জন্য ক্রমহ্রাসমান তেলের দাম অত্যন্ত সহায়ক। এর ফলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে, মানুষের হাতে অন্যান্য জিনিসের জন্য বেশি অর্থ থাকবে এবং তা বিশ্ব অর্থনীতিকে সামগ্রিকভাবে উদ্দীপিত করবে।
তবে এই সামরিক পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায়, বা হোয়াইট হাউস হস্তক্ষেপের ঝুঁকি নেবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত। কিন্তু যদি এই অভিযান সফল হয়, তবে এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে নাটকীয় রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতার–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকেও ম্লান করে দেবে। তাঁর চাহিদার তালিকায় আছে এআই চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–চালিত ড্রোন, আর সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন।
৪ ঘণ্টা আগে
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে মোদি নিজে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিরোধী পক্ষের নীরবতার খুবই দৃষ্টিকটু।
৪ ঘণ্টা আগে
পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীর প্রস্তাব গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। এরপর, গতকাল বুধবার তা নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদেও পাস হয়। এখন শুধু উচ্চকক্ষে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে তা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীর প্রস্তাব গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। এরপর, গতকাল বুধবার তা নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদেও পাস হয়। এখন শুধু উচ্চকক্ষে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে তা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে। এই সংশোধনী দেশটির বিচারব্যবস্থা এবং সামরিক বাহিনীর কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।
সমালোচনা আছে যে, সংশোধনীটির মূল উদ্দেশ্য সরকার এবং বিপুল ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ওপর তদারকি দুর্বল করা। প্রধান বিরোধী দল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) উভয় কক্ষেই এই বিলের বিরোধিতা করে অধিবেশন বয়কট করেছে। উচ্চ আদালতের বিচারকেরাও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, কিছু পরিবর্তন যুক্তিসংগত।
২৭তম সংশোধনী সংবিধানের অংশ হয়ে গেলে মূলত এটি দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের যেকোনো ধরনের ফৌজদারি মামলায় দায়মুক্তি দেবে এবং সামরিক কমান্ড কাঠামো পুনর্গঠন করবে। এই পরিবর্তনগুলো পাকিস্তানের সংবিধানের ধারা ২৪৩-এর মাধ্যমে করা হবে। সংশোধনীর অন্য ধারা ফেডারেল সংবিধানিক কোর্ট (এফসিসি) স্থাপনের মতো বিভিন্ন আইনি সংস্কারের ব্যবস্থা করবে।
অনেক সংবিধান সংশোধনীই বিতর্কিত হয়, কিন্তু সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছেন—বর্তমান সংশোধনী এত দ্রুত কেন আনা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার এটি গত শনিবার সিনেটে উপস্থাপন করেন, সেই দিনই মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন করে। আজারবাইজান সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে অনুমোদন দেন। তাঁর সফরে সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরও ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে শাহবাজ শরিফের সব রাষ্ট্রীয় সফরে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে দেখা গেছে। গত রোববার ইসলামাবাদে ফেরার পর শাহবাজ আনুষ্ঠানিকভাবে পার্লামেন্টে হাজির হন।
