Ajker Patrika

দিল্লিতে মোদির এত বড় নিরাপত্তা ব্যর্থতা সত্ত্বেও কেন নীরব বিরোধীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩২
দিল্লি বিস্ফোরণের দুদিন পর গত বুধবার হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এক্স
দিল্লি বিস্ফোরণের দুদিন পর গত বুধবার হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এক্স

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘নতুন স্বাভাবিক’ (নিউ নরমাল) প্রতিষ্ঠার দাবির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চলতি বছর স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাচীর থেকে মোদি বলেছিলেন, দেশ এখন সন্ত্রাসবাদকে আর সহ্য করবে না, অথচ এর মাত্র ছয় মাস পর সোমবার (১০ নভেম্বর) ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছেই এক গাড়ি বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে প্রাথমিক অনিশ্চয়তা থাকলেও ঘটনাটি পরে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের কার্যকলাপ বলে নিশ্চিত করেছে সরকার।

যদিও সরকার এই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করতে দুই দিন সময় নিয়েছেন। কিন্তু এরপরও প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য সরাসরি দায়ী করতে গিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নজিরবিহীনভাবে সতর্ক এবং নীরব ভূমিকা পালন করছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর সরকারের কঠোর নীতির প্রমাণ হিসেবে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর উল্লেখ করে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে তাঁর সরকার আর পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করবে না। কিন্তু লাল কেল্লার অদূরে বিস্ফোরণটি সেই কঠোর দাবির বিপরীতে সরকারের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে।

সোমবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণটি ঘটে, যখন বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ও শেষ দফার ভোট গ্রহণের এক দিন আগে রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল উত্তপ্ত। ঘটনার দিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিস্ফোরণস্থল ও লোক নায়ক জয় প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতাল পরিদর্শন করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভুটানের সাবেক রাজার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে হিমালয়ের ওই দেশটিতে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ‘অসংবেদনশীলতা’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তোলে বিরোধী পক্ষ। বুধবার দিল্লি ফিরে তিনি দ্রুত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।

বিস্ফোরণের প্রকৃতি এবং উৎস নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় প্রথমদিকে বহু রাজনীতিবিদ নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক ও সমবেদনা জানানোর মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন পোস্ট দেন।

বিস্ফোরণের সঙ্গে একটি ‘সন্ত্রাসী মডিউলের’ যোগসূত্রের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরও কোনো শীর্ষ বিরোধী নেতা বিস্ফোরণস্থল বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেননি। এই নীরবতা রাজনৈতিক মহলে সমালোচিত হচ্ছে। শুধু আম আদমি পার্টি (এএপি) এবং কংগ্রেসের দিল্লি ইউনিটের স্থানীয় প্রতিনিধিরা আহত ব্যক্তিদের দেখতে হাসপাতালে যান। তবে এই স্থানীয় নেতারাও সন্ত্রাসবাদ বা জাতীয় নিরাপত্তার বৃহত্তর ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলে, কেবল বিস্ফোরণের পরবর্তী পরিস্থিতি ও সরকারি ব্যবস্থাপনার ভুলত্রুটি নিয়ে কথা বলেন।

তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা সংসদ সদস্য পার্থ ভৌমিক ঘটনার আদালত-পর্যবেক্ষিত তদন্ত দাবি করেন। অন্যদিকে এএপির মুখপাত্র সঞ্জয় সিং এবং কংগ্রেসের সুপ্রিয়া শ্রীনাতে প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারের প্রতি তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সঞ্জয় সিং এক্সে লেখেন, ‘দেশ যন্ত্রণায় ভুগছে আর মোদি প্লেনে...এমন অসংবেদনশীল প্রধানমন্ত্রীকে জাতি আর কত দিন দিন সহ্য করবে?’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিল্লির বিস্ফোরণে বিরোধী দলগুলোর এই ‘নিঃশব্দ প্রতিক্রিয়া’ এক কৌশলগত দুর্বলতার প্রতিফলন। তারা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যেতে দ্বিধা বোধ করছেন। কারণ, এ ক্ষেত্রে বিজেপিকে মোকাবিলা করার জন্য তাদের কাছে স্পষ্ট কোনো কৌশল নেই।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মোদির জীবনীকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় যুক্তি দিয়েছেন, মোদিকে বিদ্রূপ করার জন্য ‘যুদ্ধবাজ’ সাজার চেষ্টা করা সঠিক কৌশল নয়। তাঁর মতে, বিরোধী দলকে মোদির ‘বড়াই ও মিথ্যা সাহসের অন্তঃসারশূন্যতা’ এবং নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।

ভারতের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা যশোবর্ধন ঝা আজাদ বলেন, বিরোধী দলগুলোর উচিত মোদি সরকারের কাছে ‘নির্দিষ্ট ও তীক্ষ্ণ’ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে দায়বদ্ধতা স্থির করা। তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসী মডিউলটি ‘প্রধান ও বিপজ্জনক’ ছিল। এ নিয়ে প্রশ্ন না করলে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা স্মরণ করিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে মোদি নিজে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিরোধী পক্ষের নীরবতার খুবই দৃষ্টিকটু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...