সংবিধানের ধারা–২৪৩ পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার এবং সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক সংজ্ঞায়িত করে। পরিবর্তিত বিধান অনুসারে, ধারা ২৪৩-এ সেনাপ্রধানের অধীনে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) নামে নতুন পদ সৃষ্টি করা হবে। এর অর্থ, সেনাপ্রধান বিমান ও নৌবাহিনীর ওপরও নিয়ন্ত্রণ রাখবেন। সংশোধনী আইনে পরিণত হলে, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি চলতি মাসের শেষে বাতিল হবে। বর্তমানে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি দায়িত্ব পালন করছেন চার-তারকা জেনারেল সাহির শামশাদ আছেন। তিনি ২৭ নভেম্বর অবসর নেবেন।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। চারটি অভ্যুত্থান এবং দশকব্যাপী সরাসরি ও অপ্রত্যক্ষ সামরিক শাসন এই প্রভাবকে ক্রমেই দৃঢ় করেছে। সেনাপ্রধান দীর্ঘদিন ধরে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত।
বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনির ২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধান হন এবং ভারতের সঙ্গে চার দিনের সংঘাতের ১০ দিন পর, গত ২০ মে পাঁচ তারকা র্যাঙ্কে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হন। ২৭ তম সংশোধনী পাঁচ তারকা জেনারেলদের আজীবন দায়মুক্তি দেবে এবং তাঁদের ‘র্যাঙ্ক, সুবিধা এবং ইউনিফর্ম জীবনভর বজায় রাখার’ বিধান থাকবে।
পাকিস্তানের দ্বিতীয় সেনা কর্মকর্তা হিসেবে পাঁচ-তারকা র্যাঙ্ক অর্জন করেছেন আসিম মুনির। এর আগে ১৯৬০-এর দশকে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানই একমাত্র ছিলেন। সামরিক বাহিনীর অন্য কোনো শাখার—যেমন বিমান বা নৌবাহিনীর কোনো কর্মকর্তা পাঁচ তারকা পাননি।
প্রস্তাবিত সংশোধনী জাতীয় কৌশলগত কমান্ড (এনএসসি) কমান্ডারের পদও সৃষ্টি করছে। এই পদধারী ব্যক্তি পারমাণবিক কমান্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সংশোধনী অনুসারে এনএসসি প্রধান কেবল সেনাবাহিনী থেকে সেনাপ্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেসের পরামর্শে নিযুক্ত করা হবে।
পাকিস্তানের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, ধারা–২৪৮ বলে ‘প্রেসিডেন্ট বা কোনো প্রদেশের গভর্নরের বিরুদ্ধে মেয়াদকাল চলাকালে কোনো ফৌজদারি মামলার বিচার শুরু বা চালিয়ে যাওয়া যাবে না।’ কিন্তু পদত্যাগের পর তাঁদের এমন সুবিধা নেই। বর্তমান জেনারেলদের কোনো আইনি সুরক্ষা নেই। ২৭ তম সংশোধনীর আগে ফিল্ড মার্শালের পদকে শুধু গৌরবসূচক ধরা হতো, কোনো অতিরিক্ত ক্ষমতা বা সুবিধা ছিল না। তবে প্রস্তাবিত পরিবর্তন মূলত এই পদটিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেবে।
সংশোধনীটি আইনে পরিণত হওয়ার পর পাঁচ-তারকা কোনো কর্মকর্তাকে অপসারণ করতে পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে। অথচ, কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোট পেলেই হয়। এ ছাড়া, পাঁচ তারকা কর্মকর্তা আজীবন যাবতীয় ফৌজদারি মামলা থেকে দায়মুক্তি পাবেন।
লাহোরভিত্তিক সংবিধানবিদ রিদা হোসাইন বলেন, ‘যেখানে অবাধ ক্ষমতা সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে গণতন্ত্র টিকে থাকে না। এই সংশোধনী অনির্বাচিত সেনা কর্মকর্তাকে এমন বিশেষাধিকার ও ক্ষমতা দেবে, যা কিনা দেশের কোনো নির্বাচিত নেতাও পান না।’
খসড়া সংশোধনীতে একটি স্থায়ী ফেডারেল সংবিধানিক আদালত (এফসিসি) গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আদালতের নেতৃত্ব দেবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান বিচারপতি এবং এতে চার প্রদেশ থেকে সমান সংখ্যক বিচারকসহ ইসলামাবাদ থেকেও বিচারক থাকবেন। এটি ফেডারেল ও প্রাদেশিক সরকারের বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তি করবে।
এফসিসি-এর বিচারকের বয়সসীমা ৬৮ বছর, যদিও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের বয়স হতে পারে সর্বোচ্চ ৬৫ বছর। এফসিসির প্রধান বিচারপতির মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন বছর। এই সংশোধনী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাও বাড়াচ্ছে। এর ফলে, তিনি পাকিস্তানের জুডিশিয়াল কমিশনের (জেসিপি) প্রস্তাবের ভিত্তিতে একজন বিচারককে এক হাইকোর্ট থেকে অন্য হাইকোর্টে স্থানান্তর করতে পারবেন।
গত বছর ২৬তম সংশোধনী পাস হওয়ার পর, হাইকোর্ট থেকে হাইকোর্টে বিচারক স্থানান্তর কেবল রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে হতে পারত। কিন্তু বিচারকের ব্যক্তিগত সম্মতি আবশ্যক ছিল, পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এবং সংশ্লিষ্ট দুই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শও জরুরি ছিল।
নতুন সংশোধনীর অধীনে এটি বদলে যাবে। প্রেসিডেন্ট সেজিপির প্রস্তাব অনুযায়ী বিচারককে স্থানান্তর করতে পারবেন, সংশ্লিষ্ট বিচারকের সম্মতি ছাড়াই। একই সঙ্গে, যদি কোনো বিচারক স্থানান্তর অস্বীকার করেন, তবে তিনি জেসিপির সামনে তার কারণ উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন এবং যদি জেসিপি কারণগুলো আইন বহির্ভূত মনে করে, তাহলে বিচারককে অবসর গ্রহণ করতে হবে।
রিদা হোসাইন বলেন, সংশোধনী অনুযায়ী বিচারকদের সম্মতি ছাড়াই অন্য অঞ্চলে স্থানান্তর করা যাবে এবং অস্বীকৃতি দিলে তাদের বিরুদ্ধে জেসিপি পদক্ষেপ নিতে পারবে। তিনি বলেন, ‘অস্বীকৃতির ফলে দায়বদ্ধতার প্রক্রিয়া শুরু হয়, এটি প্রশাসনিক ক্ষমতাকে ভীতি প্রদর্শনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সূক্ষ্ম হুমকি। এটি স্বাধীন বিচারিক পদকে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে এল, যেখানে সর্বদা শাস্তিমূলক বা প্রতিশোধমূলক স্থানান্তরের ভয়ে কাজ করতে হবে।’
জেনেভাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জাস্টিসের আইন উপদেষ্টা রীমা ওমর বলেন, নতুন সংশোধনীটি স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে উদ্বেগজনক প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, এর ফলে ‘সরকারের নির্বাহী বিভাগই সেই বিচারকদের নিয়োগ করবে, যাদের একমাত্র এখতিয়ারই হলো নির্বাহী বিভাগকে দায়বদ্ধ করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি স্পষ্টতই বিদ্যমান সেট-আপকে বিচারিক তদারকি ও দায়বদ্ধতা থেকে রক্ষা করার জন্য করা হচ্ছে। প্রয়োজনে এফসিসির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তগুলোকে সংবিধানিক বৈধতা দেওয়া সম্ভব হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারকেরাও সংশোধনীর সমালোচনা করছেন। জ্যেষ্ঠ বিচারক মানসুর আলি শাহ সোমবার প্রধান বিচারপতি ইয়াহিয়া আফ্রিদিকে খোলা চিঠিতে লিখেছেন, এফসিসি কোনো ‘সত্যিকারের সংস্কার এজেন্ডা’ নয়, বরং এটি বিচার বিভাগকে দুর্বল ও নিয়ন্ত্রণ করার একটি ‘রাজনৈতিক কল’। তিনি বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়ায় এ ধরনের প্ররোচনা ইতিহাসে ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে চিহ্নিত হয়; এটি সংবিধানিক অভিভাবকের ব্যর্থতা হিসেবে রেকর্ড হয় এবং যখন এমন মুহূর্তগুলোতে প্রতিষ্ঠানগুলো নীরব থাকে, তখন তারা নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করা কাঠামোকেই দুর্বল করে।’
সরকারের যুক্তি—এই প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হওয়া সংবিধানিক মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে। কারণ, এসব মামলার জট ‘নিয়মিত দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার সময়মতো নিষ্পত্তিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে।’ সরকার জানিয়েছে, ধারা–২৪৩-এ পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে ‘সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগত স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক কাঠামো উন্নত করার’ জন্য।
কিছু বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। ইসলামাবাদভিত্তিক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাফিজ আহসান আহমদ খোকার বলেছেন, একটি স্থায়ী কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালত বা এফসিসি ‘সমন্বিত দক্ষতা এবং সময়মতো বিচার’ নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, ‘এটি সংবিধান ব্যাখ্যা করার, কেন্দ্র-প্রদেশ সম্পর্কিত বিতর্ক সমাধান করার, আইনের বৈধতা নির্ধারণ করার এবং পরামর্শমূলক মতামত প্রদানের ক্ষমতা রাখে। এটি দক্ষতা এবং সময়মতো বিচার নিশ্চিত করে।’
খোকারের যুক্তি, এফসিসি গঠনের ফলে সংবিধানিক বিচার প্রক্রিয়ায় সামঞ্জস্য, দ্রুততা এবং শৃঙ্খলা আসবে। এ ছাড়া, কমান্ডার অব ডিফেন্স ফোর্সেস অফিসের সূচনা কৌশলগত কমান্ডকে একীভূত করবে এবং সমন্বয় বাড়াবে, কিন্তু বিদ্যমান বাহিনীর স্বায়ত্তশাসন ক্ষুণ্ন করবে না। তিনি বলেন, ‘উভয় সংস্কার পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থার বাস্তবতা এবং রাষ্ট্রের কার্যাবলির জটিলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এই পদক্ষেপগুলো পাকিস্তানকে একটি পরিপক্ব, নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করবে, যেখানে বিচারিক, নাগরিক ও প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিশেষায়িত ভূমিকায় সামঞ্জস্যের সঙ্গে কাজ করবে।’
তবে এই ব্যাখ্যাগুলো অনেককে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। পাকিস্তান হিউম্যান রাইটস কমিশন সংশোধনী বিলের তাগিদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলেছে, সরকারের তাড়াহুড়ো, রাজনৈতিক বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো অর্থবহ শলা-পরামর্শের অভাব, আইনজীবী সমাজ এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা না করা—এসবই সংশোধনী বিল আনার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) রীমা ওমর সতর্ক করেছেন, এই সংশোধনী বিচারব্যবস্থার জন্য একটি ‘মূলগত পরিবর্তন’ চিহ্নিত করছে। তিনি বলেন, ‘২৭ তম সংশোধনী পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টকে শুধু আপিল আদালত হিসেবে সীমিত করে। এটি আর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট নয়, নিছক সুপ্রিম কোর্ট এবং এর প্রধান বিচারপতি হবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি নয়।’
ওমর আরও বলেন, অন্তত স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে, বিচারব্যবস্থা প্রধানত নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল থাকবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাহী ও সংসদের বাস্তব কোনো জবাবদিহি বা পর্যালোচনার সুযোগ এখন সম্ভবত অল্প এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) পক্ষে আর কোনো সহায়তা পাওয়া সম্ভব নয়।’
রিদা হোসাইন সতর্ক করেছেন, সংশোধনীর অধীনে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক তদারকি এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ইচ্ছার মুখাপেক্ষী থাকলেও অনির্বাচিত কর্মকর্তাদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি ব্যালটের পরিবর্তে উর্দির প্রাধান্যকে প্রতিস্থাপন করেছে।’
ওমের বলেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো—যার মধ্যে বর্তমান শাসক পাকিস্তান মুসলিম লীগ–নওয়াজ ও জোটসঙ্গী পাকিস্তান পিপলস পার্টি রয়েছে—অতীতে সামরিক বাহিনীর জন্য সংবিধানিক সুরক্ষার বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু এখন তা পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২৭ তম সংশোধনী হলো সাংবিধানিক আত্মসমর্পণ।’
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীর প্রস্তাব গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। এরপর, গতকাল বুধবার তা নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদেও পাস হয়। এখন শুধু উচ্চকক্ষে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে তা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে। এই সংশোধনী দেশটির বিচারব্যবস্থা এবং সামরিক বাহিনীর কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।
সমালোচনা আছে যে, সংশোধনীটির মূল উদ্দেশ্য সরকার এবং বিপুল ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ওপর তদারকি দুর্বল করা। প্রধান বিরোধী দল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) উভয় কক্ষেই এই বিলের বিরোধিতা করে অধিবেশন বয়কট করেছে। উচ্চ আদালতের বিচারকেরাও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, কিছু পরিবর্তন যুক্তিসংগত।
২৭তম সংশোধনী সংবিধানের অংশ হয়ে গেলে মূলত এটি দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের যেকোনো ধরনের ফৌজদারি মামলায় দায়মুক্তি দেবে এবং সামরিক কমান্ড কাঠামো পুনর্গঠন করবে। এই পরিবর্তনগুলো পাকিস্তানের সংবিধানের ধারা ২৪৩-এর মাধ্যমে করা হবে। সংশোধনীর অন্য ধারা ফেডারেল সংবিধানিক কোর্ট (এফসিসি) স্থাপনের মতো বিভিন্ন আইনি সংস্কারের ব্যবস্থা করবে।
অনেক সংবিধান সংশোধনীই বিতর্কিত হয়, কিন্তু সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছেন—বর্তমান সংশোধনী এত দ্রুত কেন আনা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার এটি গত শনিবার সিনেটে উপস্থাপন করেন, সেই দিনই মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন করে। আজারবাইজান সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে অনুমোদন দেন। তাঁর সফরে সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরও ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে শাহবাজ শরিফের সব রাষ্ট্রীয় সফরে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে দেখা গেছে। গত রোববার ইসলামাবাদে ফেরার পর শাহবাজ আনুষ্ঠানিকভাবে পার্লামেন্টে হাজির হন।
সংবিধানের ধারা–২৪৩ পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার এবং সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক সংজ্ঞায়িত করে। পরিবর্তিত বিধান অনুসারে, ধারা ২৪৩-এ সেনাপ্রধানের অধীনে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) নামে নতুন পদ সৃষ্টি করা হবে। এর অর্থ, সেনাপ্রধান বিমান ও নৌবাহিনীর ওপরও নিয়ন্ত্রণ রাখবেন। সংশোধনী আইনে পরিণত হলে, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি চলতি মাসের শেষে বাতিল হবে। বর্তমানে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি দায়িত্ব পালন করছেন চার-তারকা জেনারেল সাহির শামশাদ আছেন। তিনি ২৭ নভেম্বর অবসর নেবেন।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। চারটি অভ্যুত্থান এবং দশকব্যাপী সরাসরি ও অপ্রত্যক্ষ সামরিক শাসন এই প্রভাবকে ক্রমেই দৃঢ় করেছে। সেনাপ্রধান দীর্ঘদিন ধরে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত।
বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনির ২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধান হন এবং ভারতের সঙ্গে চার দিনের সংঘাতের ১০ দিন পর, গত ২০ মে পাঁচ তারকা র্যাঙ্কে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হন। ২৭ তম সংশোধনী পাঁচ তারকা জেনারেলদের আজীবন দায়মুক্তি দেবে এবং তাঁদের ‘র্যাঙ্ক, সুবিধা এবং ইউনিফর্ম জীবনভর বজায় রাখার’ বিধান থাকবে।
পাকিস্তানের দ্বিতীয় সেনা কর্মকর্তা হিসেবে পাঁচ-তারকা র্যাঙ্ক অর্জন করেছেন আসিম মুনির। এর আগে ১৯৬০-এর দশকে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানই একমাত্র ছিলেন। সামরিক বাহিনীর অন্য কোনো শাখার—যেমন বিমান বা নৌবাহিনীর কোনো কর্মকর্তা পাঁচ তারকা পাননি।
প্রস্তাবিত সংশোধনী জাতীয় কৌশলগত কমান্ড (এনএসসি) কমান্ডারের পদও সৃষ্টি করছে। এই পদধারী ব্যক্তি পারমাণবিক কমান্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সংশোধনী অনুসারে এনএসসি প্রধান কেবল সেনাবাহিনী থেকে সেনাপ্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেসের পরামর্শে নিযুক্ত করা হবে।
পাকিস্তানের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, ধারা–২৪৮ বলে ‘প্রেসিডেন্ট বা কোনো প্রদেশের গভর্নরের বিরুদ্ধে মেয়াদকাল চলাকালে কোনো ফৌজদারি মামলার বিচার শুরু বা চালিয়ে যাওয়া যাবে না।’ কিন্তু পদত্যাগের পর তাঁদের এমন সুবিধা নেই। বর্তমান জেনারেলদের কোনো আইনি সুরক্ষা নেই। ২৭ তম সংশোধনীর আগে ফিল্ড মার্শালের পদকে শুধু গৌরবসূচক ধরা হতো, কোনো অতিরিক্ত ক্ষমতা বা সুবিধা ছিল না। তবে প্রস্তাবিত পরিবর্তন মূলত এই পদটিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেবে।
সংশোধনীটি আইনে পরিণত হওয়ার পর পাঁচ-তারকা কোনো কর্মকর্তাকে অপসারণ করতে পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে। অথচ, কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোট পেলেই হয়। এ ছাড়া, পাঁচ তারকা কর্মকর্তা আজীবন যাবতীয় ফৌজদারি মামলা থেকে দায়মুক্তি পাবেন।
লাহোরভিত্তিক সংবিধানবিদ রিদা হোসাইন বলেন, ‘যেখানে অবাধ ক্ষমতা সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে গণতন্ত্র টিকে থাকে না। এই সংশোধনী অনির্বাচিত সেনা কর্মকর্তাকে এমন বিশেষাধিকার ও ক্ষমতা দেবে, যা কিনা দেশের কোনো নির্বাচিত নেতাও পান না।’
খসড়া সংশোধনীতে একটি স্থায়ী ফেডারেল সংবিধানিক আদালত (এফসিসি) গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আদালতের নেতৃত্ব দেবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান বিচারপতি এবং এতে চার প্রদেশ থেকে সমান সংখ্যক বিচারকসহ ইসলামাবাদ থেকেও বিচারক থাকবেন। এটি ফেডারেল ও প্রাদেশিক সরকারের বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তি করবে।
এফসিসি-এর বিচারকের বয়সসীমা ৬৮ বছর, যদিও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের বয়স হতে পারে সর্বোচ্চ ৬৫ বছর। এফসিসির প্রধান বিচারপতির মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন বছর। এই সংশোধনী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাও বাড়াচ্ছে। এর ফলে, তিনি পাকিস্তানের জুডিশিয়াল কমিশনের (জেসিপি) প্রস্তাবের ভিত্তিতে একজন বিচারককে এক হাইকোর্ট থেকে অন্য হাইকোর্টে স্থানান্তর করতে পারবেন।
গত বছর ২৬তম সংশোধনী পাস হওয়ার পর, হাইকোর্ট থেকে হাইকোর্টে বিচারক স্থানান্তর কেবল রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে হতে পারত। কিন্তু বিচারকের ব্যক্তিগত সম্মতি আবশ্যক ছিল, পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এবং সংশ্লিষ্ট দুই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শও জরুরি ছিল।
নতুন সংশোধনীর অধীনে এটি বদলে যাবে। প্রেসিডেন্ট সেজিপির প্রস্তাব অনুযায়ী বিচারককে স্থানান্তর করতে পারবেন, সংশ্লিষ্ট বিচারকের সম্মতি ছাড়াই। একই সঙ্গে, যদি কোনো বিচারক স্থানান্তর অস্বীকার করেন, তবে তিনি জেসিপির সামনে তার কারণ উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন এবং যদি জেসিপি কারণগুলো আইন বহির্ভূত মনে করে, তাহলে বিচারককে অবসর গ্রহণ করতে হবে।
রিদা হোসাইন বলেন, সংশোধনী অনুযায়ী বিচারকদের সম্মতি ছাড়াই অন্য অঞ্চলে স্থানান্তর করা যাবে এবং অস্বীকৃতি দিলে তাদের বিরুদ্ধে জেসিপি পদক্ষেপ নিতে পারবে। তিনি বলেন, ‘অস্বীকৃতির ফলে দায়বদ্ধতার প্রক্রিয়া শুরু হয়, এটি প্রশাসনিক ক্ষমতাকে ভীতি প্রদর্শনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সূক্ষ্ম হুমকি। এটি স্বাধীন বিচারিক পদকে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে এল, যেখানে সর্বদা শাস্তিমূলক বা প্রতিশোধমূলক স্থানান্তরের ভয়ে কাজ করতে হবে।’
জেনেভাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জাস্টিসের আইন উপদেষ্টা রীমা ওমর বলেন, নতুন সংশোধনীটি স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে উদ্বেগজনক প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, এর ফলে ‘সরকারের নির্বাহী বিভাগই সেই বিচারকদের নিয়োগ করবে, যাদের একমাত্র এখতিয়ারই হলো নির্বাহী বিভাগকে দায়বদ্ধ করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি স্পষ্টতই বিদ্যমান সেট-আপকে বিচারিক তদারকি ও দায়বদ্ধতা থেকে রক্ষা করার জন্য করা হচ্ছে। প্রয়োজনে এফসিসির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তগুলোকে সংবিধানিক বৈধতা দেওয়া সম্ভব হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারকেরাও সংশোধনীর সমালোচনা করছেন। জ্যেষ্ঠ বিচারক মানসুর আলি শাহ সোমবার প্রধান বিচারপতি ইয়াহিয়া আফ্রিদিকে খোলা চিঠিতে লিখেছেন, এফসিসি কোনো ‘সত্যিকারের সংস্কার এজেন্ডা’ নয়, বরং এটি বিচার বিভাগকে দুর্বল ও নিয়ন্ত্রণ করার একটি ‘রাজনৈতিক কল’। তিনি বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়ায় এ ধরনের প্ররোচনা ইতিহাসে ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে চিহ্নিত হয়; এটি সংবিধানিক অভিভাবকের ব্যর্থতা হিসেবে রেকর্ড হয় এবং যখন এমন মুহূর্তগুলোতে প্রতিষ্ঠানগুলো নীরব থাকে, তখন তারা নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করা কাঠামোকেই দুর্বল করে।’
সরকারের যুক্তি—এই প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হওয়া সংবিধানিক মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে। কারণ, এসব মামলার জট ‘নিয়মিত দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার সময়মতো নিষ্পত্তিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে।’ সরকার জানিয়েছে, ধারা–২৪৩-এ পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে ‘সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগত স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক কাঠামো উন্নত করার’ জন্য।
কিছু বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। ইসলামাবাদভিত্তিক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাফিজ আহসান আহমদ খোকার বলেছেন, একটি স্থায়ী কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালত বা এফসিসি ‘সমন্বিত দক্ষতা এবং সময়মতো বিচার’ নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, ‘এটি সংবিধান ব্যাখ্যা করার, কেন্দ্র-প্রদেশ সম্পর্কিত বিতর্ক সমাধান করার, আইনের বৈধতা নির্ধারণ করার এবং পরামর্শমূলক মতামত প্রদানের ক্ষমতা রাখে। এটি দক্ষতা এবং সময়মতো বিচার নিশ্চিত করে।’
খোকারের যুক্তি, এফসিসি গঠনের ফলে সংবিধানিক বিচার প্রক্রিয়ায় সামঞ্জস্য, দ্রুততা এবং শৃঙ্খলা আসবে। এ ছাড়া, কমান্ডার অব ডিফেন্স ফোর্সেস অফিসের সূচনা কৌশলগত কমান্ডকে একীভূত করবে এবং সমন্বয় বাড়াবে, কিন্তু বিদ্যমান বাহিনীর স্বায়ত্তশাসন ক্ষুণ্ন করবে না। তিনি বলেন, ‘উভয় সংস্কার পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থার বাস্তবতা এবং রাষ্ট্রের কার্যাবলির জটিলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এই পদক্ষেপগুলো পাকিস্তানকে একটি পরিপক্ব, নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করবে, যেখানে বিচারিক, নাগরিক ও প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিশেষায়িত ভূমিকায় সামঞ্জস্যের সঙ্গে কাজ করবে।’
তবে এই ব্যাখ্যাগুলো অনেককে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। পাকিস্তান হিউম্যান রাইটস কমিশন সংশোধনী বিলের তাগিদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলেছে, সরকারের তাড়াহুড়ো, রাজনৈতিক বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো অর্থবহ শলা-পরামর্শের অভাব, আইনজীবী সমাজ এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা না করা—এসবই সংশোধনী বিল আনার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) রীমা ওমর সতর্ক করেছেন, এই সংশোধনী বিচারব্যবস্থার জন্য একটি ‘মূলগত পরিবর্তন’ চিহ্নিত করছে। তিনি বলেন, ‘২৭ তম সংশোধনী পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টকে শুধু আপিল আদালত হিসেবে সীমিত করে। এটি আর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট নয়, নিছক সুপ্রিম কোর্ট এবং এর প্রধান বিচারপতি হবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি নয়।’
ওমর আরও বলেন, অন্তত স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে, বিচারব্যবস্থা প্রধানত নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল থাকবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাহী ও সংসদের বাস্তব কোনো জবাবদিহি বা পর্যালোচনার সুযোগ এখন সম্ভবত অল্প এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) পক্ষে আর কোনো সহায়তা পাওয়া সম্ভব নয়।’
রিদা হোসাইন সতর্ক করেছেন, সংশোধনীর অধীনে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক তদারকি এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ইচ্ছার মুখাপেক্ষী থাকলেও অনির্বাচিত কর্মকর্তাদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি ব্যালটের পরিবর্তে উর্দির প্রাধান্যকে প্রতিস্থাপন করেছে।’
ওমের বলেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো—যার মধ্যে বর্তমান শাসক পাকিস্তান মুসলিম লীগ–নওয়াজ ও জোটসঙ্গী পাকিস্তান পিপলস পার্টি রয়েছে—অতীতে সামরিক বাহিনীর জন্য সংবিধানিক সুরক্ষার বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু এখন তা পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২৭ তম সংশোধনী হলো সাংবিধানিক আত্মসমর্পণ।’
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতার–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিকেও ম্লান করে দেবে। তাঁর চাহিদার তালিকায় আছে এআই চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–চালিত ড্রোন, আর সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন।
৪ ঘণ্টা আগে
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে মোদি নিজে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিরোধী পক্ষের নীরবতার খুবই দৃষ্টিকটু।
৪ ঘণ্টা আগে
পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সামরিক বহর ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এই রণতরী বহর যে কোনো মুহূর্তে ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে
১ দিন আগে